বুধবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০২০

পিটুইটারির খেলা





বেঁচে থাকি
 নিজেকে দিয়ে ফাঁকি
অসময়ে রাত হয়
মনে ভরাডুবি পরাজয় ;
দুরারোগ্য এক অসুখ
ভাঙ্গল যে বুক ।

জরিয়ে থাকা মিথ্যার আচল
ছুলেই রঙ বদল,
চোখের কোণে অশ্রু কাজল
বুঝতে দেয়না আসল নকল ।

 জানি দিনগুলো
ধোঁকা আর মিছে ছিল,
সবটুকু অপ্রেম চোখে তার
বুঝিনি সে ছিল এত নির্বিকার ;

 পিটুইটারির খেলা
 ভেবে ভেবে ছলা কলা,
 ভাবি প্রেম তারে
 যে ছিল মনের অন্তরায়
  মন মরে যায় 
 বুক ভেঙ্গে যায় 
 তীব্র কঠিন নীল যন্ত্রণায় ।

মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২০

ডাঃ রাকিবুল ইসলাম লিটু দীপালোক অনির্বাণ





ঝাল মুড়ি ভালবাসা
পকেটের পয়সাতে
কিনে রোগীর আরোগ্য  আশা ,
উপাধি অতি সামান্য অসামান্যের জন্য
মানুষের হৃদয় জয় সামান্য নয়
গরীব দুঃখীর জন্য  ভালবাসা অবিরাম
মানবতার জন্য  সংগ্রাম
কে  দিতে পারে  এমন আকার
গরীবের ডাক্তার গরীবের ডাক্তার

মরে গিয়ে আবার জন্মে
হৃদয় ছোঁয়া সব কর্মে
সবুজ বৃক্ষ হয় কয়জনে
শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে বাঁচে
থাকে মানুষের কাছে
মানুষের মনে মনে ;

 সেই নামের শব্দগুলো রোজ
অসহায় মানুষেরা করছে  খোঁজ
রাকিবুল ইসলাম লিটু
 শুদ্ধ আত্মার নতুন মাত্রা
যুগ যুগ বাঁচে  মানবতার যাত্রা
নদী মাতার মত তিনি বহমান
চির অম্লান কর্মে  মহান ;

আজ তিনি পাশে নেই
 তবুও যেন আছে
বসে তিনি ঠিক আমার কাছে ;
সমবেত সকলের হাত চোখে
স্মরণের আনন্দ আর শোকে ;

রাকিবুল ইসলাম লিটু দীপালোকে অনির্বাণ
এমন মানদ দরদী যুগ যুগ করি সন্ধান,
 আজ আমি মুগ্ধ আজ  সবচেয়ে প্রীত
তোমার বন্ধু হয়ে  হলাম যে সম্মানিত 





শনিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২০

অদম্য নারীর গল্প – একটি সত্যিকারের জীবন যুদ্ধ ও একজন আসমা আরা রুচি







পুরাণ ঢাকার  বংশালের সাত রওজা এলাকা , এখানে গলির মাথায় একটি পাঁচ তলা বাড়ি , এই বাড়ির মালিক বড় মসজিদের ইমাম মাওলানা সাকের উদ্দিন , তার মেয়ে ছেলে কে নিয়ে এই বাড়িতে থাকেন , যৌথ পরিবার বলা যায় মেয়ের জন্য টি ফ্লাট এক মেয়ে বিদেশে থাকেন , আর ছেলেদের একটি করে ফ্লাট দেয়ার পর বাকী একটা তে বড় ছেলে ছেলের বউ সহ মাওলানা সাহেব থাকেন

 মাওলানা সাহেবের বড় মেয়ের এক ছেলে  এবং  তিন মেয়ে বড় ছেলে কোরানের হাফেজ টাইটেল পাস  ইরফান হাসান,  স্ত্রী সন্তান নিয়ে সৌদি আরবের মদিনাতে থাকেন এবং সেখানে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী করেন ।এরপরে  মেয়ে রেশমা আরা কচি  জগন্নাথ অর্থনীতি তে অনার্স ফাইনাল ইয়ার , তারপরে হাসনা আরা সুচি  রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ইডেনে দ্বিতীয় বর্ষে  অনার্স পড়েন আর একেবারে ছোট মেয়ে  আসমা আরা রুচি  বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে এখন ভর্তি শেষ হয় নাই


ইরফান , কচি ,সুচি এবং রুচি  তাদের বাবা  পানি উন্নয়ন বিভাগের  স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন , চাকুরীজীবন কেটেছে দক্ষিণ অঞ্চলের  বিভিন্ন জেলাতে সেই সূত্রে তার ছেলে মেয়েদের   একটা বড় সময় কেটেছে  মফস্বল শহরে বড় মেয়ে রেশমা আরা কচির  একাত্মা বান্ধবী হচ্ছে  দোলা দত্ত , ধর্মের তফাৎ ছাড়া তাদের আর কোন তফাৎ নাই, সারাক্ষণ তারা একসাথে ,  দোলা দত্ত  কে হঠাৎ করে কেউ দেখলে ভাববে যে সে কচিদের ফ্যামিলির মেম্বার

দুই পরিবারের এমন ঘনিষ্ঠতা সবাইকে মুগ্ধ করত
দোলা দত্ত রা এক ভাই এক বোন দোলার  ছোট ভাই  রাজীব দত্ত  কচির  মেজ বোন সুচির  বয়সী
এভাবে দুই পরিবারের মিথস্ক্রিয়ায় পূজা পার্বণ ঈদ সব খানে তাদের পারস্পরিক বন্ধন খুব গাড় ছিল


এভাবেই দিন যেতে যেতে  রুচি  ভর্তি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন  বিভাগে সময়ের পরিক্রমাতে রুচি  তার বড়  আপুর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী দোলার ছোট ভাই রাজীবের সাথে প্রেমের বন্ধনে জড়িয়ে পড়ে যত দিন যায় তাদের এই প্রেম আরও গভীর হতে থাকে
  এভাবে চলতে চলতে একদিন তাদের প্রেমের বিষয়টি   দুই পরিবারই জেনে যায়  তখন  রুচি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে ,  এমন চাপের মুখে তারা দুইজন অতি আবেগের বশে পালিয়ে বিয়ে করে ফেলে 
যেহেতু তারা দুইজন দুই ধর্মের আর রাজীব ধর্ম পরিবর্তন করবেনা তাই তারা হিন্দু রীতিতে মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করে , এই খবর শুনে রুচির রক্ষণশীল  পরিবার তাকে ত্যাজ্য ঘোষণা করে
রাজীব আর রুচি আজিমপুরে একটা ছোট বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করে , রুচি হল ছেড়ে দেয় তখন, এক বছরের মধ্যে তাদের একটি ছেলে সন্তান হয় , কিন্তু রাজীব এতদিনে যেমন করে আচরণ করত এখন তা ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে , তার বিশাল ব্যবসা বলেছিল আসলে তা তার দুলাভাই এর , প্রকৃত অর্থে সে বেকার , এই অবস্থায় ছেলের খরচ রুচির খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছিল ওদিকে  রুচির বাসা থেকেও কোন সাপোর্ট ছিল না ,

রুচি টিউশনি শুরু করল , ছেলে কে নিয়ে পড়াতে যেত এমনকি ভার্সিটিতেও ছেলে কে নিয়ে যেতে হত , শুরুতে এটা নিয়ে বিভাগে কথা উঠলেও পরবর্তীতে সবাই এটা কে মেনে নেয় , ছেলে মায়ের সাথে নিয়মিত ভার্সিটিতে যায়, রাজীব  ইদানীং তার বাসায় থাকছে রুচি কে একা একাই বেশি সময় আজিমপুরের বাসায় থাকতে হয়

রাজীব  মূলত বেকার কিন্তু সে আগে যা বলেছিল তা ছিল মিথ্যা , মেয়ের এমন স্ট্রাগল দেখে রুচির  নানা বাবা একটা প্রস্তাব দিল যে রাজীব  ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করুক তাহলে  আমরা তোমাদের মেনে নিবো।  রাজীব  শক্তভাবে বলে জীবনেও সে মুসলমান হবে না বরং রুচি  কে সে হিন্দু বানিয়ে বিয়ে করেছে , এমন দোটানা আর সম্পর্কের অবনতি তে এক পর্যায়ে রুচি  ডিভোর্স চায় কিন্তু রাজীব  বলে যে হিন্দু আইনে এটা সম্ভব না রুচি  আইনের আশ্রয় নেয় কিন্তু আদালত যখন তার কাছে তাদের বিয়ের কাগজ চায় তখন সে আসল বিষয়টা বুঝতে পারে , কারণ মন্দিরে গিয়ে পুরোহিত ঠাকুরের মন্ত্রে কপালে সিঁদুর দিয়ে বিয়ে যার কোন পেপার নাই 

হায় বিধি বাম, তার মানে আইনের চোখে ওদের বিয়েই হয়নি তাহলে এই ছেলে ?
 এরপরে রুচি কিছু  আইনগত সহায়তায় রাজীবের  সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে , কিন্তু এই ছেলে সহ রুচিকে তার  বাসায় তুলবেনা।

জীবন সাগরের অকুলে ডুবে যাচ্ছিল  রুচি ,  কোথায় যাবে কি করবে ??
এর মধ্যে তার চিন্তায় অসুস্থ হয়ে রুচির বাবা হার্ট এটাকে মারা যান , সব মিলিয়ে রুচি একেবারে ভেঙ্গে চুরে নিঃস্ব হয়ে যায় 

পরিস্থিতি মানুষ কে শেখায় , শক্ত করে গড়ে তোলে , ছেলে গল্প কে নিয়ে সে কিছুদিন বান্ধবীর বাসায় এরপরে কর্মজীবী হোস্টেলে উঠে ছেলে সহ , ছেলে গল্পের বয়স পাঁচ হয়ে গেছে , সারাদিন টিউশনি , বিসিএসের কোচিং এরপরে ছেলেকে সময় দেয়া এভাবে চলতে থাকে জীবন ,
জীবন যুদ্ধে পরাজিত না হয়ে সে দাড়াতে থাকে নিজের পায়ে , একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে  তার চাকুরী হয়   ছেলে কে নিয়ে ফ্লাটে উঠেছে , ভাল স্কুলে দিয়েছে ,সারাদিনের জব শেষ করে ছেলে কে নিয়ে সে রাতে খেতে বের হয় , কষ্টের দিন আস্তে আস্তে ফুরাতে ফুরাতে স্বপ্নের হরিণের দেখা পায়, বিসিএসে সিলেক্টেড এবং এখন সে সৎ -নির্ভীক ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দেশ জুড়ে নাম কামিয়েছে 
দেশের অবলা অসহায় নারীদের জন্য আসমা আরা রুচি  এক বিশাল অনুপ্রেরণা , রুচিদের জন্যই আজ দেশে নারীরা নিজের পায়ে দাড়াতে পারছে , নারী দিবস হোক এই সকল রুচিদের জীবন যুদ্ধে জিতে আসার সবচেয়ে বড় প্রতিপাদ্য
 


বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২০

মুজিববর্ষের অঙ্গীকার পুলিশ হবে জনতার



 



‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কখন ও নিউইয়র্কে যাও তবে শুধু বলবে যে আমি বাংলাদেশের ট্যুরিস্ট পুলিশ থেকে এসেছি তাহলে সাথে সাথেই আমি এসে তোমাদের আমার শহরে স্বাগত জানাব’

এভাবেই আবেগ আপ্লুত হয়ে বলছিলেন কক্সবাজার বিচে আমেরিকান নাগরিক Lynn Englum , তার ওয়ালেট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস হারিয়ে ফেলে তা  ট্যুরিস্ট পুলিশকে জানাবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার করে দেবার পর এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন ।


Wang Rui  একজন চাইনিজ উদ্যোক্তা যিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে বলেছেন-  ‘  In our whole journey they accompanied with us & provided the best security , thank you tourist police & thank you Bangladesh police ‘’


ট্যুরিস্ট পুলিশ বাংলাদেশ পুলিশের একেবারেই নবাগত একটি ইউনিট , এর পরিধি কার্যক্রম এর সম্পূর্ণতা এখনও না পেলেও ঠিক এভাবেই তারা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আসছে ।

শুধু ট্যুরিস্ট পুলিশ নয় , বাংলাদেশ পুলিশ এখন  নেতিবাচক বলয় থেকে বের হয়ে জন-বান্ধব ও সেবা-মুখী হবার বহুবিধ নতুন নতুন উদ্ভাবনী বের করে মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে তৎপর ।



মুজিববর্ষের অঙ্গীকার পুলিশ হবে জনতার ঃ

‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার পুলিশ হবে জনতার’ – এই লাইন টি নিছক অন্ত্যমিল কিংবা বাক্যের ব্যঞ্জন নয়, এর নিগূঢ় তত্ত্ব বুঝতে হলে আমাদের শুরুতেই মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘পুলিশ ভাবনা’বুঝতে হবে ।
ড. এ এইচ খানের সম্পাদনায় ‘বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত ভাষণ’, চতুর্থ খণ্ড থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম পুলিশ সপ্তাহে ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি রাজারবাগ পুলিশ লাইনে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি নিচে হুবহু তুলে দেওয়া হলো।



‘আমার পুলিশ বাহিনীর ভাইয়েরা, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ ও সমবেত অতিথিবৃন্দ, আজ স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম পুলিশ সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। যতদিন বাংলার স্বাধীনতা থাকবে, যতদিন বাংলার মানুষ থাকবে, ততদিন এই রাজারবাগের ইতিহাস লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে। ২৫ মার্চ রাত্রে যখন ইয়াহিয়া খানের সৈন্য বাহিনী বাংলাদেশের মানুষকে আক্রমণ করে, তখন তারা চারটি জায়গা বেছে নিয়ে তার ওপর আক্রমণ চালায়। সেই জায়গা চারটি হচ্ছে—রাজারবাগ, পিলখানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর আমার বাড়ি। একই সময়ে তারা এই চার জায়গায় আক্রমণ চালায়। রাজারবাগের পুলিশেরা সেদিন সামান্য অস্ত্র নিয়ে বীর বিক্রমে সেই সামরিক বাহিনীর মোকাবেলা করেন। কয়েক ঘণ্টা তুমুল যুদ্ধ করেন। তারা এগিয়ে আসেন বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করতে।’



‘এর জন্য আজ আমি গর্বিত। আজ বাংলার জনগণ গর্বিত। সেদিন বাংলার জনগণের ডাকে, আমার হুকুমে এবং আমার আহবানে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী এগিয়ে এসেছিল মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে। বাংলাদেশের জনগণকে রক্ষা করতে। স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে রাজারবাগের এবং পুলিশের ইতিহাস স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। পুলিশ বাহিনীর অনেক কর্মী এখানে যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তারা রাস্তায় নেমে যুদ্ধ চালিয়েছিলেন নয় মাস পর্যন্ত। যারা পুলিশ বাহিনীর বড় বড় কর্মচারী ছিলেন, তাদেরও অনেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।’



‘আজ তিন বছর হলো বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। আজ প্রথম আমাদের পুলিশ সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। এখন একটা কথা আমাদের মনে রাখা দরকার। যে রক্ত দিয়ে আমরা স্বাধীনতা এনেছি, সেই রক্ত দিয়েই স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। পুলিশ বাহিনীর ভাইয়েরা, এই রাজারবাগে যারা শহীদ হয়েছিলেন, তাদের কথা মনে রাখতে হবে। তারা আপনাদেরই ভাই। তারাও পুলিশে চাকরি করতেন। জনগণের সঙ্গে তারা হাত মিলিয়েছিলেন। ত্রিশ লক্ষ লোকের সঙ্গে পুলিশের অনেক লোকও আত্মত্যাগ করেছিলেন। তাদের রক্ত যেন বৃথা না যায়। তাদের ইজ্জত আপনারা রক্ষা করবেন। তাদের সম্মান আপনারা রক্ষা করবেন। তাদের আত্মা যাতে শান্তি পায়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতা পাওয়া যেমন কষ্টকর, স্বাধীনতা রক্ষা করাও তেমনি কষ্টকর।’



‘আজ আপনাদের কর্তব্য অনেক। যেকোনো সরকারের, যেকোনো দেশের সশস্ত্র বাহিনী গর্বের বিষয়। আমার মনে আছে যেদিন আমি জেল থেকে বের হয়ে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের বুকে ফিরে আসি, সেদিন দেখেছিলাম আমাদের পুলিশ বাহিনীর না আছে কাপড়, না আছে জামা, না কিছু। অনেককে আমি ডিউটি করতে দেখেছি লুঙ্গি পরে। একদিন রাত্রে তারা আমার বাড়ি গিয়েছিল। তাদের পরনে ছিল লুঙ্গি, গায়ে জামা, হাতে বন্দুক।’



‘এই অবস্থায় এই দেশ শুরু হয়েছিল। পাকিস্তানি জালেমরা বাংলাদেশের সম্পদ শুধু লুট করেই নেয়নি, যাবার বেলায় সব ধ্বংস করেও দিয়ে যায়। তারা ভেবেছিল, বাংলাদেশ টিকতে পারবে না। কিন্তু বাংলাদেশ টিকেছে। বাংলাদেশ থাকবে। বাংলাদেশ থাকার জন্যই এই দুনিয়ায় এসেছে। একে কেউ কোনদিন ধ্বংস করতে পারবে না। আজ আমরা জাতিসংঘের সদস্য। আজ সারা দুনিয়ায় আমার বাংলাদেশের পতাকা ওড়ে। আজ দুনিয়ার মাঝে আমার বাংলাদেশের স্থান হয়েছে।’





‘একটা কথা আপনাদের ভুললে চলবে না। আপনারা স্বাধীন দেশের পুলিশ। আপনারা বিদেশি শোষকদের পুলিশ নন- জনগণের পুলিশ। আপনাদের কর্তব্য জনগণের সেবা করা, জনগণকে ভালোবাসা, দুর্দিনে জনগণকে সাহায্য করা। আপনাদের বাহিনী এমন যে, এর লোক বাংলাদেশের গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে। আপনাদের নিকট বাংলাদেশের মানুষ এখন একটি জিনিস চায়। তারা যেন শান্তিতে ঘুমাতে পারে। তারা আশা করে, চোর, বদমাইশ, গুণ্ডা, দুর্নীতিবাজ যেন তাদের ওপর অত্যাচার করতে না পারে। আপনাদের কর্তব্য অনেক।’





‘আমি জানি, আপনাদের নানা রকম অসুবিধা আছে।৭০ থেকে ৮০টা থানা হানাদার বাহিনী ধ্বংস করে দিয়েছিল। মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিল। সেগুলো আমরা নতুন করে গড়তে চেষ্টা করছি। অনেকগুলো গড়া হয়েছে। অনেকগুলোর কাজ চলছে। আপনাদের কিছুই ছিল না। আজ আস্তে আস্তে কিছু কিছু হতে চলেছে। একদিনে কিছুই হবে না।’





‘বাংলাদেশের মানুষ দুঃখী, বাংলাদেশের মানুষ গরীব, বাংলাদেশের মানুষ না খেয়ে কষ্ট পায়। যুগ যুগ ধরে তারা শোষিত হয়েছে। আজ তাদের অবস্থা যে কেমন। আপনারা ভাড়াটিয়া নন। আপনারা বাংলা মায়ের ছেলে। আপনাদের বাপ-মা এই বাংলাদেশে রয়েছেন। তাদের অবস্থা আপনারা জানেন। গ্রামে গ্রামে আপনারা দেখেছেন মানুষ হাহাকার করে, না খেয়ে কষ্ট পায়। বন্যা, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ে কষ্ট আরও বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জিনিসের দাম অত্যন্ত বেড়ে গেছে। ফলে মানুষের খাবার যোগাড় করতে আমাদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। আজ গরীবের ওপর ট্যাক্স ধরার ক্ষমতাও আমাদের বেশি নেই। তারা টাকা কোত্থেকে দেবেন? তারা না খেয়ে কষ্ট পাচ্ছে। এবার যে বন্যা হয়েছে যে দুর্ভিক্ষ হয়েছে, তা আপনারা দেখেছেন।’



‘আমি আপনাদের কাছে এই আশা করব যে, আপনারা হবেন আমার গর্বের বিষয়। বাংলাদেশের মানুষ যেন আপনাদের জন্য গর্ব অনুভব করতে পারে। আপনারা যদি ইচ্ছা করেন, আপনারা যদি সৎ পথে থেকে ভালোভাবে কাজ করেন, যদি দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থাকেন, তাহলে দুর্নীতি দমন করতে পারবেন। আপনারা যদি আজকে ভালোভাবে থাকেন, শৃঙ্খলা বজায় রাখেন, তাহলে আমি বিশ্বাস করি, যে থানায় ভালো অফিসার আছেন এবং ভালোভাবে কাজ করছেন, সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনও প্রকার সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে না। কারণ, তারা সবসময় সজাগ থাকেন এবং দুষ্টকে দমন করেন। যিনি যেখানে রয়েছেন, তিনি সেখানে আপন কর্তব্য পালন করলে দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে না।’



‘মনে রাখবেন, আপনাদের মানুষ যেন ভয় না করে। আপনাদের যেন মানুষ ভালোবাসে। আপনারা জানেন, অনেক দেশে পুলিশকে মানুষ শ্রদ্ধা করে। আপনারা শ্রদ্ধা অর্জন করতে শিখুন।’



‘আপনাদের বনে-বাদাড়ে নদীতে লোকালয়ে সর্বত্র যখন যেখানে প্রয়োজন পড়ে, ডিউটি করতে হয়। চব্বিশ ঘণ্টা মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে হয়। অনেকে বলেন যে, সকলের ছুটি আছে, কিন্তু পুলিশের ছুটি নেই। এজন্য আমার দু:খ হয়। সংখ্যায় আপনারা খুব কম বলেই আপনাদের রাত দিন কাজ করতে হয়। আমি আপনাদের সব অসুবিধার খবর যে রাখি না তা নয়। কিন্তু উপায় কি? সাধারণ মানুষের টাকা দিয়েই সব চলে। কিন্তু আজ মানুষের যে অবস্থা, দেশের যে অবস্থা, তাতে তাদের ওপর আর ট্যাক্সের বোঝা চাপানো যায় না। আজ আমরা যারা এখানে আছি, তারা সরকারি বা বেসরকারি কর্মচারী। পুলিশ, সামরিক বাহিনী, বিডিআর, রক্ষীবাহিনী বা আনসার যা-ই আমরা হই না কেন, সকলেই এই বাংলাদেশের জনগণের টাকা দিয়েই চলি এবং সবাইকে রাখা হয়েছে জনগণের সেবা করার জন্য।’



‘জীবন অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। এই কথা মনে রাখতে হবে। আমি বা আপনারা সবাই মৃত্যুর পর সামান্য কয়েক গজ কাপড় ছাড়া সঙ্গে আর কিছুই নিয়ে যাব না। তবে কেন আপনারা মানুষকে শোষণ করবেন। মানুষের ওপর অত্যাচার করবেন? গরীবের ওপর অত্যাচার করলে আল্লাহর কাছে তার জবাব দিতে হবে। তাই শুধু আপনাদের নয়, সমগ্র সরকারি কর্মচারীকেই আমি অনুরোধ করি, যাদের অর্থে আমাদের সংসার চলে, তাদের সেবা করুন। যাদের জন্য, যাদের অর্থে আজকে আমরা চলছি, তাদের যেন কষ্ট না হয়, তার দিকে খেয়াল রাখুন।’



‘আর যারা অন্যায় করবে, আপনারা অবশ্যই তাদের কঠোর হস্তে দমন করবেন। কিন্তু সাবধান, একটা নিরপরাধ লোকের ওপরও যেন অত্যাচার না হয়। তাতে আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কেঁপে উঠবে। আপনারা সেই দিকে খেয়াল রাখবেন। আপনারা যদি অত্যাচার করেন, শেষ পর্যন্ত আমাকেও আল্লাহর কাছে তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে। কারণ, আমি আপনাদের জাতির পিতা, আমি আপনাদের প্রধানমন্ত্রী, আমি আপনাদের নেতা। আমারও সেখানে দায়িত্ব রয়েছে। আপনাদের প্রত্যেকটি কাজের দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত আমার ঘাড়ে চাপে, আমার সহকর্মীদের ঘাড়ে চাপে। এজন্য আপনাদের কাছে আমার আবেদন রইলো, আমার অনুরোধ রইলো, আমার আদেশ রইলো, আপনারা মানুষের সেবা করুন। মানুষের সেবার মতো শান্তি দুনিয়ায় আর কিছুতে হয় না। একটা গরিব যদি হাত তুলে আপনাকে দোয়া করে, আল্লাহ সেটা কবুল করে নেন। এজন্য কোনদিন যেন গরিব-দুঃখীর ওপর, কোনদিন যারা অত্যাচার করেনি, তাদের ওপর যেন অত্যাচার না হয়। যদি হয়- আমাদের স্বাধীনতা বৃথা যাবে।’



‘আমার ভাইয়েরা, এক দল লোকের পয়সার লোভ অত্যন্ত বেড়ে গেছে। পয়সার জন্য তাদের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। মৃত্যুর পর এ পয়সা তাদের কোন উপকারে আসবে না। এই পয়সায় যদি তাদের সন্তানরা মানুষ না হয়, তাহলে তারা নানা অপকর্মে তা উড়িয়ে দেবে। তাতে তারা লোকের অভিশাপ কুড়িয়ে আখেরাতেও শান্তি পাবে না। তাই আমি সকলকে অনুরোধ করি, রাত্রে একবার চিন্তা করবেন, সারাদিন ভালো কিছু করেছেন, না মন্দ করেছেন। দেখবেন, এতে পরের দিন মনে আশা জাগাবে যে, আমি ভালো কাজ করতে পারি। এ দেশের মানুষ বহু কষ্ট করেছে। যুগ যুগ ধরে তারা কষ্ট করছে। এই বাংলাদেশে কয়েক হাজার লোক না খেয়ে মারা গেছে। একথা আমি গোপন করিনি। বিদেশ থেকে খাবার আনতে চেষ্টা করেছি। নিরন্ন মানুষদের খাওয়ার জন্য পাঁচ হাজার সাতশ’র মতো লঙ্গরখানা চালু করা হয়েছিল। সরকারি কর্মচারী ও রাজনৈতিক কর্মীরা মিলে সেই সব লঙ্গরখানা চালিয়েছেন। কোনওমতে আমরা এই দুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি।’



‘মাঠে কল কারখানায় সর্বত্র আমাদের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কাজ করতে হবে। কোনোরূপ ফ্যাশন আর চলবে না। এই তিন বছরে অনেক ফ্যাশন হয়েছে। কিন্তু যে ফ্যাশন বজায় রাখতে গিয়ে মানুষ তারা নিজের কাজে ফাঁকি দেবে, চুরি-ডাকাতি করবে, আর বড় বড় কথা বলবে, সে ফ্যাশন আর করতে দেওয়া হবে না। মানুষের সহ্যের সীমা আছে, আমারও সহ্যের সীমা আছে। এবার আমি আপনাদের কাছে সাহায্য চাই। আপনারা একবার আল্লাহর নামে প্রতিজ্ঞা করুন, দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থাকব। প্রতিজ্ঞা করুন- আমরা দুর্নীতিবাজদের খতম করব। প্রতিজ্ঞা করুন- আমরা দেশকে ভালবাসব, দেশের মানুষকে ভালবাসব। প্রতিজ্ঞা করুন- আমরা দেশের মাটিকে ভালবাসব। যারা দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, রাতের অন্ধকারে যারা মানুষ হত্যা করে, থানা আক্রমণ করে অস্ত্র নিয়ে যায়, আপনারা মোকাবেলা করে বাংলাদেশের মাটি থেকে তাদের উৎখাত করুন।’



‘আপনাদের দুঃখ-কষ্টের কথা আমি জানি। আপনাদের খাওয়া-পরার কষ্টের কথাও। কিন্তু কষ্ট কি শুধু আপনারাই করছেন? যাদের টাকা দিয়ে আমরা চলি, তারাই সবচেয়ে বেশি কষ্ট করছে। আমরা চাই একটা শোষণ-হীন সমাজ। আমরা চাই ইনসাফের রাজত্ব। আমরা চাই মানুষ সুখী হোক, গরিব-দুঃখী, বড়-ছোট পেট ভরে ভাত খাক। তাহলেইতো আমাদের স্বাধীনতা সার্থক হবে। যারা আত্মত্যাগ করেছে, রক্ত দিয়েছে, তাদের আত্মা শান্তি পাবে।’



‘আজ হতে শুরু হোক আপনাদের নতুন জীবন। এই পুলিশ সপ্তাহ থেকে আপনারা নতুন মনোভাব নিয়ে কাজ শুরু করুন, যাতে বাংলাদেশের পুলিশ দুনিয়ার বুকে গর্বের বস্তু হয়ে উঠতে পারে। এটিই আমি চাই আপনাদের কাছে। আপনাদের জন্য আমার সহানুভূতি আছে। আপনারা জানেন, আপনাদের আমি ভালোবাসি। আপনাদের জন্য চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করেও আমি ক্লান্তি বোধ করি না। কিন্তু আমি চাই, আপনারা মানুষকে ভালবাসুন। তাহলেই শান্তি আসবে।’



‘আমি আপনাদের এই সপ্তাহে কামিয়াবি কামনা করি এবং আরও কামনা করি সব পুলিশ কর্মচারী যিনি যেখানেই থাকুন না কেন, সবাই যেন সৎ হওয়ার এবং মানুষকে ভালোবাসার সুযোগ পান। আজকে আপনারা আরও প্রতিজ্ঞা করুন, আমরা এমন পুলিশ গঠন করবো, যে পুলিশ হবে মানুষের সেবক, শাসক নয়। আমি পুলিশ বাহিনীর ভাইদের আন্তরিক মোবারক-বাদ জানিয়ে বলছি, একদিন বাংলার মানুষ সুখী হবে, এ বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। সৎ পথে থাকতে হবে।’



‘খোদা হাফেজ, জয় বাংলা।’





মুজিববর্ষের অঙ্গীকার পুলিশ হবে জনতার ঃ



আজ থেকে ৪৫ বছর আগে ১৯৭৫ সালে প্রথম পুলিশ সপ্তাহে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশে দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণ দিয়েছিলেন। যা আজও পুলিশ বাহিনীর জন্য অনুসরণীয় হয়ে আছে। ওই ভাষণের মুল কথা গুলো -

১।পুলিশ  মানুষকে ভালোবাসবে ও সেবা দিবে

২। পুলিশ সৎ জীবন যাপন করবে

৩।পুলিশকে যেন মানুষ ভয় না করে ও ভালোবাসে, সেভাবে পুলিশ কাজ করবে

৪।পুলিশ  সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা অর্জন করবে

৫।স্বাধীন দেশের পুলিশ শোষকদের নয়, জনগণের সেবক।

৬।পুলিশের কাজ জনগণকে ভালোবাসা ও দুর্দিনে সাহায্য করা।

৭।পুলিশ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে যাতে করে   মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারে।



 মূলত এই মূলমন্ত্র গুলো মেনে চলার ব্রত হচ্ছে  ২০২০ মুজিববর্ষের অঙ্গীকার  এবং যার ফলে সত্যিকার অর্থে পুলিশ সেবা ও মানবিক আচরণের দ্বারা মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হবে ।







বাংলাদেশ পুলিশের কিছু ফলপ্রসূ উদ্যোগ ও সেবা



৯৯৯ সেবা ঃ



যুক্তরাজ্য ন্যাশনাল হেল্প ডেস্ক চালু করেছিল ১৯৩৭ সালে। যুক্তরাষ্ট্র চালু করে ১৯৬৮ সালে। আর বাংলাদেশ করেছে ২০১৬ সালে। দেরিতে হলেও এটা দেশের একটি অগ্রযাত্রা। এই সেবা দেয়ার জন্য অনেক দেশ বড় শহরগুলোতে আলাদা পুলিশ বাহিনীসহ বিভিন্ন সুবিধা যোগ করে এটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার কাজটি করেছে। বিলম্বে হলেও নাগরিকদের জরুরী সেবা প্রাপ্তির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করেই বর্তমান সরকার টোল ফ্রি ‘৯৯৯’ নম্বরটি চালু করেছে। এর সুফল ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ পরিচালিত কর্মসূচীর আওতায় নাগরিকদের জরুরী প্রয়োজনে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদানের জন্য এই কার্যক্রম চালু হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর এবং বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।



 জরুরী সেবা ৯৯৯ সম্পর্কে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক তথ্য ।  জানা যায় ৯৯৯ চালুর পর এখন পর্যন্ত প্রায় দুই কোটি কল পুলিশ পেয়েছে। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ কলই করেছেন নারীরা। এসব কলের ভিত্তিতে প্রায় ৫৮ লাখ নাগরিককে বিভিন্ন ধরনের সেবা দেয়া হয়েছে। সেবা গ্রহীতার মধ্যে বেশিরভাগই নারী। বিশেষ করে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য সাফল্য আছে এই সংস্থার। পুলিশের এই পদক্ষেপ ও তৎপরতা সাধারণ মানুষের মাঝে যে স্বস্তি ও আস্থার জায়গা তৈরি করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।





সম্প্রতি চলন্ত ট্রেনে এক প্রান্তিক নারীর সন্তান প্রসবের পর খবর পেয়ে প্রসূতির স্বাস্থ্যসেবায় সক্রিয় অবদানের জন্য আলোচিত হয়েছে ৯৯৯ সেবা কার্যক্রম। এর আগে পদ্মা নদীতে দুর্ঘটনা-কবলিত একটি ফেরি উদ্ধার করে ৩০০ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে এই জরুরী সেবা ‘৯৯৯’। ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে ছিনতাই হওয়া ট্রাক ও ট্রাক-ভর্তি ২২ হাজার ৫৩০টি মুরগির ডিম কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। উল্লেখ করা দরকার, ৯৯৯-এর মতো বাংলাদেশে নারী ও শিশুদের সুরক্ষার জন্য ইতোমধ্যে ১০৯ সেবাটিও চালু হয়েছে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বিপদ থেকে উদ্ধারের আশায় ইমার্জেন্সি ফোনকল করার জন্য একটি নম্বর নির্দিষ্ট থাকে।



বলা-বাহুল্য, সমাজে নারী ও মেয়ে শিশুরা নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার। সম্ভাব্য নির্যাতনের আগে কিংবা নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর জরুরী ভিত্তিতে নারী বা মেয়ে শিশু প্রতিকার পেলে কিংবা তার ভেতরে নিরাপত্তার বোধ তৈরি করা সম্ভব হলে একটি বড় কাজ হয়। দেশের পল্লী এলাকায় বাল্যবিয়ে রুখে দেয়ার ব্যাপারে এই হেল্প-লাইন ইতোমধ্যে যথাযথ হেল্প তথা সাহায্যে সক্রিয় ভূমিকা রাখার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাল্যবিয়েই শুধু নয়, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ, নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুকে উদ্ধারের ক্ষেত্রে এ হেল্প-লাইন কার্যকর ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এই কল সেন্টার বা হেল্প-লাইন চালু হয় পাঁচ বছর আগে।



তবে ব্যাপক প্রচারণার অভাবে এখনও নারীসমাজ এই সেবা সম্পর্কে তেমন অবহিত নন। যদিও দিনে দিনে এর পরিধি বাড়ছে। তবে লক্ষ্য করার বিষয় হলো, শুধু নারী সমস্যাতেই নয়, সার্বিকভাবে বিবিধ সঙ্কট ও সমস্যায় এই জরুরী সেবা কার্যক্রম সফলতার পরিচয় দিচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটি সরকারের জন-বান্ধব নীতি বাস্তবায়নের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।





ভিকটিম সাপোর্ট ইউনিট  -নির্যাতিতদের বাতিঘর





রাজধানীর তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার নির্যাতিত নারীর বাতিঘর। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এ সেন্টার থেকে ৮১১ জন নারী ও শিশু সাহায্য পেয়েছেন। পারিবারিক সহিংসতায় নির্যাতিত নারী, আশ্রয়হীন গৃহকর্মী ও কমবয়সী নিখোঁজ শিশুরাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে আশ্রয় নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে দেশব্যাপী এই সেবা ছড়িয়ে দিতে ৬টি বিভাগীয় শহরেও চালু হবে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার। এ ছাড়া খুব শীঘ্রই রাঙামাটিতে শুরু হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের কার্যক্রম। জানা গেছে, পুলিশের সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের যাত্রা শুরু হয় ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। সেন্টারটির দায়িত্বে আছেন একজন সহকারী পুলিশ কমিশনার। এ ছাড়া তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন কয়েকজন সাব-ইন্সপেক্টর ও কনস্টেবল। নারী ও শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে প্রশিক্ষিত নারী পুলিশরাই কেন্দ্রটি পরিচালনা করেন।



এ ছাড়া দশটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) মামলা, কাউন্সিলিং ও অন্যান্য আইনি সহায়তা দিচ্ছে। আট বছরের কমবয়সী ছেলেরাও এখানে আশ্রয় পায়। ভিকটিমদের অবস্থানের জন্য বিশাল একটি কক্ষে আটটি বেড রয়েছে। রয়েছে খাওয়া, বাচ্চাদের খেলাধুলা ও টিভি দেখার ব্যবস্থা। আশ্রিতদের পোশাকও দেওয়া হয়। নিয়মানুযায়ী একজন ভিকটিম পাঁচদিন এখানে থাকার সুযোগ পান। প্রয়োজনে কোনো শিশু বা নারী এর অধিক সময়ও অবস্থানের সুযোগ পেয়ে থাকেন।



২৪ ঘণ্টাই এ সেন্টার থেকে সেবা পাওয়া যায়। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এ পর্যন্ত পারিবারিক নির্যাতনে ২৪২ নারী, প্রতারণার শিকার হয়ে ১৮ নারী-শিশু, নিখোঁজ হয়েছে ৪৪৮ নারী-শিশু, বাসা ত্যাগ করে একজন, গৃহকর্মী হিসেবে নির্যাতিত দুজন নারী, বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে এক কিশোরী, অন্যান্যভাবে উদ্ধারকৃত নির্যাতিত ১২ নারী, অপহরণের শিকার হয়ে ২৬ নারী-শিশু এবং পাচারকৃত ৯ নারী-শিশু ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে সেবা পেয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, থানায় মামলার বিষয়েও অনেকে এখানে আশ্রয় নিয়ে থাকেন। এর মধ্যে যৌতুকের জন্য দুজন, ধর্ষণ-জনিত কারণে ১৮ জন, শ্লীলতাহানির ফলে একজন, উত্ত্যক্তের কারণে একজন ও নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ৩০ নারী-শিশু তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সেন্টারে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে সেখানে পাঁচ শিশু ও একজন নারী আশ্রিত আছেন।



সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশব্যাপী নির্যাতিত নারী-শিশুদের এ সেবা ছড়িয়ে দিতে ৬টি বিভাগীয় শহরেও চালু হবে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার। তাছাড়া খুব শীঘ্রই রাঙামাটিতে শুরু হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের কার্যক্রম। তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারটির মতো অন্য সাতটি সেন্টারেও নারী পুলিশ সদস্যদের নিয়েই পরিচালিত হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এর মাধ্যমে নারী পুলিশ সদস্যদের কাজের ক্ষেত্রে উৎসাহ আরও বাড়বে। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে দায়িত্ব-রত সহকারী পুলিশ কমিশনার মেরিন সুলতানা বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পারিবারিক সহিংসতায় নির্যাতিত নারী ও গৃহকর্মী এবং কমবয়সী নিখোঁজ শিশুরা সেন্টারে আশ্রয় নেন। ঢাকার বাইরের বিভাগীয় শহরে নির্যাতিত ও অসহায় নারীরা যাতে একই সুযোগ-সুবিধা পান সেই লক্ষ্যে আরও সাতটি সেন্টার তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম বলেন, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দেশের নির্যাতিত নারীদের নিয়ে কাজ করে এ রকম কিছু এনজিও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের সঙ্গে কাজ করছে। ফলে নির্যাতিতরা নিশ্চিতরূপেই এ প্রতিষ্ঠান থেকে সাহায্য পায়।


 সব ক্ষেত্রে নারীদের সুরক্ষা :-


 নারী, শিশুসহ জনগণের আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠতে চেষ্টার কোনও ব্যতয়

নেই, ইতিমধ্যে  সব  যাত্রী পরিবহনের ভিতরে গাড়ির নাম্বার লেখা কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে দেশের সকল যাত্রী পরিবহনেই এই ব্যবস্থা থাকবে যাতে করে কেউ বিশেষ করে নারী যাত্রী নিরাপত্তা-হীনতা কিংবা কোন অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে তাৎক্ষনিক-ভাবে পুলিশকে জানিয়ে প্রতিকার পেতে পারে ।

চট্রগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের কিছু  জনবান্ধব ও সেবার কার্যক্রম ঃ


১। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ১১ টি জেলার সকল থানায়  আইপি ক্যামেরা। এই ক্যামেরার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাহাদের অফিসে বসে থানায় আগত জনসাধারণ এর সহিত ডিউটি অফিসার কিরূপ আচরণ /সেবা প্রদান করছে ও থানার সকল কার্যক্রম তদারকি করে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন।এবং ভবিষ্যৎ পর্যালোচনার জন্য রেকর্ড রাখবেন।
২।বাসের ভিতর সংযুক্ত করা হচ্ছে গাড়ির নাম্বার । যে কোনো মহিলা যাত্রীসহ অন্যান্য যাত্রীরা ৯৯৯ এ কল করে গাড়ির নাম্বার সহ অবস্থান জানিয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশের সেবা পাবেন।যে কোন ধরনের অপরাধ মূলক তথ্য অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পূর্বেই পুলিশকে জানানো যাবে।
৩।থানায় জিডি বা মামলা করার ক্ষেত্রে পুলিশকে কোন প্রকার টাকা দেওয়া লাগবেনা তাই প্রত্যেকটি থানার ডিউটি অফিসারের রুমে দেওয়া হছে ডিআইজি অফিসের প্রতিনিধি সহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপার মহোদয় এর মোবাইল নাম্বার সংযোজিত ব্যানার।
৪। " আপনার ওসি " নামক ভিন্ন ধরনের পুলিশিং সেবা। এখন পুলিশ যাবে জনগনের কাছে শুনবে তাদের সমস্যার কথা। থানা হতে দূরবর্তী প্রত্যন্ত অঞ্চলে থানার কর্মকর্তা গিয়ে তথায় সেবা মূলক বুথ তৈরি করে অত্র এলাকার মানুষের সমস্যা নিবারনে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।এবং উক্ত ঘটনা সাধারণ ডায়েরি ভুক্ত করবেন।
৫। ডিআইজি এর ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চলমান রয়েছে প্রতিটি জি ডি, মামলা করতে বাদীকে প্রয়োজনীয় সহয়তা প্রদান। যে কোন হয়রানির থেকে রক্ষা করতে ডিআইজি অফিস সহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে বাদীর সাথে সরাসরি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করছেন।
৬। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন এর হয়রানি রোধে ভেরিফাই সম্পন্ন হওয়ার তথ্য চলে যাবে আবেদনকারীর মোবাইলে।



সূত্র- প্রথম আলো, ১৯ জানুয়ারি ২০২০ –পুলিশের চেষ্টায় কোন ত্রুটি নেই  –এআইজি সোহেল রানা

 সূত্র-  ড. এ এইচ খানের সম্পাদনায় ‘বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত ভাষণ’

   সূত্র- জনকণ্ঠ ১ ডিসেম্বর ,২০১৯

সূত্র- women support & investigation division

সূত্র- চট্রগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের ফেসবুক পেইজ