মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৭

মুক্তিযুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধে বাংলাদেশ পুলিশ বহিনীর গৌরবোজ্জ্বল অবদান ও মহান আত্মত্যাগ




বাংলাদেশ পুলিশের চির উন্নত শিরের ঐতিহ্যবাহী শৌর্য বীর্যের ধারক ও বাহক আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। জাতির ক্রান্তিকালে এই বাহিনীর ভূমিকা আমাদের অবয়বকে করেছে সমুজ্জ্বল,স্ব-মহিমায় দীপ্তিমান।মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের প্রেরণা আমাদের দেশপ্রেমের অভিনব যোজনা এবং তা আমাদের নতুন প্রজন্মের অবশ্যই জানা উচিত যে আমাদের অগ্রজেরা এই দেশ মাতৃকার তরে কি বিশাল ত্যাগ তিতিক্ষা আর দুঃখ দুর্দশা বঞ্চনাকে সাথে করে দেশের জন্যে নির্দ্বিধায় দান করেছেন তাদের মূল্যবান জীবন, সেই সাথে তাদের পরিবারের হতাশা দারিদ্র্যতা জীবন যুদ্ধে টিকে থাকা আমাদেরকে উজ্জীবিত করেছে দেশপ্রেমে যা আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমটাকে শক্ত ভিত এনে দিয়েছে।তাই তো একজন পুলিশ সদস্য হিসেবে গর্বিত হই এই ভেবে যে আমরাই প্রথম রাজারবাগে সশস্ত্র প্রতিরোধ করেছিলাম সেদিন ঘাতকের বুলেট বুকে নিয়েছিলাম দেশ মাতৃকার তরে, এর চেয়ে মহান আর কিছুই হতে পারে না।




মুক্তিযুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধে বাংলাদেশ পুলিশ বহিনীর গৌরবোজ্জ্বল অবদান ও মহান আত্মত্যাগ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশমাতৃকার তরে প্রথম যে বাহিনী সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ,২৫ শে মার্চের কালো রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে
এই বাহিনীর সদস্যরা ৩০৩ রাইফেল দিয়ে পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান এবং নিঃশঙ্ক চিত্তে লড়াই করে প্রাণ দান করেন। এই বাহিনী সম্পর্কে অনেকেই অনেক কথা বলে থাকেন বা ভাবেন, পজিটিভ নেগেটিভ সবই বলা হলেও  এই বাহিনীর এমন গৌরবোজ্জ্বল অতীতের কথা নিশ্চয় অনেকেই জানেন না, হানাদারদের ভারী অস্ত্রের গোলায় ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল সবকটি পুলিশ ব্যারাক, অসংখ্য পুলিশ সদস্য মৃত্যুবরণ করেন, তবুও কেউ মাথা নত করেনি, এই রাজারবাগ থেকেই শুরু হয় প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ।

রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স : ২৫শে মার্চ ১৯৭১

দুপুর ২টা : বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে নানা রকম সংবাদ আসতে
থাকে। পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে সারা শহরে পেট্রোল পার্টি পাঠানো হয়। পেট্রোল পার্টি বেতার
মারফত সংবাদ পাঠাতে থাকে শহরের অবস্থা থমথমে ও আতঙ্কগ্রস্ত।

বিকাল ৪টা : মিরপুর, তেজগাঁও শ্রমিক অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে সংবাদ আসতে থাকে অবাঙ্গালী শ্রমিকরা বিভিন্ন স্থানে আক্রমণাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে,

সন্ধ্যা ৭টা : বিভিন্ন সুত্র থেকে খবর আসে যে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আক্রমণ হতে পারে, এ সংবাদে বাঙ্গালী পুলিশ সদস্যরা বিক্ষিপ্তভাবে নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ এবং তাদের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করেন।

রাত ১০টা : তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে টহলরত একটি পুলিশ পেট্রোল পার্টি (চার্লি-৭) বেতার মারফত জানায় যে, সেনাবাহিনীর একটি বড় কনভয় যুদ্ধ সাজে শহরের দিকে এগুচ্ছে।

রাত ১০.৩০টা : বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে পুলিশ পেট্রোল পার্টি জানায় যে, রমনা পার্ক
(তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) উত্তর ও দক্ষিণ দিকে সেনাবাহিনীর অন্তত ৭০/৮০ টি সাঁজোয়া যান পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করছে।

রাত ১১টা : হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে অবস্থানরত পেট্রোল পার্টির সদস্য-গন
সেনাবাহিনীর সাজোয়া যানের বহর কে ঐ এলাকা অতিক্রম করতে দেখে ভিন্ন পথে তারা রাজারবাগে  ফিরে এসে এ সংবাদ দেয় এবং সেখানে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা যে যার মত প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকেন।

রাত ১১.২০ : সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানসমুহ রাজারবাগ পুলিশ লায়ন্সের চারিদিকে অবস্থান নিতে থাকে। পাকবাহিনীর এই আক্রমণের সংবাদ তাৎক্ষনিক-ভাবে সারাদেশের জেলা ও সাব ডিভিশনসমুহে পুলিশ বেতার মারফত প্রেরণ করা হয়। সংবাদটি ছিল নিম্নরূপ- 
base for all station of east Pakistan  police 
keep listening , watch,   
we are already attacked by  pak army , 
try to save yourself , over   

রাত ১১.৩৫ : রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা অস্ত্রাগারের ঘণ্টা পিটিয়ে সবাইকে সতর্ক ও একত্রিত করে। অস্ত্রাগারে কর্তব্যরত সেন্ট্রির রাইফেল থেকে গুলি করে অস্ত্রাগারের তালা ভাঙ্গে এবং তৎকালীন আরআই মফিজ উদ্দিনের নিকট হতে জোর পূর্বক অস্ত্রাগারের চাবি নিয়ে নিজেদের মধ্যে অস্ত্র ও গোলাবারুদ বিতরণ করে।প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী পুলিশ সদস্যগণ পুলিশ লাইন্সের চারিদিকে, ব্যারাক ও বিভিন্ন দালানের ছাদে অবস্থান নেয়।

রাত ১১.৪০ : পাক সেনাদের কনভয় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের মেইন গেটে এসে পৌঁছে এবং বাঙ্গালী পুলিশ সদস্যেরা কৌশলগত স্থানে পজিশন নেয়।

রাত ১১.৪৫ : রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের দক্ষিণ পূর্ব দিক (পুলিশ হাসপাতাল কোয়ার্টার সংলগ্ন) থেকে প্রথম গুলি বর্ষণ হয়। প্রায় সাথে সাথেই প্যারেড গ্রাউন্ডের উত্তর পূর্ব দিক (শাহজাহানপুর ক্রসিং) থেকে গুলির শব্দ শোনা যায়। ব্যারাকের ছাদে অবস্থানরত বাঙ্গালী পুলিশ সদস্যরা পাক সেনাদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু করে। শুরু হয় দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ। ইতিহাসে সূচনা হয় একটি নতুন অধ্যায়ের।

রাত ১২.০০ : বাঙ্গালী পুলিশ সদস্যদের মরণপণ প্রতিরোধে থমকে যায় ট্যাংক ও কামান সজ্জিত পাকবাহিনী। একটু পরই মর্টার ও হেভি মেশিনগান দিয়ে গুলিবর্ষণ শুরু করে। পিআরএফ এর ৪টি ব্যারাকে আগুন ধরে যায়। পাক বাহিনী ট্যাংক বহরসহ প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রবেশ করে। এ আক্রমণে পাক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় আটশ।

রাত ১২.৩০ : পাক বাহিনীর ভারী অস্ত্রের মুখে বাঙ্গালী পুলিশ সদস্যরা তাদের কৌশল পরিবর্তন করে। গেরিলা পদ্ধতিতে পাক বাহিনীর উপর হামলা চালায় এবং অনেক কে হতাহত করে। অপর একটি গ্রুপ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ মালিবাগ চামেলীবাগ প্রান্ত দিয়ে ঢাকা শহরে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে। রাজারবাগ পুলিশ লায়ন্সের সেদিনকার সেই অস্ত্র আর গোলাবারুদ ব্যবহ্যত হয়েছে সারাদেশে, সীমান্তবর্তী মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ শিবিরে এবং সম্মুখযুদ্ধে।

রাত ০২.৪৫ : রাত ১১.৪৫ মিনিটে শুরু হওয়া যুদ্ধ থেমে থেমে চলতে থাকে রাত ০৩.০০- ০৩.৩০ টা  পর্যন্ত। বাঙ্গালী পুলিশের কিছু সদস্য বুকে অসীম সাহস নিয়ে সমান তালে লড়ে চলে ট্যাংক, কামান, আর মর্টারের বিরুদ্ধে।

রাত ০৩.৩০ : কামান আর মর্টারের আক্রমণ এক সময় থামে, বন্দী হয় প্রায় দেড়শ বাঙ্গালী পুলিশ, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স  দখল করে নেয় দখলদার বাহিনী, তার আগেই রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের কিছু বীর বাঙ্গালী অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ রাজারবাগ ত্যাগ করেন। রাজারবাগ পুলিশ লাইনের যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে।




সেই সব বীরেরা

যারা ২৫ শে মার্চের কালো রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন বীর-দর্পে নিজেদের জীবন বাজি রেখে, জাতি তাদের এই মহান ত্যাগ কে স্মরণ রাখবে যতদিন এই মানচিত্র থাকবে। নিচে তাদের নামের তালিকা দেওয়া হল:-

কনস্টেবল-৫০১  নুরুজ্জামান মিয়া
কনস্টেবল-১৪৩৬ সয়দ আশরাফ আলী
কনস্টেবল-৪৮৭৫ ইউনুস মিয়া
কনস্টেবল-৪৯০৭ জহিরুল হক জহির
কনস্টেবল-৪৮৯৭ নারায়ন চন্দ্র রায়
কনস্টেবল-২৩৪ মোঃ শেখ আকরামুজ্জামান
কনস্টেবল-৩০৬৪ জহিরুল হক কাজী চুন্নু
কনস্টেবল-১৭৭৯ জয়নাল আবেদীন মোল্লা
কনস্টেবল-৪৪০৫ সাহেব আলী মোল্লা
কনস্টেবল-৫০২৭ গিয়াস উদ্দিন
কনস্টেবল-১৯৯ শাহজাহান মিয়া
কনস্টেবল-৪৩৫১ মোঃ আব্দুল আলী খান
কনস্টেবল-৫০৩৪ আবু শামা (সামাদ)
কনস্টেবল-৫০৯৬ বাবর আলী
কনস্টেবল-৮১৪ আব্দুল মালেক
কনস্টেবল-৪৯০৯ জয়নাল আবেদীন
কনস্টেবল-৪৯৬৩ নুরন্নবী চৌধুরী
কনস্টেবল-১০৫৫ আবদুল ওয়াদুদ
কনস্টেবল-৪৮৬৯ মোঃ মকসুদ আলী
কনস্টেবল-১০৯৯ আবুল ফারুক
কনস্টেবল-এস আই মজিবুল হক
কনস্টেবল-সার্জেন্ট মর্তুজা হোসেন
কনস্টেবল-২৩৮ বাবর আলী
কনস্টেবল-৫২৩১ কাঞ্চন আলী মিয়া
কনস্টেবল-হা:৩৯৪৪ মতিয়ার রহমান
কনস্টেবল-৫১৮৬ শাহজাহান মিয়া
কনস্টেবল-৪৫৫৪ আব্দুল মালেক খান
কনস্টেবল-১৫০২ আব্দুল মতিন তরফদার
আরও নাম না জানা অনেকে ,

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাতে পাক-হানাদার বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ের সময় সারাদেশে ২৪ জন পুলিশ সদস্য শহীদ হন। এর মধ্যে ২২ জন রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে, একজন সিলেট জেলায় এর পরদিন অর্থাৎ, ২৬ মার্চ ৮৯ জন্য পুলিশ সদস্য শহীদ হন। এবং একজন রাজশাহীতে শহীদ হন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাস হতেই প্রদেশের পুলিশ বাহিনীর উপর কর্তৃত্ব হারিয়েছিল পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকার।১৯৭১ সালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পাক হানাদার বাহিনীর আক্রমণের প্রতিরোধে গড়ে তোলে তৎকালীন পুলিশের বাঙালি সদস্যরা। 
বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন । পুলিশের বীর সদস্যরা প্রকাশ্যেই পাকিস্থানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ১৩ হাজারেরও  বেশি পুলিশ সদস্য পাকিস্তান সরকারের আনুগত্য অস্বীকার করে নিজ নিজ কর্মস্থল ত্যাগ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। এসময় তাঁরা সাধারণ মানুষকে প্রশিক্ষণ দেয়ারও ব্যবস্থা করেন। ৯ মাস জুড়ে চলা দেশব্যাপী সম্মুখ সমর তথা গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন পুলিশ বাহিনীর  সদস্যরা এবং পাকিস্তানী সেনাদের বিরুদ্ধে গড়ে তোলেন প্রবল প্রতিরোধ। এই সশস্ত্র প্রতিরোধটিই বাঙালিদের কাছে সশস্ত্র যুদ্ধ শুরুর বার্তা পৌঁছে দেয়। শুধু তাই নয়,এরপর পুলিশ সদস্যরা ৯ মাস-জুড়ে দেশব্যাপী যুদ্ধ করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়েও সহায়তা করেছে তারা। বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধের প্রশিক্ষণও দিয়েছে তারা।

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের অবদান অনেক বেশি। এ কারণে সরকার ২০১১ সাল থেকে পুলিশ সদস্যদের জন্য মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক চালু করেন। 
‘১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে শহীদ হন মুন্সী কবির উদ্দিন আহমেদ। তিনি তৎকালীন কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার ছিলেন।’

মুক্তিযুদ্ধে  শহীদ পুলিশ

ঢাকা: পুলিশের ঢাকা জেলার ১’শ ৯০ জন সদস্য শহীদ হন।এর মধ্যে ঢাকা জেলার রিজার্ভ পুলিশের ১’শ ৪০ জন শহীদ সদস্য রয়েছেন। 
ফরিদপুর: মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে ফরিদপুরের ৪ জন পুলিশ সদস্য শহীদ হন।
ময়মনসিংহ: শুধু ময়মনসিংহ জেলায় ২৩ জন্য পুলিশ সদস্য শহীদ হন।।
টাঙ্গাইল: এই জেলায় ৬ জন পুলিশ সদস্য শহীদ হন।
ঢাকা জেলার এআইজি টেলিকম অফিস: ঢাকা জেলার এআইজি টেলিকম অফিসে ৭ জন শহীদ হন।
ঢাকা জেলার সিআইডি: ২ জন।
ঢাকার দুর্নীতি দমন সংস্থা: ৩ জন।
 চট্টগ্রাম : ৭১ জন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা: এই জেলায় ২৩ জন শহীদ হন। 
কুমিল্লা: ২৫ জন।
নোয়াখালী : ১৯৭১ সালে এই জেলায় মোট ৮ জন্য পুলিশ সদস্য শহীদ হন।
সিলেট: ১৩ জন।
রাজশাহী: ৬০ জন।
রংপুর: ২৩ জন।
বগুড়া: ২১ জন।
পাবনা: ৩০ জন।
দিনাজপুর: ২১ জন।
সারদা পুলিশ একাডেমী:  সারদায় ৩৯ জন।
খুলনা: খুলনায় ৪ জন।
যশোর: ৭০ জন শহীদ হন।
কুষ্টিয়া: ৩৩ জন।
বরিশালের বাকের-গঞ্জ: ১৪ জন্য।
পটুয়াখালী: এই জেলায় ৬ পুলিশ সদস্য শহীদ হন।
চট্টগ্রাম জেলার রেলওয়ে পুলিশ: ৪৩ জনের নিখোঁজের তালিকা প্রকাশ করেছে। 
**পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য।


প্রসঙ্গত ঝিনাইদহের তৎকালীন সাব-ডিভিশনাল পুলিশ অফিসার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ
বীরবিক্রম, ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ মুজিবনগর সরকারের শপথ-গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে ঐতিহাসিক গার্ড অব অনার প্রদান করেন। রাজশাহী বিভাগের পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক মামুন মাহমুদ ,রাজশাহীর এসপি শাহ আবদুল মজিদ, কুমিল্লার এসপি কবির উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রামের এসপি এম শামসুল হক, বরিশালের অতিরিক্ত এসপি গোলাম হোসেন, পিরোজপুরের এসডিপিও ফয়জুর রহমান আহমেদ (লেখক হুমায়ূন আহমেদ ও জাফর ইকবালের বাবা), দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল কাদের মিয়া, নড়াইলের গোলাম রাব্বানীসহ আরও অনেকে শহীদ হয়েছেন ।মুক্তিযুদ্ধের দলিল অনুযায়ী মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন ডিপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল, বেশ কয়েকজন এসপিসহ ১২৬২ জন পুলিশ সদস্য দেশের জন্য, দেশের পতাকার জন্য শহীদ হয়েছেন।সেইসব  বীরদের স্মরণ করছি যারা দেশের তরে জীবন দান করেছেন ।





বিশ্ব ইতিহাসে  পুলিশের উৎপত্তি


গ্যাব্রিয়েল মন্টগোমারি এমনই একটি সংস্থার প্রধান ছিল যার মুল কাজ ছিল  সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এবং  সরকারের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্রকারীদের ধরে বিচারের মুখোমুখি করা ।  ফরাসী বিপ্লবের পর ফ্রান্সের রাজা হেনরি দেশের শাসন কায়েম রাখার জন্য সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে এবং সরকারের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্রকারীদের দমন করতে এই বাহিনী গড়ে তোলেন ।  রাজার স্কট-গার্ডের প্রধান মন্টগোমারির অন্যতম মুল কাজ ছিল দৃস্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে  ব্যবস্থা নেয়া এবং তা রাজা হেনরিকে নিজে জানানো। রাজা হেনরীর বিরোধী পক্ষ হিসেবে খ্যাত প্রটেস্টান্ট ও ক্যালভিনিস্ট গোষ্ঠীর অভিযোগ ছিল যে, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্মূল করার জন্যই  সরকার এসব বাহিনীর সৃষ্টি করেছিলেন। ঊন-বিংশ শতাব্দীতে এসে পশ্চিমা বিশ্বে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশবাহিনীর সৃষ্টি হয়। উদ্দেশ্য জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া। বিংশ শতাব্দীতে এসে পুলিশ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮৬২ সালে ইংরেজ শাসনামলে পাক-ভারত উপমহাদেশে পুলিশ  বাহিনী প্রতিষ্ঠা করা হয়। মধ্যযুগীয় সময়ে পুলিশি কার্যক্রম সমপর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়না। তবে ভারত বর্ষের সুলতানি শাসনামলে একটি সরকারি পুলিশি স্তর বিন্যাস লক্ষ্য করা যায়। শহর অঞ্চলে কোতোয়াল পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা দায়িত্বে ছিলেন। মোঘল আমলের পুলিশি ব্যবস্থা সংক্রান্ত তথ্য আইন-ই- আকবরি গ্রন্থে পাওয়া যায়। মধ্যযুগের পুলিশি ব্যবস্থা শের-শাহ শুরী দ্বারা প্রবর্তিত হয় যা সম্রাট আকবরের সময়কালে আরও সংগঠিত হয়েছিল। সম্রাট তার ফৌজদারি প্রশাসনিক কাঠামো তিন ভাগে ভাগ করেছিলেন। 
(১) মীর আদল অর্থাৎ সম্রাটের প্রধান প্রতিনিধি,
 (২) কাজী অর্থাৎ প্রধান বিচারক এবং
 (৩) কোতোয়াল অর্থাৎ বড় বড় শহরের প্রধান পুলিশ কর্মকর্তা। 

এই কোতোয়ালী পুলিশ ব্যবস্থার নামানুসারে বর্তমান রাজধানী ঢাকায় কোতোয়ালী থানা আছে এবং দেশের অনেক জেলা শহরের সদর পুলিশ ষ্টেশনকে ‘কোতোয়ালী’ থানা বলা হয়।  মোঘল আমল পর্যন্ত যদিও একটি সুশৃঙ্খল পেশাদারী ব্রিটিশ পুলিশ সিস্টেম প্রবর্তিত হয়নি। তবুও সাধারণভাবে, এটি প্রতিষ্ঠিত ছিল মুসলিম শাসকদের রাজত্বের সময়ে-এখানে আইন শৃঙ্খলা এবং অপরাধ প্রতিরোধমূলক প্রশাসন অত্যন্ত কার্যকর ছিল।শিল্প বিপ্লবের কারণে ইংল্যান্ডের সামাজিক ব্যবস্থায় অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির ফলে স্যার রবার্ট পিল একটি নিয়মতান্ত্রিক পুলিশ বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। ১৮২৯ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে পুলিশ গঠনের বিল উত্থাপন করেন। এর প্রেক্ষিতে গঠিত হয় ‘লন্ডন মেট্রো পুলিশ’। অপরাধ দমনে এই পুলিশ বাহিনীর সাফল্য ইউরোপ-আমেরিকায় ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলে। ১৮৩৩ সালে লন্ডন মেট্রো পুলিশের অনুকরণে আমেরিকা গঠন করে ‘নিউইয়র্ক সিটি নগর পুলিশ কর্তৃপক্ষ’। ১৮৫৬ সালে ব্রিটিশ সরকার ইষ্ট ইন্ডিয়া কো¤পানীর নিকট হতে ভারত বর্ষের পূর্ণ শাসনভার গ্রহণ করে। এ সময় লন্ডন মেট্রো পুলিশের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে  ব্রিটিশ সরকার ভারতে স্বতন্ত্র একটি পুলিশ ফোর্স গঠনে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ১৮৬১ সালে  ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাশ হয়। এই আইনের অধীনে ভারতের প্রতিটি প্রদেশে একটি করে পুলিশ বাহিনী গঠন করা হয়। প্রদেশ পুলিশ প্রধান হিসাবে একজন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ এবং জেলা পুলিশ প্রধান হিসাবে সুপারিটেনটেন্ড অব পুলিশ পদ সৃষ্টি করা হয়। ব্রিটিশদের তৈরিকৃত এই ব্যবস্থা এখনও বাংলাদেশ পুলিশে প্রবর্তিত আছে।
১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পুলিশ বাহিনীর নাম প্রথমে ‘ইষ্ট বেঙ্গল পুলিশ’ এবং পরবর্তীতে ‘ইষ্ট পাকিস্তান পুলিশ’ রাখা হয়। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত এই নামে পুলিশের কার্যক্রম অব্যাহত থাকে।


তথ্যসুত্র ঃ

‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর অবদান’ ১ম ও ২য় খন্ড
মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র (০১ থেকে ১৫ খন্ড)
‘শহীদ পুলিশের রক্তের ঋণ’ –আবিদা সুলতানা
আবুল ফজল আল্লামীর গ্রন্থ 'আকবারনামা' এর তৃতীয় খন্ড ''আইন ই আকবরী''
বাংলাপিডিয়া 
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য ।

বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৭

ফেবুতে হবু ? যাবি আর কভু ?




নওরীন জাহান নীলিমা হোম ইকোনমিক্সে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে । ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত তাদের মফস্বলের শহরেই পড়েছেন, সেখানে তার বাবা একটা সরকারী অফিসে অফিস সহকারীর কাজ করেন । দুই বোন এক ভাই এর মধ্যে নীলিমা সবার বড় , তার বাবার খুব ইচ্ছে ছেলে মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করবেন , এজন্য তার ছোট বোন যে সামনের বছর এসএসসি পরীক্ষা দিবেন তাকে ৩টি বিষয়ের জন্য ৩ জন শিক্ষকের কাছে পড়ান এবং ক্লাস সিক্সের  ছেলে কে ক্যাডেট এ দেওয়ার জন্য কোচিং করান । ছেলেমেয়ে দের মধ্যে একমাত্র নীলিমা একটু নিরীহ টাইপের কিন্তু নীলিমার ফেস খুব কিউট অদ্ভুত এক ধরনের স্নিগ্ধতা কাজ করে , তাকে বোকা সুন্দরী বললেও ভুল হবে না । কিছুটা ইন্ট্রুভার্ট এই নীলিমাকে এলাকার অনেক ছেলে প্রেম নিবেদন করেছে কিন্তু তাতে তার কোন বিকার নেই, তার এই ধরনের নির্লিপ্ততার জন্য প্রেম নিবেদনকারী ছেলেরা নিজে থেকেই সটকে পড়েছে ।

ঢাকায় নীলিমা তার চাচার বাসায় থাকেন , তার বাবার আপন চাচাত ভাই এর বাসা আজিমপুরে , চাচার দুই মেয়ে স্কুলে পড়েন , চাচা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার অফিসে উচ্চমান সহকারীর চাকুরী করেন ।  নীলিমার বাবা তাই নীলিমার থাকা খাওয়া বাবদ ৩ হাজার টাকা পাঠান সেই চাচার কাছে ।
একবছরের বেশি সময় ঢাকাতে পার হলেও নীলিমা এখনো একা চলতে ভয় পান, বাসা থেকে রিকসায় কলেজে যান আবার ফিরে আসেন ।
প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বার নীলিমার বাবা আর মা নীলিমার মোবাইলে ফোন দিয়ে তার খোজ খবর নেন , নীলিমার মামা সিংগাপুর থাকেন, ভাগ্নির জন্য একটা দামী মোবাইল সেট পাঠিয়েছেন কিন্তু তার বাবা সেই মোবাইল টি হারিয়ে যাবার ভয় এ তাকে ওয়ালটনের একটা স্মার্ট ফোন কিনে দিয়েছেন , এই ফোনে সে ইন্টারনেট ও ব্যবহার করতে পারে ।

ক্লাসে এখনো তার খুব বেশি ঘনিষ্ঠ কেউ হয় নাই , তাই সে ক্লাস রুমে টিচার না থাকলে লাইব্রেরীতে গিয়ে বই পড়েন , লাইব্রেরীতে ফ্রি ওয়াই-ফাই জোন তাই এখানে ভিড় বেশি । নীলিমা দেখেন যে সবাই যার যার মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত , রেগুলার এই সিনারিও দেখতে দেখতে সে নিজেও এখন মোবাইলে ওয়াই-ফাই কানেকশন ও ইন্টারনেট ইউজ বুঝে নিয়েছেন, কিন্তু নিজের মোবাইলে কানেক্ট করার পরেও সে অন্যদের মত এটাতে এত ব্যস্ত হতে পারছে না, গুগলে ঢুকছে, কিছু মুভি আর বলিউডের নায়ক নায়িকা এই তার ইন্টারনেট ইউজ , এর মাঝে সে তার পাশে বসা নিপুন কে জিজ্ঞেস করলো তোমার মোবাইলে কি দেখতে পারি কি নিয়ে তোমরা এত ব্যস্ত ? নিপুন মোবাইলটি এগিয়ে দেয় , সে দেখতে পায় এটা ফেসবুক ।আস্তে আস্তে সে নিপুনের কাছে ফেসবুকের খুঁটিনাটি সব জেনে নেয় ।

 কারণ কয়েকদিন আগে একজন শিক্ষক ক্লাসে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে ১০৫ জন ছাত্রীর মধ্যে তোমরা কতজন ফেসবুক ব্যবহার কর ? ৯৫ জনই ব্যবহার করেন , মাত্র ১০ জন ব্যবহার করেন না, নীলিমা তাদের মধ্যে একজন । তাই সে সিদ্ধান্ত নিল যে ফেসবুকে একাউন্ট খুলবে , এজন্য সে নিপুনের হেল্প নিল, নিপুন তাকে ওর নিজের ল্যাপটপ এনে প্রথমে একটা ই-মেইল আইডি তারপরে ফেসবুকে  নওরীন জাহান নীলিমা নামে একটা আইডি খুলে দিল , তার আগে মোবাইলে নীলিমার একটি ছবি তুলে সেটাকে প্রোফাইল পিকচার হিসেবে দিয়ে দিল , নীলিমা কে সে এড করে ফেলল, নিপুন হয়ে গেল নীলিমার প্রথম ফেসবুক ফ্রেন্ড ।

 এরপরে সে প্রতিদিন লাইব্রেরীতে যায় ফেসবুক ইউজ করার জন্য , নিপুন ক্লাসেই আছে তারপরেও তাকে মেসেজ পাঠায়
– hello
-How are you ?
-what do you do ?
-what meal you have taken in this morning ?



নিপুন উত্তর দেয়
  –f9
 -9thng
 - cl u ltr

নীলিমা মেসেজগুলো বুঝতে পারে না, পরে নিপুন তাকে এই আব্রিভিয়েট গুলো বুঝিয়ে দেয় , নীলিমা তাতে শুধু হাঁসে । এরমধ্যে তার ১০০ এর বেশি বন্ধু যোগ হয়েছে , তার মফস্বল শহরের পরিচিত কিছু মুখ, আত্নীয় স্বজন এবং চেনেন না কিন্তু নিপুনের মিউচুয়াল বন্ধু এমন রিকোয়েস্ট গুলোকে সে একসেপ্ট করেছে । যদিও তার স্নিগ্ধ লাবণ্য চেহারার প্রোফাইল পিকচার দেখে প্রতিদিন হিউজ রিকোয়েস্ট আসে , কিন্তু নিপুন তাকে বলেছে বুঝে শুনে এড করতে না চিনলেও মিউচুয়াল ফ্রেন্ড আছে এমন গুলো এড করতে । এভাবেই সে আরিয়ান খান নামে একজন কে একসেপ্ট করেন ।


আরিয়ান খান, প্রোফাইল পিক দেখলে মনে হবে কোন মডেলের ছবি, ভীষণ হ্যান্ড-সাম এই আরিয়ান খান, সে নীলিমাকে প্রথম মেসেজ দেয়
  –hey pretty
-Wanna be yours
 -Awesome


নীলিমা কিছু বুঝে উঠতে পারছেনা ঠিক কি রিপ্লাই দিবে? কি থেকে কি দিয়ে হাস্যকর না হয় সেজন্য চুপ থাকে ,
অনেকক্ষণ পরে আবার আরিয়ান খান মেসেজ দেয়
–hey pretty
-R u dumb ?
 নীলিমা তখন শুধু বৃদ্ধাঙ্গুলির ছবি সম্বলিত লাইক টি সেন্ড করেন । 


এভাবে প্রায় মাস-তিনেক সময় পার হল , ইতিমধ্যে নীলিমা ফেসবুক বুঝে ফেলেছে , আরিয়ান খানের সাথে তার প্রেম হয়ে গেছে , এখন নীলিমা মেসেজ দেয়
-babu  need a puppy
- wanna hug u
-BRB

নীলিমা ভীষণভাবে ভালবেসে ফেলেছে আরিয়ান খান কে , কিন্তু এখন ও তাদের দেখা হয়নি , মোবাইলেও কথা হয়নি , কথা হয় মেসেঞ্জার এ, সারাক্ষণ চ্যাট আর চ্যাট , নীলিমা এখন শুধু লাইব্রেরীর আশায় বসে থাকে না , সে ইন্টারনেটের প্যাকেজ কিনে পয়সা বাঁচিয়ে, যাতে সে বাসায় ও রাতে ফেসবুক ব্যবহার করতে পারে । আরিয়ানের সাথে সারাক্ষণ শুধু প্রেম ভালবাসা আর আমরা বিয়ের পর এটা করব ওটা করব এসব কথা , কিন্তু নীলিমা এখনো জানেই না যে আরিয়ান কোথায় থাকে ? বাবা মা ভাই বোন কিছুই জানে না, শুধু জানে ওদের বাসা গুলশানে আর সে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ তে ৫ম সেমিস্টারে পড়ছে ।

  তাই আরিয়ানের সাথে দেখা করার জন্য নীলিমা উদগ্রীব হয়ে আছে , প্রতিদিনই বলে কবে তোমার সাথে দেখা হবে?আরিয়ান বলে খুব শীঘ্রই , এভাবে দিন গুনতে গুনতে হঠাৎ আরিয়ান মেসেজ দেয় বাবু আগামীকাল তোমার সাথে দেখা করতে চাই । নীলিমা বলে- পাক্কা ? সে জবাব দেয় পুরাই পাক্কা । আগামীকাল বিকাল ৩ টায় বেইলী রোড সুইস এর সামনে থাকবে , আমি তার আগেই সেখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করতে থাকব। নীলিমা বলে ঠিক আছে বাবু ।

নীলিমার মধ্যে এক অস্বাভাবিক উত্তেজনা ও কাল্পনিক আবেশ কাজ করছে , শুধু মনে হচ্ছে কখন বিকাল ৩ টা বাজবে ? আজ সে অনেক সকালে ঘুম থেকে উঠেছে কিন্তু কলেজে গেল না, চাচীকে বলল বিকালে কলেজের একটা প্রোগ্রামে যেতে হবে তাই এখন আর যাবে না । নীলিমা কলা পাতা রঙের একটা শাড়ী পড়েছে, সাথে এত টাই সাজ যে চাচী তাকে বলেছে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে, সত্যি সত্যি কলেজের অনুষ্ঠান নাকি অন্য কিছু ? নীলিমা লাজুক ভঙ্গীতে শুধু বলে কি যে বলেন না চাচী ।

৩ টা বাজার ১০ মিনিট আগেই সে পৌঁছে গেছে , কিন্তু আরিয়ান কোথায় ? মোবাইল নাম্বার টাও নাই , লগ ইন করে মেসেঞ্জারে ঢুকল ফোন দিবে বলে কিন্তু আরিয়ান অফ লাইন , তার এভাবে একা দাঁড়িয়ে থাকতে খুব বিরক্ত লাগছিল , ৩ টা ২০ বাজে, তখন নীলিমার কান্না পাচ্ছে , ঠিক সেই সময় একটা ছেলে পিছন থেকে হালকা টোকা দিয়ে বলে দিস ইজ আরিয়ান , নীলিমা ঘুরেই কিছুক্ষণ থ হয়ে তাকিয়ে থাকে , কিন্তু ছবির আরিয়ান আর এই আরিয়ানের মাঝে বিস্তর তফাৎ!

আরিয়ান বলল- কি ভাবছ ? এটা কেমনে আরিয়ান হয় তাই তো? সাথে সাথেই ফেসবুকের আরিয়ানের ছবি মোবাইল থেকে বের করে দেখায়, নীলামার মেসেজ-গুলোসহ, নীলিমা শুধু বলে অনেক অমিল , আরিয়ান বলে ফেসবুকের পিক টা আমার মেক আপ সহ , নীলিমা তখন বলল আমি কি বলেছি তুমি আরিয়ান নও, কিন্তু এখন বল আমাকে কেন এত ক্ষণ অপেক্ষা করালে ? আরিয়ান বলছে বাবু তোমাকে নিয়ে মোটর বাইকে ঘুরবো অনেকবার বলেছি, কাল রাতে আমার মোটর সাইকেল চুরি হয়ে গেছে ,তাই মন খারাপ ছিল, আমার মন খারাপ আমার ড্যাড শয়তে পারে না , আজই এবং এক্ষনি মোটর সাইকেল কিনব, চলো , আর আমার এই টুক টুক বউ টাকে নিয়ে সারা ঢাকা শহরে উড়ে বেড়াব।

নীলিমা বলছে বউ মানে ?
তুমি বউ
তোমাকে টুকটুকে বউ এর মত লাগছে বাবু ,
চল আমি আগে মোটর বাইক কিনি তারপরে অন্য কিছু , আরিয়ান নীলিমা কে নিয়ে মগবাজারের একটি মোটর সাইকেলের দোকানে যায় , সেখানে সে একের পর এক বাইক দেখতে থাকে , নীলিমাকে জিজ্ঞেস করে- বউ বলতো কোন বাইক টি কিনব? তোমার পছন্দ যেটা সেটাই কিনব, নীলিমা শুধু বলে যাও আমি কিভাবে বলব, আমি এটা ঠিক বুঝি না, তোমার যেটা ভাল লাগে সেটা কিনো ।

আরিয়ান আর নীলিমা যে শোরুমে সেটার নাম এম এস অটোমোবাইল এন্ড ট্রেডার্স , সে একটা DAYAANG  মোটর বাইক পছন্দ করে কাউন্টারে যেখানে নীলিমা বসা সেখানে গিয়ে বলে বউ ঐটা পছন্দ করলাম, কেমন হবে? নীলিমা বলে ভাল, এরপরে সে কাউন্টারে যার সামনে নীলিমা বসে তাকে বলে ভাই আমি একটু গাড়িটা ট্রায়াল দিতে পারি?
আমার ওয়াইফ তো এখানে বেসেই আছে , কাউন্টারের সেই ভদ্রলোক বললেন শিউর , আপনি ট্রায়াল দিয়ে আসুন আমি ম্যাডাম কে ড্রিংক্স দিয়ে আপ্যায়ন করতে থাকি,
 তখন  বিকাল ৪ টা ,আরিয়ান মোটর বাইক নিয়ে বের হয়ে গেল শুধু যাবার সময় নীলিমাকে বলল- বউ তুমি ১০ মিনিট বসো আমি এসে পড়ব ।


বিকাল  ৫ টা বেজে গেল তাও আরিয়ানের খবর নাই, শোরুমের লোকেরা নীলিমা কে বলছে আপনার স্বামীকে ফোন দেন, কোথায় গেল?
নীলিমা রীতিমত ভয় পেয়ে গেছে , কাঁপা কাঁপা গলায় শুধু বলল আমরা এখনো বিয়ে করিনি আর ওর ফোন নাম্বার আমার কাছে নেই ,
কি বললেন ??এটা কেমনে সম্ভব , আপনি তাহলে উনি যাবার সময় কিছু বললেন না কেন ?
ম্যানেজার বলছেন আমার তো মনে হয় সে আসবেনা, ঠিক আছে আমরা আরেকটু দেখি , সন্ধ্যা ৬ টার সময় ম্যানেজার বলল ঐ গাড়ির দাম ৭০ হাজার টাকা , এই টাকা আপনি দিবেন আর তা না হলে আমরা পুলিশ কে খবর দিব ।


সন্ধ্যা সাড়ে সাত টা , নীলিমার চাচা ও বান্ধবী নিপুন রমনা থানা তে , নীলিমা কে মহিলা হাজত খানাতে রাখা হয়েছে, ওসি সাহেব সব কিছু জেনে তার চাচাকে পুরো ঘটনা বললেন , এখন উপায় আছে ২ টি ,  ৭০ হাজার টাকা  এমএস অটোমোবাইল এন্ড ট্রেডার্স কে দিয়ে দিলে ঝামেলা চুকে যায় আর তা না হলে আপনার ভাতিজি কে জেলে যেতে হবে ।  চাচা ওসির হাত ধরে বললেন স্যার আপনি তো বুঝছেন আমার ভাতিজি প্রতারণার স্বীকার , এরপরে আমরা মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির মানুষ , হঠাৎ করে ৭০ হাজার টাকা কেমনে দিব

ওসি বলল আরে ভাই আমি তো বুঝলাম কিন্তু শোরুম ওয়ালা তো মানতেছে না , চাচা দুহাত মাথায় দিয়ে থানার বারান্দায় বসে পড়লেন, চাচাকে দেখে নীলিমা চিৎকার দিয়ে কেঁদে  উঠলেন, বলতে লাগলেন- চাচাগো আমারে বাচাও, আমি কোন অপরাধ করি নাই, আমি প্রতারণার স্বীকার, চাচা তুমি আমার আব্বা মারে খবর দাও, মায়ের অলংকার বিক্রি কইরা আমারে এখান থেকে নিয়ে যাও ।

রাত আড়াইটার সময় নীলিমার বাবা মা রমনা থানা তে এসে ৫০ হাজার টাকা নগদ আর বাকী ২০ হাজার টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করবেন মর্মে চুক্তিনামা দলিলে সাইন করার পর নীলিমা কে ছেড়ে দেয় পুলিশ ।

আহা! কি নির্মমতা , এভাবেই প্রতিনিয়ত ভারচুয়াল ধোকাতে পা দিচ্ছে হাজার হাজার নীলিমা , যাদের সরলতা কে যাদের বিশ্বাস কে পুঁজি করে এর চেয়েও ভয়ানক কিছু ঘটতে পারে , তাই শুধু ফেসবুক নয় যেকোনো সামাজিক মাধ্যমের পরিচয় প্রণয় গুলো যেন এমন পরিণতিতে না যায় , আমাদের তরুণদের   উচিত
ভার্চুয়াল দুনিয়ার এই হাতছানি ও মোহকে অতিক্রম করা ।

নৈতিকতা সহমর্মিতা সৌজন্যতা বোধ-বিহীন কোন সম্পর্কই সম্পর্ক নয় এটা আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ এই যুব সমাজের ভিতরে যেন প্রোথিত থাকে ।  

(একটি বাস্তব ঘটনার ছায়া অবলম্বনে )

লাদেনেরে করস ফায়ার দিসে আমেরিকার র্যা বে



ভার্সিটিতে পড়ার সময় আমাদের হলের পাশের এলাকায় ওয়াজ হচ্ছিল, ওয়াজ ফরমাইছেন মাওলানা আশেকপুরী ইলিয়াস শাহী খাজে দরবারে আজম ইসমে এসকান্দার আলহাজ হযরত মাওলানা জাফর শাহ  কুতুবপুরী,   হলের নিকটবর্তী হবার কারনে মাইক এ আমরা হল থেকেই সব স্পস্ট শুনতে পাচ্ছিলাম, বরাবরই এসব ওয়াজ মানেই কিছু সুড়সুড়িমুলক কথা বার্তা আর ঢোক গেলান কিছু বিষয় ওয়াজের সাথে জুড়ে দেয়া যাতে করে পাবলিক বেশি বেশি খায় ! আর মাওলানা জাফর শাহ  কুতুবপুরী নাকি  এটার ওস্তাদ । যথারীতি শুরু হল বয়ান বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের পর্দার কথা
-   বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের দেখলে আমাদের খাড়া হয়ে যায় , কি খাড়া হয়ে যায় ? আমাদের শরীরের পশম খাড়া হয়ে যায়
-    জোরে বলেন নাউজুবিল্লাহ !

-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের দেখলে আমাদের পড়ে  যায়, কি পড়ে যায় ?আমাদের চোখের পানি পড়ে যায়,
-    জোরে বলেন নাউজুবিল্লাহ !

ওয়াজের বয়ান শুনে যেখানে আমাদের ধর্মীয় অনুভুতির সৃষ্টি হবার কথা সেখানে আমরা হাসতে লাগলাম । এরপরে গেলেন আরেকটা বিষয় লাদেন , তখন দেশে তোলপাড় অবস্থা প্রয়াত আধুনিক কবি শামসুর রাহমানের উপর হামলা
মাওলানা শুরু করলেন- লাদেনের নাম শুনলে কিলিন্টন জগে জগে পানি খায় আর তার কি কোন ঠেকা যে উনি শামসুর রাহমানের উপর হামলা করছেন ?

বহুদিন পরে আবার আলোচনায় লাদেন,  ২০১১ সালের ২রা মে আম্রিকান বাহিনীর হাতে ধরাশায়ী হয়েছেন এবং প্রান দিয়েছেন,
কেউ বলছেন পাকিস্থান জানে ,আশ্রয় দিয়েছে , আবার কেউ বলছেন লাদেন জীবিত ধরা পড়েছেন , কেউ বলছেন এটা লাদেন না অন্য কেউ এটা আম্রিকান সি আই এর পেচগি ! এ ধরনের নানা তকমা মেশান কথা চলছে

সেই সময়ের কথা দুপুর বেলায় পল্টনে যাব, বাসার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি সিএনজি থামানোর জন্যে , আমি নিরুপায় হয়ে প্রায় দশ মিনিট দাঁড়িয়ে আছি , পাশের ঘুন্টি দোকানে এই এলাকার রিকসা ওয়ালারা দুপুরের খাবারের পর বিশ্রাম নিচ্ছে আর চা খাচ্ছেন, আলাপ বেশ জমেছে, বিষয় লাদেন ,
আমি আগ্রহের সাথে তাদের আড্ডার কথা শুনতে চেষ্টা করছি , একজন বলছেন আহারে ! আম্রার মুসল্মান গোর নেতা আছিল লাদেন, হেরেউ করস ফায়ার দিলো আম্রিকার রেপে, আরেকজন বলছে -রেপ তাইলে আম্রিকাতেও আছে ?

হেই রেপও কি কালা ডেরেস

আইসিসি ট্রফি ১৯৯৭ এবং বিশ্বকাপের মোবারকীয় ভাবনার মাঠ পালানো গরু



১৯৯৭ সাল, বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফি টুর্নামেন্টে প্রতিদ্বন্দিতা করছে কেনিয়ার সাথে, ভীষন উৎকন্ঠা আর উদ্বেগের সাথে প্রতীক্ষা চলছে খেলা নিয়ে , টিভিতে খেলা দেখান হচ্ছে না, তবে রেডিও তে সরাসরি ট্রান্সমিটেড করছে আমাদের দুই সেরা ভাষ্যকার চৌধুরী জাফরুল্লাহ সরাফত এবং খোদা বক্স মৃধা । রেডিও তে আমরা সবাই সজাগ কর্ণপাত করে আছি বাসার পাশের চায়ের দোকানে , এই দোকানে আমরা বন্ধুরা মিলে আড্ডা দেই বাড়ি তে এলেই, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছি, সামনে কোরবানীর ঈদ, ছুটিতে বাড়ি এসেছি, ঠিক সেই সময়ে এই ঐতিহাসিক খেলাটি হচ্ছে,সুতরাং আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের সীমা নেই ।

আমরা থাকতাম কলোনীতে , পিতার কর্মস্থল হিসেবেই এখানে থাকা, কলোনীর ভিতরে স্কুল ,বিশাল মাঠ, মসজিদ, মক্তব সব আছে আর আছে প্রবেশ দ্বারে বিশাল এক আম্রকানন, স্কুলে পড়ার সময় মাঝে মাঝে ভাবতাম পলাশীর প্রান্তরের আম্রকানন বুঝি এই রকমই , ছুটিতে বাড়ি এলেই শুধু ঘোরাঘুরি আর আড্ডা ,বাসায় খাবারের সময় এবং ঘুমের সময় ছাড়া একদন্ডও থাকা হত না, বাসার পাশেই মাঠ আর মাঠের শেষ প্রান্তে ছিল বাবা চাচাদের ক্লাবঘর যার একপাশেই আমাদের সেই আড্ডার স্থান আলমগীর মামুর দোকান, সেই মামু আবার আমাদের বয়সী একাডেমিকভাবেও ইয়ারমেট ছিল, আমরা সিগারেট খেতাম ওর দোকানে খুব গোপনে লুকিয়ে লুকিয়ে পাছে বাপ চাচারা কেউ না দেখে ফেলে, সকলেই সিগারেট খেয়ে শেষের অংশটুকু মামুকে দিতাম আর মামু সুখ টান দিত চোখ বন্ধ করে, চোখ খুলতেই দেখত তার বাবা দাঁড়িয়ে, আর সকলের মাঝে হাসির রোল পড়ে যেত ।
 যথারীতি আজকের এই খেলাশ্রবনের স্থান টিও আলমগীর মামুর দোকান, আর মাঠে বাধা আছে বিভিন্ন জাতের গরু যা কোরবানীর ঈদের জন্য কেনা , সবাই নিজ নিজ গরু গুলোকে বেধে ঘাস খাওয়াচ্ছেন, আর আমরা এই দোকানে বসে বসে ধুম্রটান এবং খেলাশ্রবন করছি, রেডিও তে ভেসে আসছে খোদা বক্স মৃধার সেই চিরচেনা স্বর- আটার সুজি নয়,ময়দার সুজি নয় , এ হচ্ছে মার্টিন সুজি, এগিয়ে আসছেন মার্টিন সুজি ! হাহাহাহা এটা কি ধরনের উপমা বোঝা গেল না 

?খুব শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা চলছে, কেনিয়া প্রথমে বেটিং করে ৫০ ওভারে ২৪১ রান ৮ উইকেটে, স্টিভ টিকোলো করেছে ১৪৭ রান , ভীষন চিন্তিত সবাই , Duckworth-Lewis method এ বাংলাদেশ কে করতে হবে ২৫ ওভারে ১৬৬ রান, সকলেই খুব মনোযোগী খেলার মাঝে এর মধ্যে আমরা দেখতে পেলাম আমাদের এক বন্ধু (দূর সম্পর্কের!) জাহাংগীরের আব্বা মোবারক চাচা মাঠে তাদের ঈদের গরুটি কে ঘাস খাওয়াচ্ছেন, ভীষন peculiar এই মোবারক চাচার জন্য আমরা ঈদের দিনে বলতাম-ঈদ জাহাংগীরের আব্বা ! আমরা কিছুক্ষন পর পর চার ছক্কার কল্যানে চিৎকার মেরে উঠি আর উনি রাগী রাগী চোখে আমাদের দিকে তাকান, উল্লেখ্য যে সেই সময়েও ক্রিকেট এত বেশি পরিমানে জনপ্রিয় ছিল না , অনেকে জানতই না যে খেলা হচ্ছে, পাশেই ক্লাবে বসে অনেক চাচারাই খোশ গল্প করছিলেন,ক্যারাম খেলছিলেন কিন্তু খেলা শুনছেন এমন সংখ্যা খুব বেশি নয় ।

চার ,ছক্কা আর সিংগেলসে একে একে সেই মুহুর্ত এল, খালেদ মাসুদ পাইলটের সেই ত্রাতাবাহী রান টি হবার সাথে সাথেই সবাই এক সাথে হুররাহ দিয়ে চিৎকার আর সাথে বুড়িমার চকলেট বোমের ফটকাবাজ়ি, কিছুক্ষনের জন্যে আনন্দ আর প্রাপ্তির ডামাডোল আর উচ্ছ্বাসের দামামায় মোহিত হয়ে গেল সব, - বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে খেলছে- এই আনন্দে ভাসতে ভাসতে আনন্দ মিছিল আর রঙ্গে রঙ্গিন হতে লাগলাম, সেকি আনন্দ যা বোঝান যাবে না , আহা! কি আনন্দ আকাশে বাতাসে !

সন্ধ্যার দিকে দেখি মাঠে জটলা , কি ব্যাপার ? ঈদ জাহাংগীরের আব্বা আমাদের সব বন্ধুদের ডেকেছেন, আমিও গিয়ে বিড়ালের মত চুপ করে বসলাম, সবাই নিস্তব্ধ- উনি একাই বলছেন। কি লাভ হইছে তোমাগো ? এই যে তোমরা সবাই হাউ হাউ কাউ কাউ করলা বোম ফুটাইলা তাতে কি কেউ তোমাগো দশ টেকা দিছে ? মাঝখান দিয়া তোমাগো বোমের শব্দে আর চিল্লানিতে আমার এত শখের কোরবানীর গরুটা রশি ছিড়া পালাইছে, এই গরু ধরতে আমরা চার জন মানুষ আট মাইল দৌড়াইলাম ,দৌড়াইতে দৌড়াইতে জান শেষ! এখন কও তোমাগো কী বিচার হওয়া দরকার ?

আমি বন্ধু বুলেট, রানা, আজাদ, রুস্তম ,মাহাবূব আমরা সবাই জিহবাতে কামড় দিয়ে আছি হাসিঁ ঠেকাতে ,আমরা বললাম কাকা আমরা এটা ইচ্ছা করে করি নাই, বাংলাদেশের এত বড় একটা খবর তাই আনন্দ আর ধরে রাখতে পারি নাই, উনি বলেন কি হইছে বাংলাদেশের ? আমাগো সবাইরে কি আমেরিকায় পাঠায় দিব নাকি ? তাইলে আর বড় খবর কি? বললাম বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে , উনি বলেন তাতে তোমাদের কি লাভ ? আমরা বললাম আমাদের লাভ কিছুই না তবে আপনার আরেকটা গরু যাতে দৌড় মারে সেই ব্যবস্থা হবে বিশ্বকাপে খেললে, এই কথা বলা মাত্রই আমরা যে যার মত দৌড়ে পালাই আর বলি
বাংলাদেশ জিতে গেল
গরু একটা দৌড় মারল
মোবারকের ঈদ গেল
তাই না দেখে কান্না পেল,

আমরা সবাই হলুস্থুলে
বাংলাদেশকে জিতিয়ে নিয়ে
বিশ্বকাপে সবার মাঝে
প্রানের উত্তাপে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ।