সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

অনুভবে অনুনয়ে একান্ত ভাবনাগুলি

১)

সব সুখ ক্ষয়ে গেছে নক্ষত্রের পতন
তবুও আমি বেঁচে আছি কাংগালের মতন,
এত সুর এত জোয়ার এত প্লাবন
আমায় খেয়েছে যাব না যাবে না মন ।

রিক্ত হস্তে পেয়েছিলাম তোমায়
দিয়েছিলে দিয়েছিলাম পরিপূর্ণে
আজ ফেলে দিয়ে আমায় ,
কি রুপে তুমি এ হস্ত ছোয়াবে
নতুন কোন টানে ?

আমি তো অন্ধ হয়েছি চোখ নেই
মেলিবার নতুন কোন পথে,
এ বড়ই মর্মান্তিক হয়নি তো গভীর থেকে গভীরতর
অন্ধ তোমার চোখ !

বিভ্রান্তি আর হাহাকারে পাছে
লোকে কিছু বলে,
কুজন হয়েছে জ্ঞাত আর আমি ক্ষত,

অগ্নিপরীক্ষা তোমার হ্রদয় জুড়িয়া
কে আছে সমান্তরাল,
নিজেই করো আড়াল,
আমার কান্না আমার জল
মুছে যাবে না কেন তোমাতেই সকল ?

(কবিতা টি অনেক আগে লিখা , হঠাৎ করে ডায়েরী টা পাওয়া গেলে এই কবিতা টি খুজে পেলাম, বেশ কয়েক বছর আগের আমার কিছু কিছু আবেগী মুহুর্ত কে এক করা হয়েছে কোন একজন কে হারাবার সময় )



২)

পারিতেই পাড়ি !

পারি নিয়ে পাড়ি দিতাম হলে আগে দেখা
আজ তাই দেখে তারে কপালে চোখ হল বাকা,
কী ভীষন বদনখানি স্নিগ্ধতায় ভরা,
হাসিটুকু বলে দেই ষোল্ব আনাই পুরা ।
এই প্রথম দেখা হল শুরুতেই নাড়া
নাড়িতে নাড়া দিয়ে পড়ে গেল সাড়া,
সারাক্ষন কল মিসড এসএমএস ফাকা
রাত ভর দুঃখিত শুনে শুনে রাত টাই জাগা !
উথাল পাথাল আর উচাটং মন
এই টুকু দেখাতেই আনচান আনচান সারাক্ষন ।


৩)

বৈষ্ণব পদাবলী

(১)

যাহাঁ যাহাঁ নিকসয়ে তনু তনু জ্যোতি।

তাহাঁ তাহাঁ বিজুরি চমকময় হোতি।।

যাহাঁ যাহাঁ অরুনচরন চল চলই।

তাহাঁ তাহাঁ থল-কমল-দল খলই।।

(কথাগুলো আমাদের অপরিচিত, গোবিন্দদাস কী বলতে চেয়েছেন তা আমরা সাধারণত বুঝবো না। কবি এখানে রাধা’র বর্ণনা দিয়েছেন। রাধা যে খুব সুন্দর আমরা তা সবাই জানি, কবি এখানে সেই সৌন্দর্যের বর্ণনা করেছেন। রাধা তার সখীদের সাথে যাচ্ছে, কবি বলেছেন, রাধার শরীর থেকে যেখানে ছলকে পরেছে সৌন্দর্য, সেখানে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। যেখানে রাধা রাখছে তার আলতা রাঙানো পা, সেখানেই য্যানো রাধার পা থেকে ঝরে পরছে স্থলপদ্মের লাল পাপড়ি। কী সুন্দর বর্ণনা! )



মহাকবি গোবিন্দদাস



( ২)

মহাকবি বিদ্যাপতির কবিতা





হাথক দরপন মাথক ফুল ।

নয়নক অঞ্জন মুখক তাম্বুল।।

হ্রদয়ক মৃগমদ গীমক হার ।

দেহক সরবস গেহক সার ।।

পাখীক পাখ মীনক পানি।

জীবক জীবন হাম তুহু জানি।।

তুহু কঐসৈ মাধব কহ তুহু মোয়।

বিদ্যাপতি কহ দুঁহু দোঁহা হোয় ।।

(
রাধা নিজের কাছে জানতে চাইছে কৃষ্ণ তার কে হয়? তখন ভাবতে বসে রাধার মনে হয়, কৃষ্ণ তার হাতের আয়না, যাতে সে নিজেকে দেখে থাকে। তারপর মনে হয় কৃষ্ণ তার মাথার ফুল, যা তার শোভা বাড়িয়ে দেয়। তারপর বলতে থাকে
তুমি আমার চোখের কাজল, মুখের লাল পান।
তুমি আমার হৃদয়ের সৌরভ, গ্রীবার অলঙ্কার।
তুমি আমার শরীরের সর্বস্ব, আমার গৃহের সার।।
পাখির য্যামন পাখা থাকে এবং মাছের য্যামন পানি।
তুমি ঠিক তেমনি আমার, আমি তেমনি জানি।।
এতো ভেবেও তৃপ্ত হয় না রাধা, তখন কৃষ্ণকেই জিজ্ঞেস করে তুমি আমার কে? তার উত্তর দেন বিদ্যাপতি নিজে, বলেন “তোমরা দুইজন অভিন্ন”। মধু মধু!
)

৫)

নিরন্তর ক্ষমা কর মোরে!

জীবন আজ নর্দমা

বিষাদ তিক্ততা যন্ত্রনা

নিজের কাছে নিজের অসহায়ত্ব

তীব্র ঘৃনায় ফুসে উঠেছে,

আলোকিত আমার সবটুকু আলো

নিভিয়ে দিলাম কোন এক নীল অন্ধকারে!

হার না মেনে

মুক্তি নিয়ে জীবন থেকে

অন্য কোখাও অন্য এক ভুবনে

চলে যাব নিঃশেষিত পতনে,

তবুও হায় ! হায়

বন্ধু কর জোর করি তব স্থানে

ক্ষমা করে দিও মোরে

সব টুকু জুড়ে ।

৬)

আমাদের ভিত

নাই ভিত নাই ভিত্তি

চিন্তা করে প্রাণ নিত্তি,

পথে হল দেখা পথের সাথে পথে সন্ধি

ভালোবাসা বাসি কিছু নয় সবই মনের ফন্দি।

ইট পাথর কংক্রীটে গড়ে উঠে বড় ভিত

তবুও তা ভেংগে যায় থাকে শুধু মনের মিথ ।

তোমার আমার ভিত্তি

নাই বালি নাই সিমেন্ট

 তবুও তা হতে পারে

সুখ স্মৃতি প্রেম সৃষ্টি ।


7)

হারিয়ে যাবে কোথায় মন মনি ?

কোন কিছু নেই সবটাই হারিয়ে গেছে

দাপাদাপিতে মেতেছে আজ

আমাদের বন্ধন,

কখনও নিভে আবার জ্বলে উঠে

কখন ও রাত্রি কখন দিন

কখন কান্না আবার হাসিঁ।



এখনো তোমার চোখে

স্বপ্ন বুনি,

এখনো প্রকম্পিত হই

তোমার অবারিত বুননে,

একদা যে হাসিঁ তোমাকে মুগ্ধ করেছে

এখন তা আমার প্রান।

এখন চোখ বুজে

নতুন জগৎ খুজি তোমার হাতে,

বিবর্ন স্মৃতিগুলোকে ঝলসে ফেলেছি

তোমার ভালোবাসার ফল্গুধারায়।

তোমার চোখে চোখ রেখে

এখন খুঁজি

শ্রাবস্তীর কারুকাজ অথবা নাটোরের বনলতা সেন,



তোমাকে অনেক যুগ কিংবা বছর

কাল উত্তীর্ন করে রেখেছি,

এখনো গভীর রাতে তুমি কেঁদে উঠো

এখন আমি স্পর্শ করি

তোমার ছায়ায় কিংবা একাকীত্বে,

এখন তেমনি আছো

আগের মতই------

মায়াবী পৃথিবীর প্রতিটি অস্তিত্বে

আমার শুন্য ভাবনায়

নীরবে নিভৃতে নির্জনে,

আবিষ্ট হয়েছি

অবগাহন করেছি

এ হাত ধরে আবারো মেতে উঠি

এসো আমার কাছে এসো

এসো প্রিয় বুকে।

8)

অনুভবে অনুনয়ে একান্ত ভাবনাগুলি

ক)

''পথের সাথে হল পথের সন্ধি

পথ ফুরালেই আবারো যুগল বন্দী,

ভালবাসা বাসি কিছু নয়

সবই মনের ফন্দি''



খ)

''একবার সেই ভাবে ডাক ,

যাতে আটলান্টিকের বুকে ঝড় উঠে

ফুঁসে উঠে সমুদ্রের জল

যেমন সীতার ডাকে দ্বিধা হয়েছে ধরিত্রি,

যদি ডাক সেই ভাবেই ডাক

সেই ভাবেই বুকে টেনে নাও

অচল পাহাড়ও দ্যাখো

ছুটে যাবে তোমার সান্নিধ্যে''

9)

মন মনি তুমি

স্বর্গীয় সুধা পান করেছি

তোমার দুগ্ধ ফলের মহিরুহে

কী এমন সুখ !

আজন্ম সুধা তার মাঝে,

এ ফলের ঘ্রাণ মেখেছি সারা অংগে

ঘ্রাণ ছুয়েছে ঠোট, নাসারন্ধ্র, চোখ, মুখায়ব

অমৃত সুধায় অপলক তাকিয়েছি

চোখ নির্লিপ্ত

অবগাহন করতে চাইছে আমার পৌরুষ

তোমার নারীত্ব রমণীয়।

শুধায় শুধায় মত্ততা

মাতাল মাতাল সারাটা কাল,

একি গভীর উছ্বসিয়া আকুলতা,

প্রণয়ের দুয়ারে দুয়ার মিলেছে

স্বপ্ন ভাংগা স্বপ্নহারা

দুটি নির্জীব পাখি,

স্বপ্ন দেখছে স্বপ্ন ভাংগার আশায় ।

10)

আমার বন্ধু হারিয়ে গেছে

কত কালের স্বপ্ন রোদ ঘেষা দুপুর

স্বপ্নের পাঠশালা তুমি আমি ভালোবাসা

ষোড়শী বিশাল মাঠ

অশথ্ব বৃক্ষের তলে হায় আমাদের রান্না বাটী খেলা,

আহা! কতকালের ভালোলাগা

ছোট নদীটা কত বড় ছিল মনে প্রানে সাতার কাটা,

বন্ধু তুমি আরেক টা প্রান

আমার প্রতি কেন এত টান,

এত মায়া এত টুকুন বয়স

নিজের পালকে ওম দিয়েছিলে কনকনে শীত তাড়াতে।

এমন করে আর কেউ কখনো দেই নি আমায়

বুকের উপর বুক পেতে,

রাখতে আমায় আগলে রাখতে আমায় হ্রদপিন্ডে,

আহারে ! আহারে! আহারে!

বুক ফেটে যায় বুক ভেসে যায়

তার অসীম অনুভবে,

স্বর্গস্রোতে ভেসে গেছে স্বর্নলতা

আজো প্রতিরাতে খুজে ফিরি তারে !



(প্রয়াত অগ্রজ দেওয়ান সিরাজুল ইসলামের স্মরনে, যে আমার এক বছর আগে পৃথিবীতে এসেছিল ,কাউকে না বললে বোঝা দায় ছিল যে আমরা সহোদর, সে ছিল আমার প্রানের বন্ধু, ১৯৯৬ সালের ৫ই আগস্ট এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় যিনি প্রাণ হারান)

11)

মন মনি (২)

দীর্ঘশ্বাস গুলি জমে আছে বহুকাল

একবার ছেড়ে দিয়ে বাচঁতে চাই,

শ্বাস প্রশ্বাস গুলি

দিয়ে দিয়েছি এক স্বপ্নচারিণীর হাতে

এখন তার দেহেই শ্বাস নিয়ে বাচিঁ,

দীর্ঘশ্বাস গুলি আমারই থাকুক

স্বপ্নচারিণীর ছিল

অবারিত কন্টকাকীর্ণ পথ

যে পথে গেলে পথ ভুলে যায় পথিক

সেই পথে আমি আমার

প্রাগৈতিহাসিক স্বপ্ন মেলে দিয়েছি

এখন দুটি পথ

স্বপ্নচারিণী এবং দীর্ঘশ্বাস,

অসমীকরণের পথে বীজ বুনি

সমীকরণ ফলনের ,

হয়তোবা ভেঙ্গে যাবে

না হয় ভাংতে ভাংতে

গড়ব নীল মনিহার ।

12)

বুক ভেংগেছে বুক ফেটেছে

আশা হয়েছে ক্ষত

পালিয়ে গেলেই মাথা কেটেছে

হাত রয়েছে বন্ধ।



চোখ ভিজেছে জল নেমেছে

পণ হয়েছে কার্পণ্য

আজ আকাশে মেঘ জমেছে

আধারে আধিয়ার নিমগ্ন ।



বুকের মাঝে আরেকটি বুক

হ্রদপিন্ডে আরেকটি পিন্ড

একটি মুখে দুইটি মুখ

শ্বাস দিয়েছে শ্বাস যন্ত্র ।



আমার আছে শূন্য শূন্য

যোগফল তারতম্য বিচ্ছেদ

আজ আমাতে ঠাই নিয়েছে

নিঝুম অরণ্য,

গভীর রাতের নির্জনতায়

একটি তারা জ্বলন্ত।

13)
তবুও আমি স্বপ্ন দেখি

চোখ মেলিয়ে সব ছাড়িয়ে

ঝমঝমিয়ে বৃস্টি নেমে

দুঃখ গুলো যাক বেরিয়ে,

স্বপ্ন ছাড়া জীবনটাকে

যায় না পাওয়া জীবন্তে,

হারিয়ে গিয়ে যাবে কোথায় ?

ছিড়তে পারো আমার নাগাল

স্বপ্নটা যে থামবে যেথায়

উঠবে সেজে সেথা বিশালতায়,

ছেড়ে যাবে আমায় তুমি

ফেলে যাবে হ্রদয় খানি,

হৃদয় বিহীন শরীরটাকে

পাই বা না পাই কার কি তাতে ?

যে পেয়েছে সে হেরেছে

আমি তো আর হার মানি নাই,

হৃদয় খানি আমার ছিলো

আমার সম্পদ দখল ছাড়া

ছিনিয়ে নিলো সমাজ রীতি,

শূন্য হাতে কৃপা ভরে আগলে আছে

সবাক স্মৃতি,

আমার তো আর আর পোড়েনা

পুড়তে পুড়তে নিংড়ানো খাটি

আকাশ আমার ভরে গেছে

দুঃখ মালার দীপ্ত স্বাতী,

এই টুকুতেই বেঁচে থাকা

এই টুকুতেই জীবন জোড়া আগলে থাকি

মন মনিতে মনপুরা ।










সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

আমার মা জননী বীরাঙ্গনা



''যুদ্ধে এখনও বইছে
যেন যুদ্ধে রচিত জীবনধারা
বিজয়ে সবাই হাসে
উঠে না তাদের শুকতারা  

হানাদারের লালসায় তৈরি
মনের সাথে দেহের বৈরি
যুদ্ধ ভরেছে মনের ব্যাথা
নির্যাতনের বিষাদ্গাথা
সময়ের  লাঞ্চনা হাহাকারের যন্ত্রনা
বুক ভেঙ্গে যায় কেপে কেঁপে উঠে
আমার মা জননী বীরাঙ্গনা ''

 ঠিক  এভাবেই আমি বর্ননা  করেছি  বীরাঙ্গনাদের ।  বীরাঙ্গনা শব্দটির আভিধানিক অর্থ বীরনারী। যুদ্ধে তাদের আত্মত্যাগকে মর্যাদা দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু স্বয়ং তাদের বীরাঙ্গনা বলে অভিহিত করেন। কিন্তু বৈরী সমাজের কারণে পরে সে শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় পাকিস্তানি বাহিনী দ্বারা ধর্ষণের শিকার নারী। বীরাঙ্গনা উপাধি তাদের অহংকার না হয়ে, হয়ে দাঁড়ায় বোঝা ও কলঙ্কতিলক। পাকিস্তানি হানাদারদের দ্বারা নারী নির্যাতনের ইতিহাস রয়েছে  বাংলাদেশের স্বাধীনতার দলিলপত্রে।
 (বাংলাদেশের স্বাধীনতার দলিলপত্র, ৮ম খন্ড, হাসান হাফিজুর রহমান(




  

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বীরাঙ্গনাদের নিজের কন্যার মর্যাদা দিয়েছিলেন। সরকারি উদ্যোগে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। তাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রও স্থাপিত হয়। তাদের ক্ষতিপূরণ বাবদ সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা হয়। হাতের কাজ শেখানোর মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য জাতীয় মহিলা সংস্থার মাধ্যমে ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। রেডক্রস এগিয়ে আসে এদের সাহায্যে। অসংখ্য নারীর গর্ভপাত করানোর ব্যবস্থা হয়। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে মাদার তেরেসার মিশনারিজ অব চ্যারিটি, অক্সফামসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক এনজিও তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। যুদ্ধশিশুদের প্রশ্নটিও তখন সামনে এসে দাঁড়ায়। যুদ্ধশিশুদের বেশিরভাগকেই বিদেশে বিভিন্ন পরিবারে দত্তক দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
যুদ্ধকালীন সময়ে সারা দেশের ৪৮০ টি থানা থেকে গড়ে প্রতিদিন ২ জন করে নির্যাতিত মহিলার সংখ্যা অনুসারে ২৭০ দিনে ধর্ষিতার নারীদের সংখ্যা দাড়ায় ২ লক্ষাধিক। আন্তর্জাতিক প্লানড ফাদারহুড প্রতিষ্ঠানের ড. জিওফ্রে ডেভিস, যুদ্ধের পরপরই তিনি এসব মা ও তাদের শিশুদের সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন, তাঁর মতে এই সংখ্যা আরও বেশি এবং তা ৪ লক্ষ।

 টেপরি রানী ও তার যুদ্ধ শিশু সুধীর কে শীতের কাপড় প্রদান 



একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছু করার প্রত্যয় বুকে নিয়ে কাজ করার আগ্রহে ‘বীরাঙ্গনা ‘ দের বিষয়টি আমাকে বেশ ভাবিয়ে তুলে , ঠাকুরগাও জেলার রানীশংকৈল থানায় ২৪ জন বীরাঙ্গনার খোঁজ পাই , তাদের যাপিত জীবন ও সামাজিক নিঃগ্রহের কথাগুলো, লাঞ্চনা বঞ্চনার বিষয়গুলো আমার কাছে মুক্তিযুদ্ধের একটি অনেক বড় অবদান মনে হয়েছে , এই বঞ্চিত লাঞ্চিত ও সময়ের লাঞ্চনায় তাদের এই অবদান কে তুলে ধরতে চেয়ে একটি গান রচনা করি নতুন প্রজন্ম কে মুক্তিযুদ্ধ পৌছে দিতে ইতিপুর্বে পুলিশের প্রথম প্রতিরোধ নিয়ে আমার লিখা গান-পচিশে মার্চ -রক ফরমেটে করেছিলাম গানটি গেয়েছেন জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা ফিডব্যাক ব্যান্ডের মেইন ভোকাল লুমিন । যা ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে ।
সেইম ফিলিং থেকে বীরাঙ্গনা দের নিয়ে আমার লিখা গান যেখানে আমি তাদের মা জননী বলে সম্বোধন করেছি ,  ঠাকুরগাও জেলার রানীশংকৈল থানার বলিদ্বারা গ্রামের টেপরি রানী কে এই গানের বেইজ হিসেবে দেখাবার চেষ্টা করেছি । গানটি সুর করেছেন রাজীব হোসেন , কণ্ঠ দিয়েছেন বিখ্যাত ব্যান্ড তারকা  মিজান, (এক্স ওয়ারফেইজ ) মিউজিক ভিডিও নির্মাতা- সৈয়দ তানভীর আহমেদ , গান টি সুনামধন্য ধ্রব  মিউজিক ষ্টেশন থেকে   ২২ মার্চ ২০১৮  প্রকাশিত হয়েছে এবং ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে গানটি  । 
গানটির ইউটিউব লিঙ্ক-https://www.youtube.com/watch?v=yno-HGjmGLA


মিউজিক ভিডিও নির্মাতা তানভীর আহমেদ ও তার টিম টেপরি রানীর বসত ভিটা তে



বীরাঙ্গনা
একাত্তরের একটু আগে ষোলোতে মেহেদী রাঙ্গিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে কত স্বপ্ন সাধ আহলাদে আঁকে
হারিয়ে গেল তা কোথায় কোন ফাকে

যুদ্ধে এখনও বইছে
যেন যুদ্ধে রচিত জীবনধারা
বিজয়ে সবাই হাসে
উঠে না তাদের শুকতারা  
হানাদারের লালসায় তৈরি
মনের সাথে দেহের বৈরি
যুদ্ধ ভরেছে মনের ব্যাথা
নির্যাতনের বিষাদ্গাথা
সময়ের  লাঞ্চনা হাহাকারের যন্ত্রনা
বুক ভেঙ্গে যায় কেপে কেঁপে উঠে
আমার মা জননী বীরাঙ্গনা

একাত্তরের মে মাস ,  রাজাকারেরা এসে তুলে দেয় হানাদারের কাছে ঠেসে,তিন দিনের লাল নীল রঙের দংশনে রাত্রি,আকাশ ভারী বাতাস ভারী কাঁদে ক্যাম্প শিয়ালডাংগী
অশ্রু ঝরে রক্ত ঝরে টাটকা
নির্যাতনের নির্মমতায় আটকা
নয় মাসে নির্যাতনের মেলেনা অংক
দুঃসহ স্মৃতি দুর্বিষহ অসংখ্য

কিনেছে অমূল্য দামে রক্তে
ভিত গড়েছে শক্তে
বীরকন্যার আত্মত্যাগে পবিত্র মাটি
তোমাদের অমুল্য দানে  খাটি  

শুটিং এ গায়ক মিজান টেপরি রানীর সাথে 


টেপরি রানী  যাকে পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে পাকিস্তনি সেনা ও রাজাকাররা ইচ্ছামতো নির্যাতন করত। সবার কথা চিন্তা করে সব মুখ বুজে সহ্য করেছে সে তিনি পাকিস্তানি সেনাদের বারবার  মেরে ফেলার জন্য আকুতি করলেও তারা তা করেনি।

বলিদ্বারা গ্রামের টেপরি রানী। যুদ্ধের কিছুদিন আগে ১৬ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয় শিয়ালডাঙ্গী গ্রামের মাটাং রায়ের সঙ্গে। একাত্তরের মে মাসে রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি সেনারা প্রথমে তাঁকে ধরে নিয়ে যায় শিয়ালডাঙ্গী ক্যাম্পে। সেখানে তারা তিন দিন আটকে রেখে নির্যাতনের পর তাঁকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু তখনও তাঁর দুর্বিষহ জীবনের দুর্দশা শেষ হয়নি। মাসখানেক পর ফের তিনি আটক হন এবং মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে ১০-১২ বার শিয়ালডাঙ্গীসহ বিভিন্ন ক্যাম্পে নিয়ে তাঁকে অসংখ্যবার নির্যাতন করে পাকিস্তানি সেনারা।



টেপরি রানী বলেন, পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা ইচ্ছামতো নির্যাতন করত। সবার কথা চিন্তা করে সব মুখ বুজে সহ্য করেছি। আমি পাকিস্তানি সেনাদের বারবার আমাকে মেরে ফেলার জন্য আকুতি করলেও তারা তা করেনি। আত্মহত্যা করে জীবন বিপন্ন করতে চাইনি। সংগ্রাম করেই বাঁচতে চেয়েছিলাম। নির্যাতনের কথা মনে পড়লে আজও শিউরে উঠি।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর বলিদ্বারা গ্রামে আবার বসবাস শুরু করি। কিন্তু নির্যাতিত হওয়ায় আমাদের পরিবারকে প্রায় দুই বছর একঘরে করে রাখে স্থানীয় লোকজন। আমাদের সঙ্গে কেউ লেনদেন করত না, কথা পর্যন্ত বলত না। এর মধ্যে ১৯৭৩ সালে আমার স্বামী মাটাং রায় অসুখে মারা যান। তারপর থেকে আমার দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে অতিকষ্টে দিন কাটাচ্ছি। ছেলে সুধীর একজন যুদ্ধশিশু যিনি এখন  ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন
ক্যামেরার পজিশন দেখছেন নির্মাতা তানভীর আহমেদ, লেখক ও এএসপি হাসিব 


টেপরি রানীর মতো এ অঞ্চলে আরো অনেক বীর নারী রয়েছেন। তাঁরা হলেনকেউটান গ্রামের ঝরনা রানী মুল, তীর্থবালা পাল; রাউতনগর গ্রামের আসমা বেগম, হাফেজা বেগম, মুনি কিস্কুু, সীতা হেমব্রোম, সুবি বাসুগি, জবেদা বেওয়া, হনুফা বেওয়া, সাজেদা বেগম, রওশন বেওয়া; শিদলী গ্রামের নিহার রানী দৈবা; ফাড়াবাড়ি গ্রামের হাসিনা বেগম, হালিমা বেগম; ভারা গ্রামের চানমনি; লেহেম্বা গ্রামের ঝড়ূ বালা; পকম্বা গ্রামের নুরজাহান বেগম; পদমপুর গ্রামের হাসিনা বেগম; গোগর গ্রামের মালেকা বেগম; শামাডাঙ্গী গ্রামের জমেলা বেওয়া; নিয়ানপুর গ্রামের তিন বোন মালেকা বেগম, আমেনা বেগম ও মোকলেছা বেগম।



ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার বলিদ্বারা গ্রামের টেপরি রানী যিনি একজন বীরাঙ্গনা মা জননী তার প্রতি বিনম্র সালাম, জাতি আপনার এই সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রাখবে  


নিউজ লিঙ্ক সমুহ-

ঠাকুরগাঁওয়ের এসপি লালনের গানে বাড়ি মিললো বীরঙ্গনা টেপরী রাণীর
http://www.ittefaq.com.bd/wholecountry/2018/02/13/147201.html


এসপি লালনের লেখা গানে বাড়ি পেলেন টেপরী রাণী


বাড়ি পেলেন বীরাঙ্গনা টেপরী রাণী


ইউটিউবে লাখের কোটায় দেওয়ান লালনের ‘বীরাঙ্গনা’ (ভিডিও)