রবিবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৮

স্যালুট নটরডেম কলেজ ,স্যালুট মামার ভালবাসা!







 ১৯৯৫ সাল ,  তখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি, নটরডেম কলেজের কড়া শাসন আর পড়ার চাপে সপ্তাহের পাঁচ দিন থাকতে হত তটস্থ ও বিদ্যা-সিদ্ধ(অতিরিক্ত পড়ার চাপে সিদ্ধ) হয়ে গৎ বাধা দিন ও রাত,থাকতাম আরামবাগের মেসে ,ভোগান্তি আর অশান্তির শেষ ছিল না ।বৃহস্পতি বারে তাই আমাদের বৃহস্পতি থাকত তুঙ্গে, কারণ শুক্র ও শনি দুদিন বন্ধ , বৃহস্পতি বার দিন বিকেলে চলে যেতাম সাভারে নানা নানীর কাছে আবার কোন বৃহস্পতিবার যেতাম টাংগাইলে গ্রামের বাড়ীতে ,সাথে থাকত বন্ধু সুপ্রিয় তৌফিক মাম্মা ,মামার সব কিছুই পোক্ত বয়সের তুলনায় একটু বেশি মাত্রায় আগে। মামা তখন বিশাল প্রেমিক আর নায়িকা থাকেন ভারতেশ্বরী হোমস এ,বিশেষ কারণে নায়িকার নাম লিখতে পারছি না ,ধরি তার নাম নদী , তো নদীর সাথে মামার দেখা করতে হবে কিন্তু কেমনে ভারতেশ্বরী হোমস তো খুব কড়া ঝাঁঝাল শাসন আর নিয়ম কানুন , যেহেতু ভারতেশ্বরী হোমস আমার গ্রামের বাড়ির কাছেই তাই এমনি এক বিকেলে আমরা দুজন বের হলাম টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে, পরের দিন নায়ক নায়িকার দেখা হবে বহুদিন পর , বাড়িতে পৌঁছে রাতেই দুজনে প্লান করলাম কাল কিভাবে কি করব ? যেভাবেই হোক মিশন পসিবল করতে হবেই হবে , ভিতরে যাবে এমন কোন গার্ডিয়ান কে পটাতে হবে যাতে করে আমাদের কে তার সাথে করে ভিতরে নিয়ে যান , যে কথা সেই কাজ।



পরের দিন সকালে বেড়িয়ে পড়লাম দুজনে হোমসের উদ্দেশ্যে, গেটে পৌঁছেই দেখি অনেকেই দাঁড়িয়ে আছেন ভিতরে ঢুকবে বলে , তাদের আশেপাশে যেতেই যেভাবে তারা তাকাচ্ছেন তাতে তাদেরকে ম্যানেজ তো দুরের কথা কোন কথা বলারই সুযোগ নেই, এরই মাঝে দেখি মামা এক আপার সাথে কথা বলছেন- আপা আমার ছোট বোন এখানে পড়ে , আমরা দিনাজপুর যাচ্ছিলাম কিন্তু মির্জাপুরে এসে আমাদের গাড়ির ইঞ্জিনে সমস্যা অনেক সময় লাগবে তাই এখানে এলাম কিন্তু বোনের সাথে দেখা করার কোন উপায় নাই, আপনি যদি আপনার ভাই বলে আমাদের দুজন কে নিয়ে যেতেন তাহলে খুব উপকার হত , বরফ গলতে শুরু করেছে , আপা বলছেন ঠিক আছে কর্তৃপক্ষ সন্মতি দিলে আমার সমস্যা নাই । 


যথারীতি উনার সাথে যাওয়া শুরু করলাম, যেই গেটে পাস চেক করা হচ্ছে সেখানে এসে আপার পাস দেখে ভিতরে যেতে বললেন ,আমরাও ঢুকার প্রস্তুতি নিচ্ছি এমন সময় বললেন যে আপনার সাথে আর কেউ যেতে পারবেন না । অভাগা যেদিকে চায় সাগর নয় হিমালয় পর্বত ও শুকিয়ে যায়! সেই অচেনা আপা ঢুকার সময় বলে গেলেন যে আপনারা হাসপাতালের ভিতরে যান ওখান থেকে দেখা যায় এবং টুকটাক কথাও বলা যায়, হাসপাতাল মানে কুমুদিনী হাসপাতাল । যে কথা সেই কাজ ,হাসপাতালের ভিতরে গিয়ে খুঁজে খুঁজে বের করলাম যে কোন পাশ থেকে ভালভাবে দেখা যায় কথা বলা যায় , কিছুক্ষণ পর পেলাম, ওখানে গিয়ে দেখি মেয়েদের আলাদা আলাদা রুমের জানালা খোলা ,কেউ কেউ বসে আছেন, মেয়েরা আমাদের দেখছে মাত্র দুজন ছেলে আর অসংখ্য মেয়ে ,উড়াল চুম্বন ছুড়ছে ,মুখ ভেচকি মারছে ! মনে হচ্ছে আমরা দুজন মেয়ে আর ওরা ছেলে !



 মামা এরমধ্যেও বার বার চিৎকার করে বলছে নদী কে ডেকে দিবেন ? খুব জোরে বললে একটু শোনা যায় এমন, এভাবে অনেক ক্ষণ চিৎকার চেঁচামেচি করেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না এমন সময় দেখি একটা ছেলে পিছন থেকে আমাদের ফলো করছে , তার দিকে তাকাতেই সে বলল আপনারা এখানে না থেকে পিছন দিকে নদীর ধারে যান ওখানে কথা বললে শুনা যাবে , এই জায়গার চাইতে ওখানে বেশি কাছাকাছি, ব্যর্থ মনোরথে দুজনে হোমসের পিছনের দিকে নদীর পাশে চলে এলাম ।

বিধিবাম !কিসের কী! এটাও অনেক দূর যেখান থেকে কথা বললে কিছুই শুনা সম্ভব না , দুজনেই খুব দুশ্চিন্তা মগ্ন হয়ে পড়লাম । আমরা দুজন একসাথে কিন্তু কোন কিছুতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছি এমন ঘটনা বিরল ।এরমাঝে খেয়াল করি যে হোমসের যে গেট টি নদীর ধারে সেটি খোলা ,বেশ কিছু চীনা পর্যটক এসেছেন এখানে ঘুরে ঘুরে দেখছেন ,তারা ঐ গেট দিয়ে বের হয়ে নদীতে রাখা ইঞ্জিন চালিত নৌকাতে উঠছেন কিন্তু গেট টি খোলা । সবাই বের হয়েছেন গেট এ গার্ড বা অন্য কেও নাই , এই সুযোগ মনে হয় আল্লাহ আমাদের করে দিলেন, আমরাও এর সদ্ব্যবহার করে ফেললাম,মুহূর্তের মধ্যেই ভিতরে ঢুকলাম, সোজা হোমসের একেবারে ভিতরের গেটে , এ যেন সাত সমুদ্দুর তের নদী পার হয়ে নায়ক এলো নায়িকার কাছে ।


মামা তো গেটে এসেই একটা মেয়েকে বলেছে নদীকে ডেকে আনার জন্যে , কিছুক্ষণের মধ্যে নদী হাজির , একে বারেই মুখোমুখি হাতে হাত রেখে এভাবে দেখা হবে এটা নদী চিন্তাই করে নি ,সে বলল তোমরা এই খানে কেমনে আসলা ?
মামা –খুব বাহাদুরির ভঙ্গী তে বলছে তোমার জন্যে এটা তো খুব ছোট একটা কাজ ,তুমি চাইলে আমি পৃথিবী টাকে হাতের মুঠোয় এনে তোমার হাতে এনে দিতে পারি ! আমি কাবাবের হাড্ডি না হয়ে পাশেই ঘুরাঘুরি করতে লাগলাম, এর মধ্যে নির্ধারিত সময় প্রায় শেষ, অনেকেই বের হচ্ছেন, নায়ক নায়িকার হাতে হাত রেখে আলতো ছোয়ায় শান্ত হয়ে বিদায় নিলেন, বিচ্ছেদে বাড়ে প্রেম বিদায়ে সে কাঁদেন ! 


আমরা যে গেট দিয়ে ঢুকেছিলাম সেখানে গিয়ে দেখি গেট তালাবন্ধ ,তাহলে উপায় ? উপায় একটাই সবাই পাস দিয়ে যে গেট দিয়ে ঢুকেছে সেদিক দিয়ে বের হওয়া , ঐ গেটে যেতেই দেখি আবার পাস চেক করে করে বের করছেন ,আমাদের তো পাস নাই তার মধ্যে একবার সেই আগুন্তুক আপার সাথে গেটের লোকজন দেখেছে যে এরা ঢুকতে এসেছিল , আমাদের কে দেখেই বলে কি ব্যাপার আপনারা কিভাবে ভিতরে গেলেন ,আপনাদের পাস কই ? পাস দেখাতে পারছিনা ,তাহলে তোরা ভিতরে ঢুকছিলি চুরি করে চুরি করতে না হয় কোন মেয়ের রুমে ঢুকছিলি আকাম করতে !

মুহূর্তের মধ্যে সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা এই ভদ্র লোকের কথার ধরন পালটে গেল, আপনে থেকে তুই ,  চোর ! আমাদের দুজন কে তাদের গার্ড রুমে আটকিয়ে রাখা হল, তিনি বলছেন থানায় ফোন কর ,এই শয়তান দুই টারে আজকে চালান করার ব্যবস্থা করতেছি , জানালা দিয়ে আমরা আকুতি মিনতি করছি ।



ভাই প্লিজ আমরা চোর বাটপার বা কোন খারাপ উদ্দেশ্যে যাই নাই, আমরা পড়াশুনা করি , আমরা বখাটে ফালতু ছেলে না , তোরা কিসে পড়িস কোথায় পড়িস ? বললাম আমরা দুজনেই নটর ডেম কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি , কি নটর ডেম কলেজে পড় ? সত্যি সত্যি ! কার্ড আছে সাথে ? বললাম জ্বি আছে বলেই দুজনেই কলেজের আইডেন্টিটি কার্ড দিলাম , উনি অনেক ক্ষণ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দেখলেন, সাথে সাথেই বললেন এই এদের বের কর , আর থানায় ফোন করে বল কারো আসা লাগবে না , তোমরা বাংলাদেশের সবচেয়ে ভাল কলেজের ছাত্র হয়ে আজকে এটা কি কাজ করলে , জানো আমার খুব ইচ্ছা ছিল আমার ছেলেটাকে নটর ডেম কলেজে পড়াব, এত কোচিং ফোচিং করেও সে চান্স পায় নাই আর তোমরা সেই কলেজের ছাত্র, তোমাদের কে কি আমি আটকিয়ে রাখতে পারি !


 যাও যাও যাও সোজা যার যার বাড়িতে যাও আর জীবনেও এমন কাজ করবে না ।মনে মনে বলতে লাগলাম জয়তু নোটা ডাম যার অর্থ আমাদের মা, জয়তু মা ! তোমার কল্যাণে তোমার পুত্র সকল প্রেমিক সাজিয়া একশ এক টি নীল পদ্ম আনিয়া এবং সাত সমুদ্দুর তের নদী পার হইয়া বিপদ গ্রস্থ হইয়া এ যাত্রায় বাঁচিয়া গেল ।স্যালুট নটর ডেম কলেজ ,স্যালুট মামার ভালবাসা!

(হৃদয়ের মাঝে সদা বিরাজ করে নটরডেম কলেজ এবং কলেজের সেই দিনগুলি,)


***
দেওয়ান লালন আহমেদ
পুলিশ সুপার, ট্যুরিস্ট পুলিশ ,
২৪ তম বিসিএস পুলিশ ,
নটরডেম কলেজ #৯৬৮১৮১




My mother, the goddess heroine of war

  




She got married just before the war 71 at her age of 16. The color of Hena in her hands, the dreams in her eyes were still alive. But where she has lost those? When?

The war is still flowing 
Her struggle continues As if depicted in the war. The victory makes everyone laughter Never rises her happy star

Made of the lust of inveterate no kind 

Hostile to the body & mind
The war is in the heart 
The poisonous torture of torture with  all 
The violence of torture is the sad saga.

   Time is  brutally lamenting

   With the pain of  torture insisting 
   Heartbreaks down and  shaking 
   Apathy sorrowful mind blowing 

 Oh My mother,  oh my  goddess, oh my nest 

 The heroine of the war, my mother you are the best.

In May 1971, the razakars came and handed her to the killer Pakistani  concentration  camp,
Three days in the red, blue  sting 
Like the dark night was lamenting, 
Sky gets  onerous & heavy  
Wind turns tremendously  weighty, 
Camp Sialdanggi sobs in siege heavily.

Tears flow fresh blood spraying
Stuck in the brutality of torture mankind shying 
Nine months of torture moaning, 
Bad memories of miserable are unfortunate limitless.

Oh My mother,  oh my  goddess
Oh My mother,  oh my  goddess, oh my nest 
The heroine of the war, my mother you are the best.



Bleed blood in priceless price
Builds strong joint 
Holy soil in the spirit of heroic self

Your bounty is worthless.

Oh My mother,  oh my  goddess, oh my nest 
The heroine of the war, my mother you are the best.



অনুবাদ-


একাত্তরের একটু আগে ষোলোতে মেহেদী রাঙ্গিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে কত স্বপ্ন সাধ আহলাদে আঁকে
হারিয়ে গেল তা কোথায় কোন ফাকে –

যুদ্ধে এখনও বইছে
যেন যুদ্ধে রচিত জীবনধারা
বিজয়ে সবাই হাসে
উঠে না তাদের শুকতারা  ।

হানাদারের লালসায় তৈরি
মনের সাথে দেহের বৈরি
যুদ্ধ ভরেছে মনের ব্যাথা
নির্যাতনের বিষাদগাঁথা ।

সময়ের  লাঞ্চনা হাহাকারের যন্ত্রনা
বুক ভেঙ্গে যায় কেপে কেঁপে উঠে
আমার মা জননী বীরাঙ্গনা
ও আমার মা জননী বীরাঙ্গনা  ।

একাত্তরের মে তে রাজাকারেরা এসে
তুলে দেয় হানাদারের কাছে ঠেসে,
তিন দিনের লাল নীল
রঙের দংশনে রাত্রি,
আকাশ ভারী বাতাস ভারী
কাঁদে ক্যাম্প শিয়ালডাংগী ।

অশ্রু ঝরে রক্ত ঝরে টাটকা
নির্যাতনের নির্মমতায় আটকা
নয় মাসে নির্যাতনের মেলেনা অংক
দুঃসহ স্মৃতি দুর্বিষহ অসংখ্য ,

সময়ের  লাঞ্চনা হাহাকারের যন্ত্রনা
বুক ভেঙ্গে যায় কেপে কেঁপে উঠে
আমার মা জননী বীরাঙ্গনা
ও আমার মা জননী বীরাঙ্গনা  ।

কিনে অমূল্য দামের রক্তে
ভিত গড়েছে শক্তে
বীরকন্যার আত্মত্যাগে পবিত্র মাটি
তোমাদের অমুল্য দানে  খাটি  ।

সময়ের  লাঞ্চনা হাহাকারের যন্ত্রনা
বুক ভেঙ্গে যায় কেপে কেঁপে উঠে
আমার মা জননী বীরাঙ্গনা
ও আমার মা জননী বীরাঙ্গনা  ।

(১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন বীরাঙ্গনা টেপরি রানী যার   পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে পাকিস্তানী সেনা ও রাজাকাররা ইচ্ছামতো নির্যাতন করত। সবার কথা চিন্তা করে সব মুখ বুজে সহ্য করেছেন। তাকে মেরে ফেলার জন্য তিনি পাকিস্তানী সেনাদের বারবার আকুতি করেছিল কিন্তু তারা তা করেনি। আত্মহত্যা করে জীবন বিপন্ন করতে তিনি চাননি। ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার বলিদ্বারা গ্রামের টেপরি রানী যিনি একজন বীরাঙ্গনা মা জননী তার প্রতি বিনম্র সালাম, জাতি আপনার এই সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রাখবে  )


https://www.youtube.com/watch?v=yno-HGjmGLA








The dark black twenty-fifth March


  


















 '' Base for all stations of east Pakistan  police, 
keep listening, watch, we are already attacked by the pak army,
Try to save yourself, over''


A restless unbecoming fright 
At the first part of that dark  night,
A  constable shouted-
 Occupation forces are  attacking for bloodshed  
join all police party to resist responding siren red,

The lunatic bell was raised
At the Police Barrack of  Rajarbagh based
Freedom seeker mass peoples joined
With police   raised the  red-green flag sailed,

They  resisted  first  by armed  fearless fight 
Against Pak armys Operation Search Light
That night was the dark black twenty-fifth March.
In nineteen seventy-one.

                      
Millions of people meet with the police
All ages of freedom fighters
Thirty hundred- thousand sacrificed their lives in the nine months of the war.


Constable Abdus Salam
Mohiuddin Jahangir
Proved themselves by giving their  life
They are the real heroes.

They  resisted  first  by armed  fearless fight 
Against Pak armys Operation Search Light
That night was the dark black twenty-fifth March.
In nineteen seventy-one.
                   
Tracer bullet hit
Injuries in  our  golden people's chest
The blue sky is covering
With Flare magnesium light,
Three knot three  fight against 
Huge Tank &  arms ammunition
They're killing freedom seeker
And Bangladeshis strength is not petty  or less,

They  resisted  first  by armed  fearless fight 
Against Pak armys Operation Search Light
That night was the dark black twenty-fifth March.
In nineteen seventy-one.



অনুবাদ

রাত্রি তখন প্রথম প্রহর 
ডাক দিল এক কনস্টেবল
পাক হানাদার দিচ্ছে হানা
প্রতিরোধ গড়ো পুলিশ  দল।

পাগলা ঘণ্টা উঠলো বেজে
পুলিশ ব্যারাক রাজারবাগে 
মুক্তিপাগল আম-জনতাও 
ওড়ালো লাল-সবুজ পাল।

রুখে দিল পাক সেনাদের
অপারেশন সার্চ  লাইট
সে রাত ছিল একাত্তরের 
ভয়াল কাল পঁচিশ মার্চ।

পুলিশের সাথে মিলল লাখো
মুক্তিসেনা সব বয়সের
ন মাস যুদ্ধে লাখ তিরিশেক
প্রাণ দিল এই বাংলাদেশের।

কনস্টেবল আবদুস সালাম
মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর 
জীবন দিয়ে করল প্রমাণ
তারাই সত্যিকারের বীর।

রুখে দিল পাক সেনাদের
অপারেশন  সার্চ লাইট
সে রাত ছিল একাত্তরের 
ভয়াল কাল পঁচিশ মার্চ।

ট্রেসার বুলেট হানছে আঘাত
আমার সোনার ছেলের বুকে
ফ্লেয়ার ম্যাগনেশিয়াম আলো
নীল আকাশটা দিচ্ছে ঢেকে।

থ্রি নট থ্রির লড়াই চলে
ট্যাংক কামানের গোলার সাথে 
মারছে ওরা স্বাধীনচেতা
বাঙালিরাই বা কম কিসে।

রুখে দিল পাক সেনাদের
অপারেশন  সার্চ লাইট
সে রাত ছিল একাত্তরের 
ভয়াল কাল পঁচিশ মার্চ।

(১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের কালরাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে পুলিশের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের সেই সব বীরদের প্রতি যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়েই আমাদের আজকের বাংলাদেশ )





বৃহস্পতিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৮

উদিবুলেকে চু – গর্তে অশ্বডিম্ব দিলাম ফু !




ছোটবেলায় আমাদের বাসার পাশেই একটা ছেলে কাজ করত যাকে সবাই ভাদ্রু নামে ডাকত ।  ভাদ্রুর আলজিহবা ও মুল জিহ্বা দুটিতেই  ছিল অস্বাভাবিকতা এবং শারীরিকভাবেও সে ছিল কিঞ্চিত বিকলাঙ্গ । তাকে যদি  বলতে বলা হত- পুকুর –জাম , সে বলত- কুকুর খাম ! এমন উচ্চারণের জন্য সবাই তাকে দেখলে বা কাছে পেলেই   ঠাট্টা তামাশা করত । ভাদ্রু যার বাসায় কাজ করত তার নাম- রকিবুল চৌধুরী । 
ভাদ্রুকে যদি বলা হত যে বলত ভাদ্রু  - রকিবুল চৌধুরী , সে বলত – উদিবুল চু! ব্যাপারটা সবাই কে খুব আনন্দ দিত এবং কেউ এর কোন সঠিক মানে বের করতে পারে নাই ।

সেই থেকে আমরা কার্য ও কারণ ব্যতীত অতি উচ্চমার্গ অথবা অতি চালাকিয় গুরু গম্ভীর বিষয়ে ধাবিত হয়ে অশ্বডিম্ব বা গোবর সন্দেশ পাওয়া গেলে আমরা তাকে বলতাম – উদিবুলেকে চু! 

বহু বছর পর আজ নিজেকে এমন চু মনে হচ্ছে , খুব সকালে ফোন বেজে উঠল । ব্রাদার আমি বর্ডার গার্ড হেডকোয়ার্টার্স থেকে  অমুক বলছি , কাইন্ড-লি একটু তাড়াতাড়ি আসেন প্লিজ । আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা , আমার বস ছুটিতে আমি বসের চার্জে রয়েছি , আমি কেন এই সাত সকালে  বর্ডার গার্ড হেডকোয়ার্টার্স এ যাব ? 





আবারো বলছেন- ব্রাদার আপনারা আমরা সেইম ,প্লিজ গন্ধে থাকতে  পারছিনা , আপনি আপনার ফোর্স অফিসার নিয়ে ভিতরে ঢুকেন । আমি সত্যি খুব বিরক্ত হলাম , ভাই বিষয়টা ক্লিয়ার করেন প্লিজ- 
-ব্রাদার আমাদের বর্ডার গার্ড হেডকোয়ার্টার্স এর ভিতরে একটি বস্তাবন্দী লাশ পাওয়া গেছে , বললাম আপনাদের চারিদিক কি অরক্ষিত থাকে ? উনি বলছেন না এটা আমাদের ভিতরেই ! বাইরের লোক না , আমি অগ্র পশ্চার্ধ কিছুই বুঝলাম না । 





আমি আমার এসপি স্যারকে বিষয়টি জানালাম , স্যার কিছু দিক নির্দেশনা দিলেন । এরপরে জানালাম  ডিআইজি স্যার কে এবং  ডিআইজি স্যারের কাছে - বর্ডার গার্ড হেডকোয়ার্টার্স এর কারণে আইনগত কোন বিধি নিষেধ বাধ্যবাধকতা আছে কিনা তা জেনে স্যারের পরামর্শ অনুযায়ী ওসি ও অন্যান্য অফিসারদের নিয়ে রওনা দিলাম । 

ভিতরে ঢুকেই দেখি – সেক্টর কমান্ডার , সিও বিজিবি সহ ঊর্ধ্বতন সকল কর্মকর্তা সহ অনেক ফোর্সের জটলা ।  অস্ত্রাগারের গার্ড বেষ্টনীর পাশে একটা গর্ত যেখানে একটা সাদা বস্তার অংশ থেকে কুকুর একটি হাড় বের করেছে । হাড় দেখে উপস্থিত সকলে ও ডাক্তার-গন ও নিশ্চিত যে এটা ছোট শিশুর লাশ । সেই সাথে বাতাসে তীব্র উটকো গন্ধ লাশের গন্ধে যেমন হয়। 



আমি আশে পাশে আমার অফিসারদের লাগিয়ে দিলাম ক্রাইম সিন থেকে কিছু পাওয়া যায় কিনা ,আমি নিজেও ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম , দেখতে দেখতে ক্রিমিনোলজির 'থিউরি অফ রেসপন্স' এর কোন সাড়া খুঁজে পাচ্ছিলাম না বরং মনে হচ্ছিল যে এই খানে বাইরের কারো পক্ষে তো নয় বরং ভিতরের যারা তাদের পক্ষেও কিভাবে একটি লাশ বস্তাবন্দী করে এই খানে পুতে ফেলা সম্ভব! এখানকার ফোর্স জওয়ানদের বাসার সবার সম্পর্কে খোঁজ নিতে বললাম।  

এবার শুরুর সেই ব্রাদার বলছেন- এটা কারো বাসার কাজের মেয়ের লাশ । একমাস আগে একটি ব্যাটালিয়ন  অন্যত্র বদলি হয়েছেন তাদের কেউ এই কাজ করেছে তিনি নিশ্চিত ! 
আমরা ক্রাইম সিন টেপ দিয়ে পুরো জায়গা ঘিরে রাখলাম, ছবি তুলতে বললাম , আর ওসি একজন এসআই কে পাঠিয়েছেন ডোম বাহাদুর কে আনাতে।  ডোম বাহাদুরের এজন্য কিছু রসদ লাগে যা সেই ব্রাদার কে ওসি বললেন যে স্যার-  একটু ম্যানেজ করে দেন। কেরোসিন, ফিনাইল সহ  দেশী বাংলা দারু । সেই ব্রাদার এসে বলছেন – বাংলা কি আমার লোক কিনে দিবে ?





আমি হাঁসব না কাঁদব বুঝতে পারছিলাম না, শুধু বললাম যে ব্রাদার  – লেট দেম ডিল । 
এর কিছুক্ষণ পরে ডোম বাহাদুর এলেন, গর্ত খোঁড়া শুরু করলেন। আমরা সবাই মুখ নাক বেধে প্রস্তুত।  গন্ধের মাত্রা বেড়েই চলেছে । 
এরমধ্যে আমাদের  ডিবির টিম , ডিএসবির লোকজন সহ বিজিবির আরো ফোর্স উপস্থিত , সকলের খুব খুব উৎকণ্ঠা ! এই খানে লাশ তা কি করে সম্ভব !
ডাক্তারেরা হিসেব করছেন শিশুর বয়স কত হতে পারে? সেই ব্রাদার বলছেন – লাশ গেড়ে রাখার আনুমানিক সময় ২/৩ মাস হবে হয়ত , তিনি ২ টি এম্বুলেন্স ডেকে আনলেন , ব্যাপক আয়োজন এ যেন মহাযজ্ঞ ।



হঠাৎ করে ডোম বাহাদুরের চিৎকার- এইলা কি , ছুয়াও না মাইও নাহা(এটা ছেলেও না মেয়েও না) এইডা তো বড্ড কুত্তা ! ছিঃ কুত্তা পচার যা গন্ধ ! উটকি দিয়ে সে বমি করে ফেলল । 
আমরা সবাই হ্যাঁ করে গিলতে লাগলাম । 




 ডিআইজি মহোদয় কে জানাতেই –স্যার মৃদু ঝারি দিয়ে শুধু বললেন ভালো করে না জেনে না  শুনে এমন করে  – কুকুর ছাগলের লাশ  নিয়া সকাল থেকে আছ?  আমি শুধু মনে মনে বললাম-স্যার সেই  অতি উচ্চমার্গ অথবা অতি চালাকিয় গুরু গম্ভীর বিষয়ে ধাবিত হয়ে অশ্বডিম্ব বা গোবর সন্দেশ ব্রাদার কেন এত এত তৎপর হতে গেলেন আর কেনইবা বা এই অশ্বডিম্বের পিছনে আমাদের কে ধাবিত করলেন ! 

ডোম বাহাদুরের বমি দেখে আমি মনে মনে ছড়া  কাটলাম -

‘’উদিবুলেকে চু 
 মানুষের নয় কুকুরের ক্যু 
বস্তাবন্দী ভিতরে আঁশ  
কুকুর মশাইয়ের লাশ 
 ডোম বাহাদুর হাশফাশ ‘’



বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এটা একটা রম্য রচনা , কাউকে হেয় বা ছোট করা এর উদ্দেশ্য নয় ।