সোমবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৭

         
ফ্রাঙ্ক উইলিয়াম আবাগনেল -প্রতারণার কিংবদন্তী ঠক আত্মবিশ্বাসী ধূর্ত প্রবঞ্চক এবং অজপাড়াগা ঠক-পুরের ঠক সাহেব


           ১)
২০০৭ সালের নভেম্বর মাস, নবীন পুলিশ কর্মকর্তার যে বিশেষণ তা সবেমাত্র ছুটতে শুরু করেছে । ইতোমধ্যে এক বছর এর কাছাকাছি সময় পার হয়েছে সার্কেল এএসপি হিসেবে, আমার পোস্টিং গফরগাঁও সার্কেল এএসপি , ময়মনসিংহ । তিনটি থানা নিয়ে বিশাল এক জুরিসডিকশন , নানা কারণে এই সার্কেলের থানা গুলো খ্যাত কিংবা কুখ্যাত ছিল । ভালুকা, ত্রিশাল আর গফরগাঁও এই তিন থানা। অপরাধ প্রবণ এলাকা, প্রধানত ডাকাতি , খুন ও খুন সহ দাংগা এই জাতীয় ঘটনা বেশি পরিলক্ষিত হত । নবীন কর্মকর্তাদের টগবগে তারুন্যদীপ্ত রক্তে দেশ ও জাতি উদ্ধারের যে সিনেমা-টিক তকমা ভিতরে গাঁথা থাকে আমার ও ব্যতিক্রম ছিল না ।এই  দেশ ও জাতি উদ্ধারের দর্শনে দার্শনিক হয়ে ইতিমধ্যে সাড়া জাগিয়েছি অন্তত জনমনে,
আমার গাড়ি বেরুনো দেখলে
গার্লস স্কুল ও কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা  উঠতি বখাটে তরুণরা মুহূর্তেই ভোঁ হয়ে হাওয়াতে মিশে যেত ।
রেজিস্ট্রেশন-বিহীন মোটর বাইক আরেকদিকে চলে যেত ,

হাইওয়ে তে রাস্তার উপর আধো পুরো করে দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে যাত্রী উঠাত আর এলোমেলো জ্যাম ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করত  যে বাস গুলো তারাও আমার গাড়ি দেখলে সোজা হয়ে যেত কিংবা ভোঁ দিয়ে পালাত ।

 এসবই আমার নিজের সেন্স দ্বারা তৈরি করা পুলি-শিং । এই পুলি-শিং এর জন্য পুলিশ সুপারের সাধুবাদ ও তির্যক-বাদ দুটোই জুটেছে কপালে ,কখন ও ভুল হয়েছে আবার কখনো সিদ্ধান্তহীনতা থাকলেও নিজের ভিতরের প্রবৃত্তিটির উদ্দেশ্য মহৎ ছিল বলেই কখন বিপদ হয় নাই বা বিপদ হলেও তা থেকে মহান সৃষ্টিকর্তা রক্ষা করেছেন ।  তবে অল্প পরিসরে হলেও মানুষ কে  সহায়তা প্রদান করতে পেরেছিলাম , সেবা প্রদান করতে পেরেছিলাম আমি মনে করি সেটাই একজন নবীন কর্মকর্তার বড় অর্জনএমনি এক বিশাল পেশাদারিত্বের ফর্মে থাকার সময় হঠাৎ করেই এমন একটা বিচিত্র ধরনের ঘটনা পেলাম যা আমার পুলিশ সার্ভিসে স্মরণীয় ঘটনাবলীর একটি হয়ে আছে ।

    ২)
এই অপরাধপ্রবন এলাকাতে ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটে , অন্ধকার পক্ষের পনের দিন অর্ধেক আমি আর বাকী অর্ধেক ওসি গাড়ীতে হুটার বাজিয়ে রাত্রিকালীন প্রহরী ও কমিউনিটি পুলি-শিং এর তত্ত্বাবধানের পাহাড়া পার্টিদের সজাগ রাখা ও তাদের কে উদ্দীপনা দিয়ে দিয়ে এলাকাতে পুলিশের উপস্থিতি তদারকী করে করে ডাকাত চোর  মুক্ত রাখি
সারাদিনে নানান জাতের নানান পেশার মানুষ ফোন দেয় , এছাড়া এলাকাতে জনগণের সাথে বেশি বেশি সম্পৃক্ততার কারণে ওসির চেয়েও বেশি খবর, তথ্য আমি পেতাম ও ব্যবস্থা নিতাম। আর এজন্যই কখনই ফোন মিস করতাম না ,লোকজন এসে বলত- স্যার শুনছি আপনার কাছে আসলে সাহায্য পাওয়া যায় তাই আমি আসছি,
সাহায্য কতটুকু করতে পারতাম জানি না কিন্তু এই যে মানুষের মাঝে একটা পজিটিভ কনসেপশন এটাই বড় পাওয়া আমি মনে করি । এর মাঝেই হঠাৎ করে একটা ফোন,
-জী ভাই কেমন আছেন?
- আপনি ২৪তম বিসিএস ? আমিও
-আমি এসি কাস্টমস , নজরুল ইসলাম
-আমার বাড়ি গফরগাঁও এর আউটবাড়িয়া ,
আমি বললাম আচ্ছা, তো আপনার জন্য কি করতে পারি? সে বলল না এমনি পরিচয় হবার জন্য ফোন দিলাম, আমি বললাম গফরগাঁও আসলে আমার অফিসে এসে চা খেয়ে যাবেন ।

এরপরে সেই এসি কাস্টমস নজরুল ইসলাম  মাঝে মাঝেই ফোন দেয়, স্পেসিফিক কোন বিষয়ের জন্য নয়, ফোন দেয় শুধু হাই হ্যালো বলার জন্যে , তো আমি এরপরে তার ফোন ধরিনা, কোন কারণ ছাড়াই একজন ফোন দিয়ে কেমন আছেন? কোথায় এসব বলবেন ? যার-সাথে কখনো দেখা হয় নাই, শুধু বলে আমার পোস্টিং চট্টগ্রাম , বেড়াতে আসবেন ।

কয়েকদিন পরে আমার গফরগাঁও থানার ওসি সাহেব আমাকে বলতে লাগলেন যে স্যার নজরুল স্যার ফোন দিয়েছিল , উনার কাজটা করে দিছি ।আমি বললাম কোন নজরুল ?ওসি বলে স্যার আপনার বন্ধু কাস্টমসের এসি ! সেই স্যার !
আমি বললাম যে আমি কি কখনো আপনাকে বলেছি যে আমার বন্ধু সে ?ওসি বলে স্যার ফোন করেই আপনার কথা বলে , খুব নরমভাবে , ঠাণ্ডা একজন ভদ্রলোক মনে হয়েছে তাই আর আপনাকে জিজ্ঞেস করি নাই স্যার , আমি একটু বিরক্তই হলাম ওসির উপরে , বললাম সে আমার বন্ধু না , আর আমি তাকে কখনো সামনে দেখিও  নাই, ওসি শুধু বলল স্যার তাই নাকি , বলেই তার মুখটা ছোট হয়ে গেল, আমি বললাম কেন কোন সমস্যা ?? বলে স্যার ৩ দিন আগেও আমিতো উনার ফোনে উনি এক জায়গায় পুলিশ পাঠাতে বলেছে আমি পুলিশ পাঠিয়েছি ,  

আমি তখন ওসি কে বেশ রাগারাগিই করলাম এমন নির্বুদ্ধিতার জন্য এবং কড়াভাবে বলে দিলাম যে আমার বন্ধু বা আত্মীয় আমি নিজে বলে না দিলে আপনি তার কথা না শুনে আমাকে সাথে সাথে জানাবেন ।

এর কিছুদিন পরেই আমার অফিসে তিন জন তরুণ এসেছেন   দেখা করতে , তারা আমার হাতে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন, কারণ তারা তিন জনেই আউটবাড়িয়া গ্রামের জনৈক  বেলায়েত হোসেন কে দুই লাখ করে ছয় লক্ষ টাকা দিয়েছেন কিন্তু বিদেশ তো পাঠাতে পারছেই না উলটো টাকা ফেরত  না দিয়ে তাদেরকেই হুমকি ধামকি দিচ্ছেন , আমি এই সর্বস্ব হারানো গ্রাম্য তরুণদের চোখের পানিতে তাদের ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্ন দেখতে পেলাম । আমি তাদের কে অভিযোগ লিখে নিয়ে ওসির কাছে যেতে বললাম এবং ওসিকে  ভাল একজন অফিসার পাঠিয়ে পুরো বিষয়টা অনুসন্ধান করে আসতে বললাম ,

দুইদিন পরে  সাব ইন্সপেক্টর মাসুদ আলম আমার অফিসে এসে জানালেন যে স্যার ঘটনা সত্য , বেলায়েত টাকা নিয়েছে স্বীকার করেছে , আমি বললাম বেলায়েত কি আদমের ব্যবসা করেন ? সে বলল না স্যার,

 তাহলে সে কেমনে লোক পাঠাবে ? বেলায়েতের ছেলে ঢাকায় এই ব্যবসা করে, আর বেলায়েতের কোন পেশা নাই, আগে হিন্দু ছিল পরে মুসলিম হইছে, আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল, গত কয়েক বছরে এই আদম পাঠায়া  আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে,
আমি সেই তিন তরুণ কে জিজ্ঞেস করলাম যে বেলায়েত তো আদম ব্যবসায়ী না কিন্তু এরপরেও কেন তাকে তোমরা টাকা দিয়েছ ? তারা বলে স্যার এক বছর আগে পনের জন রে মালয়েশিয়া পাঠায়-ছিল তখন আমরা বিশ্বাস কইরা টাকা দিছিলাম  কিন্তু এই বাটপার বেলায়েত সেই পনের জন রে মালয়েশিয়াতে না পাঠায়া মালদ্বীপ পাঠায় দিছিল , তারা মালদ্বীপে মাস-খানেক জেল খেটে দেশে ফিরা আসে।  আমি জিজ্ঞেস করলাম যে সেই পনের জন কই ?তারা নাকি এমপি সাহেবের কাছে গেলে এমপি সাহেব বেলায়েত রে ডেকে সালিশ করে দিছে , বেলায়েত আস্তে আস্তে টাকা দেওয়ার কথা কিন্তু এই তিনজন কে সে আমলেই নিচ্ছে না ।


     
 ৩)
চোরের আবার বড় গলাআমি ভাবতে লাগলাম একজন সাধারণ গ্রামের কৃষক তার কি এত প্রতারণা করার সাধ্য ! নিশ্চয় এখানে আরও আরও অনেকেই আছেন যারা প্রান্তিক লেভেলে বেলায়েত কে দিয়ে এটা করাচ্ছেন, এস আই মাসুদ আলম কে বললাম সেই বেলায়েতের সাথে এদের বসিয়ে টাকার বিষয়ে একটা সুরাহা করে দিতে , যদিও এটা পুলিশের কাজ না তারপরেও এই সহজ সরল তিন তরুণ দের অসহায়ত্ব দেখেই এটা করা ।

/৮ দিন পার হল, এসআই মাসুদ কে সেই বেলায়েত যেভাবে বলেছিলেন তার কিছুই করছেন না উলটো এদের কে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন, আমি নিজেও একদিন বেলায়েতের সাথে কথা বলে তাকে আমার সাথে আমার অফিসে দেখা করতে বললাম  কিন্তু খুব ধূর্ত  বেলায়েত বলল স্যার যাওয়া লাগত না, হেরা তার আগেই টেহা পায়া যাইত !!
কোন কাজ হল না, আরও পনের দিন গেল কিন্তু বেলায়েত এখন বাড়ি ছেড়ে দিয়েছে , সেই তিন যুবকের ফ্যাকাসে আর করুন মুখ প্রতিদিনই দেখতে লাগলাম, তাদের কে বললাম তোমাদের সারাদিন সারারাতের কাজ একটাই আর সেটা হচ্ছে বেলায়েত কে খুঁজে বের করে আমাকে ফোন দিবে আমি পুলিশ পাঠিয়ে গ্রেফতার করে আনব , এতে খুব কাজ হল,

তিন দিনের মধ্যে বেলায়েত কে পাওয়া গেল , তাকে গ্রেফতার করে আনার পরে সেই তিন যুবক কে কথামত প্রতারণার মামলা করতে বললাম , আমি বেলায়েত কে বিভিন্ন বিষয় জিজ্ঞেস করতে লাগলাম, হঠাৎ একটা ফোন পেয়ে পুরো বিগড়ে গেলাম, পুলিশ সুপার মহোদয় ফোন করেছেন কড়া ভাষা
- এই তুমি কি আমাকে চাকুরী করতে দিবে না ?
আমি বললাম কেন স্যার কি হয়েছে ?

-       তুমি কাকে গ্রেফতার করেছ ? আমাকে স্বরাষ্ট্র সচিব ফোন দিয়েছে , কোন বেলায়েত কে তুমি গ্রেফতার করেছ , তুমি এখনি তাকে ছেড়ে দাও ,

আমি স্যার কে পুরো বিষয়টা বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করলাম , স্যার কোনকিছুই মানতে চাইছেন না, খালি বলছেন এক্ষুনি ছাড়ো,তারপরে কথা

আমি বেলায়েত কে কোন শর্ত /মুচলেকা ছাড়াই ছেড়ে দিলাম
মনে মনে ভাবতে লাগলাম যে এটা হতেই পারে না, স্বরাষ্ট্রসচিব এই প্রতারকের জন্য ফোন দিবেন ? নিশ্চয় এখানে কোন কিছু আছে , আমি মনে মনে একের পর এক প্লট গড়তে লাগলাম কিভাবে কি করা যায়  ।
 পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের LIC  তে যোগাযোগ করে এসপি স্যারের মোবাইলের ঐ সময়ের  ইনকামিং কল টির নাম্বার ও লোকেশন জানতে চাইলাম ,
একটা টিএনটি নাম্বার পাওয়া গেল, সেটার লোকেশন ও ঠিকানা পাওয়া গেল পল্টনের একটা ফোন ফ্যাক্সের দোকান, আমি একটু চাংগা হলাম, সাথে সাথে   এস পি স্যার কে ফোন দিয়ে বললাম-  স্যার স্বরাষ্ট্র সচিব মহোদয় কি টিএনটি এই নাম্বার থেকে কল দিয়েছিল?

স্যার বলল হ্যাঁ , তুমি কেমনে জানলে ?
আমি বললাম স্যার আমি ঐ ফোন টির লোকেশন ও ঠিকানা পেয়েছি,
স্যার -বল  কি পেয়েছ ?
স্যার ওটা পল্টনের একটা ফোন ফ্যাক্সের দোকান,
আমি বললাম স্যার স্বরাষ্ট্র সচিব মহোদয় কি পল্টনের ফোন ফ্যাক্সের দোকান থেকে ফোন দিবেন?
স্যার চিন্তিত হয়ে পড়ল, শুধু বলল এটা   fraud .

            
                                          ৪)

পুলিশ সুপার মহোদয় এবার আমাকে নির্দেশ দিলেন বেলায়েত কে গ্রেফতার করার জন্য, কিন্তু ধূর্ত বেলায়েত সে সুযোগ আমাদের দেয়নি । সে এলাকা ছেড়েই পালিয়েছেএবার পনের জন যুবক ও সেই তিন জন এলো আমার অফিসে, পনের জনকে মাত্র এক কিস্তি টাকা দিয়েছিলকিন্তু কি করার আছে যদি বেলায়েত কে না পাওয়া যায়, কয়েকদিন পরে শিলাসী থেকে ২ যুবক এলেন, আমাকে যা বললেন তার মানে হচ্ছে নজরুল নামে কাস্টমস বিভাগের বড় একজন কর্মকর্তকে  ছয় লক্ষ টাকা দিয়েছেন ঢাকা বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দরে এই দুজন চাকুরী পাবেন । কিন্তু প্রায় দেড় বছর পার হল  নজরুল তাদের টাকাও দেয় না আবার চাকুরীও দেয় না ।নজরুলের বাড়ী ঠিকানা এসব চাওয়ার পর দেখা গেল সেই আউটবাড়িয়া , তাহলে সব প্রতারকের বাড়ি কি ঐ এলাকায়??
এবার সেই তিন জন বলে উঠল স্যার- এই নজরুলেরই আদমের ব্যবসা, আমাগো টেকা গুলা হের কাছেই,
মানে??
স্যার বেলায়েতের ছেলেই নজরুল, সে বড় অফিসার বিমানবন্দরে, হের লগে সব বড় বড় মানুষের চলাফেরাদ্যাখেন স্যার আপনারা হের বাপেরে ধইরা রাখতে পারেন নাই !
তার মানে পুলিশ যে বেলায়েতকে ছেড়ে দিয়েছে এটার ফলে তারা তাদের প্রতারণার উপকরণ এর  দ্বার আরও বাড়িয়েছে ,
নজরুল কোথায় থাকে? কি করে এসব নানা বিষয় জানতে চেষ্টা করলাম, সে গফরগাঁও আসে কিনা ?
বলে স্যার খুব সেয়ানা , গফরগাঁও আসে না, ঢাকা মিরপুর পল্লবীতে থাকে ।
মোবাইল নাম্বারও অনেক গুলো ,মানে একজন প্রতিষ্ঠিত(!) প্রতারক যা যা করেন এই নজরুল ও তাই, মনে মনে খুব হতাশ হচ্ছিলাম, কোনভাবেই নজরুল অথবা তার বাবা কে গ্রেফতার করতে না পারলে স্বস্তি আসবে না ।

                             ৫)

তখন সবেমাত্র আমার DELL এর ৫১২ mb RAM এর ৮০ জিবি হার্ডডিস্কের ঐতিহাসিক ল্যাপটপ টা কেনা হয় ।মুভি দেখা, টুকটাক ওয়ার্ডের কাজ আর সদ্য রেজিস্ট্রেশন কৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আইডি খুলেছি, কিন্তু কাকে কাকে যোগ করব বা চ্যাট করব খুঁজে পাই না। দু একজন যা পাই তাদের কে মেসেজ লিখেছিলাম ওয়ালে – bro how are you?

Where are you ? এসবের মানে হচ্ছে ব্যবহার বিধিটি তখন ও আয়ত্তে আসে নাই, এখন ও অনেক কে দেখি ওয়ালে এভাবেই লেখেন তখন বুঝি উনি নতুন ফেসবুকে ! আমি তখন ইন্টারনেট ইউজ করি মোবাইলের দ্বারা , মোবাইলের কানেকশন টা কেই ডাটা কেবলের দ্বারা ল্যাপটপে কানেক্টেড করে ইউজ করি । এজন্য ল্যাপটপে ইন্টারনেট সেটিং দেওয়ার জন্য স্থানীয় একজন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র  প্রায় আসতেন  এবং টুকটাক সমস্যাগুলো সমাধান করে দিতেন । এভাবে আস্তে আস্তে সেই ছেলেটির সাথে আমার একটা ভাল সম্পর্ক হয়ে গেল , নতুন কোন সফটওয়ার, এপস, এন্টি ভাইরাস এসব সে আমাকে সরবরাহ করতএকদিন সে আমাকে একটা অনুরোধ করল,
-স্যার আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মাত্র বিশ হাজার টাকা মেরে দিয়েছে এক ছেলে, ছেলেটার নাম নজরুল , আউটবাড়িয়া, আবারো সেই নজরুল ,
জানতে চাইলাম সে গফরগাঁও কবে আসে বা আসবে ?কিন্তু কেউ তা ক্লিয়ার বলতে পারে নাআমি তাকে ও তার বন্ধু কে একটা কাজ করতে বললাম, নজরুলের পরিবারের/আত্মীয়দের কাউকে খুঁজে বের করে তার সাথে নিয়মিত খাতির রাখার জন্য বললাম ।

কয়েকদিন পরেই খুব সকালে আমার অফিসের সামনে ভীষণ আর্তনাদ করে বুক ফাটান কান্নার শব্দ ,  অর্ডারলি এসে বলল স্যার- বড়বড়িয়া গ্রামের এক ছেলে তার ভিটামাটি বেইচা গরু বন্ধক দিয়া একজন রে চাকুরীর জন্য টাকা দিছে , সেই লোক চাকরী দিছেও কিন্তু জয়েন করতে গিয়া দেখে ভুয়া !!
আমি তাকে দুপুরে আমি ফ্রি হলে আসার জন্য বললাম ।
দুপুরে সব শুনে জানলাম যে এই টাকাও নিয়েছে নজরুল , আজকে তাকে ও তার পরিবারকে বাড়ির ভিটা থেকে বের হতে হয়েছে বলেই উপায়ান্তর না দেখে আমার অফিসের সামনে এসে কান্নাকাটি, তাকে বললাম  অর মত প্রতারককে কেন টাকা দিছ ?
সে বলে না স্যার সে তো বিমানবন্দরে কাস্টমসের বড় অফিসার, আমারে নিয়া বিমানবন্দরে অনেক ঘুরছে, সে কাস্টমসের পোশাক পইড়া ঘুরে ভিতরে, মানুষে তারে স্যালুট দেয়,! বুঝলাম তাকে কি শক্তভাবে কনভিন্সড করেছে এরপরে তার কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা নিয়েছে, তাকে পোশাক বানিয়ে দিয়েছে কাস্টমসের , এবং  সর্বশেষে একটা নিয়োগপত্র হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছে এই টা নিয়ে তুমি অমুক তারিখে গেলেই যোগদান করতে পারবে , এরপরে নির্ধারিত দিনে যাওয়ার পরে সে জানতে পারে যে তার নিয়োগপত্র ও পোশাক সম্পূর্ণ ভুয়া ।


         ৫)
গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলোর এই সরলতাকে পুঁজি করে যে প্রতারক এদের নিঃস্ব করেছে তাকে আইনের আওতায় আনতে না  পারলে পুলিশ কিভাবে জনগণ কে সেবা দিবে? মনে মনে পণ করে ফেললাম যে এই প্রতারক নজরুল কে আমি ধরবই ধরব !
এরমধ্যে আমার একজন সম্মানিত ব্যাচ-মেট আমাকে ফোন দিলেন , তার নানার বাড়ি গফরগাঁও , তিনি খুব হতাশ মর্মাহত , আমাকে বললেনভাই তুমি আমাকে একটু হেল্প করবে ? আমি বললাম অবশ্যই , তার আগে বলেন কি বিষয় ? তিনি আমাকে রাতে কল দিবেন তখন বিস্তারিত বলবেন , যথারীতি রাত ১১ টায় আমাকে ফোন দিলেন বলতে লাগলেনভাই আমি খুব বিপদে পড়েছি, আমার নানার বাড়ির কাছে বাড়ি একটা ছেলে সে চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টমসের এসি ,আমার শশ্বুরের কার কিনে দিবে সে , সব ঝামেলা সে ফেস করে পোর্ট থেকে গাড়ি ঢাকায় এনে দিবে 

আমার শশ্বুর তাকে তের লক্ষ টাকা দেন এই জন্য , সে কথামত পোর্ট থেকে প্রিমিও একটা গাড়ী নিয়ে আসে , কয়েকদিনের মধ্যে সেই গাড়ীর ইঞ্জিনে গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়ায় নজরুল তা আবার ফেরত নিয়ে যান , দুদিন পরে লক্ষ টাকা ফেরত দিয়ে বলে যে এক সপ্তাহের মধ্যে বাকী টা দিবে কারণ আমরা যে মডেল খুজতেছিলাম সেটা তখন শেষ , তাই কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে এরপরে মাস পার হয়ে গেলেও সে কোন টাকা পয়সা ফেরত দেয় নাই , তার মিরপুরের বাসায় ডিবি কে নিয়ে অভিযানে যাই কিন্তু সেখান থেকে সে পালিয়েই ক্ষান্ত হয় নাই , আমার এস-পিকে ফোন দিয়েছে যে আমি স্বরাষ্ট্র সচিব বলছি, আপনার এএসপি নিয়ম বহির্ভূতভাবে আমার একজন আত্নীয়ের বাসায় ডিবি পুলিশ কে সাথে নিয়ে রেইড দিয়ে তাদের কে হয়রানি করেছে !সেই ব্যাচ-মেটের গলা ভারি হয়ে গেছে এটা বলতে বলতে , বলে এখন প্রতারক কেও পেলাম না আর এসপি আমার কথা বিশ্বাস করছে না !!

আমি বললাম ভাই আমি কিভাবে-হেল্প করতে পারি ? তখন বললেন যে এটা সেই আউটবারিয়ার বেলায়েতের ছেলে নজরুল , আমি বললাম ভাই আপনি এখনও কি বিশ্বাস করেন যে সে এসি কাস্টমস ? বলে হ্যাঁ , নামে একজন আছে , আমি বললাম না- আমাদের আরও নিশ্চিত হওয়া উচিত এরপরে      এসি কাস্টমস, চট্টগ্রাম বন্দ্‌  কে ফোন দিলাম, নাম, পদবি বিসিএস ব্যাচ ঠিক আছে কিন্তু উনার বাড়ি সাতক্ষীরা !
হাসিতে পেট ফেটে যাচ্ছে কিন্তু হাসতে পারছি না

সত্যি এতো ফ্রাঙ্ক উইলিয়াম আবাগ্নেল কেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে , ফ্রাঙ্ক উইলিয়াম আবাগ্নেল  যিনি ১৫ থেকে ২১ বছর বয়সের মধ্যে  কখন   এয়ারলাইন পাইলটচিকিৎসক, কারা এজেন্টের  মার্কিন ব্যুরো, এবং একজন আইনজীবী সহ কমপক্ষে আট রূপে এসব  পরিচয় ধারণ করেন অকল্পনীয় ভাবে আস্থাবান প্রতারকের পাতায় নাম লিখেন এবং যাকে পরবর্তীতে  এফবিআই আমেরিকান নিরাপত্তা পরামর্শক  হিসেবে নিয়োগ দেন

এরমধ্যে  হঠাৎ করে সেই কম্পিউটার  সাইন্সের সেই ছেলেটা ফোন দিল কি খবর জানতে চাইলে সে বলে স্যার নজরুলের আপন চাচাত ভাইকে পাওয়া গেছে যে নিজেও নজরুলের কাছে পনের হাজার টাকা পায় ! এক্সিলেন্ট
মনে মনে এমন কাউকেই খুজছিলাম , কিন্তু চাচাত ভাই যা জানাল তা হচ্ছে সে  গফরগাঁও বা ময়মনসিংহে আসে না, তাহলে কিভাবে কি ? চাচাত ভাই বেশ অভাবী , তাকে বললাম তুমি শুধু নজরুল কে ধরিয়ে দাও , তোমার পনের হাজার টাকা পেয়ে যাবে । সে শুধু বলল স্যার আমি সাধ্যমত চেষ্টা করব ।

বেশ কিছুদিন গত হল, ইতোমধ্যে নজরুলের জালিয়াতি প্রতারণার নানান ঘটনা থানায় আসতে থাকল , পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর এ চাকুরী , কাস্টমসে চাকুরী , বন্দরে চাকুরী এসব মিলিয়ে তার অভিযোগ পাওয়া গেল ৩৪ টি !
আমি এবং তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আফসার আহমেদ দুজনের চক্ষু চড়ক গাছ ! একটা ছেলে যে ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়েছে তার এত টাই ক্যারিশ্মা , হঠাৎ করে নজরুলের সেই চাচাত ভাই এর ফোন , স্যার কোথায় আছেন ? আমি বললাম গফরগাঁও এ , আমার অফিসে , বলল স্যার নজরুল গফরগাঁও আসতেছে , তাই নাকি ? এটা কতটুকু সত্য ? সে বলে ১০০ ভাগ ,স্যার ওর ফুফা মারা গেছে মালয়েশিয়াতে , সেই ফুফার লাশ নিয়া আসবে , আমি বললাম তুমি কই ? সে বলল স্যার আমি বিমানবন্দরে , আমিও লাশের সাথে যাব, ওয়াও !

অনেক ভাল খবর , আমি সাথে সাথেই ফোর্স ও অফিসার প্রস্তুত করতে লাগলাম, ঢাকা থেকে গফরগাঁও ঢুকবার তিনটি পয়েন্টেই ব্যারিকেড দেয়ার ব্যবস্থা করলাম এবং  অফিসার ও ফোর্স মোতায়েন করলাম । চাচাত ভাই কে ফোন দিলাম, কখন রওয়ানা দিবে তোমরা ? বলল -৩ টায় , তখন বাজে দুপুর ১ টা আমি ৩ জায়গায় ব্যারিকেড ও ফোর্স রাখার পরেও তৃপ্ত হতে পারছিলাম না, মনে হচ্ছে এই ধুরন্ধর পুলিশ কে ফাকি দিতে পারে ।

২ টার দিকে আমি নিজেই বের হয়ে ভালুকা থানায় আসলাম, ভালুকা থানার ৪ জন সাব ইন্সপেক্টর ও ১০ জন ফোর্স সাথে নিয়ে ঢাকা ময়মনসিংহ হাইওয়েতে যেখানে টোলের জন্য গাড়ি থামে সেখানে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম । অফিসার ফোর্স রাও ঠিক বুঝতেছেনা কেন এখানে অপেক্ষা করছি ? সাড়ে তিনটার সময় আবার ফোন দিলাম চাচাত ভাই কে , রওনা দিয়েছ? সে শুধু বলল হ্যাঁ, ও আছে ? বলে হ্যাঁ, তার কিছুক্ষণ আগে চাচাত ভাই বলে দিয়েছে যে নজরুল সাদা পাজামা পাঞ্জাবী পরিহিত ,
দুইটা মাইক্রো, প্রথম টাতে-লাশ আর দ্বিতীয়টাতে নজরুল সহ আত্মীয়স্বজনেরা , এটা ছিল চাচাত ভাই এর দেওয়া তথ্য । বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে একটি মাইক্রো এলো লাশ-বাহী, সেটা থামিয়ে লাশ এর কাগজ পত্র দেখতে চাইলে ড্রাইভার বলল পিছনে আরেকটা মাইক্রো আছে সেখানে একজন বড় স্যার আছেন, উনার কাছে সব কাগজ ! 
তার মানে মাল এখানে ড্রাইভারের সামনেও এসি কাস্টমস !! হাহাহা




ঐ গাড়ি না আসা পর্যন্ত আপনি যেতে পারবেন না , কিছুক্ষণের মধ্যে সেই কাঙ্ক্ষিত মাইক্রো এলো, কানে কানে অফিসারদের বললাম  মাইক্রো থেকে সাদা পাজামা পাঞ্জাবী পরিহিত  একজন গ্রেফতার হবে, সবাই সতর্ক থাকুন ,
মাইক্রো থামা মাত্রই আমি বললাম লাশ এর কাগজপত্র দেখান , সাথে সাথেই ভিতর থেকে   খুব ভাব নিয়ে বলে উঠল- আমি এসি কাস্টমস নজরুল ইসলাম, আমি ওর ভাব দেখে বললাম নিচে আসেন পেপার গুলো নিয়ে , সে বলে বললাম না আমার পরিচয়!এরপরে যথারীতি একটু হস্তচালিত আদর ধপাস ধপাস করে গালে !! তুই  এসি কাস্টমস নজরুল ইসলাম,  , আয় তোর জন্য বসে আছি , আয় ,আমরা সব অফিসার রা মিলে তাকে নামাতে পারছিনা কারণ গাড়িতে থাকা মহিলারা বাধা দিচ্ছেন, ২ বার চেষ্টা কর ব্যর্থ হয়ে মহিলাদের বললাম এবার আপনারা বাধা দিলে কিন্তু পুলিশ কাজে বাধা ও পুলিশ লাঞ্চিত করার  মামলায় পড়বেন এবং আমরা কিন্তু এবার  বাধা  দেওয়ার জবাব দিববহু  কষ্টে নামালাম কাঙ্ক্ষিত সেই প্রবঞ্চক, ঠক  প্রতারক কে  ! 



থানাতে নিয়ে আসার পরে তাকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষে বসিয়ে আদ্যপ্রান্ত দেখছিলাম, হালকা ছিপছিপে গড়ন, শ্যাম বর্ণের মাঝারি উচ্চতার এই ছেলে কে দেখে ভীষণ নিরীহ মনে হয় যা তার এই  প্রতারণার ক্ষেত্রে আরো সহায়ক হয়েছে । জিজ্ঞেস করলাম এরকম নানান কিসিমের প্রতারণার ধারনা তাকে কে দেয় তার সাথে ক্রেডিট কার্ড আর ভিজিটিং কার্ড পাওয়া গেল অন্তত ১০০ টা , সব সচিব/অতিরিক্ত সচিব , ডিসি ট্যাক্স, কাস্টমস, সহ এস-পি , ডিআইজি এমন পদবীর কার্ড , মোবাইলের সিম কার্ড  পাওয়া গেল ৬ টি ,৩০ মিনিট হয়েছে আনুমানিক তাকে থানায় আনার , ভিতর থেকে অনেক অনেক কোলাহল আর চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছে । ওসি সাহেব কে বললাম দেখেন তো কিসের এত শব্দ , ওসি বের হয়ে এসে সেন্ট্রি কে বললেন মেইন কলাপ্সিবল গেট লাগিয়ে দিতে , আমাকে বললেন স্যার কাইন্ড-লি একটু এদিকে আসবেনআমি উঠে উকি দিয়েই একটা ধাক্কা খেলাম , থ বনে গেলাম, এ আমি কি দেখছি , বাইরে অন্তত  ৫০০ মানুষ তারা নজরুল গ্রেফতারের  খবরে এসেছে , এদের বেশির ভাগই নজরুলের কাছে টাকা পায় অথবা নজরুল তাদের কে কোন কিছুতে লোভ দেখিয়ে টাকা নিয়েছে , কি ক্ষমতা এই ছেলের এত গুলো মানুষকে ঠকিয়েছে ! 

আমি হ্যান্ড মাইকে বলতে লাগলাম আপনারা চলে যান , আপনাদের অভিযোগ থাকলে তা লিখিত আকারে আমাদের দিন আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিব, সবাই নারাজ, তারা নজরুল কে তাদের হাতে ছেড়ে দিতে বলে ,এরপরে ভিতরে এসে নজরুল কে বললাম যে তোমাকে এদের হাতে ছেড়ে দেই ?  ওসিকে বললাম চলেন ওরে পাবলিকের হাতে দিয়ে দেয় , ওসির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে বুঝালাম যে এটা তাকে ভয় দেখানো , কিন্তু এতে কাজ হয়েছে , নজরুল আমাদের হাতে পায়ে ধরছে তাকে পাবলিকের হাতে না দিতে , আমি বললাম এক শর্তে  তোমার কথায় রাজী হতে পারি-তুমি যদি শুরু থেকে আজ পর্যন্ত তোমার সব অপরাধ গুলো , কিভাবে এই প্রতারনার  শুরু এসব বল তাহলে তোমাকে আমাদের  হাওলাতেই রাখব ।
সে বলতে শুরু করল
গ্রামে বেড়ে উঠা নজরুলের পিতার ভীষণ অনটন আর অভাবের সংসার , প্রায় না খেয়ে থাকতে হয়, এমন অবস্থায় সে অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় একই গ্রামের একজন যুগ্ম সচিবের সহায়তায় ঢাকা অফিসারস ক্লাবে দারোয়ানের কাজ নেন, দারোয়ানের কাজের সুবাদে সে কোন অফিসারের পদ মর্যাদা কেমন তা  ধীরে ধীরে বুঝতে শেখেন ।এরপরে  শুরু হয় মন্ত্রণালয়ে যাওয়া সেখানে তিনি সবাই কে ঐ জয়েন্ট সেক্রেটারির আপন ভাগ্নে পরিচয় দিতে থাকেন । যার ফলে এখানেও কিছু লোক তার প্রতারণার স্বীকার হলেন । মাত্র দুই  ঘণ্টায় গফরগাঁও থানায় মামলা হল- ৪ টি , সবই ৪২০/৪০৬ দঃবিঃ তে ।  
কিছুক্ষণ পরে একটা ফোন পেলাম , আমাকে ধন্যবাদ দিতে লাগলেন বার বার , বললেন আপনি আমার অনেক বড় একটা কাজ করে দিয়েছেন, এই ছেলে যদি ধরা না পরত তবে আমার আর কখনো সচিব হওয়া হবে না, সব খানে বলে আমার আপন ভাগ্নে , এমন কি মন্ত্রণালয় থেকে তাকে বের করে দিলেও আশেপাশের লোকজন দের সে এমন ভাবে বলে যে গরীব বলে মামা আমার পরিচয় সবার কাছ থেকে গোপন করে , সবাই তার কথাই সত্য ধরে নেয় । 
আমি কিছুক্ষণ পর তার বুকে 'প্রতারক নজরুল' এই সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে সারা গফরগাঁও এর জনবহুল স্থানগুলোতে গাড়ি থেকে নামিয়ে নামিয়ে সবাইকে দেখিয়েছি আর ওকে বলতে বলেছি যে -  আমি প্রতারক নজরুল, আমি প্রতারক নজরুল, আমি প্রতারক নজরুল----



তাকে ধরার ছবি, ক্রেডিট কার্ড , ভিজিটিং কার্ডের ছবি সহ ফেসবুকে শেয়ার দিয়েছি সেই ২০০৮ থেকে । এতক্ষণের বর্ণনা গুলো ২০০৮ সালের  কিন্তু সাম্প্রতিক কালে  ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আবার এই প্রতারককে  ডেপুটি কমিশনার কাস্টমসের পরিচয়ে ব্ল্যাকমেইল  করে টাকা আদায়ের সময় গ্রেফতার করে
এছাড়া সে বিসিএস ক্যাডার প্রশাসন এই পরিচয়ে মিরপুরের রূপনগরে ভুয়া বিয়ে করতে গিয়েও গ্রেফতার হন !
বিশ্বে প্রতারণার মার্কিন  কিংবদন্তী  ফ্রাঙ্ক উইলিয়াম আবাগনেল  আর বাংলাদেশের অজপাড়াগা এর নজরুল ইসলামের  মধ্যে কে বেশি  ঠকধূর্ত  ও আত্মবিশ্বাসী প্রবঞ্চক ?


****
রাজধানীতে দুইজন ভূয়া ট্যাক্স কর্মকর্তা গ্রেফতার।
------------------------------------------
নজরুল ইসলাম নিজেকে যুগ্ম কর কমিশনার এবং আশরাফুল আলম আমজাদ কর পরিদর্শক হিসেবে পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সম্ভ্রান্ত নাগরিকদের ট্যাক্স রিটার্ন জমা এবং আপিল সংক্রান্তে প্রতারনা করে আসছিল। অবশেষে তারা গ্রেফতার হল। ডিবি - উত্তরের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টীম গত ১৮/০১/২০১৭ তারিখ সন্ধ্যায় উক্ত ভূয়া বিসিএস কর ক্যাডারের উপ- কর কমিশনার এবং কর পরিদর্শক গ্রেফতার করেন।এ সংক্রান্তে ভাটারা থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয়েছে।




২টি মন্তব্য: