''যুদ্ধে এখনও বইছে
যেন যুদ্ধে রচিত জীবনধারা
বিজয়ে সবাই হাসে
উঠে না তাদের শুকতারা ।
যেন যুদ্ধে রচিত জীবনধারা
বিজয়ে সবাই হাসে
উঠে না তাদের শুকতারা ।
হানাদারের লালসায় তৈরি
মনের সাথে দেহের বৈরি
যুদ্ধ ভরেছে মনের ব্যাথা
নির্যাতনের বিষাদ্গাথা ।
সময়ের লাঞ্চনা হাহাকারের যন্ত্রনা মনের সাথে দেহের বৈরি
যুদ্ধ ভরেছে মনের ব্যাথা
নির্যাতনের বিষাদ্গাথা ।
বুক ভেঙ্গে যায় কেপে কেঁপে উঠে
আমার মা জননী বীরাঙ্গনা ''
ঠিক এভাবেই আমি বর্ননা করেছি বীরাঙ্গনাদের । বীরাঙ্গনা শব্দটির আভিধানিক অর্থ বীরনারী। যুদ্ধে তাদের আত্মত্যাগকে মর্যাদা দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু স্বয়ং তাদের বীরাঙ্গনা বলে অভিহিত করেন। কিন্তু বৈরী সমাজের কারণে পরে সে শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় পাকিস্তানি বাহিনী দ্বারা ধর্ষণের শিকার নারী। বীরাঙ্গনা উপাধি তাদের অহংকার না হয়ে, হয়ে দাঁড়ায় বোঝা ও কলঙ্কতিলক। পাকিস্তানি হানাদারদের দ্বারা নারী নির্যাতনের ইতিহাস রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার দলিলপত্রে।
(বাংলাদেশের স্বাধীনতার দলিলপত্র, ৮ম খন্ড, হাসান হাফিজুর রহমান(
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বীরাঙ্গনাদের নিজের কন্যার মর্যাদা দিয়েছিলেন। সরকারি উদ্যোগে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। তাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রও স্থাপিত হয়। তাদের ক্ষতিপূরণ বাবদ সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা হয়। হাতের কাজ শেখানোর মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য জাতীয় মহিলা সংস্থার মাধ্যমে ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। রেডক্রস এগিয়ে আসে এদের সাহায্যে। অসংখ্য নারীর গর্ভপাত করানোর ব্যবস্থা হয়। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে মাদার তেরেসার মিশনারিজ অব চ্যারিটি, অক্সফামসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক এনজিও তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। যুদ্ধশিশুদের প্রশ্নটিও তখন সামনে এসে দাঁড়ায়। যুদ্ধশিশুদের বেশিরভাগকেই বিদেশে বিভিন্ন পরিবারে দত্তক দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
যুদ্ধকালীন সময়ে সারা দেশের ৪৮০ টি থানা থেকে গড়ে প্রতিদিন
২ জন করে নির্যাতিত মহিলার সংখ্যা অনুসারে ২৭০ দিনে ধর্ষিতার নারীদের সংখ্যা দাড়ায়
২ লক্ষাধিক। আন্তর্জাতিক প্লানড ফাদারহুড প্রতিষ্ঠানের ড. জিওফ্রে ডেভিস, যুদ্ধের পরপরই
তিনি এসব মা ও তাদের শিশুদের সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন, তাঁর মতে এই
সংখ্যা আরও বেশি এবং তা ৪ লক্ষ।
টেপরি রানী ও তার যুদ্ধ শিশু সুধীর কে শীতের কাপড় প্রদান |
একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে ও মুক্তিযুদ্ধ
নিয়ে কিছু করার প্রত্যয় বুকে নিয়ে কাজ করার আগ্রহে ‘বীরাঙ্গনা ‘ দের বিষয়টি আমাকে
বেশ ভাবিয়ে তুলে , ঠাকুরগাও জেলার রানীশংকৈল থানায় ২৪ জন বীরাঙ্গনার খোঁজ পাই ,
তাদের যাপিত জীবন ও সামাজিক নিঃগ্রহের কথাগুলো, লাঞ্চনা বঞ্চনার বিষয়গুলো আমার
কাছে মুক্তিযুদ্ধের একটি অনেক বড় অবদান মনে হয়েছে , এই বঞ্চিত লাঞ্চিত ও সময়ের লাঞ্চনায়
তাদের এই অবদান কে তুলে ধরতে চেয়ে একটি গান রচনা করি । নতুন প্রজন্ম কে মুক্তিযুদ্ধ পৌছে দিতে ইতিপুর্বে পুলিশের প্রথম প্রতিরোধ নিয়ে
আমার লিখা গান-পচিশে মার্চ -রক ফরমেটে করেছিলাম গানটি গেয়েছেন জনপ্রিয়
ব্যান্ড তারকা ফিডব্যাক ব্যান্ডের মেইন ভোকাল লুমিন । যা ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে ।
সেইম ফিলিং থেকে বীরাঙ্গনা দের নিয়ে আমার লিখা গান যেখানে
আমি তাদের মা জননী বলে সম্বোধন করেছি ,
ঠাকুরগাও জেলার রানীশংকৈল থানার বলিদ্বারা গ্রামের টেপরি রানী কে এই গানের
বেইজ হিসেবে দেখাবার চেষ্টা করেছি । গানটি সুর করেছেন রাজীব
হোসেন , কণ্ঠ দিয়েছেন বিখ্যাত ব্যান্ড তারকা
মিজান, (এক্স ওয়ারফেইজ ) মিউজিক ভিডিও নির্মাতা- সৈয়দ তানভীর আহমেদ , গান
টি সুনামধন্য ধ্রব মিউজিক ষ্টেশন থেকে ২২ মার্চ ২০১৮ প্রকাশিত হয়েছে এবং ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে গানটি ।
গানটির ইউটিউব লিঙ্ক-https://www.youtube.com/watch?v=yno-HGjmGLA
গানটির ইউটিউব লিঙ্ক-https://www.youtube.com/watch?v=yno-HGjmGLA
মিউজিক ভিডিও নির্মাতা তানভীর আহমেদ ও তার টিম টেপরি রানীর বসত ভিটা তে |
বীরাঙ্গনা
একাত্তরের একটু আগে ষোলোতে মেহেদী রাঙ্গিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে কত স্বপ্ন সাধ আহলাদে আঁকে
হারিয়ে গেল তা কোথায় কোন ফাকে –
হারিয়ে গেল তা কোথায় কোন ফাকে –
যুদ্ধে এখনও বইছে
যেন যুদ্ধে রচিত জীবনধারা
বিজয়ে সবাই হাসে
উঠে না তাদের শুকতারা ।
যেন যুদ্ধে রচিত জীবনধারা
বিজয়ে সবাই হাসে
উঠে না তাদের শুকতারা ।
হানাদারের লালসায় তৈরি
মনের সাথে দেহের বৈরি
যুদ্ধ ভরেছে মনের ব্যাথা
নির্যাতনের বিষাদ্গাথা ।
মনের সাথে দেহের বৈরি
যুদ্ধ ভরেছে মনের ব্যাথা
নির্যাতনের বিষাদ্গাথা ।
সময়ের লাঞ্চনা হাহাকারের যন্ত্রনা
বুক ভেঙ্গে যায় কেপে কেঁপে উঠে
আমার মা জননী বীরাঙ্গনা ।
বুক ভেঙ্গে যায় কেপে কেঁপে উঠে
আমার মা জননী বীরাঙ্গনা ।
একাত্তরের মে মাস , রাজাকারেরা এসে তুলে দেয় হানাদারের কাছে ঠেসে,তিন দিনের লাল নীল রঙের দংশনে রাত্রি,আকাশ ভারী বাতাস ভারী কাঁদে ক্যাম্প শিয়ালডাংগী ।
অশ্রু ঝরে রক্ত ঝরে টাটকা
নির্যাতনের নির্মমতায় আটকা
নয় মাসে নির্যাতনের মেলেনা অংক
দুঃসহ স্মৃতি দুর্বিষহ অসংখ্য ।
নির্যাতনের নির্মমতায় আটকা
নয় মাসে নির্যাতনের মেলেনা অংক
দুঃসহ স্মৃতি দুর্বিষহ অসংখ্য ।
কিনেছে অমূল্য দামে রক্তে
ভিত গড়েছে শক্তে
বীরকন্যার আত্মত্যাগে পবিত্র মাটি
তোমাদের অমুল্য দানে খাটি ।
ভিত গড়েছে শক্তে
বীরকন্যার আত্মত্যাগে পবিত্র মাটি
তোমাদের অমুল্য দানে খাটি ।
শুটিং এ গায়ক মিজান টেপরি রানীর সাথে |
টেপরি রানী যাকে
পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে পাকিস্তনি সেনা ও রাজাকাররা ইচ্ছামতো
নির্যাতন করত। সবার কথা চিন্তা করে সব মুখ বুজে সহ্য করেছে সে ।তিনি পাকিস্তানি
সেনাদের বারবার মেরে ফেলার জন্য আকুতি
করলেও তারা তা করেনি।
বলিদ্বারা গ্রামের টেপরি রানী। যুদ্ধের কিছুদিন আগে ১৬ বছর
বয়সে তাঁর বিয়ে হয় শিয়ালডাঙ্গী গ্রামের মাটাং রায়ের সঙ্গে। একাত্তরের মে মাসে
রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি সেনারা প্রথমে তাঁকে ধরে নিয়ে যায় শিয়ালডাঙ্গী
ক্যাম্পে। সেখানে তারা তিন দিন আটকে রেখে নির্যাতনের পর তাঁকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু
তখনও তাঁর দুর্বিষহ জীবনের দুর্দশা শেষ হয়নি। মাসখানেক পর ফের তিনি আটক হন এবং
মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে ১০-১২ বার শিয়ালডাঙ্গীসহ বিভিন্ন ক্যাম্পে নিয়ে তাঁকে
অসংখ্যবার নির্যাতন করে পাকিস্তানি সেনারা।
টেপরি রানী বলেন, পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে পাকিস্তানি সেনা ও
রাজাকাররা ইচ্ছামতো নির্যাতন করত। সবার কথা চিন্তা করে সব মুখ বুজে সহ্য করেছি।
আমি পাকিস্তানি সেনাদের বারবার আমাকে মেরে ফেলার জন্য আকুতি করলেও তারা তা করেনি।
আত্মহত্যা করে জীবন বিপন্ন করতে চাইনি। সংগ্রাম করেই বাঁচতে চেয়েছিলাম। নির্যাতনের
কথা মনে পড়লে আজও শিউরে উঠি।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর বলিদ্বারা গ্রামে আবার বসবাস শুরু করি।
কিন্তু নির্যাতিত হওয়ায় আমাদের পরিবারকে প্রায় দুই বছর একঘরে করে রাখে স্থানীয়
লোকজন। আমাদের সঙ্গে কেউ লেনদেন করত না, কথা পর্যন্ত বলত না। এর মধ্যে ১৯৭৩ সালে আমার স্বামী মাটাং
রায় অসুখে মারা যান। তারপর থেকে আমার দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে অতিকষ্টে দিন কাটাচ্ছি।
ছেলে সুধীর একজন যুদ্ধশিশু যিনি এখন ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন
।
ক্যামেরার পজিশন দেখছেন নির্মাতা তানভীর আহমেদ, লেখক ও এএসপি হাসিব |
টেপরি রানীর মতো এ অঞ্চলে আরো অনেক বীর নারী রয়েছেন। তাঁরা
হলেন—কেউটান গ্রামের
ঝরনা রানী মুল, তীর্থবালা পাল; রাউতনগর গ্রামের
আসমা বেগম, হাফেজা বেগম, মুনি কিস্কুু, সীতা হেমব্রোম, সুবি বাসুগি, জবেদা বেওয়া, হনুফা বেওয়া, সাজেদা বেগম, রওশন বেওয়া; শিদলী গ্রামের
নিহার রানী দৈবা; ফাড়াবাড়ি
গ্রামের হাসিনা বেগম, হালিমা বেগম; ভারা গ্রামের
চানমনি; লেহেম্বা
গ্রামের ঝড়ূ বালা; পকম্বা গ্রামের
নুরজাহান বেগম; পদমপুর গ্রামের
হাসিনা বেগম; গোগর গ্রামের
মালেকা বেগম; শামাডাঙ্গী
গ্রামের জমেলা বেওয়া; নিয়ানপুর
গ্রামের তিন বোন মালেকা বেগম, আমেনা বেগম ও
মোকলেছা বেগম।
ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার বলিদ্বারা গ্রামের টেপরি রানী যিনি একজন বীরাঙ্গনা মা জননী তার প্রতি বিনম্র সালাম, জাতি আপনার এই সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রাখবে ।
নিউজ লিঙ্ক সমুহ-
ঠাকুরগাঁওয়ের এসপি লালনের গানে বাড়ি মিললো বীরঙ্গনা টেপরী রাণীর
http://www.ittefaq.com.bd/wholecountry/2018/02/13/147201.html
নিউজ লিঙ্ক সমুহ-
ঠাকুরগাঁওয়ের এসপি লালনের গানে বাড়ি মিললো বীরঙ্গনা টেপরী রাণীর
http://www.ittefaq.com.bd/wholecountry/2018/02/13/147201.html
এসপি লালনের লেখা গানে বাড়ি পেলেন টেপরী রাণী
বাড়ি পেলেন বীরাঙ্গনা টেপরী রাণী
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন