২০০০ সালের কথা ,বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, সামনে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা ,হঠাৎ করেই আজব এক ব্যবসার কথা
শুনতে পেলাম এক বড় ভাইয়ের কাছে যিনি তখন মোবাইল ফোন ইউজ করেন এবং মাসে ৭০ হাজার
টাকা কামাই করেন ,একদিন তাকে পেয়ে বললাম যে ভাই কি ব্যাপার ? কোন মাফিয়া টাফিয়া পাইলা নাকি ? সে হেঁসে বলে নারে ,ব্যবসাটা তোদের নিয়েই,ধর তুই ও আমার একজন পার্টনার
এবং তুই ও দুই দিন পরে মাসে দেড়লাখ টাকা এবং আমার মত কোম্পানী থেকে মোবাইল ফোন
পাবি, আমি ও আমার রুম মেট মন্ত্রমুগ্ধের মত সব শুনতে লাগলাম, সেই বড় ভাই আমাকে আর আমার
রুমমেট কে কয়েকদিনের মধ্যেই গুলশান ২ নাম্বারে একটি অফিসে নিয়ে গেল, সেখানে গিয়ে দেখি মহাধুমধাম
অবস্থা। আমাদের মত আরো অনেকেই গেছেন,
একটি রুমে স্লাইডে করে পুরো
ব্যবসাটি সম্পর্কে একটা ধারনা দেওয়া হল,
হায় ! এখানে তো দেখছি মাসে সাড়ে তিন
লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব, কোম্পানীর নাম ‘টং চেং বিডি লিঃ ‘ চীন দেশের কোম্পানী ,ব্যবসার নাম এমএলএম, মাল্টিলেভেল মার্কেটিং , আমরা তাদের এই ব্যবসার
প্রচারনাতে মজে গেলাম এবং দ্রুত বাসায় ধুন ফুন বুঝিয়ে পনের হাজার টাকা আনলাম এবং
বিনিয়োগ করলাম, কিন্তু ডাউন ওয়ার্ড আরোদুজন না হলে আমি কো ন টাকা পাব
না , তাই সহপাঠি আরো দুজন কে খুব পটালাম এবং যথারীতি তাদের কে গুলশানে
নিয়ে গেলাম ,তারা ও আমার কথায় পটে গেল, আমার কথায় তারা নেমে পড়ল এই
ব্যবসায়, ১৫০০০ টাকায় আমরা একটি পানির ফিল্টার করার জন্য একটা
মেশিন পেলাম, এর পর আমার সাথের দুজন আর নতুন লোক পায় না আর আমিও
টাকা পয়সা কিছুই পাইনা ,এভাবে যেতে যেতে দুই মাস চলে গেল তবুও আমি বাসা থেকে
নেয়া টাকা ফেরত দিতে পারলাম না, আমার নিচের দুজন ছিল বন্ধু বাবু (যে এই ব্যবসায় ধরা খাওয়ার
জন্যে এখনও আমার সাথে কথা বলে না) এবং শামীম (যে এই ব্যবসায় ঢুকানোর জন্য আমাকে ফালতু বাটপার
বলেছিল),এরা দুজনেই পুরা ধরা খেল,
আর মেশিন টি বিক্রি করলাম
মাত্র ১৫০০ টাকায়,
বহু বছর পরে এত কিছু লিখার উদ্দেশ্য হল সাম্প্রতিক কালে এ ধরনের একটি অতিশয় লোভ দেখান কোম্পানী এসেছে যার নাম- ডেসটিনি, জিজিএন, ইউনি পে টু ইউ সহ ব্যাঙ্গের ছাতার মত আরো অনেক অনেক নাম না জানা কোম্পানী । পুরনো মদ নতুন বোতলে , আমরা বাংলাদেশের মানুষেরা খুব জটিল কুটিল ও ধান্দাবাজ হলেও এর ঠিক বিপরীতে আমরা কিন্তু খুব বোকা সরল ও বিশ্বাস প্রবন, কোন কিছুর কার্যকারন হিসেব না করেই শুধু মানুষের মুখের রস ঝরান লোভ দেখানো কথায় অতি লোভে সব তাত নষ্ট করে ফেলে সর্বস্ব খুইয়ে পথে বসে যাই, কথায় বলে সস্তার তিন অবস্থা কিন্তু আমি বলি সস্তার বারোয়ারি করুন অবস্থা,একটু ভেবে দেখুন – যেখানে এক লক্ষ টাকা ব্যাংকে রাখলে আমরা মাসে নয়শো থেকে এগারশো টাকার মত প্রতি মাসে লাভ পাই, সেখানে এসব কোম্পানীগুলোর লাভের লোভ অনেকটা এরুকম
বহু বছর পরে এত কিছু লিখার উদ্দেশ্য হল সাম্প্রতিক কালে এ ধরনের একটি অতিশয় লোভ দেখান কোম্পানী এসেছে যার নাম- ডেসটিনি, জিজিএন, ইউনি পে টু ইউ সহ ব্যাঙ্গের ছাতার মত আরো অনেক অনেক নাম না জানা কোম্পানী । পুরনো মদ নতুন বোতলে , আমরা বাংলাদেশের মানুষেরা খুব জটিল কুটিল ও ধান্দাবাজ হলেও এর ঠিক বিপরীতে আমরা কিন্তু খুব বোকা সরল ও বিশ্বাস প্রবন, কোন কিছুর কার্যকারন হিসেব না করেই শুধু মানুষের মুখের রস ঝরান লোভ দেখানো কথায় অতি লোভে সব তাত নষ্ট করে ফেলে সর্বস্ব খুইয়ে পথে বসে যাই, কথায় বলে সস্তার তিন অবস্থা কিন্তু আমি বলি সস্তার বারোয়ারি করুন অবস্থা,একটু ভেবে দেখুন – যেখানে এক লক্ষ টাকা ব্যাংকে রাখলে আমরা মাসে নয়শো থেকে এগারশো টাকার মত প্রতি মাসে লাভ পাই, সেখানে এসব কোম্পানীগুলোর লাভের লোভ অনেকটা এরুকম
- আপনাকে ৪৮০০০ টাকায় দিবে
মাসে ৪৮০০ টাকা , এটা কিভাবে সম্ভব ? বাস্তবে এটা সম্ভব নয়, সম্ভব হবে যদি ঝিনাইদহের
কোটচাদপুরের কাজল অথবা টাংগাইলের আইটিসিএলের মত কোন হায় হায় কোম্পানী হয় যারা
রহিমের টাকা করিম কে আর করিমের টাকা যদু কে আর যদুর টাকা মদু কে,ধুনের টাকা ফুন কে দিয়ে ধুন
ফুন করেছেন তাদের পক্ষেই এভাবে লাভ দেয়া সম্ভব,
এসব কোম্পানীর পরিণতি আমরা
দেখি জেল খানা আর হাজার হাজার মানুষের হা হুতাশ আর নিঃস্ব হয়ে যাওয়া । এমন
কোম্পানীগুলো রাজধানী তে বিভিন্ন নামে তাদের অফিস খুলেছে এবং সবাইকে লোভ দেখিয়ে লোভাতুর করছে, আমাদের উচিত দেখেশুনে বুঝে
শুনে বাস্তব ধারনা নিয়ে তবেই এই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা , তা না হলে একসাথে সকলেরই পুজি
পাট্রা গায়েব হয়ে যেতে পারে ,আমরা সোনার ডিমের আশায় যেমন হাসের পেট কাটি আবার
সত্যিকারের সোনাটি কেও চিনতে ভুল করি,
আমাদের চরিত্রের এই অসহায়ত্বের
সুযোগ নিচ্ছে এই ধরনের খাই খাই হায় হায় কোম্পানী গুলো, আমি আশা করব এই ধরনের কোম্পানী
গুলোর বিরুদ্ধে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন, এই বিষয়ে দ্রুত ও কার্যকরী
ব্যবস্থা গ্রহন করা আবশ্যক।
ঘরে ঘরে প্রতারণা সাধু সাবধান -১
২০১৫ সালের মার্চ
মাসের শুরুর দিকের ঘটনা । বদলি সূত্রে আমি তখন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার , রেলওয়ে পশ্চিম জোন যার হেড কোয়ার্টার্স হচ্ছে সৈয়দপুর ।
নানা কারণে সৈয়দপুরের খ্যাতি ,
তার মাঝে অন্যতম হচ্ছে রেলের
বৃহৎ কারখানা এবং এটাকে কেন্দ্র করে সৈয়দপুরের এতটা বিস্তৃতি । এখানে উপজেলা
হিসেবে যেসব সুযোগ সুবিধা তা অনেক জেলা এমন কি নীলফামারীতেও নেই ।
রেলওয়ে পুলিশ, সৈয়দপুর রেলওয়ে জেলা এর অধীন ১২ টি থানা ও ১৬ টি ফাঁড়ি
রয়েছে । বিশাল এলাকা জুড়ে এর জুড়িসডিকশন ,
পুরো উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ
এর সব জেলার রেললাইন জুড়ে এবং ঢাকা বিভাগের ও কিছু অংশ রয়েছে । এসব অঞ্চলের চলাচল
কৃত ট্রেন গুলোর মধ্যে কিছু লোকাল ট্রেন ছাড়া প্রায় সব ট্রেনেই একজন অফিসার ও ৩/৪
জন কনস্টেবল ট্রেনে ডিউটি করে থাকেন ।
সৈয়দপুর থেকেই এই
সম্পূর্ণ এলাকার পুলিশ ফোঁসদের নিয়ন্ত্রণ করা
হয় ।
২০১৫ সালের মার্চ মাসের শুরুর দিকে একদিন সকালে ৪ বার ফোন ওসি রেশন
স্টোরের দায়িত্বে এসআই ফিরোজের ,
আমি ঘুম থেকে উঠে তাকে কল
ব্যাক করলাম, -কোন সমস্যা ? সে
বলল –স্যার আমি আপনার অফিসে এসে দেখা করতে চাই , একটা জরুরী বিষয় ছিল , আমি
বললাম ঠিক আছে ।
অফিসে গিয়ে দেখি ওসি
রেশন স্টোর ও তার অধীনের সকলে আমার রুমে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছেন , কি সমস্যা বলেন ?
ওসি রেশন স্টোর শুরু
করলেন –স্যার গত মাসে আমার মোবাইলে একটা কল আসে , বলে যে আমি ইন চার্জ , ভেড়ামারা
ফাঁড়ি বলছি , আমার স্ত্রী ভীষণ অসুস্থ । হাসপাতালে ভর্তি
আছেন জরুরী অপারেশন করতে হবে ,
অনেক টাকার দরকার তাই আমার
প্রাপ্য রেশনের পুরো টাকা টা আমাকে দিলে খুব উপকার হত । আমি তার কথায় সহানুনুতি
প্রকাশ করে তাকে কিভাবে টাকা টা পাঠাব তা জিজ্ঞেস করলাম , তিনি আমাকে একটা বিকাশ নাম্বার দিলেন । আমি তার কার্ড
নাম্বার চেক করে হিসেব করে ৪৯ হাজার ৬৫৪ টাকা বের করলাম মোট রেশনের সমপরিমাণ টাকা , এরপরে যে নাম্বার থেকে ফোন এসেছিল সেটাতে ফোন দিয়ে টাকার
পরিমাণ বলে তার পাঠান বিকাশ নাম্বারে টাকা টা দুই বারে পাঠিয়ে দেই ।
আমি জিজ্ঞেস করলাম
ঠিক আছে এতে কি সমস্যা ? এভাবে টাকা তো প্রায়ই অনেকে নেন , ওসি রেশন স্টোর জানালেন স্যার –আজকে এসআই রাজ্জাক,
ইন-চার্জ ভেড়ামারা ফাঁড়ি, ফোন দিয়েছেন রেশনের জন্য । কিন্তু আমি তো রেশনের টাকা গত
মাসেই পাঠিয়ে দিয়েছি , আমি তাকে নললাম যে আপনি ফোন দিয়ে স্ত্রীর
অসুস্থতার কথা বলে টাকা চাইলেন ,
কিন্তু সে বলছে সে টাকা
চায়নি , তার স্ত্রীও অসুস্থ ছিল না , তার ফোন নাম্বার আর টাকা চেয়ে ফোন দিয়েছিল যে সেই নাম্বার
দুইটা আলাদা !
আমি তাকে বললাম – মানে ?
তাহলে তো প্রতারক কেউ এই কাজ
করেছে ! কি বল মিয়া ! পুলিশের টাকা মানুষ মেরে খায় ! তাহলে তো আমাদের লজ্জায় মুখ
থাকবেনা , আমাদের তো শাড়ি চুড়ি পরে ঘুরা উচিত , অনেক অনেক রাগ ভর্ৎসনা করলাম । সাথে সাথে পুলিশ সুপার কে
বিষয়টি জানালে স্যার ও রেগে গিয়ে বললেন –
এই টাকা ওসি রেশন স্টোরের
নির্বুদ্ধিতায় খোয়া গেছে ,
এটার দ্বায়ভার আমরা কেন নিব? এই টাকা সে দিবে !
বেচারা ওসি রেশন স্টোর আমার হাতে পায়ে ধরে আকুতি মিনতি
শুরু করলেন, -স্যার আপনি কি দয়া করে বিকাশ নাম্বার ও সেই
মোবাইল নাম্বার টা দিয়ে কিছু করবেন ,
যদি এটা ডিটেক করা যায় , আর একান্তই না গেলে সে ক্ষেত্রে আমি জরিমানা দিব স্যার ,
আমি বললাম ঠিক আছে , তুমি একটা জিডি কর পুরা ঘটনা টা উল্লেখ করে , এরপরে আমাকে জিডি নাম্বার আর ঐ দুটি নাম্বার দিও , আমি চেষ্টা করে দেখি , সে
বলল – তাই হবে স্যার ।
২)
পুলিশ সুপার মহোদয় আমাকে তার রুমে ডেকে নিলেন, বললেন যে বিষয়টা
একটু সিরিয়াসলি দেখো তো , তোমার কি মনে হয় ? এটা পুলিশের ভিতরের কেউ করতে পারে , বাইরের
কারো পক্ষে এত বড় সাহস হবে না । আমি বললাম জী স্যার আমার ও তাই মনে হচ্ছে ।আমি বললাম
চেষ্টা করব স্যার যাতে এটা ডিটেক্ট করা সম্ভব হয় । যথারীতি জিডি নং পেয়ে আমি সেই নাম্বার
দুটোর ডিটেইলস চেয়ে পাঠালাম । দুদিনের মধ্যে সব পেয়ে গেলাম , বিকাশের নাম্বার এর ঠিকানা
অনুযায়ী আমি অফিসার ও ফোর্স পাঠিয়ে বোকা বনে গেলাম, যে ঠিকানা দেওয়া সেটা – মা বাবা
টেলিকম ,জেল রোড , খুলনা ।
ওসি খুলনা রেলওয়ে থানাকে
পাঠান হয়েছিল, ওসি জানালো স্যার ঐ নামে দোকান নেই আর সাব জেল রোড ও নেই , কি মুশকিল ! মজার ব্যাপার হচ্ছে
শুধু জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি আর ছবি নিয়ে গেলেই বিকাশ রেজিস্ট্রেশন হয়ে যায় , কোন রকম
যাচাই ছাড়াই । এটাই বড় সমস্যা , তার মানে দাঁড়াল প্রতারক শুধুমাত্র প্রতারণা করার উদ্দেশ্যেই
এই বিকাশ একাউন্ট করেছে , এবার প্রতারকের নাম্বার মানে যেটা থেকে ওসি রেশন স্টোরকে
ফোন দিয়েছিল সেটার রেজিস্ট্রেশন ঠিকানা পেলাম -–মকছেদপুর , গোপালগঞ্জ আর ফোনের লোকেশন পেলাম –আলফাডাঙ্গা , ফরিদপুর ।
সেই গোপালগঞ্জের ঠিকানাতে স্থানীয় থানা কে ই/এস অনুসন্ধান স্লিপ প্রেরণের দ্বারা জানা
গেল যে ঠিকানা টি সঠিক নয় ।
প্রতারক খুব সচেতন
ভাবে এটা করছেন, এমনকি সেই মোবাইল সেট এ সে
তার পরিচিত কাউকে ফোন দেয় নাই , তার ফোনে শুধু বিভিন্ন জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুমের
নাম্বারের সাথে কল , আমি ৭ টি জেলা , একটি
এপিবিএনের ইউনিটের সাথে তার অনেকবার কল দেখতে পেলাম ,বুঝলাম যে তার কৌশল টি,
কৌশল হচ্ছে প্রথমে কন্ট্রোল রুমে ফোন দিয়ে সেই জেলার ওসি রেশন স্টোরের নাম্বার সংগ্রহ
করেন এরপরে দূরবর্তী ফাঁড়ির ইন-চার্জ সম্পর্কেও তথ্য ও মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করেন
, এরপরে তার রেশনের টাকা চাওয়ার নাটক শুরু হয় । আমি ৭ টি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের সাথে কথা বললাম
এবং তাদের কে পুরো ঘটনা খুলে বললাম যাতে তাদের
রেশন স্টোরকে বোকা না বানাতে পারে ।
মোবাইলের রেজি ও কললিষ্টের পুরো আপডেট পুলিশ সুপার মহোদয়কে
জানালাম , স্যার বললেন তাহলে কি করা যায় ? কানেক্টিভ একটাও নাম্বার নাই , অর্থাৎ সে
খুব সাবধানতার সাথে এটা করেছে যাতে তাকে ট্রেস না করা যায় । স্যার আমাকে আরও কোন ক্লু
পাওয়া যায় কিনা দেখতে বললেন, আমি তাতে সায় দিলাম ।
৩)
পনের দিন গত হল কিন্তু এই প্রতারকের বিষয়ে কোন ক্লু পাচ্ছি
না , খুব আফসোস হতে লাগল । পুলিশ সুপার মহোদয়কে বললাম স্যার আমরা একটা কাজ করতে পারি
বিষয়টি লিখিতভাবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স কে জানাতে পারি , স্যার সম্মতি প্রদান করল এবং
সাথে সাথেই এআইজি (গোপনীয় ) স্যারের সাথে এটা নিয়ে কথা বললেন । এরপরে আমাকে বললেন পুরো
বিষয়টি উল্লেখ করে এআইজি (গোপনীয় ) কে উদ্দেশ্য করে একটা চিঠি প্রস্তুত করে আনো , আমি
তাই করলাম ।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স কিছু নির্দেশনা সহ আমাদের চিঠি টিকে ফরোয়ার্ড
করে বাংলাদেশ পুলিশের সকল ইউনিটে পাঠালেন যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন প্রতারণার স্বীকার
না হন । ৪/৫ দিন পরে হঠাৎ ওসি রেশন স্টোরের ফোন –স্যার একটা ক্লু পাওয়া গেছে , আমাদের সেই চিঠি সব দপ্তরে যাবার পর আরআরএফের
ওসি রেশন তাকে ফোন দিয়ে বলেছে যে –তাদের ইউনিটেও সেইম ঘটনা ঘটেছিল , তারা মোবাইলের
কল এনালাইসিস করে সেই প্রতারককে ধরতে পারে এবং টাকা ফেরত পান , কে সে ?
আরআরএফের ওসি রেশন
জানায় অমুক জেলার ওসি রেশনের ছেলে এই কাজ করেছিল । অথচ সেই ওসি রেশন একজন ভাল
অফিসার হিসেবে পরিচিত ।আমি তার বাড়ী কোথায় জানতে চাইলাম , বলল- ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা
, এই তো মিলে গেল , কারণ আমরা সেই প্রতারকের নাম্বারটির লোকেশন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা
পেয়েছিলাম । আমি সাথে সাথে সেই অমুক নামক জেলাটির পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার
কে বিষয়টি জানালাম । তারা জানালেন যে বিষয়টি খুবই দুঃখজনক তবে তাদের ওসি রেশন স্টোর
পেশাদার ও ভাল মানুষ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন , কেউ কখনও তার বিরুদ্ধে খারাপ বলে নাই
।
এতো দেখছি আলেমের ঘরে জালেম ! ঘন্টাখানেক পরেই সেই ওসি অমুক
নামক জেলার ওসি রেশন আমাকে ফোন দিলেন এবং বার বার ক্ষমা প্রার্থনা করলেন । বললেন –স্যার
আমি ৭ দিনের মধ্যে টাকাটা আপনাদের ওসি রেশন কে পাঠিয়ে দিব,
আমার ছেলেটা বখাটে ও নেশাখোর হয়ে গেছে বলে তার জন্য আমাকে পদে পদে সবার সামনে ছোট হতে
হচ্ছে , আমি তাকে বললাম ছেলের বয়স কত? ২৪ বছর বয়স , পড়াশুনা তেমন করে নাই , নেশা করা
শুরুর পর এমন প্রতারনা করে টাকা নিচ্ছে , আমি বললাম –আপনার ছেলের চিকিৎসা করান, তাকে
একটি ভাল মাদক পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি করে তার চিকিৎসা করান ।
আমি এসপি স্যারকে ঘটনা খুলে বললাম , স্যার আর আমি শুরুতেই
মন্তব্য করেছিলাম যে এটা পুলিশের বাইরের কারো পক্ষে করা সম্ভব না , পুলিশের বাইরের
কারো কাছে এই রেশনের ভিতরের বিষয়গুলি জানা ও বোঝা এতটা সহজ নয় ।
সাত দিনের মধ্যে ওসি রেশন স্টোর এসে জানালেন যে স্যার টাকা
পেয়েছি , কাইন্ডলি সেই ওসি রেশন স্টোরের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিবেন না , ছেলের জন্য
তাকে দোষী করা কি ঠিক হবে, আমি শুধু বললাম এটা পুলিশ সুপারের সিদ্ধান্ত, স্যার যা বলবেন
তাই হবে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন