বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৭

বড় বাপের পোলা খায় মুড়ি ছোলা

)
ইমরান হোসেন লিটন ওরফে কোনাইচ্চা লিটন , মানুষের গড়ন ও যে কোণাকৃতির হতে পারে তা এই লিটনের নাম না শুনলে জানা হত না, কোণ আইসক্রিম, ঘরের কোনা এবং রাস্তার কোনাকুনি হাটতে অভ্যস্ত সে । তাই তো নাম টা আরো পাকা হয়ে গেছে , থাকেন পুরান ঢাকার ভজহরি লেনে এবং যথারীতি কোনার মাঝে দুই দুইটি ছয় তলা দালানের একটিতে , এই বাড়িটা তার বাবার বিদেশের পাঠান টাকা দিয়ে করা । তাই তো লিটন মাস শেষে ভাড়াটিয়াদের কাছে বুঝে গুজে নেন বাড়ি ভাড়ার সব , পেশা বলতে এটাই এর বাইরে টো টো কোম্পানীর ম্যানেজার যিনি প্রয়াত বাবার হোটেলের নিয়মিত ভক্ষনকারী ,পুরান ঢাকায় এটাকে বলে খোদার খাসি ! যে খাসি সারা দিন রাত দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেন ফেরেন আর ছাদের চিলেকোঠায় দোস্ত বন্ধুদের নিয়ে ফুল ভলিউমে সিডি ছেড়ে গান শোনেন আর মহল্লায় জানান দেন যে
বড় বাপের পোলা
খায় মুড়ি ছোলা
ফুল ভলিউম
পোলা তো নয় যেন আগুনেরই গোলা ‘’
পাশের ফ্ল্যাটে থেকে আরেক জনে চিৎকার দেয় অই কোনাইচ্চা অগরে আইজকা কি খিলাইলিরে ? ছোলা মুড়ি নাকি পাটিস খিলায় লি ?
কউন যাইবনা ,অগোরে আইজকা জাপান থিকা আমার বইন জামাইয়ে পাঠাইছে এমন একটা কিসিমের জিনিস খিলাইছি! হুনবি কি ?
হোন তাইলে ডাবল না চাইর ডাবল স্পিকার লাগান একটা ডেক সেট যেই ডার দাম আমগো দ্যাশে এক্কেরে কম কইরা হইলে লাখ টাকা বলেই সাউন্ড বাড়ায়- পোলা তো নয় যেন আগুনেরই গোলা রে –‘’

)
রাজীব আহমেদ কনক সিলেটি, ঢাকায় পল্টনে থাকেন , চা এর ব্যবসায়ী , ছোটবেলা থেকেই ব্যবসা করেন বলা যায় কারন তার বাবার সাথে পড়াশুনার পাশাপাশি দোকানে বসতেন তাই এই যুবক বয়সে অনেক ভাল ব্যবসা বোঝেন তিনি । পল্টনে তার পাশের রুমে আরেক সিলেটি আবরারের রুমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বন্ধু আসেন ,তাদের সাথে কনকের পরিচয় হয়েছে , আড্ডাও হয় মাঝে মাঝে, কনক সময় পেলে টিএসসি তে যায় ,সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত পর্যন্ত এই আড্ডা চলে , আবরার আর কনক মিলে ঢাকায় আছেন প্রায় চার বছর , আবরার একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে চাকুরী করেন , লিটন আবরারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রেন্ড ,এখন লিটন ঠিকাদারী করেন , খিলগাও আনসার সদর দপ্তরের প্রধান সাপ্লায়ার , হঠাৎ করেই আবরারের মোবাইলে লিটনের ফোন দোস্ত তর সাথে চা এর ব্যবসা করে পোলাডার নাম কি যেন?
আবরার- হ্যাঁ ওর নাম কনক, কেন কি হইছে ?
লিটন আমার দরকার আছে ,আমার দুই ট্রাক চা পাতা লাগব তিন দিনের মধ্যে ,অই কি দিতে পারব ?
আবরার- অই তো বাড়ী গেছে দুই দিন পর ফিরে আসলে তোর কাছে পাঠাই দিব, আর তোরে ওর মোবাইল নাম্বার টা দিতাসি ,
দুই দিন পর কনক বাড়ী থেকে ফিরল , আবরারের কাছে শুনেই সে লিটনকে ফোন দিল । লিটন তাকে তার বাসার পুরো ঠিকানা দিল , ভাই একটু কষ্ট করে আমার বাসায় চলে আসেন । ১৫ ,ভজহরি লেন , চার তলা ।

(
)
কোনাইচ্চা লিটনের মন মেজাজ খুব খারাপ, পাড়া মহল্লার পোলাপানেরা এই কাম করতেই পারেনা , কারন সকলের কাছেই ১৪,ভজহরি লেনের ছয় তলা বিল্ডিং এর চার তলার কোনাইচ্চা লিটনের বাসা খুব পরিচিত , গতকাল বিকাল ৫ টার দিকে দুইটা ছেলে এসে চার তলায় তার ফ্ল্যাটে কলিং বেল টিপে অনেকক্ষন, লিটনের বোন এসে দরজা খুলে দেয়, কে আপনারা ? তারা বলে যে আমরা কোনাইচ্চা লিটনের বন্ধু , লিটন ছাদে আছে ,আমাগোরে পাঠাইছে ডেক সেট টা উপরে নিয়া যাইতে , লিটনের বোন বলে যে ঠিক আছে আপনারা নিয়ে যান , সাথে সাথেই তারা এটা নিয়ে চলে যান, লিটন তখন ছিল টিপু সুলতান রোড চাচাত ভাইয়ের দোকানে আড্ডা মারছিল, বাসায় এসে তার চক্ষু চড়ক গাছ !

আবে হালায় কেঠায় এমূন কাম করলো !ওর মায়ের হাংগা ওর বাপের গায়ে জ্বর ! কেলা এত্ত বড় কইলজারে কোনাইচ্চার নামে ফিটিং হান্দাইছস ! পাইলে কইলাম সিস্টেম কইরা দিমু !
পুরান ঢাকার অলি গলি পাকস্থলীর ভিতরে কনকের খুব বেশি আসা যাওয়া পড়ে নাই ,তাই ১৫ ভজহরি লেন খুজে পেতে বেগ পেতে হয়েছে , কনক জানে লিটন রা স্থানীয় তাই গলির মুখেই ছোট দোকানে জিজ্ঞেস করল যে লিটনের বাসা এই ছয় তলা বিল্ডিং দুটির কোন টা এবং কোন বাড়ি টা ১৫ নম্বর?

)
দোকানদার যথারীতি দেখিয়ে দিল হাত উচু করে বলল কোনার টাই , এর মধ্যে কনক লিটন কে ফোন দিয়ে আরো কনফার্ম হল । কিন্তু কনক কোনা খুজতে গিয়েই বিপথে চলে গিয়ে বিপদ ডেকে আনল ! সে ১৫ তে না গিয়ে ভুল করে গেল ১৪ তে , সোজা চার তলায় কলিং বেলে টিপ । কোনাইচ্চা লিটন দরজা খুলে দিল, ভাই এটা কি লিটনের বাসা ?
লিটন জবাব দেয় জ্বি ,
লিটন কি আছে বাসায় ?
লিটন কেন লিটন রে কি দরকার ? আপনার পরিচয় ?
আমি লিটনের বন্ধু ।
কোনাইচ্চা লিটন মনে মনে ভাবে হালায় তো কাইল্কার সিল দেওন পাটি, অহন তো ওরে সিল দেওন দরকার ,
হ আপনে বসেন, লিটন ভাই ছাদে গেছে আমি ডাইকা আনতাছি বলেই সে বেরিয়ে গেল ছাদে তখন তার আরো কিছু দোস্ত বন্ধুরা ডেক সেটের সমবেদনা জানাতে এসেছে , অই তোরা কেঠায় কই আছস আয় , চোর হালায় আইজকা আবার আইছে আমারে কয় লিটন আছে ? আমি লিটনের বন্ধু ! আই হালারে পিসা ফালাম আইজকা !
কনক সোফা তে বসা কিছু বোঝার আগেই রুমে ৫/৬ জন হুরমুড় করে ঢুকেই এলোপাথারি মারধর শুরু, অই ডেক সেট কই ? বলে মারা শুরু ----
কনক কিছুই বুঝতে পারছে না , অনেক মার খাবার পর তাদের উপুর্যুপরি একই ধরনের কথা শুনে কনক মুল বিষয় টি ধরতে পেরে হাত জোর করে বলল ভাই অনেক মারছেন ভাই আপনারা আমার একটা কথা শুনেন , বলেই সে বলল আমার মোবাইল টা দেন ,ফোন দিল ঠিকাদার লিটন কে , লিটন আমি বিপদে পড়ছি তুমি একটু এই খানে আস , ভাই এই বিল্ডিং এর নাম্বার কত ? সমস্বরে বলে উঠে ১৪,
ঠিকাদার লিটন বলল কনক তুমি আসবা ১৫ তে আর গেছ ১৪ তে, কি বিপদ কে আছে তোমার আশে পাশে বলেই কোনাইচ্চা লিটন ফোন নিয়ে বলল কে ভাই আপনি , ও লিটন ভাই ! হেই কি আপনের পরিচিত ! লিটন বলে হ্যাঁ কি করেছে ও ? না ভাই হেয় কিছু করে নাই যা করার আমরা করছি , আল্লায় মাফ করুক আমাগো ভাই আপনে একটু আসেন ।
ঠিকাদার লিটন এসে সব শুনে বুঝল যে অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে , সবাই তার কাছে এবং কনকের কাছে হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চাইল, লিটন কনক কে নিয়ে সোজা হাসপাতালে গেল , কনকের মাথা ফেটে গেছে ,হাতে ও পায়ের আঘাত টাও গুরুতর , একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে লিটনের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল সি এন জি এর ভিতর ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন