রবিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

আশির দশকে শাহাজাহান হাসনার চিরায়ত প্রেমের উপাখ্যান



আজ থেকে তিন যুগ আগে
সীমান্তের প্রত্যন্ত এক মফস্বলে
বিষাদ বিয়োগান্তের ঐতিহাসিক
প্রেম হয়ে সবার মনে আছে গেঁথে ।

শাহাজাহান আর হাসনা নাম
অব্যয় হয়ে থাকে এই খানে ,
দুজন দুজনার অচ্ছেদ্য প্রেমের লীলা
প্লেটোনিক লাইলি মজনুর গভীর প্রণয় খেলা ।

ভাবলেই বুকেতে কাঁটা হয়ে বিঁধে
দুটি নির্মল প্রাণ ছিল সাধাসিধে ,
আজ থেকে প্রায় কয়েক যুগ আগে
শোকের নদী বিষাদ হয়ে জাগে ।

প্রেমের জন্য আত্মাহুতি
 ভয়ংকর মর্মস্পর্শী দূর্গতি,
বছর বছর ধরে বুকে দলা হয়ে নড়ে
মনে পরলেই কাঁদে বুক হুহু করে ।


প্রেম পুরোপুরি হয়ে যায় রাষ্ট্র
সকলের চোখেতে হয় স্পষ্ট ,
হঠাৎ করেই বাঁধল বিপত্তি
দুজনার পরিবারে এই সম্পর্কে প্রবল আপত্তি ।

মহিরউদ্দিন ভীষন গর্জে তর্জে থাকা পিতা
তাকে এসবে বলতে যাওয়াটাই বৃথা,
তবুও তিনি জিজ্ঞাস করলেন – তুমি কি এ প্রেম মানো মনেতে
নাকি সবটাই শুধু উলুবনেতে ?
পুত্র শাহাজাহান নিশ্চুপ,
বুকের ভিতরে কেমন ঘূর্নিপাক খুব,
মৌনতা সন্মতি
এটাই হল কাল
এটাই ছিল ক্ষতি ,
শুরু হল সম্পর্ক বেঁধে দেয়ার খেলা
শুরু হল জাল ফেলে বিস্তার
আজ আর নাই নিস্তার ।




শাজাহান কিছুক্ষন বাদে
সেই পুকুরধারের গাছ তলায়
একলা একাই
বুক ফেটে হাউমাউ করে কাঁদে,

এরপরে সেখানে হাসনা আসে
একসাথে এক প্রানে সপে দিতে চায় বিনাশে,
বাঁচব না গো তোমায় ছাড়া
এ জীবন রাখবনা যদি হই তুমিহারা ,

হাসনার বাবা স্কুল শিক্ষক
সম্মানে অম্লান ধরনীর দীক্ষক,
নিজের মেয়েকে জানতে চেয়ে
সবকিছু শুনলেন বন্ধু হয়ে ,

এরপরে তিনি শাজাহানের পিতার নিকট
গেলেন ঝটপট,
বিবাহের প্রস্তাব আছে
দুজন দুজনাতে মনেতে ভীষন কাছে ,
মহির উদ্দিন শুধালেন – খামোশ
মনে হয় আপনি বেহুশ
শিক্ষক মশাই আনুন হুশ ,
প্রেম মানিনা
আর যেন বিয়ের প্রস্তাব আনিনা,
বিয়ের প্রস্তাব হল প্রত্যাখান
বাড়ী গিয়ে নিজের আর মেয়ের মান বাচান,

পুত্রকে বললেন সাত দিন পরেই তোমার বিয়ে
রেখোনা কোন দ্বিধা এ নিয়ে ,
পরদিন সকালেই
ডাকে পাখি অকালেই
সাত সকালে কান্নার রোল
দড়ি দিয়ে ফাঁসিতে হাসনার দোল,
সবাই হাহাকার কাদছে
হাসনার নিথর প্রাণ দুলছে ,






বেঁচে থেকেও প্রানহীন অসাড়
স্থির আজ সবকিছু তার ,
শাজাহান নিশ্চুপ নির্বাক
বুকের ভিতর কে দেয় ডাক ,

কৃষ্ণ গহবরে
কে তুমি হাসনা ডাকছ আমারে,

সাতদিন পরে,
আজকে  তোমার বিয়ে
পাগড়ি মাথায় দিয়ে,
তেতুলিয়া নিবাসী এই ছোট ললনা
হয়ে গেল কাবিন বিবাহ বাসনা ।

অতঃপর শাজাহান পায় নি তো প্রাণ
নিভৃতে কে ডাকে এমন করে উচাটান,
সাতদিন পরে
বাজনা বাদ্যি বাজে
ঢোল ঢোলক বাজে
সাজন সাজে
আজকে বর যাবে আনতে কন্যা
আজকেই হবে মধুর মিলনের বন্যা,
সারারাত সকলে আনন্দে মজে
সকাল বেলায় সবাই বরযাত্রী হবে,

বর সাজাই বর উঠাও গোসল করাও তারে
দরজা খোলেনা দরজা নাড়ে,
ইতিহাস হয়ে থাকে
পৃথিবীর সব শ্লোক প্রবাদে
দরজা ভেঙ্গে সবাই কাঁদে

শাহাজাহানের প্রেম চিরায়ত
 নিজেরে করল মৃত
আজকে বরের নাই যাত্রা
আজকে তারে শেষ গোসল করাও
আজকে তারে সাঁজাও আতর গোলাপ চন্দনে ।

(উল্লেখিত বিষয়টি সত্য , এটা আমার ফুফাত ভাই এর ঘটনা , আমি তখন ক্লাস টুতে পড়ি, অল্প অল্প মনে আছে বাট এটা পৃথিবীর প্রেমের বলিদানের সেরা ঘটনা , প্রকৃত প্রেম এভাবেই যুগ যুগ বেঁচে থাকে )