আমাদের
প্রাত্যাহিক জীবনে বেশ কিছু কিম্ভুতকিমাকার শব্দের প্রয়োগ আমরা দেখতে পাই । চালু, জোশ, কড়ড়া, ক্লাসিক, বসিক, সুপার,তুরাপ
প্রভৃতি শব্দ চয়ন আমাদের কে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে ।বাংগালীয়ানা নয় এটা একটি
মিশ্রিত কর্ষিত বর্সিত ফলিত বায়োনিক
একটা সংস্কৃতি । ভাল একটা খবর পেলে বা পড়লে আমরা বলি যে চালু, মজার
বা মন ভোলানো কোন ছবি দেখলে বলি জোশ,
সুন্দরী
ও আটসাট আবেদনময়ী কোন মেয়ে দেখলে বলি কড়ড়া,
মানে
কড়া থেকে কড়ড়া, খরা থেকে খররা , মরা
থেকে মররা। ভালো রেজাল্ট হলে বলি সুপার ,
গ্রেট, মারভেলাস।
আসলে এগুলি হল আমাদের মুন্সিয়ানা,
আমরা
মুন্সিয়ানা তে ১০০ তে ১০০।আর
এই মুন্সিয়ানা করতে গিয়ে আমরা নিজের গুণীপনা আর জ্ঞ্যানীপনা কে জাহির করার জন্য
যার পর নাই মরিয়া সরিয়া আর নড়িয়া উঠি।
ছোটবেলায় ঠাকুরগাও সুগার মিল কলোনীতে আমাদের বাসায় এক আঙ্কেল আসতেন যাকে দেখলে আমাদের পিলে চমকে
যেত,কারন তিনি এসে ।
জিজ্ঞেস করতেন বলতো – পৃথিবীর ছাদ কোন টা ?
বলতো -আমার বাবার বাবা একজন উকিল ছিলেন এর ইংরেজি কি ?
না পারলেই বলতেন কিসের ছাত্র তোমরা ? আমাদের সময় তো লেখাপড়া এত সোজা আছলে না, আমাদের সময় পড়তে গেলে মাংস ডি থাকত স্যার গো আর হাড্ডি গুলান আমগো । বোঝছ ? আর তোমরা স্যার গো শার্ট ছিড়া হালাউ বেডা ! উল্লেখ্য যে ক্লাস থ্রিতে পড়ার সময় আমাকে মাত্রাতিরিক্ত পেটানোর জন্যে শিক্ষকের দিকে স্লেট ছুড়ে দিয়ে দৌড় দিয়ে পালিয়েছিলাম, বিনিময়ে আমাকে পেতে হয়েছে মায়ের হাতের শপাং শপাং আর বাবার কানমলা ও স্যারের কাছে মাফ চাওয়া ।
জিজ্ঞেস করতেন বলতো – পৃথিবীর ছাদ কোন টা ?
বলতো -আমার বাবার বাবা একজন উকিল ছিলেন এর ইংরেজি কি ?
না পারলেই বলতেন কিসের ছাত্র তোমরা ? আমাদের সময় তো লেখাপড়া এত সোজা আছলে না, আমাদের সময় পড়তে গেলে মাংস ডি থাকত স্যার গো আর হাড্ডি গুলান আমগো । বোঝছ ? আর তোমরা স্যার গো শার্ট ছিড়া হালাউ বেডা ! উল্লেখ্য যে ক্লাস থ্রিতে পড়ার সময় আমাকে মাত্রাতিরিক্ত পেটানোর জন্যে শিক্ষকের দিকে স্লেট ছুড়ে দিয়ে দৌড় দিয়ে পালিয়েছিলাম, বিনিময়ে আমাকে পেতে হয়েছে মায়ের হাতের শপাং শপাং আর বাবার কানমলা ও স্যারের কাছে মাফ চাওয়া ।
আমাদের এক চাচা ছিলেন খুব
বিজ্ঞের বিজ্ঞ !ভার্সিটিতে পড়ার সময় এক ঈদের ছুটিতে তিনি
আমাদের চার বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে তোমরা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তা তোমরা
কে কোন বিষয়ে পড় ? আমি সহ তিন জনে যার যার
বিষয় বললাম, আমাদের দুষ্টূ বন্ধু বুলেট বললেন যে
কাকা আমি মেথোলোজি তে পড়ি ! কাকা যথারীতি বিজ্ঞজনের
মতই বললেন হ্যা মেথোলোজী ভাল, ভাল সাবজেক্ট, আমি হাঁসি চেপে রাখতে না পেড়ে জিহবায় কামড় দিয়ে রেখেছিলাম ।
উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় সবাই
যেখানে সাদ্দামের সাপোর্টার সেখানে তিনি একাই ছিলেন বুশের সাপোর্টার, আমরা
প্রতি সন্ধায় বিবিসির খবরের পর পরই একটা মিছিল-
সাদ্দাম
তুমি এগিয়ে চলো আমরা আছি তোমার সাথে,
দুনিয়ার মুসলিম এক হও সাদ্দামের বল বাড়াও,
ঐ বাপের বেটা কেউ আছেরে ?
আরে কোন সে বেটা ?
সাদ্দাম হোসেন , কোন সে নেতা
সাদ্দাম হোসেন,
আর ঐ কাকার বাসার সামনে গেলে সবাই বলতাম “ বুশের চামচারা হুশিয়ার সাবধান, হুশিয়ার সাবধান বুশের চামচারা , বুশের চামড়া কুত্তা দিয়া কামড়া, এরপরে মিছিল শেষ করে একটা বক্তব্য, কিভাবে সাদ্দামের হাতকে আরো শক্তিশালী করা যায় আর কিভাবে বুশের পরাজয় নিশ্চিত করা যায় ? এসবই ছিল বাঙ্গালী হিসেবে আমাদের হুজুগ, এই হুজুগের কারনেই আমরা সাদ্দামের জন্যে চাঁদা উঠিয়ে মিলাদ পড়িয়েছিলাম আর বুশের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছিলাম , (যদিও সাদ্দাম হোসেন ছিলেন যুদ্ধবাজ ও দখলদার )
এগুলো ছিল আমাদের মুন্সিয়ানা ।
দুনিয়ার মুসলিম এক হও সাদ্দামের বল বাড়াও,
ঐ বাপের বেটা কেউ আছেরে ?
আরে কোন সে বেটা ?
সাদ্দাম হোসেন , কোন সে নেতা
সাদ্দাম হোসেন,
আর ঐ কাকার বাসার সামনে গেলে সবাই বলতাম “ বুশের চামচারা হুশিয়ার সাবধান, হুশিয়ার সাবধান বুশের চামচারা , বুশের চামড়া কুত্তা দিয়া কামড়া, এরপরে মিছিল শেষ করে একটা বক্তব্য, কিভাবে সাদ্দামের হাতকে আরো শক্তিশালী করা যায় আর কিভাবে বুশের পরাজয় নিশ্চিত করা যায় ? এসবই ছিল বাঙ্গালী হিসেবে আমাদের হুজুগ, এই হুজুগের কারনেই আমরা সাদ্দামের জন্যে চাঁদা উঠিয়ে মিলাদ পড়িয়েছিলাম আর বুশের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছিলাম , (যদিও সাদ্দাম হোসেন ছিলেন যুদ্ধবাজ ও দখলদার )
এগুলো ছিল আমাদের মুন্সিয়ানা ।
ভাবলে
অনেক হাসি পায় আবার ভালোও লাগে যে এমন হুজুগে বাঙ্গাল হিসেবে কত হুজুগেই না পড়েছি ,বাকের ভাই এর ফাঁসি কেন ? প্রশাসন জবাব চাই , জবাব
চাই জবাব চাই , আমরা সবাই বাকের হবো, এত মুনা কোথায় পাবো ?
সে
কি মিছিল যা না দেখলে বোঝান যাবে না , বাকের ভাই এর ফাসি হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে
! সারা কলোনীতে মিছিল করে আমরা মাঠে গিয়ে জড়ো হতাম, এরপরে একজন একজন করে ভাষন –
‘’ বন্ধুরা তোমারা জানো
বাকের ভাই আমাদের আদর্শ , আমরা আমাদের প্রতিটি রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও বাকের ভাই এর
ফাসি রুখবো ,এজন্য আমরা একটি কর্মসুচী হাতে নিব, আমরা সবাই ঢাকায় বিটিভি মুখী
ঘেরাও কর্মসুচী পালন করব । বিটিভি একমাত্র পারে বাকের ভাই এর ফাসি রুখতে !!
সবাই
সমস্বরে বলে উঠে - , বাকের ভাই এর ফাসি হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে, বাকের ভাই এগিয়ে
চলো আমরা আছি তোমার সাথে ,
এরপরে
আমার বন্ধু বুলেট উঠে – ভাই ও বন্ধুরা –আপনারা জানেন মুনা আপার
কথা , মুনা আপার সেই শক্তে মোড়ানো নরম ভালবাসা , বাকের ভাই এর ফাসি হলে কি হবে
মুনা আপার ? সমস্বরে আবার স্লোগান - আমরা সবাই বাকের হবো, এত মুনা কোথায় পাবো ? এরপরে বুলেট মামা আসে বদির বিষয়ে , ভাইসব আপনারা জানেন বদির মিথ্যাসাক্ষী আমাদের
বাকের ভাই কে ফাঁসির দিকে ঠেলে দিয়েছে , আসুন আমরা এই সমাজের সব বদি দের নির্মুল
করি, সাথে সাথেই স্লোগান – বদিরের চামড়া কুত্তা দিয়া কামড়া !
এখনো
ভাবলে হাসি থামতে চায় না , আমরা টিভির একটি জনপ্রিয় নাটকের জন্য যা করেছি তা আসলে
অবাস্তব , কে বাকের ভাই এর ফাসি দিবে আর কে রোধ করবে আর কোন কর্তৃপক্ষ এটা আমলে
নিবেন ?
হাহাহা হেহেহে হোহোহো ! এটাই আমাদের তারুণ্যের উন্মাদনা হুজুগ আর হোদোল কুতকুত !
হাহাহা হেহেহে হোহোহো ! এটাই আমাদের তারুণ্যের উন্মাদনা হুজুগ আর হোদোল কুতকুত !
এই রকম হুজুগে পড়েই অনেক
নতুন নতুন শব্দ আমদানী হত আবার উৎপাদনেও ছিলাম পারদর্শী,
হোদোল কুতকুত ,হোগোশ,
ভেগদোল, প্রভৃতি
। আরো কিছু শব্দের কথা বলি যা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে শুরু করে এখনও শুনি- উড়াধুরা
, কাউল,উরকে ধুরকে,বুইদাল,খাংগারি,খারবাম, ওচিপ্রকিচি, মুকেশ
কুশকুশ প্রভৃতি।এর মধ্যে কিছু শব্দ আমার স্বরচিত, মাঝে
মাঝে ভাবি যে এই শব্দ গুলোকে অভিধান ভুক্ত করে ধন্য গন্য ও অনন্য হওয়া যায়
না ? মুখগ্রন্থে(ফেসবুক) আমার
এক বন্ধুর দেওয়ালে লিখেছিলাম-
চালু চালু চালু
চোখে মুখে বালু বালু
হোদোল কুত কুত
হুজুগেই হামেশা যুৎসই !
বিঃদ্রঃ- হোদোল কুত কুত শব্দটি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ব্যবহার করেছিলেন ।
চালু চালু চালু
চোখে মুখে বালু বালু
হোদোল কুত কুত
হুজুগেই হামেশা যুৎসই !
বিঃদ্রঃ- হোদোল কুত কুত শব্দটি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ব্যবহার করেছিলেন ।