শনিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২০

নি:সঙ্গ পাথরের কান্না

  


বিজন ভাবনা প্রেম যাতনা 

শুনতে পাও পাথরের কান্না 

হলুদ হওয়া সবুজ ঘাসে 

মাটিতে জলে বাতাসে ।


উতলা মন অস্থির 

পরম পিপাসায় চৌচির 

কোমলতা শক্তের ভেতর 

স্নেহ মোহ মায়া-হীন পাথর।


যেন সুনীল সুতনু 

হয়েছে বিবর্ণ রংধনু

পরাগ-রেণু উড়ায় না প্রজাপতি

পাথরের বুকে জলের আর্তি।


হয়নি সবুজটুকু ছুঁয়ে দেখা

নি:সঙ্গ পাথর ভীষণ একা

এতো গল্প এতো দ্বিধা সংশয় 

হত যদি সুখের সাথে একটু পরিচয় ।


নীরবে নিভৃতে প্রেম-কাতর 

একটা বিষণ্ণ পাথর  

কুসুম কোমল বুকে 

শক্ত টুকুই পড়ে চোখে।

থাকুক স্নিগ্ধ আবেশ




মেঘের ছায়ায় কাশফুলের শুভ্রতায়

জোছনার আঙিনায় 

কোকিলের কুহুতায় 

ঘাসফুলের বাসনায় 

থাকুক না একটু রেশ 

মনের গোপন আবেশ ।।


যৌথ ঘর ছিল চিরদিন 

মুগ্ধতায় ভরা রঙিন,

জোয়ারের জলোচ্ছ্বাসে 

হঠাৎ গেছে ভেসে ।

 তবু থাকুক একটু রেশ 

মনের গোপন আবেশ ।।


ভেসে গেছে হৃদয় সবুজ আশ্রয়

ভেসে গেছে বুকে ফোটা নীলপদ্ম,

থেমে গেছে স্পন্দন 

যন্ত্রণায় বিঁধে মন স্তব্ধ ।

থাকুক সম্পর্কের স্নিগ্ধতার রেশ 

মনের গোপন আবেশ ।।

মানব না বারণ প্রেমে পড়বই

 

টুকরো টুকরো গল্প কবিতা 

ভরছে খাতার পাতায় পাতায়, 

চোখ বুজলে আঁধারে মুখচ্ছবিটা

 অনুভূত সদা মোহ মায়ায় ।


প্রেমে পড়ব শুনবো না বারণ 

বুকে ধারণ পরিবর্তন  আচরণ,

প্রেম পড়তে লাগেনা কারণ

শুনবো না বারণ 

ফুল কুঞ্জে ভ্রমরা করো না বিতাড়ণ ।।


অচল পাহাড়ের ভেতর কে দিল জল 

যেন উপচে পড়ছে হৃদয়ের সহায় সম্বল 

প্রেম পড়ার হাজার ছল প্রেমের কলা কৌশল 

কারণ ছাড়া কার্য প্রেমে পড়ব অনিবার্য।


কে তুমি সবুজ বনভূমি উড্ডীন ছায়ার মেঘ 

যে তুমি আকাঙ্ক্ষার অনন্ত আবেগ 

স্বপ্নগুলো এলোমেলো হচ্ছে লাল 

চোখে ভরে চোখ বুনছ নয়নজাল ।।


কল্পনায় দিগন্তের পরিসীমা জুড়ে থাকবই 

থামব না মানব না বারণ প্রেমে পড়বই ,


হৃদয়ের রঙে গড়ব তিলে তিলে 

তোমাকে ছোব আকাশের নীলে,

হাওয়ায় ভাসে ফিরে আসে চোখের কিনারে, 

মানব না বারণ প্রেমে পড়বই বারে বারে ।

শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২০

কাব্যধারা-২



শাপমোচন করো হৃদয় অংগন 

হাতজোড়ে মিনতি চাই আশ্রয় শক্ত বাঁধন 

নারী আর পুরুষ একে অন্যের জৌলুস

পারিনা কেন হৃদয় দিয়ে বুঝতে 

রইবনা যেদিন সেদিন ঠিক খুঁজবে

ভীত যেন সবটাই মৃত নীরব নির্বাক 

নতজানু হয়ে চোখের জলে মুছতে দাও দাগ 

ইতিবৃত্ত টানবনা আর ভুলেছি চিরতরে 

লাল গোলাপ দিলাম বাহুডোরে ধরে।

অনিন্দ্য সুন্দর ফুল



ডাকছে আমায় অদ্ভূত মৌন 

ইশারায় যেন মন মনের কথায়

নাড়া দিচ্ছে ব্যাকুল অজানা ইচ্ছে ,

জানা হয়নি কিছুই তবুও আকাঙ্ক্ষার

মালা গাঁথা অবচেতনে সুন্দরীর মিষ্টি 

নয়নে নয়ন গ্রাস না করেই বশীভূত ।






মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২০

কাব্যধারা -১


শাণিত হচ্ছে বিচ্ছেদে মন সারাক্ষণ 

হাতছানি নিত্য ভাবনা ব্যথার কাহন,

না পাওয়াগুলো আকাংখায় ভরে

পাথরের পরম ছোঁয়া আপন করে

রঙ্গিন সময়ের স্মৃতিরা ডুকরে মরে

ভীষণ কষ্ট সব দুর্বিষহ অনুভব  বিরহ 

নদী তুমি অনন্ত ভালবাসা নও মোহ ।






বৃহস্পতিবার, ২১ মে, ২০২০

বাবাকে লেখা শেষ চিঠি 


তারিখ-২০ শে ফেব্রুয়ারী ২০০৬ খ্রিঃ

প্রিয় বাবা

 তোমার জন্যে অনেক পরে অনেক আগের কথা লিখছি , মনে আছে গত বছরের জুন মাসের কথা, ১৭ জুন রাজশাহী যাচ্ছিলাম আমার মৌলিক প্রশিক্ষনের জন্যে, রাতে তুমি আমাকে বললে আজ কে আমার সাথে থাকবি বাবা ? সেই যে ছোট বেলার মত করে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবি ,আর আমি নানান ধরনের গল্প শোনাব তোর সব প্রশ্নের জবাব দিব ! এখন তুই বড় হয়েছিস,কিন্তু আমার কাছে মনে হয় আমার সেই ছোট্ট বাপ্পী , যে দৌড়ে এসে আমাকে ধরে বলত – বাবা বাববা দানো হাতি টা না বল লাথি মারছে!!!! সেই যে বোল ঝরান ছোট বাপী আজ তুই যাবার আগে আমার কাছে আয় বাবা ।

আমিও সারারাত তোমার বুকে ছিলাম, অনেক কথা হল হ্রদয়ের যত কথা সব ,মনে আছে তোমার বাবা ? আমাকে বললে যে আমাকে ছুয়ে বল যে – কোন দিন মানুষের সাথে জুলুম করবিনা ,দুঃস্থ অসহায় মানুষ কে ভালোবাসবি আর তাদের বিপদে এগিয়ে যাবি – আমাকে কথা দে , আমিও যথারীতি কথা দিলাম বললাম –বাবা তোমার রক্তই তো আমার শরীরে বহমান ,এই রক্ত দূষিত হয়ে যাবে না , এই রক্ত তোমার সত্তাকেই লালন করবে তুমি নিশ্চিত থাকো
,আমি তোমাকে ছুয়েই কথা দিলাম ।পরের দিন সকালে রওনা দিলাম ,তুমি আমাকে এগিয়ে দিলে না পাছে আমি মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ি সেই কারণে ।

 “সহসা কার স্নেহাস্পর্শে চমকি উঠি।
 সেই নির্ভার কণ্ঠস্বর, সেই আশ্বাস বানী।
 বলছে; আজ তৈরি তুমি, বাবা আজ তুমি।   
 এমনি করেই সকল ঝড়ে,
 সকল দুর্যোগ সয়ে সন্তানেরে দাও পরম নির্ভরতা।   পুরুষোত্তম তুমি, তুমি বাবা।।
 বহুদিন পড়ে আজো শুনি সেই ধ্বণি।
 আজো স্নেহাস্পর্শে তার শিহরিত হই।
 চিৎকার করে বলি, বাবা পুরুষোত্তম তুমি”


শুরু হল নতুন এক জীবন ,ভোর পাচ টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত সময় কিভাবে চলে যায় বুঝতে পারি না , ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠেই পিটি ড্রেস পড়ে মাঠে হাজির , এক চক্কর দৌড় এরপরে পিটি টেবিলের ক্রমিক শুরু , এক চক্করেই দুই কিঃমিঃ হয়ে যায় এত বড় মাঠ , এক ঘন্টা পরে রুমে ফিরেই ৩০ মিনিটের মধ্যে নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরে আবার মাঠে হাজির , আবার এক চক্কর এরপরে ড্রিল শুরু , এটা চলবে দুই ঘন্টা , এরপরে রুমে এসে তাড়াহুড়া করে গোসল এবং ইউনিফর্ম পরে নাস্তা অতঃপর ক্লাস ,একটু আলসেমি করলেই বিট মিস হয়ে যাবে, সকাল দশটা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত ক্লাস , ক্লাসে গিয়েই সবাই ঘুমিয়ে পড়ত ক্লান্তির কারণে , দুপুর ১ টা থেকে ২।৩০ পর্যন্ত ব্রেক , এই সময় একটু বিশ্রাম নেয়া আর পরিবারের সাথে কথা বলা,এরপরে বিকাল ৩ টায় আবার মাঠ আবার চক্কর আবার ড্রিল চলত ৫টা পর্যন্ত , এক ঘন্টা ব্রেক দিয়ে সন্ধ্যা ৬ টা থেকে আবার নির্ধারিত ড্রেসে নাইট ক্লাস চলত ৮ টা পর্যন্ত , রাত ৮ টার পরে ডিনার এরপরে বিশ্রাম ,এত হাড়ভাংগা খাটুনির পরে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলেই ঘুম আর এক ঘুমে ভোর ,আর ভোর থেকে আবার সেই একই নিয়মের যান্ত্রিক নিয়মানুবর্তিত জীবন, প্রতিদিন ৬ কিঃমিঃ দৌড়াতে হত আর শরীর থেকে ২/৪ কেজি ঘাম ঝরত , প্রথম তিন মাস কোন ছুটি নেই ,বাইরে যাওয়া নেই একেবারেই বন্দী জীবন ।


 এরমাঝে বাবা তুমি অপেক্ষায় থাকতে কখন দুপুর ২ টা বাজবে আর কখন রাত ৯ টা বাজবে কারণ এই দুই সময়ে তুমি আমাকে ফোন দিতে । প্রতিদিনই তোমার ফোন থাকত , এভাবে চলতে চলতে আমি ট্রেনিং এর সাথে মিশে গেলাম। চেহারার দিকে তাকালে হাসি বের হয় কালো চোয়াল বসে গেছে ,এই চেহারা বাবা মায়েরা দেখলে সত্যি কাদবেন ! তিন মাস পরে মাত্র দুদিনের ছুটিতে বাড়ি এলাম ,মা আমাকে দেখে কেদেই ফেলল আর তুমি শুধু বুকে চেপে ধরে থাকলে কিছুক্ষন, এই দুদিন বেশি কথা বলা হয় নাই তোমার সাথে ,দুদিন কেটেছে ঘুমিয়ে আর হাত দিয়ে ভাল করে পেট ভরে খেয়ে খেয়ে। ট্রেনিং এ খেতে হত কাটা চামচ দিয়ে তাই হাত দিয়ে খাওয়া টা ছিল খুব লোভনীয় ।

এভাবেই দেখতে দেখতে অনেক গুলো মাস কেটে গেল , ২০০৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী ,যথারীতি প্রতিদিনের মত প্রশিক্ষন শুরু হয়েছে ,সারা দিন একই ভাবে সব গুলো ক্লাস এবং মাঠের কাজ শেষ করে সন্ধ্যায় ডরমিটরীতে বসে বিশ্রাম ও রাতের ক্লাসে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছি, এমন সময় ফোন বেজে উঠল – তোমার হার্ট এটাক হয়েছে মেডিকেলের ভাষায় যা কার্ডিয়াক এরেষ্ট নামে পরিচিত , আমাকে দ্রুত ঢাকা চলে আসতে বলা হল , আমি শুনে কিছুক্ষন চুপ হয়ে বসে থাকলাম আর মনে হচ্ছিল যে আকাশ ভেংগে আমার উপরে পড়ে যাচ্ছে,আমি ট্রেনিং একাডেমীর প্রিন্সিপালের সাথে যোগাযোগ করে ইমার্জেন্সি ছুটি যোগাড় করলাম, আর হাউমাউ করে কাদতে লাগলাম আর সহকর্মী হায়াত কে বলতে লাগলাম যে ভাই আমার আব্বা কি বেচেঁ আছে ?

আমাকে সান্তনা দেবার দরকার নাই প্লিজ ভাই আমি শুনে ভেংগে পড়ব না ,আমাকে বলেন যা হয়েছে তা মেনে নিতে আমি মানসিক ভাবে প্রস্তুত ,হায়াত ভাই আমাকে বললেন সে রকম কিছু না ,তোর মামার সাথে কথা হয়েছে , উনাকে জাতীয় হ্রদরোগ ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে , এরপরে আমি ও কয়েকবার যোগাযোগ করার পর আমাকে আমার স্ত্রী বলল যে বাবা ভাল আছেন , অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে ,এখন ঘুমাচ্ছেন, আমি বললাম আমার সাথে একটু কথা বলিয়ে দাও, সে বলল –ডাক্তাররা এখানে মোবাইল ফোন নিয়ে আসতে দিতে চাচ্ছে না , মনে মনে ভাবতে থাকলাম যে এর নামই বোধ হয় অভাগা !

আজ দুপুরে বাবা তুমি যখন ফোন দিয়েছিলে তখন আরেকটা নাম্বারে কথা বলছিলাম, বাবা তুমি আমার কল টা ওয়েটিং পেয়েছ, পরবর্তীতে মাঠে যাবার সময় হওয়াতে তখন আর কল দেয়া হয় নাই । আহারে! বাবা তুমি আমায় কি বলতে চেয়েছিলে? সারদা পুলিশ একাডেমী থেকে বানেশ্বর এলাম সন্ধ্যা ৭।৩০ টায়, এরপরে কোন বাসে আর টিকেট পাচ্ছি না , টিকেট পেলাম রাত ১১টার হানিফ এন্টারপ্রাইজের বাসে। এরমধ্যে আবার যোগাযোগ হল স্ত্রীর সাথে বাবার কি অবস্থা ? বললেন একটু ইম্প্রুভ করেছে তুমি সরাসরি বাস থেকে নেমে হ্রদরোগ ইন্সটিটিউটের আইসিইউ তে চলে আস,

রাত ১১ টায় বাসে উঠলাম, ১২।৩০ টার দিকে বাস যখন নাটোর ক্রস করছে তখন আমার স্ত্রী আমাকে আবার ফোন দিয়ে বললেন- তুমি রাতে খেয়েছ, না খেলে খেয়ে নাও , আব্বা পুরোপুরি সুস্থ, আমরা আব্বা কে সাভার নিয়ে যাচ্ছি , তুমি ঢাকায় না এসে সাভারে নেমে পড় আমরা সবাই সাভারের বাসায়, মনে যত টা দুঃখ বিষাদময়তা গ্রাস করেছিল তা কিছুটা হলে ও লাঘব হল, সারা রাস্তা ভাবছি বাবা আমাকে হঠাৎ দেখে না জানি কত খুশি হবেন , কত কত কথা জমে আছে আমার এবং তার, পুলকে আনন্দে মন টা নেচে উঠছিল উচ্ছ্বাসে, কিন্তু রাস্তা আর শেষ হয় না , ভোর ৫ টার দিকে সাভারে নামলাম, পুলিশের একটা পিক আপ অপেক্ষা করছিল ,তাকে পরিচয় দেবার পরে আমাকে উঠতে বলল বাসায় পৌছে দেবার জন্যে, ২ কিঃমিঃ রাস্তা মাত্র, বাসার সামনে এসেই দেখি অনেক মানুষ , আত্বীয় স্বজন দের গাড়ী ,এত রাতে এসব কেন ?দরজার সামনেই দেখি বাবা শুয়ে আছেন লাশ হয়ে !

বাবা তুমি আমাকে এভাবে ফাকি দিলে ,এভাবে ছেড়ে গেলে আমাকে ! মৃত্যুর কয়েক দিন পরে বাবার পরিধেয় কাপড় চোপর গুলো বুকে নিয় শুয়ে আছি , প্যান্টের পকেটে মানিব্যাগ , ব্যাগটা খুলে দেখি এর ভিতরের পকেটে একটা পাসপোর্ট সাইজে ছবি , বের করে দেখি আমার একটা ছবি। বাবা তুমি সত্যিকারের একজন বাবা এবং সত্যি তুমি আমায় অনেক ভালবাসতে , তোমার এত ঋন আমি কিভাবে শোধ করব ? এতটা দ্বায়গ্রস্ত আমাকে কেন করলে বাবা ?

প্রীতিমুগ্ধ
তোমার হতভাগা ছেলে 


 উৎসর্গ – আমার মহান পিতা মরহুম মোঃ নুরুল ইসলাম দেওয়ান কে , যিনি একজন সত্যিকারের সাদা মনের মানুষ ছিলেন, ২০০৬ এর ২০ ফেব্রুয়ারী তিনি আমাদের ছেড়ে গেছেন । 

বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২০

উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে


চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানার রামপুর গ্রাম, এই গ্রামের অধিবাসীরা বেশির ভাগ থাকেন বিদেশে আর ঢাকায়। কালে ভদ্রে তারা গ্রামে আসেন। এই গ্রামে চৌধুরী বাড়ি আর খান বাড়ি নামে দুটি প্রসিদ্ধ পরিবার আছে। এই দুই পরিবারের মধ্যে যুগ যুগ ধরে বিরোধ। এই দুই পরিবার তাদের নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি বজায় রাখতে দুই পক্ষ যার যার অধীনস্থ গুন্ডা ষণ্ডা পুষতে থাকেন। রুবেল নামের একজন মাস্তান ও অতিশয় খারাপ ব্যক্তি কয়েক বছর চৌধুরী পরিবারের আবার পরের কয়েক বছর খান পরিবারের হয়ে কাজ করেন ডিগবাজি দিতে ওস্তাদ এই ডিগবাজ মারুফ ইসলাম রুবেল। এই মাস্তান রুবেলের জীবন যাপন খুব অস্পষ্ট ও রহস্যে ভরা।

অধিকাংশ সময় তিনি গ্রামের বাইরে ঢাকায় থাকেন, দামী গাড়ি নিয়ে বাড়িতে আসেন । গ্রামে তার আত্মীয়  স্বজন কেউ থাকেনা। তার বাবা ইন্তাজ মিয়া শিপ ব্রেকিং শ্রমিক ছিল মারা গেছেন আরো ১৫ বছর আগে। মা সাফিয়া বানু তাঁর সাথে ঢাকার রামপুরা তে থাকত কিন্তু তিনিও বছর পাঁচেক আগে গত হয়েছেন। রুবেলের বয়স ৪৬, বিয়ে করেছেন ৩টা, সন্তান  আছে প্রথম দুই ঘরে দুইজন। তারা কেউ এই রামপুর গ্রামে থাকেন না। তবে মাঝে মাঝে রাত বিরাতে রুবেল তাঁর সাঙ্গপাঙ্গ সহ গ্রামে আসেন তাঁর পৈত্রিক ভিটায় একজন কেয়ারটেকার থাকেন সেখানে এসে উঠেন ভুড়িভোজ সেরে আবার চলে যান। প্রায়শ তিনি গরু জবাই দিয়ে মা বাবার জন্য দোয়া পড়াবার জন্য মেজবান এর আয়োজন করেন। এলাকাবাসীর কাছে তিনি দানবীর ও বিত্তশালী হিসেবে বেশ পরিচিত। তার সাথে স্থানীয় থানার অফিসারদের সাথে খুব দহরম মহরম, থানার কোন অনুষ্ঠানে থাকলে রুবেল লাখ টাকার নিচে কোনদিন টাকা দিয়েছে এমনটা হয় নাই।

 (২)
 ২০০৬ সালের ৮ নভেম্বর, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়াতে এক রাতে ছয়টি কাভার্ড ভ্যান মিসিং। সিগমা এপারেলস, অরুনিমা গ্রুপ এবং সাদমান গ্রুপের এই ছয়টি কাভার্ড ভ্যান শিপমেন্টের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে যাচ্ছিল। গভীর রাতে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে অস্ত্র দেখিয়ে ড্রাইভারদের চোখ বেঁধে তাদেরকে গাছের সাথে বেঁধে রেখে এই ছয় কাভার্ড ভ্যানের মালামাল লুট করা হয়। সব মালামাল গুলোই গার্মেন্টস আইটেম। এই দুধর্ষ ডাকাতিতে উপর মহলে সাড়া পড়ে গেল। স্বরাস্ট্র মন্ত্রী, বিজিএমই, আইজিপি সবাই উদ্বিগ্ন এবং পুলিশ সুপার মুন্সিগঞ্জের উপর সব প্রেশার একসাথে আসতে লাগল। চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা এসপি শহীদুল্লাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেন।

পুলিশ সুপার এই ছয় জন ড্রাইভারের মোবাইল ফোনের গত ১০ দিনের সিডিআর(কল রেকর্ডস) আনতে বললেন এবং তাদের কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যেতে বলেন। কল রেকর্ডস বিশ্লেষণ করে একদিন পরেই ঢাকার ডেমরা থেকে এই ঘটনার প্রধান হোতাকে গ্রেফতার করা হল, তার নাম পরিচয় জিজ্ঞেস করার পর তিনি জানান – নাম- আসলাম হোসেন জনি, বয়স -৪৬, পিতা – মরহুম বেলায়েত হোসেন, মাতা- মরহুম হনুফা বেগম, গ্রাম- রামপুর, থানা- সীতাকুন্ড, জেলা – চট্টগ্রাম। পেশা- রোড ডাকাতি করা, প্রতি তিন মাস পর পর তার নিয়ন্ত্রিত বাহিনী এমন একটি করে ঘটনা ঘটায় আর লুটকৃত  মালামাল আরেকটি সিন্ডিকেটের দ্বারা কিছু লোকাল মার্কেট আর কিছু দুবাই এর মার্কেটে পাঠান। এভাবেই তার সংঘবদ্ধ ডাকাতির গ্যাং এবং লুট করা মালামালের সিন্ডিকেট নিয়ে বছরের পর বছর এই ডাকাতি ব্যবসা(!)করে জনি এখন কোটি কোটি টাকার মালিক।

 (৩)
 চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ সব কিছু শুনে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে এই কুখ্যাত ডাকাতের সব কথা সত্য নাও হতে পারে, যে এই ধরনের দুধর্ষ ঘটনা ঘটাতে পারে তার কোন তথ্য যাচাই বাছাই ছাড়া নেয়া যাবে না। এজন্য তিনি মামলার আইও কে নির্দেশ দিলেন যে এই ডাকাত জনির একটা ছবি তুলে ই/এস(ইনকোয়ারী স্লিপ) এর সাথে সেই ছবি দিয়ে সীতাকুন্ড থানাতে পাঠাতে।  নাম- আসলাম হোসেন জনি, বয়স -৪৬, পিতা – মরহুম বেলায়েত হোসেন, মাতা-মরহুম হনুফা বেগম, গ্রাম- রামপুর, থানা- সীতাকুন্ড, জেলা– চট্টগ্রাম। পেশা-  ডাকাতি করা, এর পিসিপিআর (প্রিভিয়াস কনভিকশন ও প্রিভিয়াস রেকর্ড) যাচাই অনুসন্ধান করত দ্রুত প্রেরন করার জন্য ইএস প্রেরণ করা হল। এক সপ্তাহ পরে জবাব আসে – উল্লেখিত নাম ও ঠিকানা সঠিক, ঊল্লেখিত ব্যক্তির নামে ডাকাতি ও খুন সহ মোট ৪টি মামলার ওয়ারেন্ট রয়েছে তিনি দীর্ঘকাল ধরে পলাতক। তবে ছবিতে উল্লেখিত ব্যক্তির নাম ঠিকানা এটা নয়। ব্যতিক্রমী ভাবনার মানুষ পুলিশ সুপার শহীদুল্লাহ খুব আশ্চর্য হলেন যে ছবির ব্যক্তি সেই ব্যক্তি না, এর মধ্যে রিমান্ডে আনা হল সেই হোতা ব্যক্তি কে, রিমান্ডে তিনি খুব খুব লোমহর্ষক ও শিউরে ওঠার মতো তথ্য দেন।

 (৪)
 তার নাম - মারুফ ইসলাম রুবেল পিতা- মরহুম ইন্তাজ মিয়া মাতা-মরহুম  সাফিয়া খাতুন গ্রাম- রামপুর , থানা – সীতাকুন্ড জেলা – চট্টগ্রাম । সে এই পর্যন্ত যতবার ধরা পড়েছে সব যায়গায় সে নাম বলে- - আসলাম হোসেন জনি, বয়স-৪৬ , পিতা– মরহুম বেলায়েত হোসেন, মাতা-মরহুম হনুফা বেগম, গ্রাম- রামপুর, থানা-সীতাকুন্ড, জেলা– চট্টগ্রাম। এই নামে তাদের প্রতিবেশি একজন সত্যি আছেন যারা ঢাকায় থাকেন এবং কোন দিন জনি নামের ব্যক্তিটি জানেও না যে তার নামে ৪টি ওয়ারেন্ট পেন্ডিং আছে। এরপর সেই কুখ্যাত ও দুধর্ষ ডাকাত সর্দার রুবেল সব কিছু উল্লেখ অরে কার্যবিধি ১৬৪ ধারা অনুযায়ী স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দেন। তার দেওয়া তথ্য লুন্ঠিত মালামালের ৮০ ভাগ উদ্ধার হয়।

 পুলিশ সুপার এরপরে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে একটি চিঠি লিখেন – ‘’ই/এস এর সাথে চাহিত ব্যক্তির ছবি অবশ্যই সংযোজন করতে হবে, তাহলে আর কোনো ব্যক্তি এমনভাবে উদোড় পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে দিতে পারবেন না এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য এটি সহায়ক হবে। 

সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

রঙ শুধু অবয়ব





রঙ টারে কেন ভাবো সব
রঙ শুধু অবয়ব ,
রঙ কে পেতে চাইলে তুমি বোকা
কাছে টেনে নিয়ে তোমায় দিবে ধোঁকা ।

চিনি সাদা লবণ সাদা
একই রকম দেখতে ধাঁধা ,
না চিনলে চিনি নোনা
পিতল হয় সোনা ।

সাদা চিনি সাদা লবণ
তবুও ভোলা মন ,
শত্রু কে ভাবে মিতা
বোঝেনা মিঠা আর তিতা ।


একটা প্রেমের সংগীত





একটা  প্রেমের সংগীত
এতে আনন্দ ধারা আছে নিহিত ,
জীবন শুধু  তুচ্ছ অল্প
তোমার আমার গল্প ।।

কিছু হারান কিছু পাওয়া
জীবন মানে আসা যাওয়া
তবু চুরি করতে হয়
জীবন থেকে সময় ,

কেউ নদীর স্রোত
 কেউ নদীর  কিনারা
পাশে  অবলম্বন অবিরত
 অসহায়ত্বের সাড়া ।

চোখেতে মহাসাগর অতল
ভরে আছে তাতে আশার জল
ঝড় আসে ঝড় চলে যায়
থামিয়ে রাখার নাই উপায় ,

ঠেকাতে অক্ষম
প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম ,
মেঘের ঘর্ষনে আসে বিদ্যৎ
শেষ হয় করা যায় না মজুত ,
থাকে তার ছায়া
থাকে শুধু মায়া
হয়ে থাকে দাগ
শুধুই ছায়ার ভাগ ।

Inspired by Anondo Santosh




বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

মুজিববর্ষের ওয়াদা পাশে পাবে সদা




মুজিববর্ষের অঙ্গীকার
পুলিশ হবে জনতার 
মুজিববর্ষের প্রতিশ্রুতি
  বাড়বে সেবার গতি ।

দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন
 চিরায়ত  প্রথা  গাঁথা ,
জনবান্ধব আইন
 সবাই  সমান দিবে পেশাদারিত্বের প্রমান ।

নিজ গৃহে আপনজন যেমন 
বিপদে মানুষের সাথে  তেমন,
বিপদে পাশে সদা 
 পুলিশের এই  ওয়াদা, 

রাত অথবা দিন  
পুলিশের সেবা নিন , 
 শ্রদ্ধা সম্মান  বাড়বে সমাজে 
পুলিশের নাম  হবে ভাল কাজে 

 দ্রুত সেবা দেবার অভিনব নানান রাস্তা
বাড়ছে পুলিশের উপর সকলের আস্থা 

মুজিববর্ষের ওয়াদা
 পুলিশ হবে মনেতে সাদা ,
ঘুচাবে মন্দ কালো
 থাকবে যা শুধুই ভাল 

শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

তুমি ভাগ্যলিখন



তোমাকে বিশ্বাস করা ছিল ভুল
তবুও হৃদয় জুড়ে সবটুকু দিয়ে,
গেছি একটু একটু এগিয়ে
 শুধু তোমার জন্যই ব্যাকুল ।

তুমি সবচেয়ে আপন
তুমি ভাগ্যলিখন
তুমি সেই ধন দৌলত
অর্জন করে যা করেছি হেফাজত ।

তোমার জন্য অসীম ত্যাগ
চাওয়ার চেয়ে বেশি
ফিরে ফিরে আসি
তোমায় দিতে সবটুকু অনুরাগ ।

পেয়ে তোমায় পেয়েছি সবটুকু আশ্রয়
অথচ ব্যথায় ভরে গেছে হৃদয়,
নেই একটুও অবশিষ্ট
থেকো এই মোহময় আবিষ্ট,

যতই  মন্দ হোক অদৃষ্ট
কথা দাও শক্ত করে হাত ধরে ,
অসহনীয় বেঁচে থাকা তুমিহীন
আমায় ছেড়ে যাবেনা কোনদিন ।

Inspired by Mithoon Sharma .

চোখের নিচে কালো দাগ




ভাবনা পিছে বলে থাক
মন  বলে চলে যাক
আশা যেন নির্বাক  
চোখের নিচে কেন  কালো দাগ ।

দুঃসহ এই দীর্ঘ রাত্রি
 অর্থবহ অনিবার্য সত্যি
রাত কাটে নির্ঘুম
নিশাচর পাখির ধুম ।

পুড়লে কি পাই খুঁড়লে কিছুই নাই
যতটুকু পুড়ে ঠিক তাই ততটুকু জুড়ে শুধু ছাই ,
দগ্ধ সময়ের হয় না ভাগ
চোখের নিচে কালো দাগ ।

যে পোড়ায় সে তো জ্বলে না জ্বালায়
যে নেভায় সে তো থাকেনা পালায় ,
চোখের ভিতর কালো পাখির ঝাঁক
পাখির সাথে উড়তে চোখের নিচে কালো দাগ ।




বুধবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০২০

পিটুইটারির খেলা





বেঁচে থাকি
 নিজেকে দিয়ে ফাঁকি
অসময়ে রাত হয়
মনে ভরাডুবি পরাজয় ;
দুরারোগ্য এক অসুখ
ভাঙ্গল যে বুক ।

জরিয়ে থাকা মিথ্যার আচল
ছুলেই রঙ বদল,
চোখের কোণে অশ্রু কাজল
বুঝতে দেয়না আসল নকল ।

 জানি দিনগুলো
ধোঁকা আর মিছে ছিল,
সবটুকু অপ্রেম চোখে তার
বুঝিনি সে ছিল এত নির্বিকার ;

 পিটুইটারির খেলা
 ভেবে ভেবে ছলা কলা,
 ভাবি প্রেম তারে
 যে ছিল মনের অন্তরায়
  মন মরে যায় 
 বুক ভেঙ্গে যায় 
 তীব্র কঠিন নীল যন্ত্রণায় ।

মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২০

ডাঃ রাকিবুল ইসলাম লিটু দীপালোক অনির্বাণ





ঝাল মুড়ি ভালবাসা
পকেটের পয়সাতে
কিনে রোগীর আরোগ্য  আশা ,
উপাধি অতি সামান্য অসামান্যের জন্য
মানুষের হৃদয় জয় সামান্য নয়
গরীব দুঃখীর জন্য  ভালবাসা অবিরাম
মানবতার জন্য  সংগ্রাম
কে  দিতে পারে  এমন আকার
গরীবের ডাক্তার গরীবের ডাক্তার

মরে গিয়ে আবার জন্মে
হৃদয় ছোঁয়া সব কর্মে
সবুজ বৃক্ষ হয় কয়জনে
শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে বাঁচে
থাকে মানুষের কাছে
মানুষের মনে মনে ;

 সেই নামের শব্দগুলো রোজ
অসহায় মানুষেরা করছে  খোঁজ
রাকিবুল ইসলাম লিটু
 শুদ্ধ আত্মার নতুন মাত্রা
যুগ যুগ বাঁচে  মানবতার যাত্রা
নদী মাতার মত তিনি বহমান
চির অম্লান কর্মে  মহান ;

আজ তিনি পাশে নেই
 তবুও যেন আছে
বসে তিনি ঠিক আমার কাছে ;
সমবেত সকলের হাত চোখে
স্মরণের আনন্দ আর শোকে ;

রাকিবুল ইসলাম লিটু দীপালোকে অনির্বাণ
এমন মানদ দরদী যুগ যুগ করি সন্ধান,
 আজ আমি মুগ্ধ আজ  সবচেয়ে প্রীত
তোমার বন্ধু হয়ে  হলাম যে সম্মানিত 





শনিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২০

অদম্য নারীর গল্প – একটি সত্যিকারের জীবন যুদ্ধ ও একজন আসমা আরা রুচি







পুরাণ ঢাকার  বংশালের সাত রওজা এলাকা , এখানে গলির মাথায় একটি পাঁচ তলা বাড়ি , এই বাড়ির মালিক বড় মসজিদের ইমাম মাওলানা সাকের উদ্দিন , তার মেয়ে ছেলে কে নিয়ে এই বাড়িতে থাকেন , যৌথ পরিবার বলা যায় মেয়ের জন্য টি ফ্লাট এক মেয়ে বিদেশে থাকেন , আর ছেলেদের একটি করে ফ্লাট দেয়ার পর বাকী একটা তে বড় ছেলে ছেলের বউ সহ মাওলানা সাহেব থাকেন

 মাওলানা সাহেবের বড় মেয়ের এক ছেলে  এবং  তিন মেয়ে বড় ছেলে কোরানের হাফেজ টাইটেল পাস  ইরফান হাসান,  স্ত্রী সন্তান নিয়ে সৌদি আরবের মদিনাতে থাকেন এবং সেখানে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী করেন ।এরপরে  মেয়ে রেশমা আরা কচি  জগন্নাথ অর্থনীতি তে অনার্স ফাইনাল ইয়ার , তারপরে হাসনা আরা সুচি  রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ইডেনে দ্বিতীয় বর্ষে  অনার্স পড়েন আর একেবারে ছোট মেয়ে  আসমা আরা রুচি  বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে এখন ভর্তি শেষ হয় নাই


ইরফান , কচি ,সুচি এবং রুচি  তাদের বাবা  পানি উন্নয়ন বিভাগের  স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন , চাকুরীজীবন কেটেছে দক্ষিণ অঞ্চলের  বিভিন্ন জেলাতে সেই সূত্রে তার ছেলে মেয়েদের   একটা বড় সময় কেটেছে  মফস্বল শহরে বড় মেয়ে রেশমা আরা কচির  একাত্মা বান্ধবী হচ্ছে  দোলা দত্ত , ধর্মের তফাৎ ছাড়া তাদের আর কোন তফাৎ নাই, সারাক্ষণ তারা একসাথে ,  দোলা দত্ত  কে হঠাৎ করে কেউ দেখলে ভাববে যে সে কচিদের ফ্যামিলির মেম্বার

দুই পরিবারের এমন ঘনিষ্ঠতা সবাইকে মুগ্ধ করত
দোলা দত্ত রা এক ভাই এক বোন দোলার  ছোট ভাই  রাজীব দত্ত  কচির  মেজ বোন সুচির  বয়সী
এভাবে দুই পরিবারের মিথস্ক্রিয়ায় পূজা পার্বণ ঈদ সব খানে তাদের পারস্পরিক বন্ধন খুব গাড় ছিল


এভাবেই দিন যেতে যেতে  রুচি  ভর্তি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন  বিভাগে সময়ের পরিক্রমাতে রুচি  তার বড়  আপুর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী দোলার ছোট ভাই রাজীবের সাথে প্রেমের বন্ধনে জড়িয়ে পড়ে যত দিন যায় তাদের এই প্রেম আরও গভীর হতে থাকে
  এভাবে চলতে চলতে একদিন তাদের প্রেমের বিষয়টি   দুই পরিবারই জেনে যায়  তখন  রুচি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে ,  এমন চাপের মুখে তারা দুইজন অতি আবেগের বশে পালিয়ে বিয়ে করে ফেলে 
যেহেতু তারা দুইজন দুই ধর্মের আর রাজীব ধর্ম পরিবর্তন করবেনা তাই তারা হিন্দু রীতিতে মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করে , এই খবর শুনে রুচির রক্ষণশীল  পরিবার তাকে ত্যাজ্য ঘোষণা করে
রাজীব আর রুচি আজিমপুরে একটা ছোট বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করে , রুচি হল ছেড়ে দেয় তখন, এক বছরের মধ্যে তাদের একটি ছেলে সন্তান হয় , কিন্তু রাজীব এতদিনে যেমন করে আচরণ করত এখন তা ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে , তার বিশাল ব্যবসা বলেছিল আসলে তা তার দুলাভাই এর , প্রকৃত অর্থে সে বেকার , এই অবস্থায় ছেলের খরচ রুচির খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছিল ওদিকে  রুচির বাসা থেকেও কোন সাপোর্ট ছিল না ,

রুচি টিউশনি শুরু করল , ছেলে কে নিয়ে পড়াতে যেত এমনকি ভার্সিটিতেও ছেলে কে নিয়ে যেতে হত , শুরুতে এটা নিয়ে বিভাগে কথা উঠলেও পরবর্তীতে সবাই এটা কে মেনে নেয় , ছেলে মায়ের সাথে নিয়মিত ভার্সিটিতে যায়, রাজীব  ইদানীং তার বাসায় থাকছে রুচি কে একা একাই বেশি সময় আজিমপুরের বাসায় থাকতে হয়

রাজীব  মূলত বেকার কিন্তু সে আগে যা বলেছিল তা ছিল মিথ্যা , মেয়ের এমন স্ট্রাগল দেখে রুচির  নানা বাবা একটা প্রস্তাব দিল যে রাজীব  ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করুক তাহলে  আমরা তোমাদের মেনে নিবো।  রাজীব  শক্তভাবে বলে জীবনেও সে মুসলমান হবে না বরং রুচি  কে সে হিন্দু বানিয়ে বিয়ে করেছে , এমন দোটানা আর সম্পর্কের অবনতি তে এক পর্যায়ে রুচি  ডিভোর্স চায় কিন্তু রাজীব  বলে যে হিন্দু আইনে এটা সম্ভব না রুচি  আইনের আশ্রয় নেয় কিন্তু আদালত যখন তার কাছে তাদের বিয়ের কাগজ চায় তখন সে আসল বিষয়টা বুঝতে পারে , কারণ মন্দিরে গিয়ে পুরোহিত ঠাকুরের মন্ত্রে কপালে সিঁদুর দিয়ে বিয়ে যার কোন পেপার নাই 

হায় বিধি বাম, তার মানে আইনের চোখে ওদের বিয়েই হয়নি তাহলে এই ছেলে ?
 এরপরে রুচি কিছু  আইনগত সহায়তায় রাজীবের  সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে , কিন্তু এই ছেলে সহ রুচিকে তার  বাসায় তুলবেনা।

জীবন সাগরের অকুলে ডুবে যাচ্ছিল  রুচি ,  কোথায় যাবে কি করবে ??
এর মধ্যে তার চিন্তায় অসুস্থ হয়ে রুচির বাবা হার্ট এটাকে মারা যান , সব মিলিয়ে রুচি একেবারে ভেঙ্গে চুরে নিঃস্ব হয়ে যায় 

পরিস্থিতি মানুষ কে শেখায় , শক্ত করে গড়ে তোলে , ছেলে গল্প কে নিয়ে সে কিছুদিন বান্ধবীর বাসায় এরপরে কর্মজীবী হোস্টেলে উঠে ছেলে সহ , ছেলে গল্পের বয়স পাঁচ হয়ে গেছে , সারাদিন টিউশনি , বিসিএসের কোচিং এরপরে ছেলেকে সময় দেয়া এভাবে চলতে থাকে জীবন ,
জীবন যুদ্ধে পরাজিত না হয়ে সে দাড়াতে থাকে নিজের পায়ে , একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে  তার চাকুরী হয়   ছেলে কে নিয়ে ফ্লাটে উঠেছে , ভাল স্কুলে দিয়েছে ,সারাদিনের জব শেষ করে ছেলে কে নিয়ে সে রাতে খেতে বের হয় , কষ্টের দিন আস্তে আস্তে ফুরাতে ফুরাতে স্বপ্নের হরিণের দেখা পায়, বিসিএসে সিলেক্টেড এবং এখন সে সৎ -নির্ভীক ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দেশ জুড়ে নাম কামিয়েছে 
দেশের অবলা অসহায় নারীদের জন্য আসমা আরা রুচি  এক বিশাল অনুপ্রেরণা , রুচিদের জন্যই আজ দেশে নারীরা নিজের পায়ে দাড়াতে পারছে , নারী দিবস হোক এই সকল রুচিদের জীবন যুদ্ধে জিতে আসার সবচেয়ে বড় প্রতিপাদ্য