বুধবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৭

মিখাইল জাখদান খান ওরফে মিখা –একটি ব্লু হোয়েল বিষয়ক হুজুগ





২০০৯ সালের পঁচিশে জুন পপ তারকা মাইকেল জ্যাকসন মারা গেছেন । সারা বিশ্ব শোকে মুহ্যমান । সেই সময়ের কথা মেট্রোপলিটনের সেই আড্ডা , মধ্যমণি বিখ্যাত কথাবিদ সোহেল ভাইয়া , সোহেল ভাই মানেই সেখানে নিত্য নতুন মজার কোন ইস্যু এবং সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে সোহেল ভাই এর কথা শুনেন ।

ইতোমধ্যে আমাদের কাউল বন্ধু ও নিখিল ঢাকা ফাকাসু সমিতির আজীবন সদস্য মাহমুদ এসে হাজির যে নাকি সোহেল ভাই এর সাথে আড্ডা দিতে চায় কিন্তু আড্ডাতে তার প্রদান-কৃত কোন উপাদান পাওয়া যায় না বরং আমাদের বিষয় গুলি সে লুটে পুটে নেয় । 
সোহেল ভাই বলছে -  মনটা খুব খারাপ , মিখাইল মইরা গেল ?  মাহমুদ বলছে – কোন মিখাইল ভাইয়া?

-    কেন তুমি চেনোনা ?

-   নাহ ভাইয়া

-   আরে মাইকেল জ্যাকসন !

-   কিন্তু ভাইয়া মিখাইল কেন?

সোহেল ভাই বলছে এই টাই তো মন খারাপের কারণ , মিখাইল রে সিস্টেম কইরা মাইরা দিছে ?

আমরা একজন আরেকজনের দিকে তাকাই ,হায়াত ভাই ,আজিম ভাই   আমার দিকে তাকায় , আর মঞ্জু ভাই চোখ বড় বড় করে আছে , ইলতুৎমিশ হাত আমার পায়ের কাছে দিয়ে আলতো টিপ্পনী দেয় !
সোহেল ভাই শুধু একবার তাকালো যার মানে হচ্ছে – যা কই তা খালি শুন আর মজা লইতে থাক ।

সোহেল ভাই বলে যাচ্ছেন – মাইকেল জ্যাকসন আরও দুই বছর আগে দুবাই তে আইসা দুই চাইরটা হুজুর ডাইকা কলেমা পইড়া মুসলমান হইছিল , তখন হুজুরেরা তার নাম রাখেন – মিখাইল জাখদান খান ওরফে মিখা ।

কিন্তু মাইকেল কইছে যে এইডা জানি কেউ না জানে , জানলে তারে আমেরিকা থিকা বাইর কইরা দিতে পারে , এই জন্য দুবাই এর শেখরা কইছে  যে – তর দ্যাশের আরও কিছু কুতুব কুতুব মাল লইয়া দুবাই আইবি হেগোরেও মুসলমান বানাইতে হইব, তহন মাইকেল কইছে যে আনমু কিন্তু তুই তর দ্যাশের মাইনসেরে এই সব কইসনা !


আমি পাশে থেকে বলি যে ভাই মাইকেল কি তুই কইরা বলছিল ?
সোহেল ভাই তাকায় আর বলে আইচ্ছা যা আপনে কইরা কইছে , খুশি ?
আমি আর হায়াত ভাই মুচকি হাসতে লাগলাম ।


এরপরে গেলেন মুল বিষয়ে –মাহমুদ জানো ভাই , মিখাইলরে ঘুমের ঔষধের মধ্যে বিষ দিয়া মাইরা দিছে ওর দেশের ফাদাররা  অন্য ধর্মে গেছে ক্যান এর লিগা ?
খারাপ লাগে যে মিখাইল বুঝতে পারছিল যে ঐ ফাদাররা হেরে বাঁচতে দেবেনা , সেই জন্য মারা যাওয়ার কয়েকদিন আগে দুবাইয়ের শেখ বন্ধুরে ফোন দিয়া কইছিল –

  -brother , bury me by the tree of date


আহারে ! মিখাইল খেজুর গাছের গোঁড়ায় কবর দিতে কইছিল ! মাহমুদ বলে উঠল – সত্যি সোহেল ভাই আমার মনটাও খারাপ হয়ে গেল, সারা বিশ্বের এত বড় একজন তারকা যে নাকি এত বড় কাজ করল অথচ পৃথিবীর কেউ জানল না, আল্লাহ তারে বেহেস্তে নসীব করুন ।

আমরা জিবে কামড় দিয়ে আছি হাসি থামাতে না পেরে , বারান্দায় গিয়ে মোবাইল ফোন কানে দিয়ে কথা বলার ভান করে হো হো হো হো করে হাঁসতে লাগলাম  ।






মাহমুদ তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান , যার ফলে সে কিছুটা হাইব্রিড টাইপের আচার আচরণে , সারাদিনে বাহিরে কোথায় কি হল , এমনকি তার বন্ধুদের মধ্যে কে কার সাথে প্রেম করছে , কে ডেটিং মারতে গেছে এসব কথাও সে তার বাবার কাছে বাসায় ফিরে  শেয়ার করে । সুতরাং মিখাইল জাখদান খানের মত এমন একটি টাটকা বিষয় যদি সে তার বাবার সাথে শেয়ার না করে তবে তার খাবার হজম হবে না কিংবা পেটের ভিতরে ফুলে থাকবে সেটা তার বাবার কানের ভিতরে যাবার জন্য । 


যথারীতি মাহমুদ বাসায় এসে বাবার কাছে বলতে লাগলেন যে জানো বাবা মাইকেল জ্যাকসন যে মৃত্যুর আগে মুসলমান হয়েছিলেন , তার একটি ইসলামিক নাম ও দেওয়া হয়েছিল ।  তার বাবা উত্তর দিলেন তাই নাকি ? এটা তো আগে কোন সংবাদে চোখে পড়ে নাই ।


মাহমুদ বলা শুরু করল যে মাইকেল জ্যাকসন মুসলমান হন দুবাই তে , দুবাই এর কয়েকজন হুজুর তাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করান , কালেমা পাঠ করান , এরপরে তিনি নাম ধারণ করেন মিখিল জাখদান খান ওরফে মিখা ,মাহমুদের বাবা বললেন বাহ ! দারুণ খবর এটা , তার মত এত বিখ্যাত কোন ব্যাক্তি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে আরও অনেকেই তাকে অনুসরণ করবেন । মাহমুদ বলতে লাগলেন জানো বাবা , এই কারণেই তাকে ষড়যন্ত্র করে ঘুমের ঔষধে বিষ প্রয়োগ করে তাকে হত্যা করেছে , মৃত্যুর কয়েকদিন আগে মাইকেল এমন আশংকা করে তার দুবাই এর একজন শেখ বন্ধু কে ফোন দিয়ে বলেন Bury me by the tree of date ! 


মাহমুদের বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন আহারে ! আল্লাহ তাকে বেহেস্তে নসীব করুক ।


মাহমুদের বাবা সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা , তার অফিসে তার অধীনস্থদের নিয়ে প্রতিদিন ১২ টার দিকে চা পান করেন সবাই মিলে , পরের দিন তিনি সেই চা চক্রে মাইকেল জ্যাকসন সম্পর্কে বলতে লাগলেন তার ইসলাম গ্রহণ, নতুন নাম ধারণ এবং খেজুর গাছের পাশে কবর দেয়ার অনুরোধের বিষয়গুলি বলতে লাগলেন। উপস্থিত  ৩০/৪০ জনের বেশিরভাগই মাহমুদের বাবার এই অতিজ্ঞান গর্ভ কথা গুলো গিলতে লাগলেন এবং  মনে প্রাণে বিশ্বাস করলেন যে মাইকেল আজ মিখাইল জাখদান খান ! 



আমি সোহেল ভাইয়া, মঞ্জু ভাইয়া , হায়াত ভাই , আজিম ভাই আর ইলতুত আমরা এরপরের মেট্রোপলিটনের আড্ডায় এই পুরো হুজুগে বিষয়টি পর্যালোচনা করি আর অট্টহাসিতে মেতে উঠি । আমরা এমন হুজুগে জাতি যারা চাঁদে রাজাকার দেখি, ব্লু হোয়েলের ক্লু দেখিয়ে আত্মহত্যার দাবী তুলি , নিজেদের এমন একটি বিষয়ের উপলব্ধি  হচ্ছে সব গুলোই কোন না কোন কথাবিদ যিনি সোহেল ভাইয়ার মত মনের মাধুরী মিশিয়ে মুহূর্তেই নতুন ঘটনাকে জন্ম দেন , এমন কোন দুষ্টচক্রের কথাবিদের দ্বারা উৎপাদিত পণ্য যা হুজুগ নামক স্রোতে ভাসতে ভাসতে ভাইরাল হয়ে সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গুলোতে সবাইকে বিভ্রান্ত করে বিশ্বাস স্থাপন করে তা স্থাপিত হয়ে যায় মিখাইল জাখদান খান ওরফে মিখার মত ।






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন