সোমবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

আচলখানি সরে গেছে জীবনের তরে কপাল পুড়েছে



( ১)
আমার মমতাময়ী  ও জান্নাতবাসী মা রওশন আরা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পরে ও মায়ের হাতে একদিন চড় খেয়েছিলাম , মাকে ভীষণ ভয় পেতাম । সন্ধ্যার ঠিক আগে আগে বাসায় না ফিরলে মা আমাদের দুই ভাইকে খুঁজতে বের হতেন , যদি কোন কারণে না পেতেন তবে বাসার সামনে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন । এমনি ভীত সন্ত্রস্ত থাকতাম আমরা সারাক্ষণ । বিকেলে মাঠে খেলতাম আর সন্ধ্যার আগে বাসায় ফিরে হাত মুখ খুব ভালভাবে ধুয়ে পড়তে বসতাম , মা কিছুক্ষণ পরে এসে হাত পা চেক করতেন কোন ময়লা আছে কিনা ? ময়লা থাকলেই চড় , এভাবেই তটস্থ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে হয়ে স্কুলের ছাত্রজীবন টি কেটেছে , এই মায়ের কল্যাণে আমি অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি পাই, এসএসসি তে মানবিক বিভাগ থেকে রেকর্ড মার্ক  নিয়ে স্টার মার্কস পেয়েছি এবং এরপরে দেশের সবচাইতে স্বনামধন্য শীর্ষ কলেজ নটরডেম কলেজে ভর্তি হই ।

 আমার মা ভীষণ  রূপবতী গুণবতী ছিলেন , রূপে রসে রন্ধনে বন্ধনে ছিলেন অপরূপ অসাধারণ । রাগী হলেও তার মন টি ছিল খুব উদার এবং নরম ।আমাদের মা এর জন্য আজকে এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি অথচ আমি-বুক ফুলিয়ে  গর্বের সাথে বলতে পারি যে আমার মা শুধু নিজের নামটি লিখতে পারতেন লেখাপড়া বা ট্র্যাডিশনাল একাডেমিক শিক্ষা তার না থাকলেও তার একনিষ্ঠ পারিবারিক শিক্ষা আমার জীবনের প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ।
পান খেতেন আর ফর্সা মুখখানি লাল হত ঠোট লাল জিহ্বা লাল , মায়ের মুখের সেই চাবিয়ে খাওয়া পান আমি নিয়ে খেতাম কিযে অমৃত-সুধা সেই পান, পৃথিবীতে আর কোন দিন সেই আধো চাবানো স্বাদের পান খাওয়া হয় নাই। মায়ের সুন্দর ফর্সা মুখে পানের টুইটুম্বর রস আর আলতো জর্দার ঘ্রাণ আমাকে ভীষণ আপ্লুত করত , সারা ঘর জুড়ে সেই ঘ্রাণ মৌ মৌ করত আর সুবাস ছড়াত , ভাবতাম এটার নাম বিধাতা বোধ হয় দিয়েছেন সুখের ঘর , সুখের বাধন ,সুখের নীড় । আমার মা উলের সোয়েটার বুনতেন , শীতের আগে আগে , বহুদিন ধরে বুনে বুনে আমার জন্য একটা হাফ সোয়েটার বুনে দিতেন , সেই উলের ঘ্রাণ আর আস্তে আস্তে একটু একটু করে যেভাবে পুরোটা বুনতেন ঠিক একই রকম ভাবে আমার সারাটি জীবন আস্তে আস্তে ধীরে ধীরে একটু একটু করে বুনে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ মানবিক বোধসম্পন্ন   প্রতিষ্ঠিত জীবনের মুল কাঠামো বুনে বুনে বুনিয়াদী করে দিয়েছেন, সেই বুনিয়াদী কাঠামোর জন্যই সমাজে আজকে শির উঁচু আসন এবং আজকের পুলিশ সুপার হয়ে উঠা । মায়ের কাছে এত এত ঋণের অল্প সবেমাত্র শুরু , মা বিহীন প্রতিটি দিনই চোখের কোনে অশ্রু আর বুকের মাঝ খানে কেঁপে উঠা ।




                       (২)
আমার বাবা সুগার মিলে চাকুরী করতেন সেই সুবাদে আমরা থাকতাম কলোনিতে । উত্তরের সর্বশেষ প্রান্তের সীমান্তের সেই ছোট শান্ত একটি ভূখণ্ডের জেলা ঠাকুরগাঁও , এখানেই আমাদের মা বাবা ভাই বোন স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এর সময়গুলো পর্যন্ত এখানে কেটেছে । ধন সম্পদ প্রাচুর্যের মধ্যে বড় না হলেও পারিবারিক যে শান্তি আর সুখবোধ ছিল তা আমাদের প্রকৃত মানুষ করে গড়ে তুলতে অনেক সহায়ক হয়েছে।আমার বাবা আর মায়ের সম্পর্ক টা কখনো খুব উষ্ণ আবার কখন খুব শীতল ছিল

মাঝে মাঝে সিরিয়াস টাইপের ঝগড়াঝাঁটি করতে দেখতাম আর মা হু হু করে শব্দ করে কাঁদত, বালক চোখে শুধু মায়ের কষ্টের তীব্রতা অনুভব করতে চেষ্টা করতাম , আমি আর আমার বড় ভাই খুব মনমরা হয়ে থাকতাম । মনে হত মা এভাবে কাঁদছেন ! বাবা কে মেরে ফেলি ! আশির দশকে এমন ধরনের একটি ইস্যুতে  আমার মা কান্নাকাটি করে করে আমাকে আর আমার ভাই টিটু যে আমার চেয়ে দেড় বছরের বড় ছিল , আমাদের দুজনকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন , সাভারে আমার নানা-বুজি নানা মামা খালারা থাকতেন । আমরা ক্লাস টু কি থ্রিতে পড়ি , বিআরটিসি বাসে করে ঠাকুরগাঁও থেকে রওনা , প্রায় ৫০০ কিঃমিঃ পথ পাড়ি দিতে হবে ৩ ঘণ্টার ফেরী পারাপার সহ ১২ ঘণ্টার পথ ।
 আমার শুধু মনে আছে মা আমাদের দুই ভাই কে মুরগির বাচ্চার মত ওম দিয়ে সারা রাস্তায় গাড়িতে আমাদের আগলে ধরে বসেছিলেন , নগরবাড়ি ঘাটের কথা আমার এখন ও অল্প মনে আছে । নদীর পাড়ে সেই যে টিনের ঘরের মাঝে খাবারের হোটেল ডাকাডাকি ডিম ঝালমুড়ি এসবের ডাক , এরপরে ফেরীতে উঠা আর মাকে নানা প্রশ্ন করা । মনে মনে উৎফুল্ল আমরা দুই ভাই কারণ নানার বাড়ি মানেই মজার খনি, সাভারের রাজালাখ উদ্যানে ঘুরে বেড়ান, পুকুরে ঝাঁপিয়ে গোছল, গাছে গাছে টিলোস্প্রেস খেলা নানান রঙের সেই দিনগুলি ।

 বাবা মা এর ঝগড়ার সুবাদে সে যাত্রায় আমরা ৩ মাস সাভারে থাকলাম, এরপরে আমার মামা চাচারা একসাথে বসে আমার মাকে বোঝান হয় যে তোমার এই দুই ছেলে সবচেয়ে বড় সম্পদ তোমার , ওদের দিকে তাকিয়ে ওদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই তোমার  যাওয়া উচিত । এতে কাজ হল, কয়েকদিন পরেই আব্বা সাভারে এসে আমাদের ঠাকুরগাঁও নিয়ে গেলেন ।
  


          
               ৩)
১৯৭৬ সালের আমাদের মা এর বিয়ে হয়, প্রথম ঘরের সাথে ছাড়াছাড়ি হবার পর এটা আমাদের বাবার দ্বিতীয় বিয়ে । সে ঘরে আমাদের সবার বড় বোন (বৈমাত্রেয়) মাকরুমা । যে কারনে শুরুর দিকে আমার মা ও বাবার সম্পর্কটা এতটা মধুর ছিল না । ১৯৭৭ সালে জন্ম নেয় আমার বড় ভাই দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম টিটু । এরপরে ১৯৭৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দিবাগত রাত ১’৫২ মিনিটে এই পৃথিবীর আলো দেখি আমি । মায়ের বর্ণণা মতে- দেখতে নাদুস নুদুস চাঁদের মত আদুরে মুখ নিয়ে আমার জন্ম । আমার কপালে একটি গোল চক্র আছে , গনকরা আমাকে দেখে নাকি বলত –আপনার এই ছেলে রাজতিলক নিয়ে জন্ম গ্রহন করেছে এবং এই ছেলে দেশের রাজা হবে! ছোট থেকেই আমি ছিলাম সবার মধ্যমণি । যেহেতু এখন আমাদের ভাই বোনের সংখ্যা ৩ তাই আমি এদের মধ্যে সবার ছোট তাই আদর টার পুরোটায় আমার দিকে , স্বাস্থ্যবান ও নাদুস নুদুস প্রকৃতির জন্য ছোটবেলায় আমাকে যে দেখত সেই কোলে নিত , যার ফলে কপালে সদা একটি বড়মাপের কাজলের টিপ আঁকা থাকত প্রটেকশন হিসেবে যাতে কারোর নজর না লাগে আমার উপর ।

এভাবেই হেঁসে খেলে একেবারেই শৈশবের সময় গুলো যা মা বাবার কাছে শোনা । ১৯৮৩ সালে স্কুলে ভর্তি করা হয় আমাকে একা নয়, আমাদের ৩ ভাইবোন কে একসাথে এক ক্লাসে , ৩ জনের একসাথে পড়তে বসা , একসাথে প্রাইভেট পড়তে যাওয়া , স্কুলের পড়া তৈরি করা এসব । আমাদের বড় বোন মাকরুমা ক্লাস ওয়ান থেকে ফোর পর্যন্ত ক্লাসের ফার্স্ট, প্রতিবছর সে পুরস্কার পেত আমাদের সেই সুগার মিলের জিএম এর কাছ থেকে পুরস্কার নিত । ১৯৮৭ সালের ২রা সেপ্টেম্বর আমাদের মায়ের কোল জুড়ে এল ছোট বোন- ছলেমন নেছা নিপু, তখন আমরা ক্লাস ফোরে পড়ি ।  নিপুর নাম আমরা রাখলাম- উন্মুল সোনিয়া হক নীরা কিন্তু আব্বা খুব এডামেন্ট মেয়ের নাম রাখবেন আমাদের দাদীর নামে , তাই হল, হুবহু আমাদের দাদীর নাম- ছলেমন নেছা রাখা হল এবং ডাক নাম –নিপু ।  

   (চলবে)

রবিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

অগ্নিবীণা- সবার মাঝে শেখ হাসিনা



দল মত নির্বিশেষ আছে  যত
সকলেরই হোক এক  ব্রত ,
মুক্ত নয়ন মেলে  স্বপ্ন দ্যাখো
এক হাতে সবাই আজ হাতটা রাখো ।

তিনি অবেলা তে শক্ত হাতে
 হাল ধরা কাণ্ডারি
লাল সবুজের পাল তুলে দেন
ভয়াল সাগর পাড়ি ,

তিনি অসময়ের সঙ্গী 
দুর্দিনের সহযাত্রী
তিনি অগ্নিকন্যা ,
জানেন সবার মনের কথা
তিনি বুঝেন সবার  ব্যাথা

তিনি জন-নন্দিত নেত্রী
শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা
সবার প্রানপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা ।।

শুধু একটাই  আদেশ করো মনোনিবেশ
জানাও তাকে শ্রেষ্ঠ সন্মান ,
তার মানবতা আর মহানুভবতায় নত হয়ে
 নিজেকে করে সম্প্রদান

তিনি অবেলা তে শক্ত হাতে
 হাল ধরা কাণ্ডারি
লাল সবুজের পাল তুলে দেন
ভয়াল সাগর পাড়ি ,

তিনি অসময়ের সঙ্গী 
দুর্দিনের সহযাত্রী
তিনি অগ্নিকন্যা
জানেন সবার মনের কথা
তিনি বুঝেন সবার  ব্যাথা

তিনি জন-নন্দিত নেত্রী
শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা
সবার প্রানপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা ।।

দোলে ক্ষণ বলো আবার
খুলে প্রান  হও উজাড় ।।
জয়বাংলা স্লোগান  চলুক
 লক্ষ কোটি ঠোঁটে,
ইতিহাস গড়ে নেত্রী আবার
জিতবে  বিপুল ভোটে ।

তিনি অসময়ের সঙ্গী 
দুর্দিনের সহযাত্রী
তিনি অগ্নিকন্যা
জানেন সবার মনের কথা
তিনি বুঝেন সবার  ব্যাথা

তিনি জন-নন্দিত নেত্রী
শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা
সবার প্রানপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা ।।




শুক্রবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮

সংখ্যায় স্বাধীনতা



নয়মাসের মুক্তিযুদ্ধ,
শুরুতেই মহান-নেতা বঙ্গবন্ধু ছিলেন কারারুদ্ধ
এগারটি সেক্টরে বিদ্যমান
ছিলেন এগারজন সেক্টর প্রধান ,
চরম দামে কেনা স্বাধীনতা একটুও নয় কম
ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর চার লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রম ।

সেইসব বীরেরা থাকে সর্বাগ্রে
তাদের অবদান সদা শ্রদ্ধায় স্মরণে থাকে,
সাত বীরশ্রেষ্ঠ, আটষট্টি বীর উত্তম,
চারশো ছাব্বিশ বীর প্রতীক একশো পঁচাত্তর বীর বিক্রম ।

স্বাধীনতার অগ্রগণ্য সেই নামে নড়েছে টনক
তিনি বঙ্গবন্ধু জাতির জনক,
তিনি একমাত্র একজন মহান নেতা

এই আমাদের সংখ্যায় স্বাধীনতা ।

প্রজন্মের কাছে চেতনায় জাগুক একাত্তর 


মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ কর
মুক্তিযোদ্ধাদের তুলে ধর ,
মুখে বুকে আর মগজে
স্বাধীনতা হয়নি আমাদের এত সহজে ।

সদা শিকড়কে জানো
দেশমাতৃকার কাঠামোকে আনো
দেশের টানে চেতনায় থেকো মানবিক
তবে তুমি হবে দেশপ্রেমিক ।

পাকিস্তানের বৈষম্য
ছিল না এতটা কাম্য ,
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ছেষট্টির ছয়দফা
স্বাধিকারের দফা রফা,
আর জেনো সত্তরের নির্বাচন
জয় পেয়েও হলনা ক্ষমতায় আসন ।

স্বাধিকারের জাগরণ আর
 বিশ্ব ঐতিহ্যের দর্শন
ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ,
পঁচিশে মার্চের কালরাতে অতর্কিতে
পাকিস্তানী বাহিনীর হত্যা আক্রমন
পাকিস্তানী জানোয়ারদের কর খতম ও দমন ,

শুরু হল মহান মুক্তিযুদ্ধ
পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু রুদ্ধ,
অস্ত্র নাও হাতে জনে জনে
 এ যুদ্ধ  মহান ,
স্বাধীনতার ঘোষণায়
বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত আহবান ।

বর্বরোচিত অমানবিক আর পাষণ্ড ,
চোদ্দই ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড,
নয় মাসের মুক্তিবাহিনীর গর্জন
এলো সেইক্ষন
ষোল ডিসেম্বরের বিজয় অর্জন ।

রক্ত মাখা মানচিত্র আঁকা
তোমার আমার সকলের
 লাল-সবুজের এই পতাকা ।

বিরহ টুকুই থাকে


তুমি-বিহীন একটুখানিই
সবটুকু নিয়ে পুড়ে ,
গভীর থেকে টানে
একটুতেই ভীষন  ব্যাথা জোরে,

মনে হয় কেন সবটুকুই যেন
শুধুই আমার,
মিছে এই ভাবনা সবটুকু হয়না
মনেতেই থাক যৌথ-খামার,

মানিনা সম কি অসম
প্রেমটুকুই শাশ্বত,
কষ্টের আচে বিরহে সে বাঁচে
 বিধি চিরাচরিত |

অসম প্রেম বাড়ে সমানে
পোক্ত বৃক্ষের মত প্রমাণে,
শিকড় শক্ত হয়ে গাথে
তবুও বিরহটুকুই থাকে সাথে সাথে |

বৃহস্পতিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

বুক তোমার তাজা-ফুল



চোখটা এত ধরেছে
শুধু শুধুই কাঁদায় ,
চেয়ে আছি আমি
আসো একবার বারান্দায় ।

বুক তোমার তাজা-ফুল
হয়েছি বিহ্বল ব্যাকুল,
যেন সুবাস উড়ানো আতর
তাতেই হলাম কাতর ।

মাদকতা ছড়ায় সে ঘ্রাণ
ইন্দ্রিয়তে দেয় শান,
ভাবনাগুলো মানস-পটে
গন্ধ বকুল হয়ে ফুটে ,

খুঁজি চারিদিকে নিচে উপরে
শূন্য বুকে রাতদুপুরে
তোমার ছবি আঁকে
একলা একায় কাঁদে ।



রবিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮

মায়ের জন্য অর্ঘ্য আর নৈবেদ্যমালা



দুঃখবোধ চিরন্তন

মন পাখি মা পাখি
শূন্য বুকে তোমায় ডাকি
কাছে এসো শীতল করো
তোমার বুকে লুকিয়ে রাখো ।
মন পাখি মা পাখি
কষ্ট আমায় করে আবেগী
মমতায় আমায় করো ধারণ
দুঃখমালার আসতে বারণ । 
মন পাখি মা পাখি
কেন এভাবে দিলে ফাকি
গভীর রাতের চঞ্চল আঁখি
একলা আকাশে চেয়ে থাকি ।

নিশিতের ঘুমের গীতে
উদলা বুক ঢেকে শীতে
এ কোন আজব খেলা
চলে সারাক্ষণ সারা-বেলা ।
আশার পানে চেয়ে থাকি বুঝি
আসমান থেকে আচমকা হবে উদয়
ব্যাথাবিলাসী ছন্নছাড়ার মাঝে
জাগবে আবার হ্রদয় ।

মন পাখি মা পাখি
কোমলতায় বুকে মাখি
আসমান থেকে  হাত  বাড়ায়
আশীর্বাদের বৃষ্টি ঝরায়
তোমার আড়াল চোখ ,
গড়ে মনের সাথে
মনের গভীর সংযোগ |

আমার ছোট ঘর
ভরে থাকে  দিনভর,
মন পাখি মা পাখি
মনের মাঝে  চাইতে থাকি,
প্রাপ্তি হারানো আলো ছায়ার
খেলা খেলি ,
তোমার আলো জমকালো
দ্যুতি ছড়ায় বিজলি 


মন পাখি মা পাখি


বুঝতে যদি চাও
মায়ের মর্ম ,
পাদুকা বানাও
খোল গায়ের চর্ম ।
তবুও তা খুব  সামান্য
খুব খুব নগন্য ,
মাগো তুমি অনিঃশেষ
চিরায়ত অনন্য ।

তুমি-বিহীন মায়া জাগে না
মনের ভিতর মন থাকেনা ,
স্বপ্ন-সাধে  পরান কাঁদে
বিষাদ ছুঁয়েছে মন
মাগো তুমি আমার
দুঃখবোধ চিরন্তন ।
মা কথাটি একক যা
দুনিয়ার সর্ববৃহৎ তত্ত্ব,
অপ্রতিম শাশ্বত
তা চিরন্তনী সত্য ।

মায়ের ভালবাসা শোধহীন
ক্রমাগত বাড়ে যে ঋন,
জানে আসমান জানে জমিন ।




মাগো আকাশ পানে তোমার টানে নিত্য-

তোমার জন্য পৃথিবীতে এত আলো
তোমার জন্য উবে যায় সব কালো,
তোমার জন্য মৌমাছি বিধেনা শুল
তোমার জন্য তাবৎ দুনিয়ায় ফোটে ফুল ।


তোমার চরনধুলি
সাত আসমান জমিন সাত সমুদ্র খুঁজি,
অসীম শীতল পরশ তোমার একটু ছায়া
পেখম মেলে পেখম ছড়ায় মায়া ।

স্বর্গের চেয়ে আরো বেশি
অন্তরের অন্তরে দিবানিশি,
সারাজীবন বিনিময়ে তোমায় যদি কিনি
তবুও মাগো জীবন জুড়ে করলে চিরঋনী ।

আকাশপানে তোমার টানে নিত্য
খুঁজে ফেরে নিঃস্ব আমার চিত্ত ,
তোমার মুখ ভেবে দুচোখ একটু বুজি
তোমার ছোঁয়া পাইনা তবুও তোমায় একটু  খুঁজি ।



মা শুধুই ভালবাসার নির্নয়ক

যতই বলো বেশি কিংবা অল্প
সারাদিন বললেও শেষ হয় না মায়ের গল্প ,
ভাবো যতই বাস্তব কিবা কল্প
আহা কি অনন্য
শুধু  আমার  মায়ের গল্প ,
মায়ের নেই কোন বিকল্প
মায়ের হয় নারে বিকল্প ।


মা ওগো মা ওগো মা
মা ওগো মা , ওগো মা
ওগো মা ওগো মা
মা ওগো মা ওগো মা
আমার মায়ের হয় নারে  বিকল্প ।


মায়ের বিকল্প শুধুই মা
কখনও যদি হারায় তা ,
বুঝবে তুমি  মা কি রতন অমূল্য ।।
পৃথিবীতে নেই  কিছু নেই নেই কিছু নেই
আমার মায়ের   তুল্য ।


মা ওগো মা ওগো মা
মা ওগো মা , ওগো মা
ওগো মা ওগো মা
মা ওগো মা
আমার মায়ের হয় নারে  বিকল্প ।


মা বলে সন্তান তুমি মম
এ পিঠ ও পিঠ সবটাই সম,
নেই সাদা কালো কিংবা  অসম ।।
কিছু নেই মায়ের কাছে  সন্তানের মত এত  প্রিয়তম ।


মা ওগো মা ওগো মা
মা ওগো মা , ওগো মা
ওগো মা ওগো মা
মা ওগো মা
আমার মায়ের হয় নারে  বিকল্প ।


মায়ের  চোখে নয় কিছু তির্যক
মা শুধু ভালবাসার নির্নয়ক ,
মা আর সন্তানের সে  সম্পর্ক ।।
মায়ের   আদর সবার উর্ধ্বে সবার সেরা থোড়াই  যুক্তি তর্ক   ।
মা ওগো মা ওগো মা
মা ওগো মা , ওগো মা
ওগো মা ওগো মা
মা ওগো মা
আমার মায়ের হয় নারে  বিকল্প ।


মা   তোমার একটু ছায়া খুঁজি

তোমার একটু ছায়া খুঁজি
যখনি এ দুচোখ বুজি
ভাবনা জুড়ে ঝড় তোলো মাগো ,
খুঁজি তোমায় সবখানে
সমুদ্দুর  আসমান জমিনে
পাই না কোথাও খুঁজে তোমায় মাগো ।
তোমার অসীম শীতল ছায়ায়
প্রান জুড়ানো স্নেহ মায়ায়
তোমার অংশ হয়ে আছি মাগো ।।
মাগো মা --আমার মা   ।

স্বর্গের চেয়ে আরো বেশি
মধুর আমার মায়ের হাসি
সে হাসি কোথায় হারাল মাগো
আমার সারা দেহমালায়
জীবন জুড়ে আলোর খেলায়
মিশেছিলে হ্রদয় দিয়ে মাগো ,
মাগো মা ,আমার মা ।

বিনি সুতার বুনন দিয়ে
তোমার সাথে জড়িয়ে নিয়ে
আমার জীবন ভরিয়ে দিলে মাগো,
দিইনি কিছু অধম আমি
সারাজীবন করলে ঋনী
শোক সাগরে ভাসি এখন মাগো ।


মা আমার সারাজীবনের শূন্যতা

আচলখানি সরে গেছে
জীবনের তরে কপাল পুড়েছে ,
এ আঁচ দগদগে নীল কষ্ট
দিনের মতই ভীষণ স্পষ্ট,


মনে হয় কোথাও কেউ নাই
নাই কোন আশ্রয় ,
এমন করেই ভেঙ্গে ভেঙ্গে
চুরমার হয় হৃদয় ।


মায়ের কষ্ট
নিঃশ্বাসের মতই স্পষ্ট
নিদাঘ এ দহন
অদ্যাবধি করছি বহন ।


মায়া-হীন মমতাহীন অনাদর
গড়েছে বেদনা বিরহ
আর বিচ্ছেদের নতুন
এক মহাসাগর ।


ভায়ের কষ্ট
বাবার কষ্ট মায়ের কষ্ট
নখ থেকে চুলে বিঁধেছে
পুড়ে পুড়ে সয়েছে ,


বিষাদের আকাশ দীর্ঘশ্বাস
কষ্টের হিমালয় চূড়ায় ফানুস উড়ায়
অনাদর আর বেদনার নতুন মহাসাগর ,


সব টুকু সব কিছু
শেখায় উঁচু
সংস্কার উৎকৃষ্ট,
বিরহে করুণে বিচ্ছেদে
পুড়ে পুড়ে বানায় খাটি শ্রেষ্ঠ ।


( সবসময় হাহাকার আর বেদনার নাম মা এর শূন্যতা )



নতুন একটি মহাসাগরের নাম কষ্ট


বেদনার নীল আঁচে করছি বহন
পূর্ণ জীবন খরচ করে কিনেছি দহন ,
আজো একই রকমের দগদগে স্পষ্ট
বাবা হারাবার কষ্ট ,
মা হারাবার কষ্ট ।



বিষাদ ছেয়েছে আমার আকাশ
আছে শুধু না পাবার দীর্ঘশ্বাস ,
জীবন জুড়ে নিঃশেষ আঁধার
বুক উজাড় করেছে শূন্যতা হাহাকার ।


আহা হারিয়ে গেছে সব
তবুও তুমি নীরব,
সব তোমার অংকিত
জীবনভর কেন  কণ্টকিত ।


বেদনাবিধূর  জীবনভর
এমনই দুঃখে কাতর,
অদৃষ্টে দুঃখবিলাসী এক লোক
বিনাশ করেছে শোকের পর শোক ।


          ২)
বাবার কষ্ট আলোর মতই স্পষ্ট
কষ্টের গ্রাসে বিচ্ছেদ বেদনে ভোঁতা
এভাবেই তিলে তিলে
অনুভূতিহীন হয়ে উঠা ।


কষ্ট বেদনা সবটাই  দায়ী
গড়ে দিয়েছে কষ্টের হিমালয় চিরস্থায়ী ,
সেই হিমালয় চূড়ায়
জীবনভর কষ্টের ফানুস উড়াই ।


মায়ার মাঝে মায়া লাগেনা
মনের ভিতর মন জাগেনা
দয়ামায়াহীন অচেনা এক রুদ্রমূর্তি,
এ আমার অবনতি
বোধহীন আমার বিস্তর ক্ষতি ।

 ( মমতাময়ী  জান্নাতবাসী মা রওশন আরা,যার শুন্যতা আমার জীবনের সার্বক্ষনিক কষ্ট এবং চিরন্তন দুঃখবোধসবসময় হাহাকার আর বেদনার নাম মা এর শূন্যতা ,)