শনিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২০

নি:সঙ্গ পাথরের কান্না

  


বিজন ভাবনা প্রেম যাতনা 

শুনতে পাও পাথরের কান্না 

হলুদ হওয়া সবুজ ঘাসে 

মাটিতে জলে বাতাসে ।


উতলা মন অস্থির 

পরম পিপাসায় চৌচির 

কোমলতা শক্তের ভেতর 

স্নেহ মোহ মায়া-হীন পাথর।


যেন সুনীল সুতনু 

হয়েছে বিবর্ণ রংধনু

পরাগ-রেণু উড়ায় না প্রজাপতি

পাথরের বুকে জলের আর্তি।


হয়নি সবুজটুকু ছুঁয়ে দেখা

নি:সঙ্গ পাথর ভীষণ একা

এতো গল্প এতো দ্বিধা সংশয় 

হত যদি সুখের সাথে একটু পরিচয় ।


নীরবে নিভৃতে প্রেম-কাতর 

একটা বিষণ্ণ পাথর  

কুসুম কোমল বুকে 

শক্ত টুকুই পড়ে চোখে।

থাকুক স্নিগ্ধ আবেশ




মেঘের ছায়ায় কাশফুলের শুভ্রতায়

জোছনার আঙিনায় 

কোকিলের কুহুতায় 

ঘাসফুলের বাসনায় 

থাকুক না একটু রেশ 

মনের গোপন আবেশ ।।


যৌথ ঘর ছিল চিরদিন 

মুগ্ধতায় ভরা রঙিন,

জোয়ারের জলোচ্ছ্বাসে 

হঠাৎ গেছে ভেসে ।

 তবু থাকুক একটু রেশ 

মনের গোপন আবেশ ।।


ভেসে গেছে হৃদয় সবুজ আশ্রয়

ভেসে গেছে বুকে ফোটা নীলপদ্ম,

থেমে গেছে স্পন্দন 

যন্ত্রণায় বিঁধে মন স্তব্ধ ।

থাকুক সম্পর্কের স্নিগ্ধতার রেশ 

মনের গোপন আবেশ ।।

মানব না বারণ প্রেমে পড়বই

 

টুকরো টুকরো গল্প কবিতা 

ভরছে খাতার পাতায় পাতায়, 

চোখ বুজলে আঁধারে মুখচ্ছবিটা

 অনুভূত সদা মোহ মায়ায় ।


প্রেমে পড়ব শুনবো না বারণ 

বুকে ধারণ পরিবর্তন  আচরণ,

প্রেম পড়তে লাগেনা কারণ

শুনবো না বারণ 

ফুল কুঞ্জে ভ্রমরা করো না বিতাড়ণ ।।


অচল পাহাড়ের ভেতর কে দিল জল 

যেন উপচে পড়ছে হৃদয়ের সহায় সম্বল 

প্রেম পড়ার হাজার ছল প্রেমের কলা কৌশল 

কারণ ছাড়া কার্য প্রেমে পড়ব অনিবার্য।


কে তুমি সবুজ বনভূমি উড্ডীন ছায়ার মেঘ 

যে তুমি আকাঙ্ক্ষার অনন্ত আবেগ 

স্বপ্নগুলো এলোমেলো হচ্ছে লাল 

চোখে ভরে চোখ বুনছ নয়নজাল ।।


কল্পনায় দিগন্তের পরিসীমা জুড়ে থাকবই 

থামব না মানব না বারণ প্রেমে পড়বই ,


হৃদয়ের রঙে গড়ব তিলে তিলে 

তোমাকে ছোব আকাশের নীলে,

হাওয়ায় ভাসে ফিরে আসে চোখের কিনারে, 

মানব না বারণ প্রেমে পড়বই বারে বারে ।

শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২০

কাব্যধারা-২



শাপমোচন করো হৃদয় অংগন 

হাতজোড়ে মিনতি চাই আশ্রয় শক্ত বাঁধন 

নারী আর পুরুষ একে অন্যের জৌলুস

পারিনা কেন হৃদয় দিয়ে বুঝতে 

রইবনা যেদিন সেদিন ঠিক খুঁজবে

ভীত যেন সবটাই মৃত নীরব নির্বাক 

নতজানু হয়ে চোখের জলে মুছতে দাও দাগ 

ইতিবৃত্ত টানবনা আর ভুলেছি চিরতরে 

লাল গোলাপ দিলাম বাহুডোরে ধরে।

অনিন্দ্য সুন্দর ফুল



ডাকছে আমায় অদ্ভূত মৌন 

ইশারায় যেন মন মনের কথায়

নাড়া দিচ্ছে ব্যাকুল অজানা ইচ্ছে ,

জানা হয়নি কিছুই তবুও আকাঙ্ক্ষার

মালা গাঁথা অবচেতনে সুন্দরীর মিষ্টি 

নয়নে নয়ন গ্রাস না করেই বশীভূত ।






মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২০

কাব্যধারা -১


শাণিত হচ্ছে বিচ্ছেদে মন সারাক্ষণ 

হাতছানি নিত্য ভাবনা ব্যথার কাহন,

না পাওয়াগুলো আকাংখায় ভরে

পাথরের পরম ছোঁয়া আপন করে

রঙ্গিন সময়ের স্মৃতিরা ডুকরে মরে

ভীষণ কষ্ট সব দুর্বিষহ অনুভব  বিরহ 

নদী তুমি অনন্ত ভালবাসা নও মোহ ।






বৃহস্পতিবার, ২১ মে, ২০২০

বাবাকে লেখা শেষ চিঠি 


তারিখ-২০ শে ফেব্রুয়ারী ২০০৬ খ্রিঃ

প্রিয় বাবা

 তোমার জন্যে অনেক পরে অনেক আগের কথা লিখছি , মনে আছে গত বছরের জুন মাসের কথা, ১৭ জুন রাজশাহী যাচ্ছিলাম আমার মৌলিক প্রশিক্ষনের জন্যে, রাতে তুমি আমাকে বললে আজ কে আমার সাথে থাকবি বাবা ? সেই যে ছোট বেলার মত করে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবি ,আর আমি নানান ধরনের গল্প শোনাব তোর সব প্রশ্নের জবাব দিব ! এখন তুই বড় হয়েছিস,কিন্তু আমার কাছে মনে হয় আমার সেই ছোট্ট বাপ্পী , যে দৌড়ে এসে আমাকে ধরে বলত – বাবা বাববা দানো হাতি টা না বল লাথি মারছে!!!! সেই যে বোল ঝরান ছোট বাপী আজ তুই যাবার আগে আমার কাছে আয় বাবা ।

আমিও সারারাত তোমার বুকে ছিলাম, অনেক কথা হল হ্রদয়ের যত কথা সব ,মনে আছে তোমার বাবা ? আমাকে বললে যে আমাকে ছুয়ে বল যে – কোন দিন মানুষের সাথে জুলুম করবিনা ,দুঃস্থ অসহায় মানুষ কে ভালোবাসবি আর তাদের বিপদে এগিয়ে যাবি – আমাকে কথা দে , আমিও যথারীতি কথা দিলাম বললাম –বাবা তোমার রক্তই তো আমার শরীরে বহমান ,এই রক্ত দূষিত হয়ে যাবে না , এই রক্ত তোমার সত্তাকেই লালন করবে তুমি নিশ্চিত থাকো
,আমি তোমাকে ছুয়েই কথা দিলাম ।পরের দিন সকালে রওনা দিলাম ,তুমি আমাকে এগিয়ে দিলে না পাছে আমি মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ি সেই কারণে ।

 “সহসা কার স্নেহাস্পর্শে চমকি উঠি।
 সেই নির্ভার কণ্ঠস্বর, সেই আশ্বাস বানী।
 বলছে; আজ তৈরি তুমি, বাবা আজ তুমি।   
 এমনি করেই সকল ঝড়ে,
 সকল দুর্যোগ সয়ে সন্তানেরে দাও পরম নির্ভরতা।   পুরুষোত্তম তুমি, তুমি বাবা।।
 বহুদিন পড়ে আজো শুনি সেই ধ্বণি।
 আজো স্নেহাস্পর্শে তার শিহরিত হই।
 চিৎকার করে বলি, বাবা পুরুষোত্তম তুমি”


শুরু হল নতুন এক জীবন ,ভোর পাচ টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত সময় কিভাবে চলে যায় বুঝতে পারি না , ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠেই পিটি ড্রেস পড়ে মাঠে হাজির , এক চক্কর দৌড় এরপরে পিটি টেবিলের ক্রমিক শুরু , এক চক্করেই দুই কিঃমিঃ হয়ে যায় এত বড় মাঠ , এক ঘন্টা পরে রুমে ফিরেই ৩০ মিনিটের মধ্যে নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরে আবার মাঠে হাজির , আবার এক চক্কর এরপরে ড্রিল শুরু , এটা চলবে দুই ঘন্টা , এরপরে রুমে এসে তাড়াহুড়া করে গোসল এবং ইউনিফর্ম পরে নাস্তা অতঃপর ক্লাস ,একটু আলসেমি করলেই বিট মিস হয়ে যাবে, সকাল দশটা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত ক্লাস , ক্লাসে গিয়েই সবাই ঘুমিয়ে পড়ত ক্লান্তির কারণে , দুপুর ১ টা থেকে ২।৩০ পর্যন্ত ব্রেক , এই সময় একটু বিশ্রাম নেয়া আর পরিবারের সাথে কথা বলা,এরপরে বিকাল ৩ টায় আবার মাঠ আবার চক্কর আবার ড্রিল চলত ৫টা পর্যন্ত , এক ঘন্টা ব্রেক দিয়ে সন্ধ্যা ৬ টা থেকে আবার নির্ধারিত ড্রেসে নাইট ক্লাস চলত ৮ টা পর্যন্ত , রাত ৮ টার পরে ডিনার এরপরে বিশ্রাম ,এত হাড়ভাংগা খাটুনির পরে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলেই ঘুম আর এক ঘুমে ভোর ,আর ভোর থেকে আবার সেই একই নিয়মের যান্ত্রিক নিয়মানুবর্তিত জীবন, প্রতিদিন ৬ কিঃমিঃ দৌড়াতে হত আর শরীর থেকে ২/৪ কেজি ঘাম ঝরত , প্রথম তিন মাস কোন ছুটি নেই ,বাইরে যাওয়া নেই একেবারেই বন্দী জীবন ।


 এরমাঝে বাবা তুমি অপেক্ষায় থাকতে কখন দুপুর ২ টা বাজবে আর কখন রাত ৯ টা বাজবে কারণ এই দুই সময়ে তুমি আমাকে ফোন দিতে । প্রতিদিনই তোমার ফোন থাকত , এভাবে চলতে চলতে আমি ট্রেনিং এর সাথে মিশে গেলাম। চেহারার দিকে তাকালে হাসি বের হয় কালো চোয়াল বসে গেছে ,এই চেহারা বাবা মায়েরা দেখলে সত্যি কাদবেন ! তিন মাস পরে মাত্র দুদিনের ছুটিতে বাড়ি এলাম ,মা আমাকে দেখে কেদেই ফেলল আর তুমি শুধু বুকে চেপে ধরে থাকলে কিছুক্ষন, এই দুদিন বেশি কথা বলা হয় নাই তোমার সাথে ,দুদিন কেটেছে ঘুমিয়ে আর হাত দিয়ে ভাল করে পেট ভরে খেয়ে খেয়ে। ট্রেনিং এ খেতে হত কাটা চামচ দিয়ে তাই হাত দিয়ে খাওয়া টা ছিল খুব লোভনীয় ।

এভাবেই দেখতে দেখতে অনেক গুলো মাস কেটে গেল , ২০০৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী ,যথারীতি প্রতিদিনের মত প্রশিক্ষন শুরু হয়েছে ,সারা দিন একই ভাবে সব গুলো ক্লাস এবং মাঠের কাজ শেষ করে সন্ধ্যায় ডরমিটরীতে বসে বিশ্রাম ও রাতের ক্লাসে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছি, এমন সময় ফোন বেজে উঠল – তোমার হার্ট এটাক হয়েছে মেডিকেলের ভাষায় যা কার্ডিয়াক এরেষ্ট নামে পরিচিত , আমাকে দ্রুত ঢাকা চলে আসতে বলা হল , আমি শুনে কিছুক্ষন চুপ হয়ে বসে থাকলাম আর মনে হচ্ছিল যে আকাশ ভেংগে আমার উপরে পড়ে যাচ্ছে,আমি ট্রেনিং একাডেমীর প্রিন্সিপালের সাথে যোগাযোগ করে ইমার্জেন্সি ছুটি যোগাড় করলাম, আর হাউমাউ করে কাদতে লাগলাম আর সহকর্মী হায়াত কে বলতে লাগলাম যে ভাই আমার আব্বা কি বেচেঁ আছে ?

আমাকে সান্তনা দেবার দরকার নাই প্লিজ ভাই আমি শুনে ভেংগে পড়ব না ,আমাকে বলেন যা হয়েছে তা মেনে নিতে আমি মানসিক ভাবে প্রস্তুত ,হায়াত ভাই আমাকে বললেন সে রকম কিছু না ,তোর মামার সাথে কথা হয়েছে , উনাকে জাতীয় হ্রদরোগ ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে , এরপরে আমি ও কয়েকবার যোগাযোগ করার পর আমাকে আমার স্ত্রী বলল যে বাবা ভাল আছেন , অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে ,এখন ঘুমাচ্ছেন, আমি বললাম আমার সাথে একটু কথা বলিয়ে দাও, সে বলল –ডাক্তাররা এখানে মোবাইল ফোন নিয়ে আসতে দিতে চাচ্ছে না , মনে মনে ভাবতে থাকলাম যে এর নামই বোধ হয় অভাগা !

আজ দুপুরে বাবা তুমি যখন ফোন দিয়েছিলে তখন আরেকটা নাম্বারে কথা বলছিলাম, বাবা তুমি আমার কল টা ওয়েটিং পেয়েছ, পরবর্তীতে মাঠে যাবার সময় হওয়াতে তখন আর কল দেয়া হয় নাই । আহারে! বাবা তুমি আমায় কি বলতে চেয়েছিলে? সারদা পুলিশ একাডেমী থেকে বানেশ্বর এলাম সন্ধ্যা ৭।৩০ টায়, এরপরে কোন বাসে আর টিকেট পাচ্ছি না , টিকেট পেলাম রাত ১১টার হানিফ এন্টারপ্রাইজের বাসে। এরমধ্যে আবার যোগাযোগ হল স্ত্রীর সাথে বাবার কি অবস্থা ? বললেন একটু ইম্প্রুভ করেছে তুমি সরাসরি বাস থেকে নেমে হ্রদরোগ ইন্সটিটিউটের আইসিইউ তে চলে আস,

রাত ১১ টায় বাসে উঠলাম, ১২।৩০ টার দিকে বাস যখন নাটোর ক্রস করছে তখন আমার স্ত্রী আমাকে আবার ফোন দিয়ে বললেন- তুমি রাতে খেয়েছ, না খেলে খেয়ে নাও , আব্বা পুরোপুরি সুস্থ, আমরা আব্বা কে সাভার নিয়ে যাচ্ছি , তুমি ঢাকায় না এসে সাভারে নেমে পড় আমরা সবাই সাভারের বাসায়, মনে যত টা দুঃখ বিষাদময়তা গ্রাস করেছিল তা কিছুটা হলে ও লাঘব হল, সারা রাস্তা ভাবছি বাবা আমাকে হঠাৎ দেখে না জানি কত খুশি হবেন , কত কত কথা জমে আছে আমার এবং তার, পুলকে আনন্দে মন টা নেচে উঠছিল উচ্ছ্বাসে, কিন্তু রাস্তা আর শেষ হয় না , ভোর ৫ টার দিকে সাভারে নামলাম, পুলিশের একটা পিক আপ অপেক্ষা করছিল ,তাকে পরিচয় দেবার পরে আমাকে উঠতে বলল বাসায় পৌছে দেবার জন্যে, ২ কিঃমিঃ রাস্তা মাত্র, বাসার সামনে এসেই দেখি অনেক মানুষ , আত্বীয় স্বজন দের গাড়ী ,এত রাতে এসব কেন ?দরজার সামনেই দেখি বাবা শুয়ে আছেন লাশ হয়ে !

বাবা তুমি আমাকে এভাবে ফাকি দিলে ,এভাবে ছেড়ে গেলে আমাকে ! মৃত্যুর কয়েক দিন পরে বাবার পরিধেয় কাপড় চোপর গুলো বুকে নিয় শুয়ে আছি , প্যান্টের পকেটে মানিব্যাগ , ব্যাগটা খুলে দেখি এর ভিতরের পকেটে একটা পাসপোর্ট সাইজে ছবি , বের করে দেখি আমার একটা ছবি। বাবা তুমি সত্যিকারের একজন বাবা এবং সত্যি তুমি আমায় অনেক ভালবাসতে , তোমার এত ঋন আমি কিভাবে শোধ করব ? এতটা দ্বায়গ্রস্ত আমাকে কেন করলে বাবা ?

প্রীতিমুগ্ধ
তোমার হতভাগা ছেলে 


 উৎসর্গ – আমার মহান পিতা মরহুম মোঃ নুরুল ইসলাম দেওয়ান কে , যিনি একজন সত্যিকারের সাদা মনের মানুষ ছিলেন, ২০০৬ এর ২০ ফেব্রুয়ারী তিনি আমাদের ছেড়ে গেছেন ।