শনিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

নৈতিক শক্তির বিপর্যয় -1

ঘাতক মামা জানালো তুষার হত্যার লোমহর্ষক কাহিনী


ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল থানার চাঞ্চল্যকর তুষার হত্যার জট খুলেছে। রোববার জেলার নারী শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক ফারহানা আক্তার খানের আদালতে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দেন তুষারের মামা সেতু। এ নিয়ে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেওয়ান লালন আহম্মেদ, রানীশংকৈল থানার সার্কেল এসপি মো. হাসিব, সদর থানার ওসি মশিউর রহমান ও ওসি তদন্ত মান্নান।
গত ২৮ এপ্রিল শুক্রবার সকালে জেলার রানীশংকৈল উপজেলার মুনিষগাঁও গ্রাম থেকে আব্দুল কাফি তুষার (৩) নামে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ তুষার হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৯ জনকে আটক করে। এর মধ্যে তুষারের মামা সেতু আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তুষার হত্যার পুরো বিষয়টি ওঠে আসে।
সেতুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানা যায়, মুনিষগাঁও গ্রামের আল রাজি মোস্তাকিম রাজু দীর্ঘদিন যাবত একজন মহিলার সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। বেশ কিছুদিন যাবত ওই প্রেমিকা রাজুকে বিয়ের জন্য চাপ দিয়ে আসছিল। কিন্তু হঠাৎ বিয়ে করতে গেলে যে টাকার প্রয়োজনতা ছিল না রাজুর কাছে।
তাই সে মোটা অংকের টাকা কামাইয়ের জন্য পরিকল্পনা করে। সেই মোতাবেক প্রতিবেশী মাসুদ রানার ছেলে আব্দুল কাফি তুষারকে (৩) অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবির চিন্তা করেন তিনি। কিন্তু রাজুর পক্ষে একা এই অপহরণ করা সম্ভব হবে না ভেবে পারিবারিক কলহের জেরকে কাজে লাগিয়ে ও টাকার লোভ দেখিয়ে তুষারের মামা সেতু, চাচাতো ভাই শান্তকে ম্যানেজ করেন রাজু।
রাজুর পরিকল্পনা অনুয়ায়ী গত ২৬ এপ্রিল মাসুদ রানার ছেলে তুষারকে অপহরণ করা হয়। সেই অপহরণের বিষয়টি প্রতিবেশী চাচা সিরাজুল ইসলাম টের পেয়ে যান। পরে রাজু তাকেও হাত করে। এ সময় সিরাজুল তুষারকে জ্বিনে নিয়ে গেছে বলে মিথ্যা অপপ্রচার চালায়। দুদিনের মধ্যে তুষার বাড়িতে ফেরত আসবে বলেও তুষারের বাবা মাসুদ রানাকে জানায় সিরাজুল। অপহরণের আগে সেতু তার মায়ের (তুষারের নানি) মোবাইল ফোন চুরি করে। অপহরণের পর ওই মুঠোফোন দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করেন তুষারের বাবা-মা’র কাছে।
অপহরণের দিন সকালে সিরাজুলের বাড়িতে গিয়েছিল তুষার। ওই বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তুষারকে সিরাজুল ইসলামের ছেলে শান্তর (১৫) কোলে দেখা যায়। সেদিনই তুষারকে অপহরণ করা হয়। নিখোঁজের কয়েক ঘণ্টা পর ওই চুরি হওয়া মুঠোফোন দিয়ে তুষারের বাবার কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন রাজু। পরে তুষারের বাবা মাসুদ রানা রানীংশকৈল থানায় অপহরণ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
বিষয়টি টের পেয়ে অপহরনকারীরা শিশু তুষারকে চেতনা নাশক ওষুধ দিয়ে অজ্ঞান করে একটি বস্তায় ভরে অন্যস্থানে নিয়ে যায়। পরে একটি ঘরে রাজু, সেতু, শান্ত ও রিপন মিলে গলা ও হাতের রগ কেটে হত্যা করে শিশু তুষারকে।
উল্লেখ্য, ২৮ এপ্রিল শুক্রবার সকালে রানীশংকৈল উপজেলার মুনিষগাঁও গ্রামে শিশুটির লাশ সিরাজুল ইসলামের বাড়ির একটি খড়ের গাদা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ৯ জনকে পুলিশ জেলহাজতে পাঠিয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন