বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বঙ্গবন্ধু কে খোলা চিঠি



বঙ্গবন্ধুকে খোলা চিঠি [১ম পর্ব]

বঙ্গবন্ধু,
শ্রীচরণেষু।

‘গভীর রাতে জাগি খুঁজি তোমারে
দূর গগনে প্রিয় তিমির-পারে
... ... ...
মৌন নিঝুম ধরা ঘুমায়েছে সবে
এসো প্রিয় এই বেলা বক্ষে নীরবে।’

—কাজী নজরুল ইসলাম

আপনি ছিলেন সাড়ে সাত কোটি বাঙালির বক্ষে। দূর গগনে তিমির পারে—সবখানে আপনাকে সন্তানেরা খুঁজে ফেরে। আপনাকে সশ্রদ্ধ সালাম। বেঁচে থাকলে আপনার বয়স হতো ৯৬ বছর। হয়ত আপনাকে একবার দেখার কিংবা আপনার এক মুহূর্তের সাহচর্য পেতে আপনার ৩২ নম্বরের বাসার সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়াতাম, কারণ আমরা এই প্রজন্ম আপনাকে পাইনি। কারণ আমার জন্ম আপনার শাহাদাতবরণের তিন বছর পরে। জন্ম থেকেই আমি আমার পারিবারিক আবহে বুঝতে শিখি যে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান, যিনি বাঙালির প্রাণের নেতা, বাংলাদেশের রাজনীতির মিথ ও লোককথার মতো ঘরে ঘরে চলেছে আপনার স্তুতি।

‘এই বাংলার আকাশ বাতাস
সাগর গিরি ও নদী
ডাকিছে তোমারে বঙ্গবন্ধু
আবার আসিতে যদি’

—সুফিয়া কামাল

যেদিন থেকে বুঝতে শিখেছি সেদিন থেকেই ঘরের দেয়ালে দেখেছি আপনার বিশাল পোস্টার ও ক্যালেন্ডার, যেখানে তর্জনী উঁচিয়ে আপনি ৭ মার্চের মহাকাব্যের জন্ম দিয়েছেন: রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেবো, তবুও এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব। এসব মনে ও মগজে ধারণ করে করে ঘরের দেওয়ালে আপনার শোভনীয় ছবি দেখে দেখে এতটা পথ এসেছি। আমার প্রয়াত বাবা, যিনি একজন বীর-মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যেভাবে ধ্যানে ধারণাতে বিশ্বাসে মূল্যবোধে আপনাকে লালন করতেন― তা অত্যন্ত বিরল। আমার বাবার মতো এমন লক্ষ লক্ষ বাবা, যারা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন, আপনি আছেন তাদের বুকের ভিতরে। কবির ভাষায়—

‘দেখো, প্রত্যেকটি মানুষের মাথা
তোমার হুঁটার চেয়ে এক তিল উঁচুত উঠতে পারছে না কিছুতেই।
তোমাকে হারিয়ে
আমরা সন্ধ্যায় হারিয়ে যাওয়া ছায়ারই মতো
হয়ে যাচ্ছিলাম,
আমাদের দিনগুলি ঢেকে যাচ্ছিল শোকের পোশাকে,
তোমার বিচ্ছেদের সঙ্কটের দিনে
আমরা নিজেদের ধ্বংসস্তুপে বসে বিলাপে ক্রন্দনে আকাশকে ব্যথিত
করে তুলেছিলাম ক্রমাগত; তুমি সেই বিলাপকে
রূপান্তরিত করেছ জীবনের স্তুতিগানে, কেননা জেনেছি
জীবিতের চেয়েও অধিক জীবিত তুমি।’

—শামসুর রাহমান

সাধারণ মানুষেরা আপনাকে বলেন শেখ সাহেব। সবুজ গ্রাম, ধানক্ষেত, ক্ষেতের আল, বৃক্ষ, পাতা, ছায়া, বাতাস— সবাই আপনাকে চেনে। আপনার পদচারণায় সবাই তুষ্ট। ঘরে ঘরে লোককাহিনীর মতো কেরোসিন-গ্রামগুলোতে আপনাকে যেভাবে পূজা করত, প্রার্থনা করত— তা বর্তমানকালে অনেকে মেলাতেই পারবেন না। ছোটবেলায় শোনা একটি ঘটনা এখানে উল্লেখ করছি : আমার নানী যাকে আমরা নানা-বুজি বলে ডাকতাম, তিনি এই ঘটনাটা বলতেন, আর আমরা বলতাম নানা-বুজি শেখ সাহেবের গল্পটা আবার শোনাও- গন্ডগলের বছরে [আমার নানা-বুজি একেবারেই গ্রামের মানুষ, মুক্তিযুদ্ধের বছরকে গন্ডগোল বলেন, এটা কোনো অসম্মান অর্থে নয়] আমরা এই গ্রাম ছেড়ে দূরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠলাম। চাচাত ভাইয়ের শশুরবাড়ি। এটা টাংগাইল জেলার একটা অজপাড়াগাঁ।

কয়েকদিন পরে এক সন্ধ্যায় আমার মামা এসে হাজির। এসেই হাউ মাউ করে কান্না। এত কান্না যে তা বলে বোঝানো যাবে না। সবাই ভেবেছে আমার নানার কোনো দুঃসংবাদ। নানার তখন কিছুদিনের জন্য কোনো খোঁজ ছিল না, কিন্তু মামা কাঁদছেন আর আর্তনাদ করে বলছেন, মাগো, শেখ সাহেব বুঝি আর বাঁইচা নাই। মিলিটারিরা পাকিস্তানে নিয়ে গেছে। এখন কোনো খবর নাই। মনে হয় মাইরা ফেলাইছে! আল্লাহ গো, আমাগো এখন কী হইব?
এরপরে মামা আমার মাকে অনুরোধ করতে থাকেন যে, বুজি, কাইলকা আমারে সিন্নি রাইন্দা দিবা আর মায়ের কাছ থিকা আট আনা নিম; বাতাসা আর সিন্নি দিয়া জুম্মাঘরে শেখ সাহেবের জন্য দোয়া পড়াম। আর আমার নানা-বুজিকে বললেন যে, মা, তুমি রোজা রাখো শেখ সাহেবের জীবনের জন্য। আল্লাহ যেন তারে বাঁচায়ে রাখেন! শরীরের লোমগুলো শিহরণ দিয়ে ওঠে। যতবার এই ঘটনা শুনি—

‘সমবেত সকলের মতো আমিও গোলাপ ফুল
খুব ভালবাসি
রেসকোর্স পার হয়ে যেতে সেই সব গোলাপের
একটি গোলাপ
গতকাল আমাকে বলেছে
আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি,
আমি কারো রক্ত চাইতে আসিনি— আমি আমার
ভালোবাসার কথা বলতে এসেছি।’

—নির্মলেন্দু গুণ

হে মহান পিতা, আপনি সাধারণ নন। আপনি প্রমিথিউস। আপনি হাজার সূর্যের ধ্রুবক একটি সূর্য, যার আঙুলের ইশারাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছে। এই প্রজন্ম ভাবতেই পারে না যে সাধারণ মানুষের ভিতরে এভাবে কোনো নেতা থাকতে পারেন। আপনি বেঁচে থাকলে এখন দেখতে পেতেন, যারা আপনাকে মনে প্রাণে ভালোবেসেছে, আপনার জন্য জীবন-বাজি রেখেছে, তারা সবাই মাটির মধ্যেই আছেন। মাটির টানে ফসল ফলান, ঘাম ঝরান, বাঁচেন। তাদের ভাগ্যের কোনো উন্নতি হয় নাই। তারা তোষক, চাটুকারদের দলে ভিড়তে পারে নাই। আপনার—

‘প্রকৃত আদর্শের কারিগহ্রদের সংখ্যা সত্যি এখন বিরল। 
আমি তো এসেছি সার্বভৌম বারোভূঁইয়ার থেকে।
আামি তো এসেছি কমলার দীঘি ‘মহুয়ার পালা’ থেকে।
আমি তো এসেছি তিতুমীর আর হাজী শরীয়ত থেকে।
আমি তো এসেছি গীতাঞ্জলি ও অগ্নিবীণার থেকে।
এসেছি বাঙালি ক্ষুদিরাম আর সূর্যসেনের থেকে।
এসেছি বাঙালি জয়নুল আর অবন ঠাকুর থেকে।
এসেছি বাঙালি রাষ্ট্রভাষার লাল রাজপথ থেকে।
এসেছি বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর থেকে।’

— সৈয়দ শামসুল হক

আপনার জন্য মানুষ কেঁদেছে আর এখন তথাকথিত রাজনীতির দুর্বৃত্তদের আঁচড়ে সেই দেশপ্রেমিক তৃণমূলের খেটে খাওয়া মানুষেরা নাকাল! কেউ কেউ মানবেতর জীবনযাপন করলেও বাংলার মাঠে, ফসলের ক্ষেতে ঘাম ঝরিয়ে পরিশ্রম করে জীবন ও জীবিকা মেটান আজও, কারণ তারাই এই দেশের প্রকৃত শক্তি। তাদের সম্মিলিত শ্রম, ঘামের বিনিময়ে আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আপনার এখন পনেরো কোটি সন্তান। আপনার কাছে এই খোলা চিঠিতে আমি ধীরে ধীরে জানাব, এই প্রজন্ম কীভাবে আপনার দর্শনকে ধারণ ও মূল্যায়ন করেন। আমার বাবা খুব সামান্য মানুষ হলেও তিনি ছোটবেলা থেকেই ছিলেন আমার নায়ক। বাবাকে দেখেছি যিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মন থেকে ভালোবাসতেন। খুব কম মানুষ দেখেছি যারা এমনভাবে কাউকে ভালোবাসতেন, কারণ বাবার এই ভালোবাসা ছিল কোনো ধরনের স্বার্থপরতার ঊর্ধ্বে। বাবার একট কথাকে আমার কাছে মনে হয়েছিল, এটা সত্যি মুক্তিযুদ্ধের উপর একটি নতুন প্রতিষ্ঠিত দর্শন।

‘যতোকাল র’বে পদ্মা-যমুনা
গৌরী-মেঘনা-বহমান
ততোকাল র’বে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান,
চারিদিকে আজ রক্তগঙ্গা
অশ্রু গঙ্গা বহমান
নেই-নেই ভয়, হবে-হবে জয়
জয় শেখ মুজিবুর রহমান।’

—অন্নদাশঙ্কর রায়

বাবা বলতেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে, যারা শেখের আহবান শুনেছে, তারা কোনো দিন শেখ মুজিবুরের বাইরে কোনো কিছু চিন্তা করতে পারবে না। ভবিষ্যতে যে রাজনৈতিক দর্শনেই যাও না কেন, সর্বদা জানবে যে এই মহান নেতা ছাড়া বাংলাদেশ হতো না। এই মহান নেতার মতো কোনো নেতা এই দেশে আর কখনও আসবে না।

‘সেই কবিতাটি লেখা হয় নাই
লিখবেন কোনো কবি
সেই কবিতাটি কবিতা তো নয়
মুজিবের মুখচ্ছবি’

—মহাদেব সাহা
নেতার জন্য মানুষ রোজা রেখেছে, যে নেতার জন্য সাধারণ মানুষ কেঁদেছে। আরেকটা কথা বাবা বলতেন, জীবনে যে রাজনৈতিক পন্থাতেই তুমি বিশ্বাসী হও না কেন, কখনোই মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি জামাত-শিবির, রাজাকারদের ক্ষমা করবে না। তোমরা নতুন প্রজন্ম দেখো নাই, কী বীভৎস, কী নারকীয় কাজ তারা করেছে। যদি দেখতে, তবে সারাজীবন তাদের ঘৃণা করতে এবং তাদের সেই অপরাধের সাজা কামনা করতে। বাবার এই কথাগুলো শুনলে শরীরের লোম খাড়া হয়ে যেত। কিছুক্ষণের জন্য হলেও মনে হতো, আমি মুক্তিযুদ্ধে ঢুকে পড়েছি, আমি এই প্রজন্মের যোদ্ধা।

বঙ্গবন্ধুকে খোলা চিঠি [২য় পর্ব]

বঙ্গবন্ধু,
শ্রদ্ধাভাজনেষু।

গহীন অরণ্যের মতো দগদগে একাকীত্বের মতো আপনার প্রস্থান। হে রাজনীতির কবি, হে মহাকাব্যের জনক, স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বপ্নের বাংলায় আজ আপনি নেই। ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বাংলাদেশ আপনার চেতনায়, মননে সর্বদাই বিরাজ করত। বেঁচে থাকলে আপনি কি খুব ব্যথিত হতেন, নাকি আপনার সন্তানদের উপরে নাখোশ হতেন?

‘এই বাঙলায় শুনেছি আমরা সকল করিয়া ত্যাগ,
সন্ন্যাসীর বেশে দেশবন্ধুর শান্ত মধুর ডাক। 
শুনেছি আমরা গান্ধীর বাণী জীবন করিয়া দান
মিলাতে পারেনি প্রেম বন্ধনে হিন্দু মুসলমান। 
তারা যা পারেনি তুমি তা করেছ, 
ধর্মে ধর্মে আর, 
জাতিতে জাতিতে ভুলিয়াছে ভেদ সন্তান বাঙলার’

— বঙ্গবন্ধু, পল্লীকবি জসীম উদ্দীন।

আপনার প্রতি দেশের ও বিদেশের কবি সাহিত্যিকদের নাম-বন্দনা শ্রদ্ধাস্তোত্র আজও দ্যুতিমান:
‘বর্ষীয়ান কবি-কথাসাহিত্যিক বনফুল [বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায়] তাঁর ‘ সহস্র সেলাম’ শীর্ষক এক কবিতায় বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর শ্রদ্ধাস্ত্রোত্র রচনা করেন : 

‘বাঙালীর সর্বগর্ব তোমাতেই আজি দ্যুতিমান।
আমি বাংলার কবি তাই বন্ধু ছুটিয়া এলাম
মুজিবর রহমান, লহ মোর সহস্র সেলাম।’

মনীশ ঘটকের উচ্চারণ :
‘কর্ণফুলী আড়িয়াল খাঁর
তীর্থসলিল টকটকে লাল
নবোদিত সূর্য কিরণে
চারটি হরফে রূপায়িত হয়ে গেছে
মুজিবর।’
বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবি-সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের শ্রদ্ধার্ঘ্যও স্মরণীয়। তিনি তাঁর ‘বন্ধু’ কবিতায় বলেন :

‘কত যুগ কত দেশ ভিন্ন নামে তবু
শোনে তার একই কণ্ঠস্বর,
আজ শুধু আমাদেরই মাঝে মুগ্ধ মন জানে
নাম তার বন্ধু মুজিবর।’

বিমলচন্দ্র ঘোষের ‘ইস্পাতসূর্য মুজিবর’, মণীন্দ্র রায়ের ‘মানুষ’, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বাংলার এই রূপ’, শান্তিকুমার ঘোষের ‘মহানায়ক’ ও বিনোদবেরার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে’ শীর্ষক কবিতার পর কবিতায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমানের নাম-বন্দনাই শুধু বিধৃত নয়, তাঁর সাহসিক ভূমিকাও অম্লান ও ভাস্বর।
মনকাড়া, চিত্তজয়ী ছড়াও রচিত হয়। পরমানন্দ সরস্বতী তাঁর ছোট্ট দু-লাইনের ছড়ায় পাকিস্তানের কুখ্যাত সমরনায়ক টিক্কা খানকে ব্যঙ্গবাণে বিদ্ধ করে বলেন:

‘এক ফুঁয়েতে টিক্কা ফতে,
কল্কে হলো খালি,
ইয়াহিয়ার আশার ভাতে
মুজিব দিলেন বালি।’

আপনি কি ছিলেন পল্লীকবির অনুধাবনে! আপনি ছিলেন সব ভেদাভেদ ভুলে বুকে বুক মিলিয়ে থাকার। আর ছিলেন সামাজিক-অর্থনৈতিক সাম্যবাদে। তাই তো সমাজতন্ত্রের বরপুত্র ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেছেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু মুজিবকে দেখেছি। শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারাল তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে।’

হে স্থপতি, আপনি সত্য ও সুন্দরের কান্ডারী ! সত্য ও সুন্দরের জয় অনিবার্য। যে বৃক্ষ আপনি বপণ করেছিলেন তা ফুলে-ফলে-বল্কলে আজ মহীরুহ হয়ে উঠছে। তবুও কিসের হাহাকার, তবুও কেন ধর্মের নামের অধর্মের কাজ? কেন জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে? এই কি আপনার সেকুলারিজম? আপনার ঘাতকদের প্রেতাত্মারা কি আবার দানা বাঁধছে? ইসলামের নামে অপরাজনীতি আজ আপনার এই মহীরুহকে, সবুজ লতা-পাতা-বাতাস-সোঁদা মাটির ঘ্রাণকে বানাতে চাইছে মরুদ্যান। বেঁচে থাকলে আপনি ব্যাথিত হতেন।

অমিতাভ চৌধুরী তাঁর রচিত ছড়ায় মুজিব-বন্দনা করেন এইভাবে:

‘মুজিব মুজিব কোথায় মুজিব
মুজিব গেছে রণে,
ঢাল ধরেছেন, হাল ধরেছেন
আছেন মনে মনে।’

সত্যেস্বর মুখোপাধ্যায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার অনুসরণে আনন্দ-ধ্বনি করে ওঠেন এই বলে:
‘তোরা সব জয় বাংলা কর,
স্বাধীন বঙ্গের কেতন ওড়ে
নেতা মুজিবর
তোরা সব জয় বাংলা কর।’

হে মহাকাব্যের রচয়িতা, আমাদের বাঙালির পরম আনন্দ, অহংকার ও ঐতিহ্যের ঠিকানা ৭ মার্চের আপনার সেই ঐতিহাসিক ভাষণ বিশ্বের ১২টি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। ১৮ মিনিট স্থায়ী এই ভাষণ শুধুই মুক্তিসংগ্রামের উদাত্ত আহবান আর আন্দোলনের ডাক নয়, এই ভাষণ বিশ্বের মুক্তিকামী শোষিত মানুষদের জন্য একটি দর্শন, যে দর্শন আজও আমাদের নতুন প্রজন্মের বোধ চেতনা ও অনুভুতিকে দেশপ্রেম শেখায়। তাই তো কবি বলেছেন, ‘তোমার মৃত্যুর কথা মনে হলে তোমার জন্মের কাছে ঋণী হয়ে যাই।’ আর তাই বলেই জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে মৃত বঙ্গবন্ধু এত শক্তিশালী, এত জনপ্রিয় এবং এত বেশি আপোষহীন, যার হৃদয়ে ছিল বাংলাদেশ ও দেশের মানুষ। যিনি শুধুমাত্র একটি কবিতাই রচনা করেছিলেন—
''how many poems you have written, o Tagore!
how many poems, o jibonanondo das!
how many immortal pictures you have drawn,
o joinul! how many songs you have composed, o najrul!
bangabandhu throughtout his whole life has written only one poem-‘Bangladesh’.
only one song he has sung with his tune of heart and only
one picture he has drawn-‘Bangladesh''
--Sayeed Abubakar

 



২টি মন্তব্য: