বৃহস্পতিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৮

উদিবুলেকে চু – গর্তে অশ্বডিম্ব দিলাম ফু !




ছোটবেলায় আমাদের বাসার পাশেই একটা ছেলে কাজ করত যাকে সবাই ভাদ্রু নামে ডাকত ।  ভাদ্রুর আলজিহবা ও মুল জিহ্বা দুটিতেই  ছিল অস্বাভাবিকতা এবং শারীরিকভাবেও সে ছিল কিঞ্চিত বিকলাঙ্গ । তাকে যদি  বলতে বলা হত- পুকুর –জাম , সে বলত- কুকুর খাম ! এমন উচ্চারণের জন্য সবাই তাকে দেখলে বা কাছে পেলেই   ঠাট্টা তামাশা করত । ভাদ্রু যার বাসায় কাজ করত তার নাম- রকিবুল চৌধুরী । 
ভাদ্রুকে যদি বলা হত যে বলত ভাদ্রু  - রকিবুল চৌধুরী , সে বলত – উদিবুল চু! ব্যাপারটা সবাই কে খুব আনন্দ দিত এবং কেউ এর কোন সঠিক মানে বের করতে পারে নাই ।

সেই থেকে আমরা কার্য ও কারণ ব্যতীত অতি উচ্চমার্গ অথবা অতি চালাকিয় গুরু গম্ভীর বিষয়ে ধাবিত হয়ে অশ্বডিম্ব বা গোবর সন্দেশ পাওয়া গেলে আমরা তাকে বলতাম – উদিবুলেকে চু! 

বহু বছর পর আজ নিজেকে এমন চু মনে হচ্ছে , খুব সকালে ফোন বেজে উঠল । ব্রাদার আমি বর্ডার গার্ড হেডকোয়ার্টার্স থেকে  অমুক বলছি , কাইন্ড-লি একটু তাড়াতাড়ি আসেন প্লিজ । আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা , আমার বস ছুটিতে আমি বসের চার্জে রয়েছি , আমি কেন এই সাত সকালে  বর্ডার গার্ড হেডকোয়ার্টার্স এ যাব ? 





আবারো বলছেন- ব্রাদার আপনারা আমরা সেইম ,প্লিজ গন্ধে থাকতে  পারছিনা , আপনি আপনার ফোর্স অফিসার নিয়ে ভিতরে ঢুকেন । আমি সত্যি খুব বিরক্ত হলাম , ভাই বিষয়টা ক্লিয়ার করেন প্লিজ- 
-ব্রাদার আমাদের বর্ডার গার্ড হেডকোয়ার্টার্স এর ভিতরে একটি বস্তাবন্দী লাশ পাওয়া গেছে , বললাম আপনাদের চারিদিক কি অরক্ষিত থাকে ? উনি বলছেন না এটা আমাদের ভিতরেই ! বাইরের লোক না , আমি অগ্র পশ্চার্ধ কিছুই বুঝলাম না । 





আমি আমার এসপি স্যারকে বিষয়টি জানালাম , স্যার কিছু দিক নির্দেশনা দিলেন । এরপরে জানালাম  ডিআইজি স্যার কে এবং  ডিআইজি স্যারের কাছে - বর্ডার গার্ড হেডকোয়ার্টার্স এর কারণে আইনগত কোন বিধি নিষেধ বাধ্যবাধকতা আছে কিনা তা জেনে স্যারের পরামর্শ অনুযায়ী ওসি ও অন্যান্য অফিসারদের নিয়ে রওনা দিলাম । 

ভিতরে ঢুকেই দেখি – সেক্টর কমান্ডার , সিও বিজিবি সহ ঊর্ধ্বতন সকল কর্মকর্তা সহ অনেক ফোর্সের জটলা ।  অস্ত্রাগারের গার্ড বেষ্টনীর পাশে একটা গর্ত যেখানে একটা সাদা বস্তার অংশ থেকে কুকুর একটি হাড় বের করেছে । হাড় দেখে উপস্থিত সকলে ও ডাক্তার-গন ও নিশ্চিত যে এটা ছোট শিশুর লাশ । সেই সাথে বাতাসে তীব্র উটকো গন্ধ লাশের গন্ধে যেমন হয়। 



আমি আশে পাশে আমার অফিসারদের লাগিয়ে দিলাম ক্রাইম সিন থেকে কিছু পাওয়া যায় কিনা ,আমি নিজেও ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম , দেখতে দেখতে ক্রিমিনোলজির 'থিউরি অফ রেসপন্স' এর কোন সাড়া খুঁজে পাচ্ছিলাম না বরং মনে হচ্ছিল যে এই খানে বাইরের কারো পক্ষে তো নয় বরং ভিতরের যারা তাদের পক্ষেও কিভাবে একটি লাশ বস্তাবন্দী করে এই খানে পুতে ফেলা সম্ভব! এখানকার ফোর্স জওয়ানদের বাসার সবার সম্পর্কে খোঁজ নিতে বললাম।  

এবার শুরুর সেই ব্রাদার বলছেন- এটা কারো বাসার কাজের মেয়ের লাশ । একমাস আগে একটি ব্যাটালিয়ন  অন্যত্র বদলি হয়েছেন তাদের কেউ এই কাজ করেছে তিনি নিশ্চিত ! 
আমরা ক্রাইম সিন টেপ দিয়ে পুরো জায়গা ঘিরে রাখলাম, ছবি তুলতে বললাম , আর ওসি একজন এসআই কে পাঠিয়েছেন ডোম বাহাদুর কে আনাতে।  ডোম বাহাদুরের এজন্য কিছু রসদ লাগে যা সেই ব্রাদার কে ওসি বললেন যে স্যার-  একটু ম্যানেজ করে দেন। কেরোসিন, ফিনাইল সহ  দেশী বাংলা দারু । সেই ব্রাদার এসে বলছেন – বাংলা কি আমার লোক কিনে দিবে ?





আমি হাঁসব না কাঁদব বুঝতে পারছিলাম না, শুধু বললাম যে ব্রাদার  – লেট দেম ডিল । 
এর কিছুক্ষণ পরে ডোম বাহাদুর এলেন, গর্ত খোঁড়া শুরু করলেন। আমরা সবাই মুখ নাক বেধে প্রস্তুত।  গন্ধের মাত্রা বেড়েই চলেছে । 
এরমধ্যে আমাদের  ডিবির টিম , ডিএসবির লোকজন সহ বিজিবির আরো ফোর্স উপস্থিত , সকলের খুব খুব উৎকণ্ঠা ! এই খানে লাশ তা কি করে সম্ভব !
ডাক্তারেরা হিসেব করছেন শিশুর বয়স কত হতে পারে? সেই ব্রাদার বলছেন – লাশ গেড়ে রাখার আনুমানিক সময় ২/৩ মাস হবে হয়ত , তিনি ২ টি এম্বুলেন্স ডেকে আনলেন , ব্যাপক আয়োজন এ যেন মহাযজ্ঞ ।



হঠাৎ করে ডোম বাহাদুরের চিৎকার- এইলা কি , ছুয়াও না মাইও নাহা(এটা ছেলেও না মেয়েও না) এইডা তো বড্ড কুত্তা ! ছিঃ কুত্তা পচার যা গন্ধ ! উটকি দিয়ে সে বমি করে ফেলল । 
আমরা সবাই হ্যাঁ করে গিলতে লাগলাম । 




 ডিআইজি মহোদয় কে জানাতেই –স্যার মৃদু ঝারি দিয়ে শুধু বললেন ভালো করে না জেনে না  শুনে এমন করে  – কুকুর ছাগলের লাশ  নিয়া সকাল থেকে আছ?  আমি শুধু মনে মনে বললাম-স্যার সেই  অতি উচ্চমার্গ অথবা অতি চালাকিয় গুরু গম্ভীর বিষয়ে ধাবিত হয়ে অশ্বডিম্ব বা গোবর সন্দেশ ব্রাদার কেন এত এত তৎপর হতে গেলেন আর কেনইবা বা এই অশ্বডিম্বের পিছনে আমাদের কে ধাবিত করলেন ! 

ডোম বাহাদুরের বমি দেখে আমি মনে মনে ছড়া  কাটলাম -

‘’উদিবুলেকে চু 
 মানুষের নয় কুকুরের ক্যু 
বস্তাবন্দী ভিতরে আঁশ  
কুকুর মশাইয়ের লাশ 
 ডোম বাহাদুর হাশফাশ ‘’



বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এটা একটা রম্য রচনা , কাউকে হেয় বা ছোট করা এর উদ্দেশ্য নয় ।

1 টি মন্তব্য: