রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

মুন্সিগঞ্জের চাঞ্চল্যকর গ্রীস প্রবাসী মোশারফ হত্যাকাণ্ড ও অনুসন্ধানী পুলিশ, মুঠোফোন, ভয়ঙ্কর খুনী এবং উদ্ঘাটন


                     
২০১০ সালের ১২ অক্টোবর বিকাল পৌনে ৫.00টা, ডিসি এসপি অফিসের মাত্র ৫০০ গজ দূরে লিচু-তলা বাস স্ট্যান্ড যেখান থেকে সবাই ঢাকা যাবার বাসে উঠেন, ঠিক সেখানেই রিক্সায় করে এক ভদ্রলোক আসছিলেন, একটি মটর সাইকেল রিক্সার পাশে এসে পিস্তল বের করে গুলি করা হয়, একজন মটর সাইকেল চালাচ্ছিলেন আরেক জন বসে ছিলেন, গুলি করলেন যিনি নিজে মটর বাইক চালাচ্ছিলেন আর পিছনের জন অস্ত্র তাক করে ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে আশেপাশের সবাই বলতে লাগলেন কেউ টু শব্দ করলে গুলি করে দিব, মুহূর্তেই রিক্সার আরোহীর মৃত্যু নিশ্চিত করে মটর বাইক টান দিয়ে হাওয়া হয়ে গেলেন এর কিছুক্ষণ পরই পুরো শহর স্তব্ধ হয়ে গেল, পুলিশ সুপার জনাব শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেন,সাথে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং অন্যান্য কর্মকর্তা বৃন্দ ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ ,লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন সব কিছুই সম্পন্ন হল, প্রিন্ট ইলেক্ট্রনিক সব মিডিয়া ঘিরে ধরলেন জেলার প্রধান এই পুলিশ কর্মকর্তাকে, পুলিশ সুপার শুধু বললেন আমরা ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দেখাচ্ছি এবং ঘটনার সাথে যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন আমরা তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসব 

কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ সুপার জেলায় তার অধীনস্থ সকল অফিসার দের নিয়ে মিটিং এ বসলেন , মিটিং এ আমাকে স্পেশালি বললেন যে তুমি একটু লেগে থাক তো, এই কেস টি ডিটেক্ট না হলে আইন শৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব ক্ষুণ্ণ হয়ে যাবে এবং আরও বললেন যে সাংবাদিক রা বলছেন যে এসপি অফিসের এত সন্নিকটে যদি এমন ঘটনা ঘটে তবে পুলিশের কি দরকার ? এমন নানা ধরনের প্রশ্নবিদ্ধতা জন্ম দিল ঘটনার সাত দিন কেটে গেল কিন্তু কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না, আমাকে আবারো বলা হল বিষয় টি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্যে , আমি এবার ভিক-টিমের পরিচয় ,কানেকশন ,বিরোধ ,দ্বন্দ্ব সহ সার্বিক ভাবে বিশ্লেষণের চেষ্টা করতে লাগলাম, জানা গেল ভিক-টিমের নাম মোশাররফ হোসেন যিনি গ্রীস প্রবাসী ছিলেন, দেশে ফিরেছেন ১০ তারিখে আর খুন হলেন ১২ তারিখে, আরও জানা গেল যে ভিক-টিমের স্ত্রী রেশমা বেগমের সাথে তারই সৎ ছোট ভাই বেলায়েতের সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে,ঘটনা ঘটার পর থেকেই ভাই বেলায়েতের কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না,বেলায়েত থাকতেন যাত্রাবাড়ীতে আর ভাবী রেশমাও থাকতেন একটু দূরে যাত্রাবাড়ীতেই, আমি ভিক-টিমের মোবাইল ফোন নাম্বার জানতে চাইলাম কিন্তু মাত্র দুদিন আগে দেশে এসে কোন মোবাইল সে ইউজ শুরু করে নাই , সেক্ষেত্রে ছোট ভাই বেলায়েত এবং ভাবী রেশমার মোবাইল ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে সেগুলোর বিগত দুই মাসের কল লিস্ট সংগ্রহ করলাম , কল লিস্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেল যে প্রায় প্রতি রাতেই ভাবী এবং দেবরের মাঝে ফোনালাপ আছে ১ ঘণ্টা না হয় আধা ঘণ্টা এমন, আমি নিশ্চিত হলাম যে তাদের মাঝে অবৈধ সম্পর্ক আছে , এই খুনের সাথে অবৈধ সম্পর্কের একটা সম্পর্ক থাকতে পারে এটা ভেবে এগুতে লাগলাম, এবার ছোট ভাই বেলায়েতের কল লিস্টে পাওয়া ঘটনার দিনের সব গুলো কল যাচাই বাছাই শুরু করলাম অর্থাৎ ঘটনার দিন বেলায়েতের সাথে যত গুলো নাম্বারের সাথে যোগাযোগ হয়েছে প্রতি টি নাম্বারের আলাদা আলাদা কল লিস্ট সংগ্রহ করলাম 

এখানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পেলাম তা হচ্ছে- ছোট ভাই বেলায়েতের বিগত একমাসেও মুন্সিগঞ্জে কোন কল না থাকলেও শুধুমাত্র ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে তার মোবাইলের লোকেশন পাওয়া যায় , তার মানে ঘটনাস্থলে সে ছিল টাওয়ার লোকেশন অনুযায়ী এরপরে তার সাথে ঘটনার দিন যত গুলো নাম্বারের সাথে যোগাযোগ হয়েছে তাদের প্রতিটি কল বিশ্লেষণ করে দুটি নাম্বার পাই যাদের লোকেশন ঘটনাস্থলের টাওয়ারে পাওয়া যায় অথচ বিগত দুই মাসেও তাদের মুন্সিগঞ্জের কোন টাওয়ার লোকেশনে তাদের কল পাওয়া যায় নি, ঘটনার দিনে তাদের দুটি নাম্বারের কল লিস্টে আরও পাওয়া গেল যে তারা ঢাকা থেকে আস্তে আস্তে যাচ্ছেন পোস্তগোলা, পাগলা , ফতুল্লা , এভাবে বোঝা যাচ্ছে যে তারা ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জে ঢুকছেন, আর সর্বদাই বেলায়েতের সাথে যোগাযোগ করছেন প্রাথমিকভাবে মোটামুটি নিশ্চিত হলাম যে এই দুইটি নাম্বারই কিলার পুরো বিষয় গুলি পুলিশ সুপারের নিকট তুলে ধরলাম ,তিনি সন্তুষ্ট হলেন এবং দ্রুত কিলার দের গ্রেফতারের কথা বললেন , আমাকে বললেন তুমি একটা মাইক্রো বাস আর তোমার পছন্দমত অফিসার ফোর্স নিয়ে যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবেই কর, তোমাকে এ ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হল, আমি টার্গেট নাম্বার দুটির কল লিস্ট বিশ্লেষণ করে একটি নাম্বার কে টার্গেট করলাম দুটি নাম্বার হচ্ছে ০১----৩৯১ (একজন কিলার) ০১----২১৭(অপরজন কিলার) এবার ৩৯১ এর ডাটা এনালাইসিস করে সর্বোচ্চ কল করেছে এমন ৫ টি নাম্বার বের করলাম, ধরা যাক ৩৯১ বেশি কথা বলেছে ০১---২১২ এর সাথে, এরপরে ২১২ সর্বোচ্চ কার সাথে কথা বলেছে সেটাও বের করলাম ০১----৩৫৯, এভাবে মোট পাঁচটি অপশন রাখলাম একটা মিস হলে আরেকটা এমন, অপারেশন প্রক্রিয়া ঠিক করলাম, সাব ইন্সপেক্টর তারিফ এবং সাব ইন্সপেক্টর ওবায়েদ  আমার সাথে আছেন, ওদের কে পুরো-প্লান টি বলে ফেললাম, এবং কল লিস্টের বিষয় গুলি বুঝিয়ে দিলাম যাতে করে কখন কি ভাবে এগুতে হবে বুঝতে অসুবিধা না হয়, আমরা আমাদের টার্গেট ৩৯১ কে ধরার জন্যে প্রথমেই ০১----৩৫৯ কে এরপরে ৩৫৯ কে দিয়ে ০১---২১২ এবং ২১২ কে দিয়ে আমাদের মুল টার্গেট কে পাওয়া, এই প্লান করে আমরা এগুতে থাকি, ৩৫৯ এর রেজিঃ এ দেয়া ঠিকানা সংগ্রহ করি এবং তাতে থাকা একটি টিএনটি নাম্বার পাই, কারণ রেজি তে থাকা ঠিকানা সঠিক নাও হতে পারে তাই টিএনটি নাম্বার টি রাখি যদি কাজে লাগে , এমন করে ৩৫৯ কে পেলাম সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় রাস্তার ধারেই একটি স মিলের দোকান, তিনি আবার থানা ক্ষমতাসীন দলের দপ্তর সম্পাদক , মাথায় টুপি ,পুরোপুরি হুজুর,আমরা সবাই সিভিলে সাথে আর্মস আর স্থানীয় থানাকে বলা আছে যে আমরা তাদের এলাকায় আছি, আমাদের মাইক্রোতে পোশাকে কিছু ফোর্স রাখা আছে যেটা দূরে অবস্থান করছে, উক্ত ভদ্রলোক কে বললাম ভাই আপনি ক্রিমিনাল নন ,আমরা একটি মামলার জন্যে আপনার সাহায্য নিতে এসেছি,বলেই আমি আমার পরিচয় দিলাম এবং বিনীত ভাবে বললাম যে আমি কি আপনার মোবাইল ফোন টি একটু দেখতে পারি , উনি ফোন টি এগিয়ে দিলেন, তার ফোনে ০১---২১২ লিখে কল বাটন টিপতেই ভেসে এলো একটি নাম গনি , সাথে সাথেই কেটে দিলাম,

বললাম ভাই এই গনি কে ? আমাদের এই গনিকে দরকার , উনি বললেন গনি এই এলাকার সাবেক কমিশনার,বললেন রাস্তার ঐ পারে ঢালের দিকে তার অফিস ও বাসা , এই ভদ্রলোকের অফিসে আমি বসে রইলাম আর দারোগা দুজন কে গনির কাছে যেতে বললাম, কিছুক্ষণ পর দারোগা তারিফ ফোন দিয়ে বলে যে স্যার গনি চিল্লাচিল্লি শুরু করছে, কেন পুলিশ তার অফিসে গেছে, তখন আমি প্রথমের ভদ্রলোকের মোবাইল থেকে গনি কে কল দেয়ালাম এবং আমি কড়া ভাবে বললা আমি সিঃ এএসপি ,আপনাকে ১০ মিনিট সময় দিলাম এর মাঝে আপনি না এলে আনার ব্যবস্থা আমি করব, গনি মিয়া ১০ মিনিটের মধ্যেই এলেন যে দোকানে আমি বসা ছিলাম সেখানে এলেন, সাথে আরও পাঁচ ছয় জন ,আমি বললাম গনি সাহেব সবাইকে চলে যেতে বলেন, আমি একা আপনার সাথে কথা বলব, সাথে সাথে সবাই কে যেতে বললেন, এবার তার মোবাইল ফোন নিয়ে কল দিলাম আমাদের মুল টার্গেট ০১----৩৯১, সাথে সাথেই কেটে দিলাম,শুধুমাত্র নাম্বার টি গনির ফোনে কি নামে সেভ করা সেটা জানার জন্য,স্ক্রিনে ভেসে উঠল ফারুক গনি সাহেব এই ফারুক কে ? আপনি আমাদের একটু সাহায্য করেন , সে বলে কি করতে হবে আমাকে বলেন , আপনার ফোনের ফারুক নামের এই নাম্বারের সাথে আপনার কি সম্পর্ক ? আপনি এই ছেলেটাকে আমাদের কে ধরিয়ে দিবেন,আপনার সাথে সব সময় কথা হয় তাই আপনি ফোন দিয়ে তাকে ডাকেন তারপর আমরা তাকে ধরে ফেলব এরপর তার সাথে ফারুকের কল লিস্ট ল্যাপটপ থেকে বের করে দেখাই,সাথে সাথেই সে বলে যে স্যার আমার একটা বদ অভ্যাস আছে, আমি প্রতিদিন দুই বোতল করে ফেন্সিডিল খাই ,আর এই ফারুক আমাকে ফেন্সিডিল সাপ্লাই দেয়, আমি বললাম গুড, তাহলে তো ভাল হল, আপনি তাকে ফেন্সিডিলের অর্ডার দেন, তখন বাজে বেলা সাড়ে তিন টার মত, গনি বলল ঠিক আছে স্যার আমি ডাইলের অর্ডার দিতাসি, বলেই ফোন দেয়, স্পিকার অন করা, ফারুক কই আছ ? ভাই আমি তো বাসায় , চৌরাস্তায় একটু আইতে পারবা ? আমার কয়ডা মাল লাগত, ফারুক বলে কয়ডা , তিন টা , ঠিক আছে আপনে সুমন রে পাঠায় দেন চৌরাস্তায়, সুমন হচ্ছে গনির কাজের ছেলে যার কাজ ফারুকের কাছ থেকে ডাইল কিনে এনে গনি কে দেওয়া , গনি বলল স্যার সুমনের কাছে ২০০০ টাকা দেন ডাইলের দাম, তাকে ২০০০ টাকা দেয়া হল , সুমনের সাথে আমি ও আমার পুরো টিম চৌরাস্তায় গেলাম, চার দিকে তিন জন করে আর আমি ও এস আই তারিফ একটি সিএনজি এর ভিতরে বসে রইলাম, এদিকে গনি এবং হুজুর ভদ্রলোক কে আমাদের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দোকানে থাকতে আর তাদের ফোন গুলো আমাদের সাথে নিয়ে গেলাম, সুমন কে ভালভাবে বলে দিলাম যে ফারুক আসতেছে দেখা মাত্রই একটা মিস কল দিবে, এরমধ্যে ফারুকের শারীরিক গঠন গায়ের রঙ সব জেনে নিলাম, চৌরাস্তার চারদিকে আমার অফিসার ফোর্স আর একটু সামনেই সিএনজি তে আমি আর তারিফ, সুমন মিস কল দিল, সাথে সাথে চার দিকের চার জন কে আমি মিস কল দিয়ে এলার্ট করলাম, ফারুক আসল সুমনকে তিন টা বোতল দিল ,আমার চারদিকের চার পার্টি ক্লোজ হচ্ছে , মাঝখানে ফারুক, আমার সিএনজি টান মেরে ফারুকের পাশে ,নেমেই মুখের মধ্যে সজোরে ঘুষি, সান গ্লাস পরা ছিল, আমার ঘুষিতে সান গ্লাসের বাট ভেঙ্গে গেল , ফারুকের চোখের উপরে কেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়ছে সাথে আমার আঙ্গুলের উপরেও রক্ত বের হচ্ছে, সে ঘুষি খেয়ে বসে পরেছে, আমার অফিসার রা অস্ত্র তাক করে আছে , তারিফ তার প্যান্টের ভিতরের দিকে হাত ঢুকিয়ে ধরে ফেলে যাতে করে দৌড়ে পালাতে না পারে, আমি আরও কনফার্ম হবার জন্যে তার নাম্বার এ ফোন দিলাম, সাথে সাথে মোবাইল ফোন টি আমার কাছে নিলাম, উফ, আমরা আমাদের টার্গেট কে পেলাম অবশেষে সাথে সাথেই পুলিশ সুপারকে ফোন দিয়ে জানালাম, স্যার আমাকে ও টিমের সবাই কে ধন্যবাদ জানালেন 

                        
গনি মিয়াদের ফোন গুলো বুঝিয়ে দিয়ে সোজা টান মুন্সিগঞ্জ, গাড়ি তে ফারুক শুধু বলছে স্যার আমার অপরাধ টা কি ? তাকে বললাম গত ১২ তারিখের মার্ডার তুমি করেছ, আমাদের কাছে অনেক প্রমাণ আছে, সে পুরোপুরি অস্বীকার, এভাবে থানায় পৌঁছলাম সন্ধ্যায় , ফারুক কে লক আপে রেখে আমার অফিসারস মেসে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে রাতে থানায় গেলাম, ইতোমধ্যে এসপি স্যার এসেছেন, সকলেই মিলে যেরা করছি সে কিছুই স্বীকার করে না, তাকে তার পুরো কল লিস্ট দেখালাম, কোথায় কোথায় লোকেশন ছিল সব দেখালাম, ঘটনার দিনে ঘটনাস্থলের লোকেশন, সব ওসি সাহেব কিছুক্ষণের জন্যে তার রুমে নিয়ে গেলেন ফারুক কে, মাত্র ৩০ মিনিট পরেই ফারুক পুরো ঘটনা পরিকল্পনা সব বলে যাচ্ছেন, পুলিশ সুপার আমাদের কে বাহবা দিতে লাগলেন, এবং আরেকজন আসামী কে গ্রেফতারের জন্যে প্লান করতে বললেন, ফারুক বললেন আরেকজন যে ছিলেন তার নাম মিঠু ,পুরাণ ঢাকার প্রফেশনাল খুনি ,টাকার বিনিময়ে তারা দুজনে খুন করেন, এই মোশাররফ হত্যাকাণ্ডে তাদের সাথে বেলায়েতের চুক্তি হয়েছিল তিন লক্ষ টাকা এবং খুনের আগে পেয়েছিলেন ৫০ হাজার টাকা , ফারুক কে সাত দিনের রিমান্ডে আনা হল, ফারুক কার্যবিধি ১৬৪ অনুযায়ী স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দিলেন ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট, এবার আমাদের টার্গেট মিঠু অত্যন্ত ধুরন্ধর , আমি মিঠুর নাম্বারের কল লিস্ট বিশ্লেষণ শুরু করে দিলাম ) আমাদের মুল টার্গেট এখন মিঠু , যদিও ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে তথাপি সে সরাসরি গুলি করেছে, তাই তাকে না ধরা পর্যন্ত অত্র মার্ডার কেস টি ডিটেকশনের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণতা পাবে না ফারুকের নাম্বার বাদে অন্য যে নাম্বার টি (মিঠুর নাম্বার) সেটার সিডিআর সংগ্রহ করা আছে আগেই এবং নাম্বার টি হচ্ছে ০১-----২১৭, ২১৭ এর মোস্ট কানেক্টেড নাম্বার টির সাথে তার সারাক্ষণ যোগাযোগ হয়েছে লাস্ট কয়েকদিন নাম্বার টি টোটালি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, এরপরে ২১৭ ব্যবহৃত মোবাইলের আই এম ই আই নাম্বার সার্চ দিয়ে চেক করি যে সে ঐ মোবাইলে অন্য কোন সিম ব্যবহার করছে কিনা ? এক্ষেত্রে আরেকটি নাম্বার পাওয়া গেল যেটা মাত্র কয়েকবার ব্যবহার হয়েছে তাও সেই মোস্ট কানেক্টেড নাম্বার টির সাথেই, তার মানে মোস্ট কানেক্টেড তার এমন কেউ যাকে ধরতে পারলে আমাদের টার্গেট মিঠু কে পাওয়া সম্ভব সেই নাম্বার টি হচ্ছে ০১-----৯৯২, ৯৯২ তে আমি অন্য একটি নাম্বার থেকে কল দিয়ে দেখলাম যে একটা মেয়ে ধরছে ফোন টি, যথারীতি ইনিয়ে বিনিয়ে তাকে বললাম যে আপু সাথী আমাকে এই নাম্বার টি দিয়েছিল যাতে করে ওর নাম্বার বন্ধ থাকলে এটা তে করলে পাব, মেয়েটি বলল সাথী কে

এখানে সাথী নামে কেউ থাকে না ,আপনি ভুল নাম্বারে ফোন দিয়েছেন, আমি নাম্বার টি উল্লেখ করে বললাম এইটাই না ? মেয়েটি বলল নাম্বার ঠিক আছে কিন্তু মানুষ ঠিক নাই, দেখেন ভাই আমার স্বামী বিদেশ থাকে ,আমি আমার দুইটা বাচ্চা নিয়ে থাকি ,প্লিজ আপনি আর ফোন দিয়েন না, আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন এতে আমাকে খারাপ ভাববে আমি বললাম সরি আপু আর আপনাকে বিরক্ত করব না, আমাকে ক্ষমা করবেন, আমি অতিমাত্রায় বদান্যতা দেখাতে লাগলাম, এরপরে বললাম আপু জাস্ট একটা প্রশ্ন করতে পারি ? আপনি কোথায় থাকেন? সে বলল পুরাণ ঢাকার হোটেল আল রাজ্জাকের পিছনে সাত রওজা পার্কের পাশের ক্লাবের পিছনের বাসা টায় আমাদের , মহিলা তার পুরো ঠিকানা হুবহু বলে দিলেন , আমি মনে মনে মহা খুশি এই তো বড়শির আধারে টান পড়ছে ! ফোন রাখার সাথে সাথেই পুলিশ সুপার মহোদয় কয়ে জানালাম যে রাতেই স্যার একটা অভিযান করতে হবে মিঠুর সন্ধানে, স্যার সন্মতি দিলেন এবং আমি আমার টিম তৈরি থাকতে বললাম, সব প্লান প্রোগ্রাম প্রস্তুত ঠিক তখন আমার কেন জানি মনে হল ঐ নাম্বার টির টাওয়ার লোকেশন দেখি তো ? মহিলা তো আমাদের মিথ্যেও বলতে পারেন , এরপরে যথারীতি আশংকাই সত্য হল, মহিলা বলেছেন বংশাল কিন্তু লোকেশন পেলাম মীর হাজিরবাগ এবং একই টাওয়ারে মিঠুর নাম্বারের লোকেশন পাওয়া গেছে অনেক বার বিশেষ করে রাতের বেলায় ,অভিযান স্থগিত করলাম কিন্তু আমি সেই মহিলার নাম্বারে ক্রমাগত ফোন দিতেই লাগলাম, প্রথমে এসএমএস দিলাম যে আপু আপনার গলা টা এত সুন্দর যে ভুলতে পারছি না , আরও অনেক আগ্রহ বাড়ান জাতীয় এসএমএস দিতে লাগলাম , একের পর এক ফোন , তাকে এক প্রকার বিরক্তই করতে লাগলাম, রাত ১ টার দিকে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি এলো, যে নাম্বার থেকে আমি মহিলাকে ফোন দিচ্ছি আমার সেই নাম্বার এ ফোন এলো ০১-----২১৭ থেকে , অর্থাৎ ফোন করেছে মিঠু , ফোন দিয়েই অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল, তুই আমার বড় বোন রে ডিস্টার্ব করতেছস , তোর সাহস কম না , আমিও গালি দিতে লাগলাম ,যেমন গালি তেমন জবাব এক পর্যায়ে হঠাৎ করেই আমি বললাম যে সরি ভাই আমি আসলে বুঝি নাই যে এটা আপনার বোনের ফোন, আমার বোনের ফোনে কেউ এমন করলে আমার ও অনেক খারাপ লাগত , আপনার বিষয় টা আমি বুঝতে পেরেছি, প্লিজ ভাই আমাকে ক্ষমা করবেন, দেখি তার ও গলার সুর নরম হয়ে যাচ্ছে

ভাই আপনি কি করেন ? আমি বললাম একটা ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে আছি নারায়ণগঞ্জ শাখায়, থাকি চাষাড়া সে বলল চাষাড়া তে অমুক ভাই তমুক ভাই দের চিনেন ? হেরা আমার ক্লোজ বড় ভাই, আমি না চিনেও বললাম উনাদের চিনি , পরে খোজ নিয়ে জেনেছি যে এরা সবাই বড় ঐ এলাকার বড় গুণ্ডা যাই হোক এবার সে বলছেঅধমের নাম শরিফুদ্দিন মিঠু , যাত্রাবাড়ী এলাকায় এক নামে সবাই চিনে , আমি যাত্রাবাড়ী থানা শাখা অমুক দলের অমুক সেক্রেটারি ,কখন ও এই এরিয়াতে কোন বিষয়ে হেল্প লাগলে অধম রে স্মরণ করলে খুশি হব, আরো বলল আমার বাসা জুড়াইন আর আড্ডা মারি মীর হাজির বাগ এভাবে সে নিজের সম্পর্কে অনেক কিছুই বলল, যা আমার জন্য সেই সময় খুব দরকারি ছিল পরের দিন আমি আমার ওসি কে তদন্তকারী কর্মকর্তা সহ যাত্রাবাড়ী থানাতে পাঠালাম মিঠুর দেয়া তথ্য গুলি যাচাই করার জন্যে এদিকে তার মোবাইল মাঝে মাঝে বন্ধ আবার চালু এমন পাচ্ছিলাম, তাই আমার ধারনা সে তার এলাকাতেই আছে , রাত ১১ টায় ওসি সাহেবের ফোনস্যার মিঠুকে পাওয়া যাবে ,কাইন্ড-লি আপনি আরও দু একজন অফিসার আর আপনার ল্যাপটপ নিয়ে চলে আসেন স্যার যাত্রাবাড়ী থানায় আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই রওনা দিলাম দুই জন অফিসার ও কয়েকজন ফোর্স সহ, রাত ১২,৩০ টায় যাত্রাবাড়ী থানায় পৌঁছলাম, আজ মিঠুকে বোধ হয় পাবই পাব !

) ওসি শহিদুল ইসলাম ডিএমপি তে অনেক দিন ছিলেন বিধায় তার বিভিন্ন থানা এলাকা গুলোতে ভাল একটা যোগাযোগের নেটওয়ার্ক ছিল, ইতোমধ্যে তিনি একটা সোর্স খুঁজে পেলেন যে মিঠু কে চিনেন মিঠুর জুরাইনের বাসা চিনেন, আর মিঠু আমাকে যেসব তথ্য নিজের সম্পর্কে বলেছে তার বেশির ভাগই মিথ্যা কিছুক্ষণের মধ্যে মিঠুর জুরাইন মেডিকেল রোডের বাসায় ঢুকলাম,এই LAC এর আন্ডারে তার বেশির ভাগ রাতের বেলার লোকেশন দেখা যায় কল লিস্টে , যাত্রাবাড়ী থানাতে থাকার সময়ও মিঠুর নাম্বারের লোকেশন দেখেছি এই একই টাওয়ারে সারা ঘর তন্ন তন্ন করে খোজা হল কিন্তু পাওয়া গেল না, বাসার চেহারাই মনে হচ্ছে সে ঘরে ছিল, ওর বাবা মা বোন আর বোনের ছোট বাচ্চা কে পাওয়া গেল ,তারা বলছে সে কয়েকমাস ধরে বাসায় নাই, অথচ ৩০ মিনিট আগেও লোকেশন এখানেই ছিল, তার বাবা মা বোন যে মিথ্যে বলছেন তা বোঝা যাচ্ছে , ওসি কিছু স্ল্যাং সহ খুব করে তাদের গুষ্টি উদ্ধার করতে লাগলেন, মিঠুর নাম্বার এখন বন্ধ পাচ্ছি ,তার বাবার নাম্বার থেকে দেয়া হল কিন্তু বন্ধ , তার মানে অভিযানের খবর সে পেয়ে গেছে , কিন্তু আমার ধারনা হল যে সে এত দ্রুত দূরে কোথাও যেতে পারবে না 

এখন তার বেশি কল করা নাম্বারের লোকেশন যেখানে তাকে গভীর রাতে অবস্থানের জন্য অনেক বার কল লিস্ট এ দেখা যায় , তার মানে সে ঐ লোকেশনে যেতে পারে , ঐ লোকেশন সেই মহিলার , তার নাম জানতে পারলাম বিউটি , সে টিপু সুলতান রোডে থাকে বলে মিঠুর মা জানায়, ঐ মহিলাই নাকি তাকে নষ্ট করছে , মহিলার স্বামী নাই ,মিঠু ছোট ভাই এর বয়সী হলেও তার সাথে স্বামী স্ত্রীর মত জীবন যাপন করে, বিশ্বাস করতে লাগলাম, কিন্তু বিউটির লোকেশন পাচ্ছিলাম মীরহাজীরবাগ আর মিঠুর মা বলছেন টিপু সুলতান রোড আবারো মিথ্যে বলছেন, উনাকে বললাম যে আপনি বিঊটির বাসা চিনেন না ? চলেন আমাদের এখন ওখানে নিয়ে চলেন , তিনি আমতা আমতা করতে লাগলেন , ওসি সাহেব তাকে টেনে গাড়ি তে উঠালেন, গন্তব্য বিউটির বাসা , এরমধ্যে জানতে পারলাম বিউটি হচ্ছে ঐ এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী যিনি এলাকায় হেরোইন সম্রাজ্ঞী নামে পরিচিত আমরা টিপু সুলতান রোড এ এলাম, অলি গলি পাকস্থলী পার হয়ে একটা ৭ তলা বিল্ডিং এর চিলেকোঠায় উঠলাম ,সিঁড়ি গুলি এতই সরু যে আমার মত স্বাস্থ্যবান মানুষ প্রায় আটকে যাচ্ছিলাম, ওসি ও হাঁপাচ্ছেন , উপরে এসে দেখি তালাবন্ধ , এই রুম টা তে বিউটি থাকত কিন্তু এখানে সে আসে না প্রায় ৩/৪ মাস , এই পুরো ৭ তলা বাড়ি টাই বিউটির , চিন্তা করা যায় মাদক বিক্রি করে ঢাকায় এরকম বাড়ি বানান মানে হচ্ছে ব্যবসা খুব কাটতি  

মিঠুর মা ইচ্ছে করে আমাদের এখানে নিয়ে এসেছেন বিভ্রান্ত করতে পঞ্চাশোর্ধ মহিলা কিছু বলতেও পারছিনা , ওসি সাহেব আবার গুষ্টি উদ্ধার শুরু করলেন এবং চাপ দিতে লাগলেন যে বিউটির মীর হাজীরবাগের বাসায় নিয়ে যাবার জন্যে ,না নিয়ে গেলে তাকে এই হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখান হবে এই ভয় দেখানোর পরেও কোন কাজ হল না রাত প্রায় ৩ টা বেজে গেছে ,হঠাৎ মিঠুর নাম্বারে দেয়া ব্ল্যাংক মেসেজ এর ডেলিভারি রিপোর্ট এলো, মানে মিঠূর মোবাইল চালু আছে সেই ৩ টার সময় এয়ারটেল অফিসে ফোন করে লোকেশন চেক করে দেখি সেইম বিঊটির বাসার মীরহাজীর বাগের টাওয়ার আমার সাথে থাকা পুরো টিম কে নিয়ে পাশের একটা জায়গায় বসে ব্রিফিং দিলাম যে সারা রাতের পরিশ্রম বৃথা যায় নাই , মাল আমাদের আশে পাশেই আছে আমরা তখন মীরহাজীরবাগেই অবস্থান করছিলাম, মিঠুর মাকে মাইক্রোতেই বসিয়ে রাখলাম এবার সেল আইডি ও LAC দেখে মোবাইলে থাকা  সফটওয়ার টি চালু করে ঐ সেল আইডি এর সীমানা নির্ধারণের জন্যে চারদিকে চারজন কে পাঠিয়ে যা পেলাম সেটা হচ্ছে আধা কিলোমিটার বর্গ এলাকা যেখানে ৫০০ বিল্ডিং ,রাস্তা , রেল লাইন রয়েছে , এমন অবস্থায় তাকে খুঁজে বের করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে খুব আফসোস হতে লাগল, এত কাছে থেকেও ধরতে পারছি না ,লোকাল থানার টহল পার্টি গুলোকে রাস্তার মোড়ে মোড়ে আমাদের অফিসার ফোর্স সহ দাড় করিয়ে দিলাম সকাল ৭-০ টা বেজে গেছে ,এখন মিঠুর মোবাইল বন্ধ পাচ্ছি , টিমের সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছি , কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ সুপার মহোদয় ফোন করলেন, সারা রাতের সব কিছু বললাম , তিনি মিঠূর মাকে ছেড়ে দিতে বললেন, ৩০ মিনিট পর মোবাইল চালু পেয়ে লোকেশন পেলাম সোনারগাঁও মেঘনা ঘাট , হতাশ হয়ে সেদিনের মত অভিযান সমাপ্তি ঘোষণা করলাম
                     

 মিঠুর মাকে ছেড়ে দিলাম আর মিঠুর বাসায় থাকা এলবামে মিঠুর ছবি সংগ্রহ করে নিয়ে গেলাম, মনটা একেবারেই ভাল লাগছে না, সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া আমার ছেলে টাকে দেখতে যেতে পারছি না কয়েকদিন ধরে,স্ত্রীর সাথে ফোনেও কথা বলছি না কয়েকদিন, পুলিশের কি এত টান ,মন, পরিবার থাকতে পারে ! পুলিশরা তো রোবট যাদের মাঝে কোন না নেই আবার হ্যাঁ ও নেই এইনা ও হ্যাঁ নিয়েই কি আমরা চলতে থাকব ? কয়েকদিন গত হল কিন্তু মিঠুকে ধরতে পারছিনা , তার মোবাইল টোটালি অফ পাচ্ছি , এরমধ্যে তার নাম্বার চালু পেলাম দুই ঘণ্টার জন্যে, দুই ঘণ্টার কল লিস্ট সংগ্রহ করলাম, দুই ঘণ্টায় তার লোকেশন পেলাম সোনার গাও ,নারায়ণগঞ্জ কিন্তু মাত্র দুটি নাম্বারের সাথে যোগাযোগ ,একটি নাম্বার বিউটি এবং অপরটি তার মায়ের নাম্বার যেহেতু মিঠুদের গ্রামের বাড়ী মেঘনার ঐ পারে তাই আমাদের ধারনা মিঠু ঐ এলাকাতেই গিয়েছে,এবারে মিঠুর আইএমই নাম্বার পেলাম আলাদা অর্থাৎ মিঠু অন্য কারো মোবাইল সেট এ তার সিম ঢুকিয়ে কথা বলেছে ঐ আইএমই সার্চ দিয়ে একটি এয়ারটেল নাম্বার পাওয়া গেল এবং যেই নাম্বারের সার্বক্ষনিক লোকেশন সোনারগাঁও এলাকা নাম্বারটির রেজিস্ট্রেশন ঠিকানা কালেক্ট করে দেখি ঐ এলাকার একটি ঠিকানা যেটা দেখে ভ্যালিড মনে হল  

তাহলে এই সিম ধারীকে পাওয়া গেলে মিঠুকে পাওয়া যাবে নিশ্চিত , এমন ধারনা করে সোনারগাঁও যাবার জন্যে টিম তৈরি করলাম , এস আই তারিফ ,আই ও এবং ফোর্স সহ রাত ১২ টার দিকে সোনারগাঁও থানায় গেলাম, ওসি সাহেবকে বললাম আপনার এলাকাতে আজ সারারাত আমরা অভিযান করব , তিনি সংশ্লিষ্ট এলাকার একজন লোক ও একজন অফিসারকে আমাদের সাথে দিলেন, আমরা ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন সোনারগাঁও বাস-স্ট্যান্ড এর পার্শ্ববর্তী এলাকাতে ঐ ঠিকানা পেলাম কিন্তু উল্লেখিত নামে কোন ব্যক্তিকে কেউ চিনতে পারছে না , সারারাত কেটে যাচ্ছে , আবারো ব্যর্থ মনোরথে ফিরে যেতে হবে ? ভোর বেলায় আমরা ফিরে আসব এমন সময় কি মনে করে যেন রাস্তার পাশে দাঁড়ান এক লোক কে জিজ্ঞেস করলাম যে রেজিস্ট্রেশনের কাগজে থাকা ছবি ও ঠিকানা তাকে দেখালাম যে ভাই আপনি কি চিনেন ? লোক টি শুধু বলল আপনি আমার সাথে সাইডে আসেন , সাথে সাথেই আমি আর এস আই তারিফ তার সাথে গেলাম এবং তিনি আস্তে আস্তে বললতে লাগলেন যে ঐ লোক ও তার ছেলে উনার শত্রু , উনি বাড়ি দেখিয়ে দিবেন তবে শর্ত হচ্ছে কেউ যেন টের না পায় যে উনি দেখিয়ে দিয়েছেন, আমরা রাজী হলাম, সিম-ধারী ছেলেটির নাম সোহেল, বাবার নাম সোহরাব উদ্দিন  

সোহেল কিছু করে না বাপের অনেক টাকা পয়সা আছে তাই ঘুরে ফিরে আর নেশা করে বেড়ায়, ঢাকা থেকে অনেক বন্ধু বান্ধব আসে তার কাছে , আমরা মোটামুটি নিশ্চিত হলাম যে এই সোহেল মিঠূর বন্ধু , মিঠুর কল লিস্টেও তার সাথে কল পেয়েছি খুনের ঘটনার অনেক আগে , পাচ তলা আলি-শান বাড়ি বোঝা যাচ্ছে অভিজাত কারো বাড়ি , নিচের কলাপ্সিবল গেট তালা দেওয়া , অনেকক্ষণ ধরে ডাকাডাকির পরেও কোন সাড়া নেই, আমাদের সন্দেহ বেড়ে গেলঅফিসার দের বললাম অস্ত্র তাক করে রাখতে ভিতর থেকে গুলি ছোড়া হতে পারে, এরমধ্যে নিচের একটি রুমের জানালা খুলে একজন দেখছে ,তাকে আমরা পরিচয় দিয়ে সোহরাব সাহেব কে আসতে বললাম , এরপরে সোহরাব সাহেব গেট খুলে দিলেন

 লোকাল থানার অফিসার ও ফোর্সদের বাড়ির বাইরে অবস্থান করতে বললাম কাক ডাকা ভোরে আমরা পুরো দল নিচ তলা থেকে একে একে সব গুলো রুম সার্চ করতে লাগলাম, রুমে যাদের যাদের পাচ্ছি সবাই তাদের পরিচয় সঠিক ভাবেই দিলেন, নিচ তলা থেকে তিন তলা সবাই ভাড়াটিয়া চার তলায় সোহরাব সাহেব তার পরিবার নিয়ে থাকেন সাথে তার মা থাকেন ছেলে সোহেল আর সোহেলের বউ একই তলায় একটি রুমে থাকেন আমার টার্গেট হচ্ছে সোহেল , ২৫/২৬ বছর বয়সের একটি ছেলে একটু খাটো গড়নের আমি তার ব্যবহৃত তিন টি মোবাইল ফোন আমার কাছে নিয়ে নিলাম আর ল্যাপটপ বের করে আইএম ইআই নাম্বার চেক করতে লাগলাম , একটা মোবাইল সেট পেলাম যেটাতে মিঠুর সিম ইউজ হয়েছে ২ ঘণ্টার জন্যে, গ্রেট ! সোহেল কে জোরে জোরে চড় থাপড় মারতে লাগলাম আর জিজ্ঞেস করতে থাকলাম যে মিঠু কোথায় ? সে বলে স্যার আমি জানি না, সাথে সাথে আবার মারধর এবং ল্যাপটপের কল লিস্ট দেখিয়ে বললাম এই যে দ্যাখ তোর মোবাইলে মিঠু সিম ঢুকিয়ে কথা বলেছে গত কয়েকদিন আগে,ইতিমধ্যে সোহেলের দুটি নাম্বারের কল লিস্ট চাইলাম সেই বাসায় বসেই, মোবাইল ফোন কোম্পানিতে যেহেতু আগে থেকেই বলা ছিল তাই এত সকালেও এটা ই-মেইলে সংগ্রহ করতে আমার সমস্যা হল না, উদ্দেশ্য হচ্ছে ঘটনার আগে ও পরে এমন কি ঘটনার দিন হত্যাকাণ্ডের সময় সোহেলের লোকেশন সেখানে ছিল কিনা তা যাচাই করা , যদিও সোহেল বার বার একই কথা বলছে যে আমি কিছুই জানি না, মিঠু আমার বন্ধু , সে মাঝে মাঝে ঢাকা থেকে সোনারগাঁও তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসে, পুলিসিং এর এথিকস হচ্ছে সাস্পেক্ট এভরি ওয়ান !! 

আর ছেলে হিসেবে এলাকাতেও যেহেতু সোহেলের ইমেজ ভাল নয় তাই সে খুনের সহযোগী অথবা পরোক্ষ ভাবে জড়িত থাকতে পারে সে জন্য তার কল লিস্ট চেক করাটা বেশি দরকার মনে মনে একটু অনুশোচনা বোধ ও কাজ করতে লাগল যে ছেলেটাকে মা বাবা এমন কি স্ত্রীর সামনে এভাবে মারছি/? পরক্ষনেই খুন হওয়া মোশারফের এতিম বাচ্চা দুটির কথা মনে হল যে আমরা একজন খুনির গ্রেফতারের জন্যে এটা করছি , তাই ভিতরে ভিতরে নৈতিক বোধটাকে শক্ত করে ফেললাম সোহেল তার বন্ধু মিঠূ সম্পর্কে কোন তথ্য আমাদের দিচ্ছে না, এই ভোর বেলায় আমার বস শফিক স্যার কে ফোন দিয়ে পুরো বিষয় টা বললাম এবং পরবর্তীতে করনীয় সম্পর্কে জানতে চাইলাম, স্যার আমাকে বললেন তুমি ্যেটা জাস্টিফাই মনে কর সেটায় কর সোহেলের হাতে হ্যান্ড-কাফ লাগিয়ে দিলাম , তার মা দাদী ও স্ত্রী হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন , আমি বললাম আপনার ছেলে খুনের সাথে জড়িত তাই গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছি, সোহেলের বাবা চেক বই নিয়ে এসে আমাকে বলতে লাগলেন স্যার আমার একটা মাত্র ছেলে , প্লিজ ওরে মারবেন না, আপনার যত টাকা লাগে এই খানে বসান আমি চেষ্টা করবা আপনাদের সন্তুষ্ট করতে , আমি গর্জন দয়ে বললাম এখন কিন্তু আপনার হাতেও হাতকড়া লাগাব এসব আজেবাজে কথা বললে , এরমধ্যে কললিষ্ট পেয়ে গেলাম, চেক করে দেখলাম যে সোহেল কোনভাবেই এই খুনের সাথে কানেক্ট নয় কিন্তু সোহেল কে দিয়েই মিঠু কে ধরতে হবে কারণ সোহেল জানে মিঠু কোথায় আছে , সেজন্যে সোহেলের বাবা কে বললাম এক শর্তে আপনার ছেলে কে ছাড়তে পারি যদি সে মিঠুকে ধরিয়ে দেয় , তিনি উত্তরে বললেন কেমনে ধরায় দিবো ওর সাথে তো সেভাবে যোগাযোগ নাই? তখন আমি এস আই তারিফকে বললাম কথা বাড়িয়ে লাভ নাই ওকে নিয়ে চলেন, হঠাৎ করেই সোহেল বলে উঠল যে স্যার আমারে একদিন সময় দেন আমি মিঠুরে ধরায় দিমু, আমি বললাম একদিন নয় এখুনি ধরায় দিতে হবে এবং কিভাবে তাকে পাওয়া যাবে সেটা তুমি চিন্তা কর, তবে আমি তোমাকে আর তোমার পরিবার কে এটা আশ্বস্ত করতে চাই যে মিঠূ কোন দিন জানবে না যে এই কাজ টা তুমি করিয়েছ, আমার কথাতে তারা কনভিন্সড হল, সোহেল বলল স্যার আমার কাছে মিঠুর একটা নাম্বার আছে , ঐ নাম্বার টা লাস্ট দিন আমাকে দিয়েছে, গুড এটাই তো দরকার

সে আরো বলল যে স্যার আমার বউ মিঠুরে ফোন দিলে মিঠু আসবে, উল্লেখ্য যে সোহেলের বউ ভয়ানক সুন্দরী, তাই আমার কাছে মনে হল যে সোহেল ঠিক বলছে ওর বউ ডাকলে নিশ্চয় আসবে , সাথে সাথেই তার বউ কে বললাম যে আপনার কাজ হচ্ছে মিঠূকে কনভিন্সড করে সুবিধাজনক কোন স্থানে নিয়ে আসা এবং এটা আপনি করবেন আপনার স্বামীর গ্রেফতার এড়াতে, মেয়েটা রাজী হল কিন্তু বিধিবাম মিঠুর ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, তবে সোহেল বলল স্যার ১০/১১ টার দিকে মোবাইল খুলে সাধারণত,তখন বাজে সকাল আটটা, কি করা যায়তাহলে কি আমরা ২/৩ ঘণ্টা পরে আসব? না সেটা ঠিক হবে না, এই ২/৩ ঘণ্টায় সোহেল পালিয়ে যেতে পারে এমন কি মিঠুকেও কোনভাবে খবর দিয়ে দিতে পারে যে তাকে পুলিশ খুজতেছে, তাই সিদ্ধান্ত নিলাম পুরো টিমের সবাই মিঠূর ফোন চালু না হওয়া পর্যন্ত এই বাড়িতেই থাকব এবং বাড়ির সবার মোবাইল ফোন এই ২/৩ ঘণ্টার জন্যে আমার কাছে রেখে দিলাম যাতে কেউ বাইরে খবর ফাঁস করতে না পারে

                   
পুরো চার তলার প্রতি-রুমে রুমে তিন জন করে আমার ফোর্স রেখে আমি আর তারিফ ড্রয়িং রুমে বসে রইলাম আর একজন কনস্টেবল কে টাকা দিয়ে নিচে পাঠালাম আমাদের সবার জন্যে নাস্তা পানি এসব নিয়ে আসতে, যদিও সোহরাব সাহেব আমাদের সবাইকে নাস্তার অফার করলেন কিন্তু এরপরেও আমি বিনয়ের সাথে তাকে না করে দিয়ে বললাম যে আপনার বাড়িতে আমরা যে কাজে এসেছি সেটা হলেই চলবে এরমধ্যে আমার অপরিচিত সিম থেকে মিঠুর সেই নাম্বারে একটা ব্লাঙ্ক মেসেজ দিলাম উদ্দেশ্য হচ্ছে ফোন টা চালু হওয়া মাত্র আমার মোবাইলে ডেলিভারড মেসেজ লিখা উঠবে, ৩ ঘণ্টা অপেক্ষার পর সোয়া ১১ টার দিকে মেসেজ ডেলিভারড হল এর মানে মিঠু মোবাইল অন করেছে ৫ মিনিট পরেই সোহেলের বউ কে দিয়ে মিঠূর সাথে কথা বলালাম ) ভাই স্লামালাইকুম, আমি বৃষ্টি বলছি সোহেলের মিসেস, মিঠু ভাই কেমন আছেন ? ভাল আছি ভাবি, তা কি মনে করে ? মিঠু কই ? একটু বাইরে গেছে, ভাই আমি আর সোহেল আজকে বিকালে ঢাকা যাব ঈদের জন্য কিছু কেনাকাটা করব আর মিঠুর গাড়ি টা টিকাটুলি যে গ্যারেজে দেয়া আছে ঠিক করার জন্য ওটার একটু খোজ নিয়েন যাতে আজকে দিতে পারে, আর ভাই আপনি যদি ফ্রি থাকেন তবে আপনি আমাদের সাথে একটু সময় দিলেন, ওকে ভাবি আপনারা রাজধানী মার্কেটের এখানে এসে আমাকে ফোন দিয়েন, দেখবেন এই বান্দা হাজির আপনার খেদমতের জন্যে 

ঠিক আছে ভাই অনেক ধন্যবাদ, সাক্ষাতে কথা হবে এরমধ্যে যে বিষয় টি বেরিয়ে এল তা হচ্ছে এই ৩ ঘণ্টা সোহেলদের বাসায় থাকাতে সোহেল মিঠু সম্পর্কে অনেক তথ্য দিয়েছে এবং আমরা এটাও বুঝতে পারলাম যে সোহেল ও তার স্ত্রী বৃষ্টি মিঠুকে ধরিয়ে দেবার বিষয়ে আন্তরিক , সোহেল বার বার একটা কথা বলছে যে স্যার মিঠু যদি ধরা পরার পর ছাড়া পেয়ে যায় তাহলে কিন্তু আমাদের মেরে ফেলবে, প্লিজ স্যার আমাদের নিরাপত্তার বিষয় টা খেয়াল রাখএবন স্যার , আমি তাদের কয়ে পরোপুরি আশ্বস্থ করলাম যে তোমাদের বিন্দুমাত্র সমস্যা হলে তুমি পুলিশ কে পাশে পাবে এরপরেই সোহেল সোহেলের স্ত্রী বৃষ্টি কে আমাদের মাইক্রো-বাসে করে সোনারগাঁও থেকে ঢাকার দিকে রওয়ানা দিলাম, ভীষণ এডভ্যাঞ্চেরাস লাগছে তাই আমি সহ আমার পুরো টিমের সারারাত নির্ঘুম থাকার পরেও কেউ ক্লান্ত বোধ করছে না শেষ টুকু দেখার অপেক্ষায়

পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম স্যার কে ফোনে পুরো বিষয়গুলি উল্লেখ করলাম , স্যার শুধু বললেন যেভাবেই হোক আজ যেন গুড নিউজ পাই , কাচপুর ব্রিজের ঐতিহাসিক জ্যাম এবং শনির আখরা যাত্রাবাড়ীর চিরাচরিত ট্রাফিক জ্যাম পার হয়ে টিকাটুলি রাজধানী মার্কেটের ওখানে আসতে আসতে বিকাল ৩ টা বেজে গেল, সোনারগাঁও থেকে আসার সময় সোহেলের বাবা সোহরাব সাহেব কে বলে এসেছি যে আপনার ছেলে কে বাচাতে চাইলে অবশ্যই মিঠুকে ধরা পড়তে হবে, তাই আমরা চলে যাবার পর দয়া করে এমন কিছু করবেন না যাতে মিঠু পালিয়ে যায়, তিনি সর্বোচ্চ সহায়তা করবেন বলে জানালেন গাড়ি তে সোহেল আমাদের জানালেন যে স্যার মিঠূ কিন্তু খুব চালাক ,খুব ধুরন্ধর , ওরে বেশি ফোন দেয়া যাবে না, এক বিন্দু সন্দেহ থাকলে ও আসবেনা , সোহেল কে জিজ্ঞেস করলাম যে নরমালি তোমরা ঢাকায় আসলে কোথায় মিঠুর সাথে দেখা করো ? সে বলল টিকাটুলি ঐ গ্যারেজে, অথবা রাজধানী মার্কেটের উলটো দিকে ক্যাটস আই এর শোরুমে অথবা জয়কালী মন্দিরের পাশে হট-কেক এ  

এরপরে আমরা এই তিন টা জায়গা ভাল ভাবে পর্যবেক্ষেন করলাম , কোন জায়গা টা আমাদের অপারেশনের জন্যে সুবিধাজনক হবে তা নির্ণয় করার জন্যে সব মিলিয়ে মনে হল যে হট-কেকের প্লেস টাই সবচে উপযোগী কারণ ভিতরে থাই গ্লাসের অটো-লক , সামনেও যথেষ্ট জায়গা আছে , তাই এই জায়গা টাকেই বেছে নিলাম, বৃষ্টি ফোন দিলভাইয়া আমরা তো টিকাটুলি, আপনি যদি ফ্রি থাকেন তাহলে আসতে পারেন, মিঠু বলল ভাবী জাস্ট ৩০ মিনিটস , আমি গোসল শেষ করলাম এখন লাঞ্চ করব তারপরে আসতেছি , আপনারা ক্যাটস আই এ থাকেন, বৃষ্টি বলল ভাই ওখানে অনেক ভিড়, আমরা না হয় হট-কেক এ বসি, তাহলে একটু আরাম করে বসলাম, খেলাম আর আলাপ আলোচনা করলাম মিঠূ বলল ওকে ভাবী আপনারা হটকেকে বসেন , আমি আসতেছি এরমধ্যে ওসি সূত্রাপুর কে ফোন দিয়ে বললাম আপনার জুরিসডিকশনে আমরা একটা অভিযান করব ,প্লিজ আপনার থানার একটা ব্যাক আপ পার্টি আমাদের সাথে দিতে হবে, ওসি সাহেব বললেন স্যার ৫ মিনিটের মধ্যে আমার থানার একটা পার্টি আপনার কাছে রিপোর্ট করবে সূত্রাপুর থানার এসআই সুজন ময়মনসিংহ এ আমার রীডার ছিল, অত্যন্ত সাহসী ও চৌকশ অফিসার , সুজন সাথে থাকলে আমি খুব নির্ভার অনুভব করি, তাই সুজন কে একটা কল দিয়ে বললাম কোথায় আছ? সে বলল থানায়, আমি তো তোমার থানা এলাকায় একটা অভিযানে , যদি ফ্রি থাকো তাহলে তোমার ওসি কে আমার কথা বলে চলে আসো, সুজন ৫ মিনিটের মধ্যে হাজির  

সূত্রাপুর থানার দল টি কে হট-কেক থেকে মেইন রোড এর দিকের পাশে থাকতে বললাম যাতে করে পুলিশ কাউকে ফলো করছে সেটা বোঝা না যায়, আমার পুরো টিম কে হট-কেকের চারিদিকে সাদা পোশাকে দোকানে স্যালুনে ঘুণ্টির চা দোকানে পিস্তল সহ বসিয়ে দিলাম আর সোহেলের কাছে মিঠুর চেহারার গড়ন ও উচ্চতা গায়ের রঙ সব জেনে নিয়ে দলের সবাইকে ব্রিফ করে পজিশন নিতে বললাম, হট-কেকের ভিতরে আমি , এসআই তারিফ আর এসআই সুজন , তিন জনে তিন টেবিলে আর একটা টেবিলে সোহেল আর তার স্ত্রী , বিকাল সাড়ে ৩ টা থেকে বসে আছি , আমরা এরমধ্যে ১২০০ টাকার স্ন্যাক্স খেয়ে ফেলেছি , ৫ টা বেজে গেছে , মিঠুর কোন খবর নাই, খুব হতাশ হতে লাগলাম এই ভেবে যে গত রাত থেকে অদ্যাবধি এটার পিছনে এত শ্রম মেকানিজম দেয়ার পরে যদি সফল না হতে পারি তবে তা হবে খুব কষ্টের , আমরা হট-কেকের ভিতরে এমনভাবে বসেছি যে ওখানের বয় ম্যানেজারেরাও বুঝতে পারে নাই যে আমরা পুলিশের লোক , বেশি দেরী হওয়ায় সোহেল কে বললাম আরেকবার ফোন দেবার জনয়ে, যথারীতি ফোন দিল এবং মিঠু বলল সোহেল আমার ৫ মিনিট লাগবে  

১০ মিনিট পরে পিছনে ঝুটি চুল ,টি শার্ট ও জিনস পরা সুদর্শন এক যুবক পালসার হোন্ডা নিয়ে এসে হট-কেকের সামনে এসে থামল, সোহেলের বর্ণনায় এটায় আমাদের টার্গেট হবার কথা , সে হট-কেকের সামনে এসে আশেপাশে একটু খেয়াল করে কি যেন দেখল ,এরপরে ভিতরে ঢুকে সোহেল আর বৃষ্টি টেবিলে গিয়ে বসল, আমি হাতে থাকা ছোট ব্যাগ টি খুলে ডিবির জ্যাকেট টি গায়ে দিয়ে ঘুরে দাঁড়ালাম, মিঠুর পিছন দিক টা তে আমি, আমাকে সে দেখছে না, আমি পিছন থেকে গিয়েই মিঠুর চুলে ধরে নাকে মুখে জোরে জোরে পাঞ্চ করলাম, নাক ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে, তারিফ সুজন ডিবির জ্যাকেট গায়ে পিস্তল তাক করে আছে, ঠিক যেন সিনেমার মত , হটকেকে উপস্থিত অন্যান্য লোকজন ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না যে কি হচ্ছে ?? এটা কোন শুটিং এর অংশ নাকি সত্যি সত্যি কিছু সেটা উপস্থিত অনেকেই অনুধাবন করতে পারে নাই, সাথে সাথেই মিঠূর মোবাইল ফোন টি নিয়ে নিশ্চিত হলাম  

সুদর্শন মিঠু পুরাণ ঢাকার শুটার মিঠু নামে পরিচিত যার শুট এ কোন মিস হয় না, ভীষণ হ্যান্ড-সাম এই প্রফেশনাল কিলার কে দেখলে অনেকেই ভিমরি খেয়ে যাবেন যে এই সুন্দর ছেলেটি প্রতি বছর ২/১ টা করে ভাড়ায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে খুন করে, এস পি স্যার কে ফোনে জানালাম যে মিঠুর মত অত্যন্ত ভয়ঙ্কর দুর্ধর্ষ একজন কিলার কে আমরা ধরতে সক্ষম হয়েছি স্যার আমাকে ও আমার পুরো টিম কে এই দুর্লভ কাজটির জন্যে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলেন , এরপরে পুলিশ রিমান্ডে মিঠূ পুরো ঘটনা স্বীকার করেন এবং বেলায়েত তার সৎ ভাই এর স্ত্রীকে পাবার জন্যে তাকে এবং ফারুক কে ১ লাখ টাকা চুক্তি তে ৫০ হাজার টাকা নগদ নিয়ে মিঠু এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, মিঠু ও ফারুক দুজনেই কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী প্রদান করেন এটি একটি সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় জনিত অপরাধ যা বিভিন্ন অসম সম্পর্ক সৃষ্ট হবার ফলে ঘটছে , তাই নৈতিকতা বিবর্জিত সকল সম্পর্কগুলি থেকে আমাদের দূরে থাকা উচিত, এই ধরনের সম্পর্ক একটি পরিবার কে ধ্বংস করে দিতে পারে , এই পুরো ঘটনার জন্য দায়ী রেশমা ও তার দেবর বেলায়েতের অসম সম্পর্ক ঘটনার পর থেকেই বেলায়েত গা ঢাকা দিলে ও মিঠু গ্রেফতার হবার কয়েকমাস পরে দিনাজপুরে একটি তাবলীগ জামাতের দল থেকে বেলায়েত কে গ্রেফতার করা হয়, সেই সাথে ভাবী রেশমা কে ও হত্যা প্ররোচনা-কারী হিসেবে গ্রেফতার করা হয়


পরিশিষ্ট-
মামলা নং-৩৪-(১০)-২০১০,মুন্সিগঞ্জ সদর থানা, তদন্তকারী অফিসার-এস আই ওবায়েদ, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তামোঃ শহিদুল ইসলাম,
এএসপি হেডকোয়ার্টার- দেওয়ান লালন আহমেদ (বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার)
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার- মোঃ সাইফুল ইসলাম (বর্তমানে পুলিশ সুপার, ডিসি , ডিএমপি)

পুলিশ সুপার-মোঃ শফিকুল ইসলাম (বর্তমানে  ডিআইজি ,পুলিশ কমিশনার , আরএমপি )